‘এশিয়ায় অমানবিকতার কলংকিত অধ্যায়ের সূচনা করেছে ইসরাইল’- ব্যাখ্যা করুন।

এশিয়া
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অশিক্ষা এশিয়ার অধিকাংশ মানুষের নিত্যসহচর। পরনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
অনেক দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত করছে। অনেক দেশই স্বাবলম্বী ও স্বকীয় সত্তা
নিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বের ৭০টি শহরের ১৬টিতে ২১ থেকে ৬০ শতাংশ
মানুষ বস্তিতে বাস করে। জানা গেছে, উন্নয়নশীল দেশের প্রতি দুই সেকেন্ডে ১ জন শিশু মৃত্যুবরণ
করে এবং একজন স্থায়ীভাবে দৈহিক পঙ্গুত্ব বরণ করে। অথচ এ সবই হয় এমন সব রোগে যা’ টিকা
প্রদান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পুষ্টিকর খাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে অতি সহজেই প্রতিরোধ করা
সম্ভব।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, পার্শ্ববর্তী দেশের প্রতি অবিশ্বাস, গণবিচ্ছিন্ন সরকার, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং
সুবিধাবাদী শাসকদের কারণে এশিয়ার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের প্রয়াস নিতান্তই স্বল্প। দারিদ্র্য
নিরসনের যথার্থ প্রয়াসের পরিবর্তে এ সকল দেশে সমরাস্ত্র আমদানির প্রতিযোগিতা চলে তীব্রভাবে।
অধিকাংশ দেশেই ভুখা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্ত্রখাতে ব্যয়বরাদ্দ।
মায়ানমারের (বার্মা) মানবাধিকার পরিস্থিতি এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক আকার ধারণ
করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুকীকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে
হয়েছে যিনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন এবং তার পিতা ছিলেন মায়ানমারের
স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা। বর্মী সামরিক বাহিনী কর্তৃক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং
গণহত্যার অভিযোগও রয়েছে। বস্তুত এশিয়ার এ দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতিকে তেমন সুখকর
বলা যায় না।
কাশ্মিরে ভারতীয় সৈন্য ও আধা সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে
অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, গণহত্যা এবং নিষ্ঠুর ও
অমানবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। সরকার গঠন ও পরিচালনায় অধিবাসীদের অংশগ্রহণের
সুযোগ ও অধিকার হরণ করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক নিপীড়ন,
বিনাবিচারে আটক, মতপ্রকাশের অধিকার হরণ, গণতান্ত্রিক চেতনা বিনষ্ট করার মত অভিযোগ রয়েছে,
যা’ কিনা মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণাপত্রের বিরোধী।
১৯৯২ সালের নভেম্বরে জাতিসংয়ের জনৈক মানবাধিকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, আফগানিস্তানে
বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১৬টি সরকার ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতা, বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের উপর হত্যা নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
১৯৯২ তাজিকিস্তানের রাজনৈতিক গোলযোগ এড়ানেরার জন্যে সে দেশ থেকে পালিয়ে আফগানিস্তানে
আসা ১শ’র বেশি তাজিক উদ্বাস্তু শীত ও অনাহারে মারা গেছে বলে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিট
জানিয়েছে। বস্তুত তৎকালীন সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে সে দেশে যুদ্ধে বহু লোকের প্রাণহানি
ঘটেছে। উদ্বাস্তু জীবনের মত অসহনীয় অবস্থায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে অসংখ্য আফগানকে। এটাও
মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
চীনে অবরোধ বিরোধী উপর্যুপরি অভিযানের ফলে গত দশকে সে দেশের কয়েদিদের উপর নির্যাতন
আরো ব্যাপক ও নির্মম আকার ধারণ করেছে। মানবাধিকার গ্রুপ এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার এক
প্রতিবেদনে জানায়, কয়েদিদের উপর নির্যাতন চালানোর জন্য যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তার
মধ্যে কয়েকটি ছিল বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত, অস্বস্তিকর অবস্থায় শৃঙ্খলিত রাখা, ক্ষুদ্র অন্ধকার
সেলে আটক রাখা, ঘুমোতে না দেয়া, এবং প্রচন্ড শীত বা গরমের মধ্যে রাখা। গ্রুপের মতে, চীনে
আইন প্রয়োগ ও বিচার ব্যবস্থা আসলে নির্যাতন ছাড়া কিছু নয়। অনেক সময় অপরাধীদের খুঁজে বের
করার জন্য নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতনের পথ বেছে
নেয়। যাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয় তাদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত এবং গরীব কয়েদি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয় চীনে কয়েদিদের পায়ে বেশিরভাগ সময শিকল পরিয়ে রাখা হয়, বেঞ্চের
উপর স্থিরভাবে বার ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়, এবং অন্য কয়েদিদের দ্বারা বেদম প্রহার করানো হয়।
রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের প্রবণতা চীনে অত্যন্ত প্রবল। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
গণতান্ত্রিক অধিকারসহ বিভিন্ন রকমের মৌলিক অধিকার সঙ্কুচিত রয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের
বিষয়টি চীনে যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
সিরিয়ায় অনির্দিষ্টকালের রাজনৈতিক বন্দিদশা“শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সংস্থা উল্লেখ করেছে যে,
সিরিয়ায় বিনা বিচারে প্রায় তিনহাজার ৮শ রাজনৈতিক বন্দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা
হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার বন্দী এমন অবস্থায় আছে যে এদের সাথে বহির্বিশ্বের কোন
সম্পর্ক নেই। এশিয়ায় অমানবিকতার কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের হাতে
সৃষ্ট ইতিহাসের নির্মম ট্র্যাজেডি ফিলিস্তিন। অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে সেখানে গৃহহীন উদ্বাস্তু
প্যালেস্টাইনিদের বুকে অমানবিকতা ও হিংস্রতার নিষ্ঠুরতম ছুরি চালাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইল অধিকৃত
গাজা ও পশ্চিম তীরে বসবাসরত হাজার হাজার প্যালেস্টাইনিদের উপর নৃশংসভাবে নির্যাতনের ও
নিস্পেষণের স্টিমরোলার চালাচ্ছে ইহুদিরা। ইসরাইলিদের হত্যা লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগের শিকার
হয়ে যে ৩০ লাখ ফিলিস্তিন গৃহহীন হয়েছিল, তাদের উদ্বাস্তু জীবনের আজও অবসান হয়নি।
এশিয়ায় এমন কোন দেশ কি আছে, যেখানে কোন না কোনভাবে মানবাধিকার কমবেশি লঙ্ঘিত
হয়নি? মার্কিন আগ্রাসনের শিকার ভিয়েতনামে আজো অস্বাভাবিক বিকলাঙ্গ মানব শিশুর জন্ম হয়।
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় সেখানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন কতখানি হয়েছে তা’ নিরূপণ করা সত্যিই কঠিন।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত দেশগুলোর অধিবাসীরা রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত। রাজা,
শেখ, আমীর বা দলীয় একনায়কত্বের নাগপাশে বন্দী সৌদি আরব, কুয়েত, আমিরাত, ইরাক,
ইয়েমেনের মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের নারীরা এ আধুনিক যুগেও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। রাজনৈতিক
নিপীড়নের মাত্রা এসকল দেশেও কম নয়। এশিয়ার চীন অধিকৃত তিব্বতে, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া,
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্য এশিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ
রয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের বিরুদ্ধেও। এসবই মধ্য এশিয়ার মানবাধিকারের অবস্থাকে আরো
অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণ ও দখল পরিস্থিতিকে আরও গুরুত্বর করেছে।
ইউরোপ
আমেরিকার নিউজ ডে পত্রিকা জানিয়েছে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার দু’টি নির্যাতন শিবিরে শত শত
বেসামরিক লোক হয় ক্ষুধা নয় তো নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে। বসনিয়ায় বিধ্বস্ত মুসলমানরা
অরক্ষিত। তাদের বাঁচানোর জন্য কেউ নেই। যেন মৃত্যু তাদের ললাটলিখন। বিড়ম্বিত ভাগ্য আর
অনিশ্চিত গন্তব্য তাদের। বসনিয়ার মুসলমানদের উপর সার্বিয়দের নির্যাতনের খবর দেখে মনে হয়
যেন সভ্যতার কসাইখানায় জবাই হচ্ছে মানবিকতার। আর উল্লাস চলছে পাশবিকতার।
সারাজেভোর দক্ষিণ পশ্চিমের মুসলিম শহর গোরাজদে থেকে একটি মেডিকেল টিম ফিরে এসে
বলেছে, তারা সেখানে দেখে এসেছেন ডাক্তাররা শিশুদের অস্ত্রোপচার করেছেন জ্ঞানশূন্য করার ওষুধ
প্রয়োগ না করেই। চিকিৎসার ন্যুনতম ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। সারা
হাসপাতাল জুড়ে আহতদের আর্তনাদ ও গোঙানি। অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে শিশুরা
হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের একজন
বিশেষ কর্মকর্তা বলেছেন, বসনিয়ায় জাতিগোষ্ঠী নির্মূলকরণ, জবরদস্তিমূলক আটক, বন্দিদের প্রতি
নির্মম আচরণ ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধ, এবং ক্রোয়েশিয়া, কসোভা ও অন্যান্য জাতিসংঘ
এলাকাগুলোতেও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এসকল ক্ষেত্রে কুখ্যাত অপরাধী ও পেশাদার
ভাড়াটে সৈন্যদের কাজে লাগানো হয়। সাবেক যুগোশ্লাভিয়ায় আলেবেনীয়, ক্রোটস, হাংগেরীয়ান ও
মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে এবং বিশেষত মুসলমানদের নির্মূল করার প্রক্রিয়া
