এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন। আধুনিক সরকারের শ্রেণী বিভাগ বর্ণনা করুন।

সরকারের শ্রেণীবিভাগ
প্রাচীনকাল থেকে আধুনিকাল পর্যন্ত যুগে যুগে বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। যে
সমস্ত রাষ্টবিজ্ঞানী সরকারের আদি রূপ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন তাদের মধ্যে হেরোডোটাস,
সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটলের নাম বিশেষভাবে উলে খযোগ্য। তবে প্রাচীনকালের শ্রেণীবিভাগের -
মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের শ্রেণীবিভাগটি তাৎপর্যমন্ডিত। সক্রেটিস ও প্লেটোর অনুকরণে
এরিস্টটল সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন।
গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল দু’টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। প্রথমটি
হল সংখ্যানীতি এবং দ্বিতীয়টি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যনীতি। সংখ্যানীতির ভিত্তিতে সরকারকে তিনি তিনটি
ভাগে বিভক্ত করেছেন যেমন১. একজনের শাসন ২. কয়েকজনের শাসন ৩. বহুজনের শাসন। উদ্দেশ্যনীতির ভিত্তিতে সরকারকে
দু’টিভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন ১. স্বাভাবিক ২. বিকৃত
এরিস্টটল কর্তৃক সরকারের শ্রেণীবিভাগের
ছক:
সংখ্যানীতি সরকার উদ্দেশ্যনীতি
সরকারের স্বাভাবিকরূপ সরকারের বিকৃতরূপ
একজনের শাসন রাজতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র
কয়েকজনের শাসন অভিজাততন্ত্র ধনিকতন্ত্র
বহুজনের শাসন পলিটি গণতন্ত্র
নীতি অনুযায়ী উপরি উক্ত ছক থেকে বুঝা যায় যে রাষ্ট্রের ক্ষমতা যখন একজনের হাতে থাকে এবং
শাসক যখন সকলের কল্যাণে সে ক্ষমতা পরিচালনা করেন তখন তাকে রাজতন্ত্র বলে। শাসন ক্ষমতা
যখন কয়েক জনের হাতে থাকে এবং সে ক্ষমতা জনগণের স্বার্থে পরিচালনা করা হয় তখন তাকে বলা
হয় অভিজাততন্ত্র। আবার শাসন ক্ষমতা যখন বহুজনের হাতে থাকে এবং তা যখন সকলের কল্যাণে
পরিচালিত হয় তখন তাকে পলিটি বলা হয়। এরিস্টটলের মতে পলিটি হল উত্তম সরকার। মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর শাসন ব্যবস্থাকে তিনি পলিটি বলে বর্ণনা করেছেন ও উদ্দেশ্য নীতি অনুযায়ী জনসাধারণের
উন্নয়ন কল্যাণে সরকার পরিচালিত হলে এরিস্টটল তাকে সরকারের স্বাভাবিক রূপ বলেছেন। কিন্তু
সরকার জনসাধারণের কল্যাণকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ বা গোষ্ঠী স্বার্থে পরিচালিত হলে
তাকে তিনি সরকারের বিকৃত রূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এরিস্টটলের শ্রেণীবিভাগ আধুনিক যুগে অচল। তিনি রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে
পারেননি। বর্তমান যুগে সরকারের রূপ ও প্রকৃতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এরিস্টটল মূলত নগর
রাষ্ট্রের সাথে পরিচিত ছিলেন। তাই আধুনিক সরকারের ধারণা তার শ্রেণীবিভাগে প্রতিফলিত হয়নি।
তার সরকারের শ্রেণীবিভাগ ছিল রাষ্ট্রেরই শ্রেণীবিভাগ। তিনি গণতন্ত্রকে বিকৃত সরকার বলে উল্লেখ
এরিস্টটলের মতে পলিটি হল উত্তম সরকার
করেছেন। কিন্তু বর্তমানকালে গণতান্ত্রিক সরকার হচ্ছে আধুনিক চিন্তাধারার বিকাশে অনুপ্রেরণার
উৎসস্থল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ
আধুনিককালে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তাদের মধ্যে বøুন্টসলি,
ম্যাকাইভার, ম্যারিয়ট ও লিককের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন স্টিফেন লিকক। লিককের শ্রেণীবিভাগকে সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্ট যুক্তিসংগত
এবং আধুনিক শ্রেণীবিভাগ বলে গণ্য করা যায়। আমরা এখন লিককের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা
করব।
প্রথমত: স্বার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান এবং এর প্রয়োগবিধির উপর ভিত্তি করে সরকারকে তিনি দু’টি
শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যথা-১. গণতন্ত্র, ২. স্বৈরতন্ত্র। রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা যখন জনসাধারণের
উপর ন্যস্ত থাকে এবং জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে তখন তাকে গণতন্ত্র
বলে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের ক্ষমতা যখন এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভ‚ত থাকে এবং তা নিজের ইচ্ছেমত
প্রয়োগ করে তখন তাকে স্বৈরতন্ত্র বলে।
দ্বিতীয়: রাষ্ট্র প্রধানের ক্ষমতালাভের নীতি ও পদ্ধতির ভিত্তিতে তিনি গণতান্ত্রিক সরকারকে দু’ভাগে
ভাগ করেছেন। যেমন-১. নিয়মতান্ত্রিক সরকার, ২. প্রজাতান্ত্রিক সরকার। নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে রাজা
রাষ্ট্রপ্রধান হলেও প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে।
যুক্তরাজ্যের শাসন ব্যবস্থা-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপ্রধান যখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের
মাধ্যমে নির্বাচিত হন তাকে প্রজাতান্ত্রিক সরকার বলে। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।
তৃতীয়ত: আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনি গণন্ত্রকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত
সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায়
শাসন বিভাগ আইন সভার নিকট দায়ী থাকে। একটি মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা
পরিচালিত হয। যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রিটেনে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি
শাসিত সরকারে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী নয়। এখানে শাসনভার ন্যস্ত থাকে
রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টের উপর। মন্ত্রিপরিষদ তাদের কাজকর্মের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট দায়ী থাকেন।
রাষ্ট্রপতি আইন সভার নিকট দায়ী নন। যেমন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
চতুর্থত: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে তিনি দু’ভাগে বিভক্ত
করেছেন। যথা-এক কেন্দ্রীক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা যখন
কেন্দ্রের উপর ন্যস্ত হয় তখন সে সরকারকে এক কেন্দ্রিক সরকার বলা হয়। যেমন বাংলাদেশ
সরকার। আবার সংবিধান অনুযায়ী যখন কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করা হয়
তখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলা হয়। যেমন-আমেরিকার ও কানাডার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।
স্বৈরতন্ত্রকে কর্তৃপক্ষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে তিনি সরকারকে তিনভাবে বিভক্ত করেছেন। যথা১. নিরঙ্কুশ রাজন্ত্র, ২. একনায়কতন্ত্র, ৩. সামরিক কতিপয়তন্ত্র। কর্তৃত্বের প্রকৃতি ও ব্যাপকতার
ভিত্তিতে স্বৈরতন্ত্রকে আবার কর্তৃত্ববাদী ও সর্বাত্মকবাদী এ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। আধুনিকতা প্রবণ
কর্তৃত্ববাদী সরকার আবার সামরিক ও বেসামরিক এই দু’ধরনের হতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিফেন
লিকক আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এভাবে সরকারের শ্রেণীবিভাগ উপস্থাপন করেছন।
সারকথা: প্রাচীনকালে যারা সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন তাদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের
শ্রেণীবিভাগটি গুরুত্বের দাবীদার। তিনি সংখ্যা ও নীতির উপর ভিত্তি করে সরকারের শ্রেণী বিভাগ
করেছেন। বর্তমান যুগে সরকারের রূপ ও প্রকৃতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিককালে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিফেনের যৌক্তিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে সরকারের তাৎপর্যমন্ডিত শ্রেণীবিভাগ
করেছেন। তিনি শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের সম্পর্ক, কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে সরকারের বাস্তবসম্মত শ্রেণীবিন্যাস করেছেন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. দু’টি মূলনীতির উপর সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন কে ?
ক. সক্রেটিস
খ. পে টো -
গ. এরিস্টটল
ঘ. হেরোডোটাস।
২. এরিস্টটলের মতে উত্তম সরকার কোনটি ?
ক. গণতন্ত্র
খ. রাজতন্ত্র
গ. অভিজাতন্ত্র
ঘ. পলিটি।
৩. সরকারের সর্বাধুনিক শ্রেণীবিভাগ করেছেন কে ?
ক. রুশো
খ. গার্নার
গ. মন্টেস্কু
ঘ. লিকক।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন:
১. এরিস্টটল কোন ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
২. আধুনিক সরকারের শ্রেণী বিভাগ বর্ণনা করুন।
উত্তারমালা: ১. গ, ২. ঘ. ৩. ঘ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]