সংবিধান কি? উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।

রাষ্ট্র একটি চিরন্তন, স্থায়ী এবং সর্বোচ্চ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক অবস্থা থেকে
বর্তমান পর্যায়ে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে বিকাশ ঘটাতে হয়েছে। বর্তমান সভ্য
জগতে রাষ্ট্র মানব সমাজের অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক
আইন ও পবিত্র দলিল। সংবিধানের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের একটি
গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অঙ্গ হচেছ সরকার। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের পারস্পরিক সম্পর্ক
নির্ধারিত হয়ে থাকে। সংবিধানের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়। সংবিধানের সংজ্ঞা:
যে কোন ধরনের সরকারের উৎস হচ্ছে সংবিধান। গণতান্ত্রিক হোক আর সমাজতান্ত্রিক হোক কিংবা
রাজতান্ত্রিক হোক-সকল সরকারের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। কোন রাষ্ট্রের শাসন পদ্ধতি কিরূপ তা
জানা যায় সংবিধান থেকে। সংবিধানকে রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি বলা হয়। প্রত্যেক সংবিধানই সমসাময়িক
কালে সমাজে বিরাজমান বাস্তব পরিস্থিতি এবং প্রচলিত বিশ্বাসের ফল স্বরূপ। হাল ছাড়া যেমন নৌকা
চলে না, তেমনি সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্র অচল হয়ে পড়ে । সংবিধান হচ্ছে জাতির পবিত্রতম দলিল।
সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। সংবিধান সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ও
পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে। এটা সরকারের বিভিন্ন-বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ
ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন ও পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সংবিধানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
এরিস্টটলের মতে-
অর্থাৎ কোন রাষ্ট্র নিজেকে পরিচালনার জন্য যে পথ বেছে নেয় তাই সংবিধান।
অধ্যাপক ফাইনার বলেন, 'রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পরস্পরের সমন্ধ হলো সংবিধান। ফাইনারের
মতে মানুষ জীবনের অনিশ্চয়তাগুলোকে দূর করে নিরাপত্তা চায়, সংবিধান এই নিরাপত্তা দান করে।
কে.সি হুইয়ার বলেন, সংবিধান হচ্ছে সেই বিধানসমূহ যার দ্বারা কি উদ্দেশ্যে এবং কোন বিভাগের মাধ্যমে
সরকারি ক্ষমতা পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করে।
সি.এফ.ষ্ট্রং সংবিধানের সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়মের
সমষ্টি যা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং এ দু’য়ের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
উলসের ভাষায় ‘শাসন্ত্র হচ্ছে কতকগুলো মৌলিক বিধানের সমষ্টি যা দ্বারা সরকারের ক্ষমতা ও
শাসিতের অধিকার নির্ধারিত হয়।’
কার্ল জে ফ্রেডরিক গ্রন্থে সংবিধানকে জঁষবং ড়ভ
মধসব এর সাথে তুলনা করেছেন। জঁষবং ড়ভ মধসব দ্বারা যেমন খেলাধূলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
তেমনি শাসনতন্ত্রের দ্বারা সরকার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। এ সকল সংজ্ঞা থেকে
সংবিধানের প্রকৃত স্বরূপ অনুধাবন করা যায়।
অতএব সংবিধান বলতে রাষ্ট্র, সরকার এবং সরকরের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক
ক্ষমতাবন্টন এবং শাসক শাসিতের অধিকার, দায়িত্ব ও পরিচালনা সম্বলিত কতকগুলো মৌলিক
নীতিমালার সমষ্টিকে বুঝায়।
সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ
প্রচলিত শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী সংবিধান সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে (ক) লিখিত সংবিধান ও (খ)
অলিখিত সংবিধান।
লিখিত সংবিধান: লিখিত সংবিধান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট এটা সজ্ঞান প্রচেষ্টার ফল। লিখিত সংবিধান
সহজে পরিবর্তন করা যায় না। এটি অনমনীয় বা দুস্পরিবর্তনীয়। যেমন মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের ও
বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত সংবিধানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অলিখিত সংবিধান: ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফল হল অলিখিত সংবিধান। এটি অস্পষ্ট এবং অনেক
ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট নয়। অলিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায়, এটি সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয়।
ব্রিটেন বিশ্বের মধ্যে অলিখিত শাসনতন্ত্র নিয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এ কথা আজ
