রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কি বুঝেন? একটি সমাজে বিদ্যমান ‘অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি’র প্রকৃতি সংক্ষেপে

রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা
‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ সম্পর্কিত ধারণার প্রথম প্রবক্তা হলেন জি এ অ্যালমন্ড (এ অ অষসড়হফ)। তাঁর
মতে,রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে “কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতির প্রতি মনোভাব ও
দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিকৃতি”মতে, “পরীক্ষালব্ধ বিশ্বাস, প্রকাশযোগ্য প্রতীক এবং মূল্যবোধের
সমষ্টিই হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি যা, রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের পরিধি ব্যাখ্যা করে।”
লুসিয়ান পাই (খঁপরধহ ড চুব) এর মতে, “রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও
অনুভ‚তির এমন এক সমষ্টি যা’ রাজনৈতিক কার্যাবলীকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং এদের মধ্যে এক
প্রকার সুশৃঙ্খল অভিব্যক্তি ঘটায়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই এদের অন্তর্নিহিত ও মনস্তাত্তি¡ক দিকের সার্বিক প্রকাশ ঘটে।”
এলান বল (অষধহ জ ইধষষ) বলেন যে,“রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজের সে সকল মনোভাব, আবেগ,
বিশ্বাস ও মূল্যবোধ নিয়ে গঠিত হয়, যা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ও রাজনৈতিক প্রশ্নাদির সাথে
সম্পর্কযুক্ত। এ সকল মনোভাব সচেতনভাবে পোষণ নাও করা যেতে পারে, কিন্তু এগুলো রাজনৈতিক
ব্যবস্থার সাথে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্কের ভিতর অন্তর্নিহিত থাকেতে পারে”
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ বলতে এমন
কতকগুলো মনোভাব, বিশ্বাস ও অনুভ‚তিকে বুঝায় যা’ কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শৃংখলা ও তাৎপর্য
দান করে এবং যা’ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার মূল্যবোধ ও বিধিবিধান সৃষ্টি করে। কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবধারা ও রীতি-নীতি সবকিছুই রাজনৈতিক সংস্কৃতির
অন্তর্ভুক্ত।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস
অ্যালমন্ড ও ভারবা তাঁদের শীর্ষক গ্রন্থে
একটি সমাজে তিন প্রকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির উলে খ করেছেন। নিচের আলোচনা থেকে এ তিন -
শ্রেণীর রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্কে আমরা জনার চেষ্টা করব।
সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণত অনুন্নত
দেশগুলোতে এবং সনাতন সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে জনসাধারণের মধ্যে চেতনা ও আগ্রহের অভাব বা
ব্যাপক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয় সেখানে এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করে। রাজনৈতিক
জীবনধারা ও জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের প্রবল অনীহার কারণে সংকীর্ণতাবাদী
রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ব্যাপারেও সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। সংকীর্ণতাবাদী
রাজনৈতিক সংস্কৃতি অবসানের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ও রাজনৈতিক যোগাযোগ

অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এ ধরনের
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী ভ‚মিকা গ্রহণ করে
থাকে। ব্যক্তিমাত্রই নিজেকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে
মনে করে। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ। অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক
সংস্কৃতিতে নাগরিক মাত্রই তার অধিকার, কর্তব্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকে।
নিস্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে
রাজনৈতিক বিষয়াদিতে জনগণের ভ‚মিকা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এখানে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা
সম্পর্কে এবং তাদের জীবনধারার উপর রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণ
নিষ্ক্রিয় থাকে। রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উৎসাহ থাকলেও এখানে জনগণ সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের
প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টা করে না। বরং সরকারের অধিকাংশ সিদ্ধান্তকেই বিনা
প্রতিরোধে কর্তৃত্ব সম্পন্ন বলে স্বীকার করে নেয়া হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আইন,
সরকারি সুযোগ-সুবিধা এসকল ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়
না।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত উপরিউক্ত তত্ত¡গত বিচার-বিশ্লেষণ সত্তে¡ও একথা বলা
দরকার যে, কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই কোন বিশেষ শ্রেণীর রাজনৈতিক সংস্কৃতি বর্তমান
থাকে না। প্রত্যেক রাজনৈতিক সংস্কৃতিই হল আসলে মিশ্র সংস্কৃতি । নাগরিক
সংস্কৃতি গঠিত হয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিশুদ্ধ তিনটি শ্রেণীর সংমিশ্রণের