সেখানে অব্যাহত রয়েছে, যাকে সুস্পষ্টরূপে গণহত্যা বলা যেতে পারে। সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার হত্যা,
বন্দি নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ রিপোর্টেও বলা হয়েছে, সেখানে সার্বিয়
বন্দী শিবিরে মুসলমানদের উপর পাইকারী হারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে বৃদ্ধ-
বৃদ্ধা এবং নারী-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার মানবাধিকার
লঙ্ঘন ইউরোপীয় সভ্যতার প্রতি মারাÍক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপের রুমানিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লাভাকিয়া, পোল্যান্ড, তুরস্ক, গ্রীস, জার্মানি এবং সাবেক
সোভিয়েতভুক্ত দেশসমূহ এমকি ব্রিটেনের বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্গনের অভিযোগ আছে। মনে করার
যথেষ্ট কারণ আছে যে, ইউরোপের বুকে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র সহ্য করা হবে না। বসনিয়া প্রসঙ্গে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের একটি মাত্র কথা থেকেই মানবাধিকারের প্রতি তাদের মানোভাব বুঝা
যায়। শুধু বসনিয়ায় আমরা ইউরোপীয় সভ্যতার যে নগ্ন চেহারা দেখেছি, তারপর ইউরোপে
মানবাধিকার লঙ্ঘন খবর আর খোঁজার দরকার নেই।
আফ্রিকা
আফ্রিকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। বর্ণ বৈষম্যই সেখানে
মানবাধিকার লঙ্ঘন মূল কারণ। মুষ্টিমেয় অর্থাৎ প্রায় বিশ শতাংশ সাদা মানুষের হাতে শাসিত,
নির্যাতিত নিগৃহীত হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ কালো মানুষ। পুলিশী নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন ব্যাপক ধরপাকড়ের
শিকার হওয়া সেখানকার কালো মানুষের ললাট লিখন। সরকারি বাহিনী কর্তৃক দেশের নাগরিকদের
উপর এত নির্যাতন পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। উত্তর আফ্রিকার মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া,
মৌরিতানিয়ায় ইসলামি মৌলবাদী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের চরম জেল জুলুম ও নির্যাতন করা হয়।
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ, মহামারি, অশিক্ষা ইত্যাদির কারণে আফ্রিকার অনেক দেশে মানবাধিকার কার্যকর
করা কঠিন হয়ে পড়ে পড়েছে। সে সকল দেশে মানবাধিকার রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক নিশ্চয়তা,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ইত্যাদি না থাকায় আফ্রিকার মানবাধিকার পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক
বলার উপায় নেই। তদুপরি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচার, সামরিক একনায়ক, সে সকল দেশের
মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরো পতনোন্মুখ করে তুলেছে।
সোমালিয়াতে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
এদিকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি সারাদেশ জুড়ে চলছে অব্যাহত নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস কিশোর
তরুণেরা হাতে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাহায্য সামগ্রির অধিকাংশই লুট হয়ে যাচ্ছে। জীবনের
নিরাপত্তাহীনতা, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা বেকারত্ব
ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সোমালিয়দের জীবন সংকটের মুখে। আর এ কারণেই সেখানে চলছে
মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আফ্রিকার যে সকল দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ তার
মধ্যে সোমালিয়া অন্যতম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকারের অনেকগুলো গুরুতর লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত
করেছে। এ সকল ঘটনার মধ্যে মানসিক রোগীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ঘটনাও ছিল। ১৯৯২
সালের রিপোর্টে এ সংস্থা বলেছে, ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩১ জন বন্দীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা
হয়। যাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়, তাদের অনেককেই তাদের বিচারের সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের
পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গরা বর্ণবৈষম্যের শিকার। সাম্প্রতিককালে লস
এঞ্জেলেস-এ যে বর্ণদাঙ্গা সংঘটিত হলো, তা’ কালো মানুষদের নিরাপত্তাহীনতারই সাক্ষ্য বহন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হারও কম নয়। অবশ্য পানামা, হন্ডুরাস, কোষ্টারিকা প্রভৃতি দেশে মার্কিন
সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন অনেকেই। তদুপরি ইসরাইলের অমানবিক
কার্যক্রমে মার্কিন মদদ, সাহায্য ও সমর্থনের অভিযোগ সর্বজনবিদিত। টুইন টাওয়ার আক্রান্ত হওয়ার
পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের জীবনে নেমে এসেছে অনেক দু:খ-দুর্দশা। কারণ তাদের বিশ্বাস মুসলিম
মৌলবাদী শক্তি এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
উত্তর দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার সর্বত্রই কমবেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
প্রশান্তমহাসাগর উপকুলবর্তী শহর লসএঞ্জেলেসে সংগঠিত ভয়াবহ বর্ণদাঙ্গা সে দেশের মানবাধিকার
পরিস্থিতির অবনতির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
দক্ষিণ আমেরিকাঃ লাতিন আমেরিকার এল সালভেদর, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, কোষ্টারিকা,
গুয়াতেমালা, এবং ক্যারাবিয়ান রাষ্ট্র কিউবা, জ্যামাইকা এবং হাইতিতেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের
অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে প্রভৃতি দেশসমূহও
মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অনেক দেশেই চলছে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস। রাজনৈতিক
নিপীড়নের মাত্রা এ সকল দেশে অত্যন্ত মারাত্মক। গুপ্ত হত্যার পরিমাণও বেশি। একসময় স্পেন
পর্তুগাল ও ফ্রান্সের উপনিবেশ বর্তমান লাতিন আমেরিকার দেশসমূহে স্বৈরাচার, সামরিক শাসন
সাম্রাজ্যবাদের তাবেদারি যেন তাদের ললাট লিখন। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও
ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা থেকে তারা বঞ্চিত। একনায়কতান্ত্রিক শাসন মানবাধিকারের
পরিপন্থী।
বস্তুত এ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের অবস্থা। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের কার্যক্রম মোটেই
সন্তোষজনক নয়। তাই এ অবস্থা চলতে থাকলে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রচার করনের
সত্যিই অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই বিশ্ববাসীকে বিশেষ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এ ব্যাপারে আন্তরিকতা
ও নিষ্ঠা সহকারে এগিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র কার্যকর উদ্যোগ নিতে
হবে। তাহলে পৃথিবী হয়ে উঠবে সত্যিকার অর্থে মানুষের বাসযোগ্য আর মানুষ হবে আরো মানবিক
চেতনাসম্পন্ন। মানুষের মধ্যে মানবিকবোধ জাগ্রত হলে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা সার্থক হবে।
সারকথা:
মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে এ শতাব্দীর মধ্যভাগে। প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে
চলেছে এর বয়স। ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা প্রচারের পর তার সফল
বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, গঠিত হয়েছে অনেক সংস্থা ও সংগঠন। ১৯৬৮
সালে ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় মানবাধিকারের উপর প্রথম বিশ্ব সম্মেলন। দীর্ঘ প্রায়
পঁচিশ বছর পর এ ধরনের আরেকটি বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়।
এসকল সম্মেলন, সংগঠন, সংস্থা কনভেনশন ইত্যাদির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবাধিকার বাস্তবায়ন। সাড়ে
চার দশক পর আমরা যদি আশা করি বিশ্বের সর্বত্র মানবাধিকার পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে তাহলে
সে চাওয়া কি অসঙ্গত হবে? নিশ্চয়ই নয়। সকল জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৫১ বছরে মানুষের
ন্যুনতম স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই আশা অসংগত নয়। অথচ বাস্তব অবস্থা খুবই হতাশাজনক। আজো পৃথিবীর দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ১৯৬৮ সালে মানবাধিকারের উপর প্রথম বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়-
ক. তেহরানে
খ. জেনেভায়
গ. ভিয়েনায়
ঘ, নিউ ইয়র্কে।
২. দক্ষিণ আফ্রিকায় মানবাধিকার লংঘনের মূল কারণ-
ক. ইসলামি মৌলবাদী আন্দোলন
খ. রাজনৈতিক সন্ত্রাস
গ. বর্ণ বৈষম্য
ঘ. পুলিশী নির্যাতন।
৩. মানবাধিকার লংঘনের অনেকগুলো গুরুতর দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে-
ক. জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কর্মকর্তা
খ. আমেরিকার নিউজ ডে পত্রিকা
গ. এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
ঘ. রয়টার।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ‘এশিয়ায় অমানবিকতার কলংকিত অধ্যায়ের সূচনা করেছে ইসরাইল’- ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিভাবে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে ব্যাখ্য করুন।
২. মানবাধিকারের বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির চিত্রটি মাহাদেশ ভিত্তিক সংক্ষেপে তুলে ধরুন।
উত্তরমালাঃ ১। ক ২। গ ৩। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]