স্বীকৃত যে বর্তমান জগতে কোন শাসনতন্ত্রই সম্পূর্ণভাবে লিখিত কিংবা অলিখিত নয়।
লর্ড ব্রাইস সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির ভিত্তিতে সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনিয়-এ
দু’ভাগে ভাগ করেছেন। সুপরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে কোন জটিল পদ্ধতি অবলম্বন
করতে হয় না। পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপখাওয়ানোর জন্যে এটি সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
এটা রাজনৈতিক জীবনের গতির সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে পারে।
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সুস্পষ্ট, সৃদৃঢ়, স্থিতিশীল ও সুনির্দিষ্ট। এটি সহজেই পরিবর্তন করা যায় না
বলে নিশ্চয়তার প্রতীক। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার জন্য অধিকতর উপযোগী।
উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ
সংবিধানে কতকগুলো উলে খযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলে সেই সংবিধানকে উত্তম বা আদর্শ -
সংবিধান বলা যায়। যে সকল গুণাবলী বা আদর্শ থাকলে একটি সংবিধানকে উত্তম সংবিধান বলা যায়,
তা নিæে আলোচনা করা হল:
প্রথমত: উত্তম সংবিধান সুস্পষ্ট, যুক্তিভিত্তিক ও আদর্শ ভিত্তিক হবে।
দ্বিতীয়ত: সংবিধানকে যুগের সাথে মানুষের মন-মানসিকতার সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পরিবর্তনের সাথে সাথে উত্তম শাসনতন্ত্রও
এগিয়ে চলে।
তৃতীয়ত: একটি উত্তম সংবিধানে লিখিত এবং অলিখিত সুপরিবর্তনীয় এবং দুস্পরিবর্তনীয় উপাদান
থাকতে হবে।
চতুর্থত: উত্তম সংবিধানের নাগরিকের মৌলিক মানবিক অধিকার সন্নিবেশিত থাকবে। যেমন সম্পত্তি
রক্ষা, জীবন রক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি।
পঞ্চমত: অল্পকথায় সংবিধান ভালভাবে লিখিত থাকবে। শাসনতন্ত্রের ভাষা হবে প্রাঞ্জল, সাবলীল ও
সুন্দর। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) বিশপৃষ্ঠা ব্যাপী সংবিধান বিশ্বের মধ্যে অন্যতম
শ্রেষ্ঠ সংবিধান।
ষষ্ঠত: শাসনতান্ত্রিক প্রাধান্য থাকতে হবে। শাসনতন্ত্র সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ও সার্বভৌম।
সপ্তমত: শাসনতান্ত্রিক প্রাধান্যকে রক্ষা করার জন্যে বিচার বিভাগীয় প্রাধান্য থাকতে হবে।
উত্তম শাসনতন্ত্র প্রসঙ্গে ফাইনারের বক্তব্য হচ্ছে ‘সংবিধানে এমন কিছু থাকবে না যা কখনও কোন
উপায়ে পরিবর্তন করা যাবে না, আবার সংবিধানে এমন কিছু থাকবে না যা সব সময় পরিবর্তন করা
যাবে-এটা উত্তম সংবিধানের লক্ষণ।’ উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের তিনশ‘ বছরের
ইতিহাসে মাত্র ৩৩টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে।
কে.সি.হুয়ার বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এফ.উইলোবির মতে উত্তম সংবিধান প্রণয়ন
অবশ্যই একটি সহজ সংশোধন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। আদর্শ সংবিধান হবে সামাজিক ঐতিহ্য
ও আশা আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি।
সরকথা: সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল। আইনসভা শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ,
নির্বাচকমন্ডলী এবং শাসক-শাসিতের মধ্যকার ক্ষমতাগত সম্পর্কের নির্দেশনা থাকে সংবিধানে। যে
সকল মৌলিক নীতিমালা রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও পদ্ধতি নির্ণয় করে তাকে সংবিধান বলে। সংবিধান রাষ্ট্রের
দর্পণ বা আয়নাস্বরূপ। যে দেশ বা জাতির সংবিধান যত উন্নত আদর্শের অনুসারী সে জাতি তত
উন্নত। একটি উত্তম সংবিধান অবশ্যই সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয়। তবে একথা সত্য কোন সংবিধানই সম্পূর্ণ লিখিত বা অলিখিত কিংবা সুপরিবর্তনীয় বা দুষ্পরিবর্তনীয় নয়। সংবিধানের নাগরিকের মৌলিক মানবিক অধিকার সন্নিবেশিত থাকবে
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. সংবিধান বা শাসনতন্ত্র হচ্ছেক. রাষ্ট্রের সাধারণ আইন
খ. রাষ্ট্রের মৌলিক আইন
গ. রাষ্ট্রের বিশেষ আইন
ঘ. আন্তর্জাতিক আইন।
২. সরকার পরিচালিত হয়ক. শাসনতন্ত্রের দ্বারা
খ. সাধারণ আইনের দ্বারা
গ. স্পেশাল আইনের দ্বারা
ঘ জরুরি আইনের দ্বারা।
৩. ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ ধঃ এড়াবৎহসবহঃ ধহফ উবসড়পৎধপু গ্রন্থের লেখক কে ?
ক. এরিস্টটল
খ. ফাইনার
গ. কেসি হুইয়ার
ঘ. কার্ল জে ফ্রেডরিক।
৪. অলিখিত সংবিধান হচ্ছেক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
খ. যুক্তরাষ্ট্রের
গ. ভারতের
ঘ. বাংলাদেশের।
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. সংবিধান কি?
২. উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. ক, ৩. ঘ, ৪. খ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]