মাধ্যমে। বিশুদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই দেখা যায় না।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব
যে-কোন দেশের রাজনেতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর ও ঘনিষ্ঠ।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা থেকে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবহিত হওয়া যায়।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া-পদ্ধতিসুশৃংখল ও অর্থপূর্ণ
হয়ে ওঠে। দেশের রাজনৈতিক পদ্ধতিকে সুশৃংখল ও অর্থবহ করে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতি
সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে থাকে। এছাড়া যে সকল নিয়মনীতি রাজনৈতিক অনুমানের দ্বারা
রাজনৈতিক ব্যবস্থার আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় তাও রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত হয়।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে লুসিয়ান পাই অর্থাৎ রাজনৈতিক আদর্শ
ও রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি-রীতি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংগীভ‚ত থাকে। রাজনৈতিক
সংস্কৃতি ব্যক্তিভিত্তিক ও সমষ্টিভিত্তিক বিচার বিশে ষণের মধ্যে সংযোগ সাধন করে। -
রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও তার প্রকৃতি
পরিধি ও প্রক্রিয়া অনুধাবন করা যায়। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ ও আচার-আচরণের মধ্যে
যুক্তিসংগত ও অযৌক্তিক বিভিন্ন বিষয় বা উপাদান থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিচার-বিশে ষণের -
মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ভ‚মিকা সম্যকভাবে বুঝা যায়। বিদ্যমান রাজনৈতিক
ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ থেকে তাদের সচেতনতা ও সক্রিয়তার মান অনুধাবন করা যায়। মূলত
ব্যক্তিগোষ্ঠী ও সমগ্র সমাজের রাজনৈতিক সচেতনার মাত্রা রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে
থাকে।
স্বাধীনতাপ্রাপ্ত উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিচার বিশ্লেষণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ
সকল অনগ্রসর দেশে বিদ্যমান রাজনীতির প্রতি দেশবাসীর মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস রাজনৈতিক
দৃষ্টিভঙ্গি যদি প্রতিক‚ল হয়, তাহলে সেসকল দেশে বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা,
উপজাতি ও গোষ্ঠীগত বিচার-বিবেচনার প্রাধান্য জাতিগত স্বার্থ বিকাশের বিষয়টিকে করে তোলে
গুরুত্বহীন। দেশ ও জাতির প্রতি আনুগত্যের অভাব দেখা দেয়। দেশও দেশবাসীর সামগ্রিক উন্নতি
বাধাপ্রাপ্ত হয়। সত্ত¡ার স্বাতন্ত্র্যের প্রেক্ষিতে অনগ্রসর দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আলোচনার
প্রাসঙ্গিকতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
সারকথা:
যে কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক, সংস্কৃতির বিচার-বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একটি জাতির রাজনৈতিক মূল্যবোধ বিশ্বাস ও দৃষ্টিভংগির পরিচয় মিলে সে জাতির রাজনৈতিক
সংস্কৃতিতে। মানুষের সামাজিক জীবনে যেমনি সামাজিক সংস্কৃতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তার রাজনৈতিক জীবনেও রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ সম্পর্কিত ধারণার প্রথম প্রবক্তা হলেন-
ক. জি এ অ্যালমন্ড
খ. সিডনি ভারবা
গ. অ্যালান বল
ঘ. লুসিয়ান পাই।
২. “পরীক্ষালব্ধ বিশ্বাস, প্রকাশযোগ্য প্রতীক ও মূল্যবোধের সমিষ্টই হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি যা’
রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের পরিধি ব্যাখ্যা করে।” সংজ্ঞাটি কার?
ক. লুসিয়ার পাই- এর
খ. সিডনি ভারবার
গ. জে সি জোহারির
ঘ. সি বি পাওয়েল-এর।
৩. ঞযব ঈরারপ ঈঁষঃঁৎব গ্রন্থটি যৌথভাবে রচনা করেছেন-
ক. অ্যালমন্ড ও কোলম্যান
খ. অ্যালমন্ড ও ভারবা
গ. হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল ও ডেভিড ট্রুম্যান
ঘ. মাইরন ওয়েনার ও স্যামুয়েল পি হান্টিংটন।
৪. এ অ অষসড়হফ ও ঝ ঠবৎনধ তাঁদের রচনায় একটি সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণত কয় শ্রেণীর
রাজনৈতিক সংস্কৃতির উল্লেখ করেছেন?
ক. চার শ্রেণীর
খ. তিন শ্রেণীর
গ. পাঁচ শ্রেণীর
ঘ. দুই শ্রেণী।
৫. জনসাধারণের মধ্যে চেতনা ও আগ্রহের অভাব বা ব্যাপক উদাসীনতা সাধারণত লক্ষ্য করা যায়
কোন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে?
ক. মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে
খ. সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে
গ. নিস্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে
ঘ. উপরের সবগুলোতেই।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কি বুঝেন?
২.একটি সমাজে বিদ্যমান ‘অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি’র প্রকৃতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. “যে-কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর ও
ঘনিষ্ঠ।” - এ উক্তির আলোকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব তুলে ধরুন।
২. একটি সমাজে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি কত প্রকারের ও কি কি? আলোচনা করুন।
উত্তরমালা ঃ ১। ক ২। খ ৩। খ ৪। খ ৫। খ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]