জনমত গঠনের মাধ্যম বা বাহনগুলোর ভ‚মিকা আলোচনা করুন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।

জনমতের সংজ্ঞা
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে জনমতের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এল
ডবিøউ ডুব (খ ড উড়ড়ন) বলেন,“একই সামাজিক সংগঠনের সভ্য হিসেবে জনগণের মতামতই
হলো জনমত”।
কিম্বাল ইয়ং (করসনধষষ ণড়ঁহম) -এর মতে “একটি নির্দিষ্ট সময়ে জনগণ যে মতামত পোষণ করে
তাকেই জনমত বলা হয়”।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস -এর মতে “জনসম্প্রদায়ের কল্যাণ সম্পর্কে জনগণের
মতামতের সমষ্টিকে জনমত বলা হয়”। ।
অস্টিন রেনী (অঁংঃরহ জধহহু) বলেন, “জনমত হল সে সব ব্যক্তিগত মতামতের সমষ্টি যার প্রতি
সরকারী কর্মচারীবৃন্দ কিছু পরিমাণে সজাগ থাকে এবং সরকারি কার্যাবলী নির্ধারণের সময় তারা এর
গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে”।
অধ্যাপক লাওয়েল বলেন যে, “জনমত বলে অভিহিত হবার জন্য সমাজের সকলের ঐকমত্য হওয়ার
প্রয়োজন হয় না, আবার এর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত হওয়াই যথেষ্ট নয়”।
সমাজতত্ত¡বিদ মরিস্ জিনস্বার্গ-এর মতে,“সমাজের বিভিন্ন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফল হচ্ছে জনমত”।
প্রখ্যাত মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভি ও কী (ঠ ঙ কবু) -এর মতে,“জনমত হল ব্যক্তিবর্গের সে সব
মতামত যেগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা সমীচীন বলে সরকার মনে করে”।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, সরকার কেবল সে সব মতামতকেই জনমত
বলে গ্রহণ করে এবং গুরুত্ব দেয় যেগুলো সুসংগঠিত, সুদৃঢ় ও জনকল্যাণকর। জনমতের পরস্পর
বিরোধী সংজ্ঞাগুলো সমন্বয় সাধন করে আমরা জনমতের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দিতে পারি।
জনমত হল সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলী বা অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে
সুচিন্তিত ও জনহিতকর সেসব সুদৃঢ় মতামত, যেগুলো সরকারকে এবং জনগণকে প্রভাবিত করতে
সক্ষম।
জনমত সংগঠনের বিভিন্ন মাধ্যম
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নি¤œলিখিত মাধ্যম বা বাহনসমূহ জনমত সৃষ্টিতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন
করে থাকে।
মুদ্রণযন্ত্র : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুদ্রণযন্ত্র জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা
পালন করে । মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণে সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকা, পুস্তক-পুস্তিকা স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের
জ্ঞান পিপাসা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনসাধারণ দেশ বিদেশের যাবতীয়
সংবাদ অতি সহজেই জানতে পারে। সংবাদপত্র কেবল সংবাদই পরিবেশন করে না, এটি জাতীয়
সমস্যাদির উপর মতামত ব্যক্ত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংবাদপত্র দেশের বিভিন্ন সমস্যা
সম্পর্কে শিক্ষাবিদ এবং মনীষীদের প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ করে জনমত গঠনে সহায়তা করে থাকে।
এছাড়া জনগণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, আচার-অনুষ্ঠান ও বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের মতামত সংবাদপত্রে
স্থান পায়। ফলে জনগণের মতামত ও দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সরকার অবহিত হতে পারে।
সংবাদপত্রের বিরূপ সমালোচনার ভয়ে অনেক সময় সরকারও সংযতভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়।
তাই গণতন্ত্রে জনমত গঠনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংবাদপত্রের ভ‚মিকাকে আমরা কোনমতেই অস্বীকার
করতে পারি না।
সভাসমিতি বা বক্তৃতামঞ্চ (ঞযব চষধঃভড়ৎস) : সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকা, পুস্তক-পুস্তিকা প্রভৃতি
জনমত গঠনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করলেও অশিক্ষিত, নিরক্ষর ব্যক্তির নিকট এগুলোর
বিশেষ কোন আবেদন নেই। সেদিক থেকে বিচার করে নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত মানুষের মতামত
গঠনে সভা সমিতি বা বক্তৃতা মঞ্চের প্রভাব অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। গণতন্ত্রে সভা সমিতি
করার তথা মতামত প্রচারের স্বাধীনতা স্বীকৃত হওয়ার ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কিংবা
পন্ডিত ব্যক্তিগণ দেশ বিদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলী নিয়ে আালাপ আলোচনা বা বক্তৃতা করেন।
এ সমস্যা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত সভা-সমিতিতে আলোচিত হবার ফলে জনসাধারণ সেসব
আলোচনা বা সমালোচনার ভিত্তিতে স্বাধীনভাবেই নিজেদের মতামত গঠন করতে কিংবা প্রকাশ করতে
সক্ষম হয়। এদিক থেকে বিচার করে আমরা সভা-সমিতিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ জনমত সংগঠনের
একটি অপরিহার্য মাধ্যম বলে বিবেচনা করতে পারি।
রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র : জনমত সংগঠনে
রেডিও, টেলিভিশন ও চলচিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। কেবল মাত্র সভা-সমিতির
মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণকে প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। বর্তমানে রেডিও,টেলিভিশন ও
চল”িত্র প্রভৃতির মাধ্যমে অনেক সহজে জনমত গঠিত ও প্রকাশিত হতে পারে। এগুলোর সাহায্যে
শিক্ষিত,স্বল্পশিক্ষিত, কিংবা অশিক্ষিত সব মানুষকেই সহজে প্রভাবিত করা সম্ভব, রেডিও ও টেলিভিশন
দেশ-বিদেশের নানা সংবাদ প্রচারিত হয়। সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলী সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক
দলের নেতৃবৃন্দ এবং পন্ডিত ব্যক্তিগণ বিস্তারিত আলোচনা করতে পারেন। আবার চল”িত্রের জনপ্রিয়তা
উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জনমত গঠনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমরা লক্ষ্য করে থাকি।
রাজনৈতিক দল (চড়ষরঃরপধষ চধৎঃরবং) : আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল হচ্ছে
জনমত গঠনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একাধিক রাজনৈতিক দলের
অস্তিত্ব স্বীকৃত হওয়ায় প্রতিটি দল, সংবাদপত্র, সভা-সমিতি, পুস্তক-পুস্তিকা, প্রচারপত্র ইত্যাদির
মাধ্যমে নিজ নিজ দলীয় নীতি ও কর্মসূচী প্রচার করে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করে। সরকারি দল
যেমন নিজ সাফল্যের বিস্তৃত বিবরণ প্রচার করে তেমনি বিরোধী দলগুলো সরকারের ব্যর্থতার বিবরণ
দিয়ে সরকারের সমালোচনা করে নিজেদের পক্ষে জনমত সংগঠনের জন্য সচেষ্ট হয়। এভাবে দলীয়
প্রচারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। তারা
পরস্পর বিরোধী মতামত বিচার বিশ্লেষণ করে নিজেরা মতামত গঠন করতে পারে।
আইন সভা : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক
দলের প্রতিনিধিবৃন্দ বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনা, প্রশ্নোত্তর প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজের নানাবিধ
সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, একে অপরের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। আইনসভার
যাবতীয় আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক প্রভৃতি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারিত
হয়। ফলে জনগণ এগুলোর সত্যাসত্য নিরূপণ করে স্বাধীনভাবে মতামত গঠন করতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো
জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে থাকে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের
আজকের যারা ছাত্রছাত্রী তাদের অনেকেই আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা বা নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সুতরাং সুশিক্ষা দানের উপর ভবিষ্যৎ দিনের জাতীয় চরিত্র অনেকাংশে নির্ভরশীল । শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে শান্ত পরিবেশে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ দেশ-বিদেশের নানা সমস্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা
করেন। অনেকসময় তাঁরা যুক্তিতর্কের সাহায্যে যে ধ্যানধারণা বা আদর্শকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করেন
ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই সেই ধ্যানধারণা আদর্শের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তাদের ভবিষ্যৎ
কার্যাবলীর মধ্যে।
পেশাগত সংঘ : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে বিভিন্ন
পেশাতে নিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের পেশাগত দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য নানা প্রকার সংঘ বা ইউনিয়ন
গড়ে তোলে। এসব সংঘ বা সংগঠন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেবল পেশাগত দাবি-দাওয়া পূরণের
আন্দোলনের সাথে নিজেদের যুক্ত রাখে। এ সকল সংঘের কার্যকলাপের ফলে মানুষের রাজনৈতিক
জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সুতরাং জনমত সংগঠনের ক্ষেত্রে এসব পেশাগত সংঘগুলির ভ‚মিকাকে আমরা
কোনভাবেই খাটো করে দেখতে পারি না।
ধর্মীয় সংঘ (জবষরমরড়ঁং ঙৎমধহরুধঃরড়হং) : ধর্মীয় সংঘগুলো জনমত সৃষ্টির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ
ভ‚মিকা পালন করে থাকে। অনেক ধর্মীয় নেতা সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন এবং রাজনৈতিক বক্তব্য
রাখেন। দেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে নানা মতামত দিয়ে তাদের ভক্তদের প্রভাবিত করে থাকেন।
অ্যালমন্ড এবং পাওয়াল (অষসড়হফ ধহফ চড়বিষষ) বলেন,“ধর্মীয় সংঘের কার্যকলাপের ফলে
মানুষের রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়”।
নির্বাচন : নির্বাচনও জনমত সংগঠনে সহায়তা করে থাকে। দেশের নির্বাচনের সময়
প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নিজ নিজ মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করার জন্যে দেশের সমস্যাগুলোর উপর
ভিত্তি করে তাদের বিবৃতির মাধ্যমে জনমত গঠন করে থাকে।
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি : রাজনৈতিক সামাজিকীরণের
অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবার। পিতা-মাতার রাজনৈতিক ধ্যানধারণা বা
আদর্শের দ্বারা অনেক সময় শিশুমন প্রভাবিত হয়। পরবর্তী জীবনে পরিবার কিংবা পরিজনের এ প্রভাব
ব্যক্তির রাজনৈতিক জীবনকে অনেকাংশে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বন্ধু-বান্ধব, ক্লাব
ইত্যাদি জনমত সৃষ্টিতে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে ছেলেমেয়েরা বন্ধুবান্ধবদের সাথে সমাজের সমকালীন সমস্যবলী সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করে। এর
ফলে জনমত সৃষ্টি হতে পারে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সুষ্ঠু ও শক্তিশালী জনমত সংগঠন ও প্রকাশের জন্যে একদিকে
যেমন জনমতের মাধ্যমগুলোর প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনি মতামত গঠন ও প্রকাশের উপযোগী
পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজন। তা’না হলে সুষ্ঠু ও সবল জনমত সংগঠিত ও প্রকাশিত হতে পারবে না।
জনমতের গুরুত্ব
একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। জনমতই গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল। সুস্থ,
সুসংগঠিত এবং সদাজাগ্রত জনমত গণতন্ত্রের সাফল্যের মূলমন্ত্র। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের উৎকর্ষ
নির্ভর করে জনমতের উৎকর্ষের উপর। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মূলত জনমতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং
জনমতের দ্বারা পরিচালিত। জনমতকে উপেক্ষা করে শাসনকার্য পরিচালনা করা কোন সরকারের
পক্ষেই সম্ভব নয়। যে দেশে জনমতের প্রভাব যত বেশী সে দেশের শাসনব্যবস্থা ততবেশী
গণতান্ত্রিক।
এবারে আমরা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব:
গণতন্ত্রে জনমতই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী : গণতন্ত্রে জনমতই হল সার্বভৌম ক্ষমতার
আধার। জনমতের মাধ্যমেই জনসাধারণের বা সমষ্টির কল্যাণকামী ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়ে থাকে। এ
সমষ্টিগত ইচ্ছাই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। অর্থাৎ জনমতের মধ্যেই সার্বভৌম ক্ষমতা
নিহিত থাকে এবং জনমতের মাধ্যমেই তা মূর্ত হয়ে ওঠে।
সরকারকে গতিশীল করে : একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত সরকারকে গতিশীল করতে
সাহায্য করে। রক্ষণশীল মনোবৃত্তি সম্পন্ন সরকারি দল অনেক সময় প্রগতিশীল নীতির বিরোধিতা
করে থাকে। গণতন্ত্রে প্রবল জনমতের চাপে সরকার তার ঘোষিত নীতি ও পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে
বাধ্য হয়।
জনস্বার্থে আইন প্রণীত হয় : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সকল ব্যক্তির স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ
করার সুযোগ থাকে। ফলে এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকার জনমতের মাধ্যমে জনগণের আশাআকাক্সক্ষা বুঝতে পারে। এ অবস্থায় জনস্বার্থে আইন প্রণীত হয় এবং জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ
করা যায়।
সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত স্বৈরাচারের পথরুদ্ধ করে।
গণতন্ত্রে শাসকবর্গকে জনমতের প্রতি সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় এবং জনমতের সাথে সংগতি রক্ষা
করে সরকারি নীতি নির্ধারণ ও শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। জনমতের চাপ ও নিয়ন্ত্রণ অগ্রাহ্য
করে কোন সরকারই খেয়াল-খুশিমত আচরণ করতে পারে না।
সরকারের স্থায়িত্ব : জনমতের আনুক‚ল্য সরকারকে স্থায়ী ও শক্তিশালী করে। জনমতের সমর্থন ছাড়া
কোন সরকারই দৃঢ় ও স্থায়ী হতে পারে না।
গণতন্ত্রের স¦ার্থে জনমতের সমর্থন দরকার : জনমত গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে অপরিহার্য।
জনমতের বিরুদ্ধে সরকারি কার্যে সাফল্য আশা করা যায় না। প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার জনমতের
অনুগামী হয়। এখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তারা
জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের মতামত অনুসারেই শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
এ কারণে আমরা বলতে পারি যে,“সজাগ ও তী² বুদ্ধিসম্পন্ন জনমত গণতন্ত্রের প্রথম উপদান।”

সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সমগ্র বিশ্বই জনমত
কর্তৃক শাসিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এর কার্যাবলীর
মূলে রয়েছে আন্তর্জাতিক জনমত। সুতরাং আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শক্তিশালী ও সদাজাগ্রত
জনমতের ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য।
সারকথা:
জনমত হচ্ছে আধুনিক গণতন্ত্রের প্রাণ।তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে ‘জনমত পরিচালিত
শাসনব্যবস্থা’ বলে অভিহিত করা হয়। সাধারণ অর্থে আমরা জনমত বলতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রশ্নে ও
সমস্যাবলীর উপর জাতীয় কল্যাণার্থে জনগণের প্রভাবশালী মতামতের সমষ্টিকে বুঝি। অন্যভাবে বলা
যায়, জনমত হচ্ছে জনগণের সঠিক কল্যাণার্থে নিয়োজিত সাধারণের বলিষ্ঠ ও যুক্তিপূর্ণ মতামত।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. “জনসম্প্রদায়ের কল্যাণ সম্পর্কে জনগণের মতামতের সমষ্টিকে জনমত বলা হয়” -সংজ্ঞাটি কে
দিয়েছেন ?
ক. অস্টিন রেনী
খ. মরিস্ জিনস্বার্গ
গ. রবার্ট পীল
ঘ. লর্ড ব্রাইস।
২. কোন্টি জনমত সংগঠনের মাধ্যম?
ক. আইনসভা
খ. পেশাগত সংঘ
গ. সংবাদপত্র
ঘ. উপরের সবগুলো।
৩. সর্বপ্রথম ‘জনমত’ কথাটির রাজনৈতিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় -
ক. রুশোর রচনার মধ্যে
খ. প্লেটোর রচনার মধ্যে
গ. জন লকের রচনার মধ্যে
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
৪. “জনমতের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমতই যথেষ্ট নয়” - একথা কে বলেছেন ?
ক. অধ্যাপক লাওয়েল
খ. মরিস্ জিনস্বার্গ
গ. এল ডবিøউ ডুব
ঘ. ভি ও কী।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. জনমত বলতে কি বুঝেন?
২. “গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত সরকারকে গতিশীল করে” - ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জনমত গঠনের মাধ্যম বা বাহনগুলোর ভ‚মিকা আলোচনা করুন।
২. আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
উত্তরমালা ঃ ১। ঘ ২। ঘ ৩। ক ৪। ক ৫। ক

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]