বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা এখন শুধু শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ কেন্দ্রীক নয়। রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার,
ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ, ডাক ব্যবস্থা এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট প্রভৃতি আধুনিক প্রযুক্তির
মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে নিয়ে এসেছে মানুষের দোরগোড়ায়। দক্ষ ও মেধাবী
শিক্ষককে দিয়ে একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা এবং জ্ঞানের ব্যাপারে প্রসার
ঘটানোর ক্ষেত্রে দূরশিক্ষণ শিক্ষা পদ্ধতির ভ‚মিকা অনস্বীকার্য।
মানুষের নিরলস গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনার ফসল হচ্ছে দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি। দূরশিক্ষণ বলতে
সাধারণ অর্থে দূরে বসে শেখার কাজটিকে বুঝানো হয়। এই দূরে বসে শেখার কাজটি মূলত নিজে
নিজে শেখারই কাজ। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রধানত শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর নৈকট্য বা সান্নিধ্য এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিক্ষক এখানে ছাত্র-ছাত্রীর সামনে
সরাসরি পাঠ-উপস্থাপন করেন। দূরক্ষিণ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা মূলত নিজে পড়ে নিজে শিখেন।
শিক্ষকের সশরীরে উপস্থিতি কিংবা সরাসরি সহযোগিতা প্রদানের সুযোগ এখানে কম।
দূরশিক্ষণ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে লিখিত পাঠ্য বই পড়ে। টিউটোরিয়াল ক্লাসে যোগ দিয়ে,
টিভি বা রেডিওর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান দেখে বা শুনে শিক্ষালাভ করে থাকেন। সার্বক্ষণিক
শিক্ষকের প্রয়োজন যেন না থাকে সে উদ্দেশ্যেই স্বশিক্ষণ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়। আমরা বলতে পারি
বিশেষভাবে তৈরি উপকরণের মাধ্যমে যে শিক্ষা প্রদান করা হয় থাকে তাকে দূরশিক্ষণ বলা হয়।
দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মূল কথা হল ঘরে বসে পাঠ শেখা। শিক্ষার্থী সুবিধামত আপন গতিতে পড়াশুনা
করবেন।
দূরশিক্ষণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত করে;
শিক্ষার বিষয় ও সময় অনেক প্রসারিত;
শিক্ষার্থীর দায়িত্ব ও স্বাধীনতা অনেক বেশি;
শিক্ষকের সান্নিধ্য প্রায় অনুপস্থিত;
সহপাঠীদের সাথেও যোগাযোগ কম;
বিশেষভাবে এডুকেশনাল টেকনোলজির ব্যাপক ব্যবহার;
বিশেষভাবে লেখা বইগুলো শিক্ষকের ভ‚মিকা পালন করে;
নিজের সুযোগ ও সময়মত পড়া।
মড্যুলার পদ্ধতি
শিক্ষাদান পদ্ধতি আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টায় মড্যুলার পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। মড্যুলার
পদ্ধতি একটি দূরশিক্ষণ পদ্ধতি। দূরশিক্ষণ ও মড্যুলার পদ্ধতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্বশিক্ষণ পাঠের
জন্য বইগুলো মড্যুলার পদ্ধতিতে লিখা হয়। মড্যুল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ পাঠসামগ্রী। এতে
দূরে বসে শেখার কাজটি
মূলত নিজে নিজে
শেখারই কাজ।
মড্যুল একটি
স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ
পাঠসামগ্রী।
পাঠ্য বিষয় এমনভাবে সাজানো থাকে যাতে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তু সহজে আয়ত্ত করতে পারে। এ
পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বইগুলো একাধারে পাঠ্যবই ও শিক্ষকের ভ‚মিকা পালন করে। বইগুলোতে
পাঠ, বাড়ির কাজ মূল্যায়ন এমনকি পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয় এমনভাবে লেখা থাকে যে মনে হয়
শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট ছকে ফেলে পাঠদান করা হচ্ছে। তাই মড্যুল পদ্ধতিতে লেখা বইগুলোকে
চৎড়মৎধসসবফ বই বলা চলে। এখানে শিক্ষার্থীকে পাঠে আগ্রহী, পাঠ অনুধাবনে সহায়তা, পাঠের
দৈনন্দিন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণ করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে।
এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টায় শিখতে পারে এবং নিজের শেখার সময় অনুযায়ী শেখার স্বাধীনতা
লাভ করে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে মড্যুল হচ্ছে নিজে নিজে শেখার একটি সুন্দর স্বশিক্ষণ পদ্ধতি।
পাঠ সামগ্রী শেখার সময় মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করার জন্যে শিক্ষক বা অন্যকোন বিজ্ঞ
ব্যক্তির উপস্থিতি নেই। এ জন্যে পাঠগুলোকে সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচনা করতে হয়।
পাঠসামগ্রীর গুণগত মানের দিকেও লেখককে অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে। পাঠ বিণ্যাস সময় খেয়াল
রাখতে হবে যেন বিষয়বস্তু সহজ থেকে কঠিনের ক্রম অনুসারে সাজানো হয়। এতে শিক্ষার্থী এক পাঠ
থেকে পরবর্তী পাঠে যাওয়ার জন্যে আগ্রহী হবেন।
একটি ভাল মড্যুলে নিæলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত বলে শিক্ষাবিদগণ মনে করেন
মড্যুল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ পাঠসামগ্রী;
মড্যুল শিক্ষার্থীদের পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি করবে;
মড্যুল বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত হবে;
মড্যুলের ভাষা সহজ সরল, সঠিক ও সুস্পষ্ট হবে;
উপস্থাপনায় ছবি, চার্ট গ্রাফের ব্যবস্থা করা উচিত;
প্রশিক্ষণ সামগ্রী এমন হতে হবে যাতে শিক্ষার্থীপ্রতিটি ধাপ পাঠ করার পর মূল্যায়ন করতে পারে;
বিষয়বস্তু ছোট ছোট পাঠে সাজাতে হবে।
স্বশিক্ষণ পাঠসামগ্রীর লেখার ধরন প্রচলিত পাঠসামগ্রীর চেয়ে একটু ভিন্নতর হয়ে থাকে। মড্যুলার
পদ্ধতিতে পাঠের বিষয়বস্তুকে কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা হয়। ইউনিট হলো একটি অধ্যায়।
তিন ক্রেডিটের কোর্সকে ৯-১২টি ইউনিটে ভাগ করা হয়। ইউনিটের সাধারণ উদ্দেশ্য তিনটি:
১. জ্ঞান, ২. দক্ষতা ও ৩. দৃষ্টিভংগী।
ইউনিটগুলোকে কয়েকটি পাঠে সুবিন্যস্ত করা হয়। ইউনিটের শুরুতে থাকে ভুমিকা এবং পাঠের
শুরুতে থাকে উদ্দেশ্য। একটি পাঠে ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে বলে ধরে নেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের
কাছে একটি পাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রথাগত ক্লাসের সমান ধরা হয়। এ হিসাবে ৪৫ মিনিটের
১৫টি পাঠ নিয়ে একটি ক্রেডিট ঘণ্টা নির্ধারিত হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন একটি পাঠ অতিরিক্ত বড়
না হয়। প্রতিটি পাঠের শুরুতে লেখককে পাঠের উদ্দেশ্য লিখতে হয়। এ উদ্দেশ্যকে আচরণিক উদ্দেশ্য
বলা হয়। নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আয়ত্ব করলে শিক্ষার্থী কি জানতে পারবে তা বিশেষভাবে লেখা থাকবে।
কোর্স টীম
দূরশিক্ষার জন্যে লিখিত পাঠসামগ্রী সাধারণত একটি দলবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল। এ দলকে কোর্স টীম বলা
হয়। কোর্স লেখক, সমন্বয়কারী, রচনাশৈলী সম্পাদক, রেফারী, গ্রাফিক ডিজাইনার ও কম্পিউটার
