রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা (উবভরহরঃরড়হ ড়ভ চড়ষরঃরপধষ
রাজনৈতিক দিক থেকে সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া হল রাজনৈতিক দীক্ষিতকরণের একটি প্রক্রিয়া।
‘রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ হল বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সহায়ক শিক্ষা গ্রহণের একটি
প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনুক‚ল মনোভাব, মূল্যবোধ ও মতাদর্শে একজনকে
শিক্ষিত ও দীক্ষিত করার প্রক্রিয়াই হল ‘রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’।
অধ্যাপক অ্যালান বল’ শীর্ষক গ্রন্থে
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে বলেন, অর্থাৎ অধ্যাপক
বলের মতানুসারে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মনোভাব ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠা ও প্রসারিত করাই হল রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ।
ডেভিড ইস্টন ও জ্যাক ডেনিস তাঁদের ‘র্ষক রচনায় রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সম্পর্কে বলেন, “রাজনৈতিক
সামাজিকীকরণ হল একটি বিশেষ পথ । এই পথে সমাজ তার রাজনৈতিক জ্ঞান, মনোভাব,
রীতিনীতি ও মূল্যবোধকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত করে।”
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (এ অ অষসড়হফ ধহফ ঈ ই চড়বিষষ) তাঁদের ‘ শীর্ষক গ্রন্থে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করেছেন। এ দুই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর অভিমত অনুসারে “রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ
হল একটি বিশেষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও পরিবর্তন সাধন
সম্ভব হয়। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সাহায্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের মধ্যে রাজনৈতিক
সংস্কৃতিকে সঞ্চারিত করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে
তোলা হয়। আবার রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধরন বা প্রকৃতির পরিবর্তনও করা যায় রাজনৈতিক
সামাজিকীকরণের মাধ্যমে।”
সিজেল শীর্ষক রচনায় বলেচেন, " সিজেল-এর মতে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে যে মনোবৃত্তি ও মূল্যবোধের সৃষ্টি
হয় তা’ দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল গতিসম্পন্ন করে তোলে। শীর্ষক গ্রন্থে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সর্ম্পকে আলোচনা করেছেন। ওয়াসবির
অভিমত অনুসারে “নাগরিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজকর্মে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের প্রাক্কালে বা তাঁর
আগে যে পদ্ধতিতে রাজনৈতিক মূল্যবোধ অর্জন করে তাকে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বলে”।
উপরি উক্ত সংজ্ঞাগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আমরা বলতে পারি যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ
হল একটি নিরবিচ্ছিন্ন বা অবিরাম পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পথে
বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগ্রত করা যায়। আবার এ পদ্ধতির মাধ্যমে
প্রাপ্ত বয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ভ‚মিকার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মূখ্য মাধ্যমসমূহের ভূমিকা
রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সকল
দেশেই বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি দেশবাসীর মনোভাব, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভংগি গড়ে তোলার
চেষ্টা করা হয়। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম বা বাহনগুলো বিশেষ ভুমিকা
পালন করে থাকে। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপারে মূখ্য মাধ্যমসমূহের ভূমিকা সর্ম্পকে আমরা
নিচের আলোচনা থেকে অবহিত হব।
পরিবার : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা প্রাথমিক ও
তাৎপর্যপূর্ণ। পরিবারের পরিমন্ডলের মধ্যেই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সুস্পষ্ট ও প্রচ্ছন্ন প্রক্রিয়া
ক্রিয়াশীল থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তির ভবিষ্যতের অভিপ্রেত ভূমিকার বীজ পারিবারিক পরিবেশের মধ্যেই
উপ্ত হয়। ব্যক্তির বিভিন্ন মৌলিক দাবি পূরণের প্রধান উৎস হল পরিবার। পিতামাতার সাথে শিশু
নিজেকে একাত্ম করে। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সর্ম্পকে শিশু পিতামাতার দৃষ্টিভংগি ও মূল্যবোধ
গ্রহণ করে। এ কারণে ব্যক্তি মানুষের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা হল
কেন্দ্রীয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম ও কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের
সংগে শিক্ষার্থীদের সর্ম্পক তাদের জীবন ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব
বিস্তার করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক জীবনের অলিখিত রীতি-নীতি সঞ্চারিত
করে। শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রমে পৌরবিদ্যা ও প্রশাসন সম্পর্কিত পাঠ্যসূচীও অন্তর্ভুক্ত থাকে যা’
শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শ গড়ে তোলে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে
বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভ‚মিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
পেশাগত সংগঠন ( আধুনিকালের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন
পেশাগত সংঘ (যেমন: শ্রমিক সংঘ, কৃষক সংগঠন, বণিক সংঘ প্রভৃতি) রাজনৈতিক দলের সংগে
সংযোগ বজায় রাখে এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে ।
এর ফলে পেশাগত সংগঠনের সদস্য - সমর্থকদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পৃষঠপোষক রাজনৈতিক দলের
মতাদর্শ,মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সঞ্চারিত হয়। এভাবে পেশাগত সংঘগুলোও রাজনৈতিক
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রেখে থাকে।
গণ মাধ্যম : আধুনিককালে গণ- সংযোগের মাধ্যমগুলো (সংবাদ পত্র, রেডিও,
টেলিভিশন, চলচ্চিত্র প্রভৃতি) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা এবং আনুসংগিক ভাষ্য এসকল গণমাধ্যমের সাহায্যে
জনসাধারণের নিকট পৌঁছে যায়। এর ফলে রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনগণের
সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনার পরিধি প্রসারিত হয়। এর ফলে
রাজনৈতিক বিষয়ে জনসাধারণ আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক কাজকর্মে সক্রিয়
অংশগ্রহণের প্রবণতা গড়ে উঠে।
রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের
ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের সুনির্দিষ্ট মতাদর্শ, লক্ষ্য ও কর্মসূচি দ্বারা
জনগণকে রাজনৈতিক বিষয়াদি, ধ্যান-ধারণা, সমস্যা ও অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করে। এর ফলে
রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, সচেতনতা সম্প্রসারিত হয় এবং বুদ্ধিগত বিকাশ ঘটে।
আবার রাজনৈতিক দল জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি করে
এবং এ অংশগ্রহণের সূত্রে জনগণের মধ্যে আনুগত্যের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে
রাজনৈতিক দলের ভ‚মিকা সম্পর্কে অধ্যাপক অ্যালান বল বলেন,
অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের গোষ্ঠীই হল অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী। আধুনিক
সমাজে এ ধরনের অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী ব্যক্তি মানুষের রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করে এবং রাজনৈতিক
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধবের রাজনীতি বিষয়ক
মনোভাব ও মতামত সমবয়স্কদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষেত্রে সদস্য ব্যক্তিরা অংশীদার হয়। এর ফলে তাদের মধ্যে যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও মিথস্ক্রিয়ার
সৃষ্টি হয়, তা’ রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ধর্মীয় সংগঠন : বস্তুত মানব সমাজে ধর্মের ভ‚মিকা বিশেষভাবে
তাৎপর্যপূর্ণ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আচার-অনুষ্ঠানসমূহ ব্যক্তি মানুষের
জীবনধারা প্রভাবিত করে ভীষণভাবে। তাই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান তথা ধর্মীয় সংগঠনের ভ‚মিকাকে অস্বীকার করা য়ায় না।
সারকথা:
যে-কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও সাফল্যের স্বার্থে নাগরিকদের মধ্যে এর অনুক‚লে
মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও চিন্তাধারা গড়ে তোলা আবশ্যক। এর পরিবর্তে নাগরিকদের মধ্যে যদি
প্রতিরোধের মনোভাব বা সক্রিয় বিরোধিতার মানসিকতা থাকে, তাহলে প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে কোন
রাজনৈতিক ব্যবস্থার দীর্ঘস্থায়িত্ব বা সফলতা আশা করা যায় না। আর এ রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব
ও সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপর। এ কারণেই আধুনিক
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ‘রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ বিষয়টির উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা
হয়। সামাজিকীকরণ হল শিক্ষা গ্রহণের একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া।
মূলত মানুষের সামাজিক প্রকৃতির উন্মেষের উপায়কে বলা হয় সামজিকীকরণ। অর্থাৎ সামাজিকীকরণ
হল এমন এটি সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষের সামাজিক প্রকৃতির বিকাশ সাধন সম্ভব
হয়।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. “নাগরিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজকর্মে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের প্রাক্কালে বা তার আগে যে
পদ্ধতিতে রাজনৈতিক মূল্যবোধ অর্জন করে তাকে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বলে।”
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সম্পর্কে এ সংজ্ঞাটি কে দিয়েছেন?
ক. ডেভিড ইস্টন
খ. এস এল ওয়াসবি
গ. জে সি জোহারি
ঘ. সি বি পাওয়েল।
২. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম নিচের কোন্টি?
ক. অন্তরঙ্গগোষ্ঠী
খ. পরিবার
গ. গণমাধ্যম
ঘ. উপরের সবগুলো।
৩.
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের জন্যে রাজনৈতিক দলের ভ‚মিকা প্রসংগে বলের এ বক্তব্যের জন্য
কোন্টি সঠিক?
ক. ডরফবৎ ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ
খ. খবধফবৎংযরঢ়
গ. চবড়ঢ়ষব'ং পড়হংবহঃ
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝেন?
২. রাজনৈতিক সামজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভ‚মিকা সম্পর্কে। সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা দিন।
২. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মূখ্য মাধ্যমসমূহের ভ‚মিকা র্বণনা করুন।
উত্তরমালা ঃ ১। খ ২। ঘ ৩। ক
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত