সিভিক এডুকেশন বলতে কি বুঝেন? , সিভিক এডুকেশনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।

সিভিক এডুকেশনের মূলতঃ দু’টি ধারণা আছে যার প্রথমটিতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সুনাগরিকের
অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং দ্বিতীয়টিতে নাগরিকের
নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আদর্শের সামগ্রিক সমন্বয়ের উপর জোর দেয়া হয়।
প্রখ্যাত শিক্ষাবিষয়ক গবেষক হ্যারিস (ঐধৎৎরং) তার ‘ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ড়ভ ঊফঁপধঃরড়হধষ
জবংবধৎপয’ শীর্ষক গ্রন্থে সিভিক এডুকেশনের সংজ্ঞা নির্ধারণ প্রসঙ্গে দু’টি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ
করেছেন।
প্রথম প্রক্রিয়ায় সুনাগরিকের পাঁচটি গুণের উপর ভিত্তি করে ঈরারপ ঊফঁপধঃরড়হ পরিচালিত হয়।
গুণগুলো নিæরূপ:
ক্স সুনাগরিক মৌলিক মানবীয় প্রয়োজন মেটানোর গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বদা সচেতন এবং ব্যক্তি মানুষের
প্রয়োজন মেটানোর জন্য তৎপর;
ক্স সুনাগরিক সর্বদা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বস্ত;
ক্স সুনাগরিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যব¯া’য় স্বীকৃত মানবিক সম্পর্ক নিজের জীবনের অনুশীলনে অকুণ্ঠ;
সুনাগরিক সমকালীন সামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা দানে সদা তৎপর; এবং
গণতান্ত্রিক জীবন প্রক্রিয়ায় একজন সুনাগরিক নিজে যেমন অভ্যস্ত থাকেন ঠিক তেমনি এরূপ
জীবন প্রক্রিয়ার মানোন্নয়নে সে তার দক্ষতা, সামর্থ্য, সর্বোপরি জ্ঞান ব্যবহারে অগ্রসরমান।
দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় ঈরারপ ঊফঁপধঃরড়হ -এ সুনাগরিকের গুণাবলীর সঙ্গে বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ
করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো:
সুনাগরিক জনগণের সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের আশা করে,
সুনাগরিক সংবিধানে স্বীকৃত মানবিক অধিকার এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মর্যাদা দেয়;
সুনাগরিক দেশের আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদির মূল্যায়ন করে এবং এ বিষয়ে উচ্চ
ধারণা পোষণ করে;
সুনাগরিক অনুধাবন করতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে জনগণের শাসন অন্য যে কোন ধরনের
শাসন অপেক্ষা উন্নততর হবে;
সুনাগরিক বিশ্বাস করেন যে রাষ্ট্রকে কর দান করা হলো সমষ্টিগত পরিসেবার অংশ এবং
যথাসময়ে কর প্রদান করা তাই একজন সুনাগরিকের অবশ্য কর্তব্য।
অতএব বলা যায় প্রথম প্রক্রিয়ায় ঈরারপ ঊফঁপধঃরড়হ হলো গণতন্ত্রের জন্য শিক্ষা
) এবং দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় সুনাগরিক হওয়ার একটি দৃষ্টিভঙ্গী, যার সাথে কতিপয় সুনির্দিষ্ট
দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত। তা’হলে ‘সিভিক এডুকেশন’ হলো নাগরিকের সেই শিক্ষা, যে শিক্ষার
মাধ্যমে সে রাষ্ট্রের প্রতি কতিপয় দায়িত্ব ও কতর্ব্য পালনে সচেষ্ট হয় যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক
মূল্যবোধ শক্তিশালী হয় এবং রাষ্ট্র ও নাগরিক পরস্পরের নিকট একধরনের দায়বদ্ধতার সম্পর্ক তৈরী করে। সিভিক এডুকেশনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধ শক্তিশালী হয়
সিভিক এডুকেশনের ক্রমবিকাশ
প্রাচীন গ্রীসের নগর রাষ্ট্রে যখন প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র (উরৎপবঃ উবসড়পৎধপু) চালু ছিল তখন থেকেই
শিক্ষা বিষয়ক দার্শনিকরা যেমন সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ সিভিক এডুকেশনের কথা বলে
এসেছেন। পরবর্তীতে ফরাসি দার্শনিক রুশো (১৭১২-১৭৭৮), সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষাবিদ
জোহান হেনরিক পেস্টালৎসী (১৭৪৬-১৮২৭) এবং তার মতাদর্শের অনুসারী ফ্রোয়েবল, হার্বাট ও
ফিচসহ আমেরিকার শিকাগো স্কুলের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ জন ডিউট (১৮৫৯-১৯৫২) প্রমুখ সিভিক
এডুকেশনের গুরুত্বের কথা খুব জোরেসোরে বলতে শুরু করেন। গ্রীক নগররাষ্ট্রগুলোতে উন্নত সংস্কৃতি
ছিল এবং তা থাকার ফলে যুক্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিভিক এডুকেশন, সংস্কৃতি ও জ্ঞানবিজ্ঞান তখন দার্শানিকদের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল। সক্রেটিস নগররাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রজ্ঞা,
নৈতিকতা, কুসংস্কারহীনতা, সত্য উদ্ঘাটন ইত্যাদির বিস্তারিত আলোচনার মধ্যদিয়ে সিভিক
এডুকেশনের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো নগররাষ্ট্রের
নাগরিকদের মূল্যবোধ, বিজ্ঞতা, কর্তব্য পরায়ণতা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রভৃতি মানবিক গুণের উপর
ভিত্তি করে সিভিক এডুকেশনের বিষয়বস্তু নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালান। একইভাবে পে টোর উত্তরসূরী -
এরিস্টটল জ্ঞানের প্রসারতা, মৌলিকত্ব ও তার প্রভাব সম্পর্কিত আলোচনার মধ্যদিয়ে সিভিক
এডুকেশনের ভিত গড়ে দেন।
তাই প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের যুগ শেষে আজকের পরোক্ষ গণতন্ত্রে (ওহফরৎবপঃ উবসড়পৎধপু) সিভিক
এডুকেশনের গুরুত্ব বিন্দুমাত্র কমেনি বরং আধুনিক গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্রসমূহে সিভিক এডুকেশন নতুন
মাত্রা লাভ করেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সমস্যা উদ্ভুত হওয়ার মধ্যদিয়ে নাগরিক সচেতনতা যত বৃদ্ধি পেয়েছে,
সিভিক এডুকেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আরো বিস্তার লাভ করেছে।
সিভিক এডুকেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক্স সিভিক এডুকেশনের লক্ষ্য হলো একটি রাষ্ট্রে সুনাগরিক সৃষ্টি করা এবং সমাজের প্রগতিশীলতার
বিকাশকে সম্পূর্ণ করা। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক যেন জাতীয় আদর্শ, আশা-আকাক্সক্ষা ও ঐতিহ্যের
প্রতি অনুরক্ত হয় এবং স্বদেশ ও তার জনগণের কল্যাণ চেতনায় দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে গড়ে
উঠে।
সিভিক এডুকেশনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ, সাম্য, মৈত্রী,
সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, দেশপ্রেম, শ্রমের মর্যাদা, পারস্পরিক সমঝোতা ও শ্রদ্ধা
প্রভৃতির প্রতি যাতে নাগরিকের মমত্ববোধ তৈরি হয় এবং সমস্তজীবনে এর সম্যক প্রতিফলন
ঘটে, তা সিভিক এডুকেশনের অন্যতম লক্ষ্য।
মৌলিক মানবাধিকারের স্বরূপ, স্বাধীনতার সঠিক অর্থ, মানবসত্তার প্রকৃত মর্যাদাবোধ ইত্যাদি
আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কীভাবে নির্ধারিত হয় এ ব্যাপারে নাগরিককে সুস্পষ্ট ধারণা
সিভিক এডুকেশনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সামাজিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রগতির সঙ্গে নাগরিক সমাজকে সংযুক্ত
করাও সিভিক এডুকেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
স্বাধীন চিনতা, সৃজনশীলতা, সংগঠনক্ষমতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের উপর সিভিক
এডুকেশন জোর দেয়। অনুকরণ প্রবণতা, আত্মবিস্মৃতি ও চিন্তাক্লিষ্টতা ইত্যাদি পরিহারের মাধ্যমে
আত্ম-উপলব্ধি, অনুসন্ধিৎসু মনন নির্মাণ, স্বাধীনভাবে সত্যানুসন্ধানের প্রতি নাগরিকের দৃষ্টি
আকর্ষণের জোর প্রচেষ্টা চালায় সিভিক এডুকেশন।
উপর্যুক্ত উদ্দেশ্যসমূহ ছাড়াও সিভিক এডুকেশন রাষ্ট্রের ধর্মীয় নীতি, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকল
নাগরিকের সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার কথা বলে। সর্বোপরি বলা যেতে পারে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে
বসবাসকারী নাগরিকমন্ডলীর জন্যে রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সুসমন্বিত মানবজীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ বিকাশের ব্যবস্থা করাই সিভিক এডুকেশনের মূল উদ্দেশ্য। সিভিক এডুকেশনের লক্ষ্য হলো একটি রাষ্ট্রে সুনাগরিক সৃষ্টি করা
সিভিক এডুকেশনের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে গণতন্ত্রের সঙ্গে নাগরিকদের বন্ধন বেশি শক্তিশালী বলা যেতে পারে। ঐসকল
দেশে নাগরিকদের সমাজস্বীকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনে রাষ্ট্র সর্বদাই চেষ্টা
চালায়। এ প্রচেষ্টাটাই হলো নাগরিকদের সিভিক এডুকেশন দেয়া।
সিভিক এডুকেশন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক বিষয়ের পরিপূর্ণ বিকাশ চায়, এ
ছাড়াও চার ধরনের নাগরিকতার মাধ্যমে ব্যক্তিকে পূর্ণাঙ্গরূপে দেখতে চায়। এই চার ধরনের
নাগরিকতা হলো: পরিবারের নাগরিকতা, বিদ্যালয়ের নাগরিকতা, দেশের নাগরিকতা এবং
আন্তর্জাতিক নাগরিকতা। এখানেই সিভিক এডুকেশনের অনস্বীকার্যতা প্রকাশ পায়।
সিভিক এডুকেশন ব্যক্তির মনপ্রাণ ও কর্মকে গণতান্ত্রিক আদর্শের দ্বারা সিঞ্চিত করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রকৃত নাগরিক গড়ে তোলে। গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধে সিক্ত নাগরিক নিজের
এবং অন্যের স্বার্থ, অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সমভাবে সচেতন হয়। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ
জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্যার সমাধানকল্পে সচেতন অংশগ্রহণে তৎপর হয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ নাগরিকের থাকে অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার স্বপ্ন।
সারকথাঃ
সিভিক এডুকেশন নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
সিভিক এডুকেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক জাতীয় আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত এবং
দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ সাধনই সিভিক এডুকেশনের প্রধান লক্ষ্য।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন
১. সিভিক এডুকেশন হলোক. মানবতার শিক্ষা
খ. চরিত্র গঠনের শিক্ষা
গ. আদর্শ শিক্ষা
ঘ. গণতন্ত্রের বিকাশ।
২. সিভিক এডুকেশনের ভিত গড়েন কে?
ক. সক্রেটিস
খ. প্লেটো
গ. এরিস্টটল
ঘ. রুশো।
৩. The social contract গ্রন্থের লেখক কে?
ক. হ্যারিশ
খ. জোহান হেনরিক
গ. জন ডিউই
ঘ. রুশো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সিভিক এডুকেশন বলতে আপনি কি বুঝেন?
২. সিভিক এডুকেশনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সিভিক এডুকেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করুন।
উত্তরমালা: ১. ঘ, ২। গ, ৩। ক

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]