অপারেটর প্রমুখ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কোর্স টীম গঠন করা হয়।
১. সমন্বয়কারী: বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যনতরীন একজন শিক্ষক এই দায়িত্বে থাকেন। তিনি কোর্সটির
সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন এবং গুণগত মানের দিকে লক্ষ্য রাখেন।
২. কোর্স লেখক: কোর্স লেখক হবেন কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনিই প্রধান ভ‚মিকা পালন করে
থাকেন।
দূরশিক্ষার জন্যে
লিখিত পাঠসামগ্রী
সাধারণত একটি
দলবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল
মড্যুল হচ্ছে একটি
সুন্দর স্বশিক্ষণ
পদ্ধতি।
৩. রচনাশৈলী সম্পাদক: লেখকের কাছ থেকে কোর্সের পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা থেকে বইটির চ‚ড়ান্ত
রূপ দেওয়ার কাজটি করেন রচনাশৈলী সম্পাদক।
৪. সম্পাদনা: একটি বইয়ের গুণগত মান নির্ভর করে সম্পাদকের উপর। পাঠ সামগ্রীর যথার্থ কিনা
উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, বিন্যাসক্রম যোগসূত্র ও শিরোনাম অর্থপূর্ণ কিনা এ বিষয়গুলো
সম্পাদক যাচাই করেন। নিæের বিষয়গুলো সম্পাদনার অন্তর্ভুক্ত:
উদ্দেশ্য ও পাঠের গ্রহণ যোগ্যতা যাচাই করা।
তথ্যের শুদ্ধতা যাচাই করা।
বানানের শুদ্ধতা।
৫. রেফারি: রেফারি কোর্সের বিষয়বস্তু যথার্থ কিনা এ ব্যাপারে রেফারি মতামত দিয়ে থাকেন।
রেফারী একজন বিষয় বিশেষজ্ঞ।
৬. গ্রাফিক ডিজাইনার: বইয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় ছবি, চিত্র, গ্রাফ, কার্টুন এ সব ব্যাপারে
লেখককে পরামর্শ ও সহায়তা দান করে থাকেন।
৭. কম্পিউটার অপারেটর: বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আধুনিক পদ্ধতিতে কম্পিউটার কম্পোজ
এবং অলংঙ্করণ করে থাকেন।
এভাবে কোর্স টীমের মাধ্যমে গুণগত ও মানসম্মতভাবে বই এর কাজ সম্পন্ন করা হয়।
সারকথাঃ
বর্তমান দুনিয়ায় দূরশিক্ষণ শিক্ষা পদ্ধতির ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দূরক্ষিণ পদ্ধতিতে মুদ্রিত পাঠসামগ্রী
এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টায় পড়া-লেখা করে শিক্ষনীয় বিষয় শিখতে
পারে। শেখার ব্যাপারে শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য সহযোগিতা শিক্ষার্থীগণ সাধারণত খুব একটা
পায় না। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। তাদের শেখার জন্যে লাইব্রেরি,
ল্যাবরেটরি বা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা উন্মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীরা নিজের উদ্যোগে সে সকল
সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেরা শিক্ষা সম্পন্ন করবে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন
১. দূরশিক্ষণ কাজটি মূলতক. ঘরে বসে শেখার কাজ
খ. নিজে নিজে শেখার কাজ
গ. বই পড়ার কাজ
ঘ. রেডিও শোনার কাজ।
২. মড্যুলার পাঠসামগ্রী কোন ভ‚মিকা পালন করে ?
ক. শিক্ষকের
খ. বইয়ের
গ. বই ও শিক্ষকের
ঘ. বিদ্যালয়ের।
৩. ইউনিট হলক. একটি পাঠ
খ. একটি অধ্যায়
গ. ভ‚মিকা
ঘ একটি মড্যুল।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. দূরশিক্ষণ বলতে কি বুঝায় ?
২. দূরশিক্ষণের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন।
৩. মড্যুলার পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তরমালা: ১. খ, ২. গ ও ৩. খ।
সহায়ক গ্রন্থ
১. ড. একে এনামুল হক, সালমা করিম
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত