জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকগণের ভ‚মিকা আলোচনা করুন।

জাতীয় প্রতিরক্ষার ধারণা
জাতীয় প্রতিরক্ষার সাথে জাতীয় নিরাপত্তার ধারণা গভীরভাবে যুক্ত। জাতীয় নিরাপত্তার দুটি দিক:
একটি অভ্যন্তরীণ, অন্যটি বহি:আক্রমণ সংক্রান্ত। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের বিদ্রোহ,
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও নাশকতামূলক তৎপরতা থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সংকট দেখা দিতে
পারে। অপরদিকে, অন্য যে কোন দেশের আক্রমনজনিত কারনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে।
অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কিংবা বহি: আক্রমণ যে কোন কারণেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংকটাপন্ন কিংবা
বিপর্যস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে । নিরাপত্তা সংকটের সকল ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যে
জাতী-রাষ্ট্রসমূহ জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মুলত: ভৌগোলিক ও জাতিগত সংহতি রক্ষা
এবং জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেবার জন্যে নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনী সমেত
যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় সংক্ষেপে তাকে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা যায়। জাতীয়
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নৌ,সেনা ও বিমান বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন সহায়তাকারী বাহিনী থাকে।
মূল বাহিনী ও সহায়তাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব
জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি-স্বরূপ। যদিও সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের অন্যান্য
উপাদানের মতো দৃশ্যমান নয়, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। এমনকি সার্বভৌমত্ব
অক্ষুন্ন না রাখতে পারলে রাষ্ট্রের অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখা যায় না। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব যেমন সার্বভৌমত্বের
উপর নির্ভরশীল, সার্বভৌমত্ব তেমনি জাতীয় প্রতিরক্ষার উপর নির্ভরশীল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার
করলে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় প্রতিরক্ষার উপর নির্ভর করেই টিকে থাকতে পারে।
আমরা জানি, সার্বভৗমত্বের দুটি দিক থাকে। এর একটি হল রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও ক্রিয়াকলাপের
উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং অপরটি হল দেশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার সামর্থ। এই উভয় ক্ষেত্রে
সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তির উপর। জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তি দুর্বল হয়ে
পড়লে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না। এ কারণে প্রতিরক্ষা শক্তি ছাড়া রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে
না। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় প্রতিরক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয়
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুধাবনের পর অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনী কি ধরনের ভ‚মিকা পালন
করে তা উল্লেখ করা প্রয়োজন। জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী শান্তির সময়ে, অভ্যন্তরীণ সংকটকালে এবং
যুদ্ধকালীন সময়ে ভিন্ন ধরনের ভ‚মিকা রাখে।
কান্তিকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে দেশের সীমানা পাহারা দেয়। এর ফলে
দেশ ও জনগণ নিরাপত্তা ভীতি থেকে চিন্তা মুক্ত থাকে। অভ্যন্তরীণ সংকটকালে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক
দুর্যোগ কিংবা রাষ্ট্রীয় ঐক্য বিপন্ন হবার মতো পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনী সিভিল প্রশাসনের সাথে
একযোগে কাজ করে। যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী তার পেশাদারী যোগ্যতা ও দক্ষতা
নিয়ে শক্রপক্ষের আক্রমণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়।
রাষ্ট্রীয় জীবনে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর উল্লেখিত ভ‚মিকার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
যে কোন রাষ্ট্রেরই নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য।
জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকের ভ‚মিকা
জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকের ভ‚মিকা আলোচনা করার প্রার¤েভই ‘নাগরিকতা’ সম্পর্কে আলোকপাত
করা দরকার। সংক্ষেপে বলা যায় যে, নাগরিক হল রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, যারা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য
প্রকাশ করে। শুধু আনুগত্য প্রকাশই নাগরিকতার জন্য যথেষ্ট নয়, নাগরিকদের রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার
এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকের ভ‚মিকা আলোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের
ভ‚মিকাকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ এ দুইভাগে বিভক্ত করে উপস্থাপন করা যায়।
জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকদের পরোক্ষ ভ‚মিকা হল :
১. নাগরিকগণ যদি রাষ্ট্রীয় ঐক্য রক্ষা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখে, তাহলে তা জাতীয়
প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
২. দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি নাগরিক সাধারণের সচেতনতা ও ব্যাপক আগ্রহ জাতীয়
অস্তিত্বকে দুর্ভেদ্য করে রাখে−যা জাতীয় প্রতিরক্ষার মৌলিক ভিত্তি।
৩. সংকট কিংবা যুদ্ধকালে নাগরিকগণ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি নৈতিক সমর্থন এবং প্রতিরক্ষা
বাহিনীকে উৎসাহ প্রদান করতে পারে। এতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি পায়।
৪. সাধারণভাবে নাগরিকগণ কর ও রাজস্ব পরিশোধ করে এবং বিশেষভাবে প্রতিরক্ষা কর প্রদান
করে। নাগরিক সাধারণের কর হতে প্রাপ্ত অর্থের সাহায্যে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও
তাকে শক্তিশালী করা হয়। অর্থাৎ নাগরিকগণই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আর্থিক উৎস।
৫. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্যে সেনানিবাস গড়া, মহড়া অনুষ্ঠান কিংবা কোন ধরনের
সামরিক পরীক্ষা মূলক কাজে নাগরিকগণ ভ‚মি হস্তান্তরসহ সার্বিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা হল :
জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকদের উল্লেখিত এ সকল পরোক্ষ ভ‚মিকা ছাড়াও প্রত্যক্ষ কিছু ভ‚মিকা
রয়েছে। এগুলো হল১. নাগরিকদের মধ্য থেকেই প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের বাছাই ও নিয়োগ দেয়া হয়।
অর্থাৎ নাগরিকদের মধ্য থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
২. দুর্যোগ কিংবা যুদ্ধকালে নাগরিকগণ নিয়মিত বাহিনীর সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বা
প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে যোগদান করে থাকে।
৩. যুদ্ধকালে শক্রপক্ষের অবস্থান, চলাচল ও প্রস্তুতি সম্পর্কে কোন তথ্য পেলে সচেতন
নাগরিকগণ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তৎক্ষণাৎ তা জানিয়ে দিতে পারে।
৪. যুদ্ধের সময় নাগরিকগণ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জন্যে রাস্তা,
ব্রীজ ইত্যাদি পাহারার ব্যবস্থা করতে পারে।
৫. সামরিক বাহিনীর অবস্থান এবং সামরিক স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তার জন্যে নাগরিকগণ অনেক
সময় মানব বেষ্টনী গড়ে তোলে ও ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৬. যুদ্ধকালে বা জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকগণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যে খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি
সরবরাহ করে এবং আহত সৈন্যদের চিকিৎসার জন্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখতে পারে।
৭. অনেক সময় প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে গণ বাহিনী (চবড়ঢ়ষবং অৎসু) গড়ে তোলা হয়। এক্ষেত্রে
নাগরিকগণ এ বাহিনীতে যোগদান করে।
৮. কোন কোন ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং দেয়া হয় যাতে প্রয়োজনে
তারা সম্মুখ সমরেও অবতীর্ণ হতে পারে।
৯. যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার জ্ঞান অর্জন ও প্রযুক্তি
আহরণের মাধ্যমে নাগরিকগণ “নিবারক ব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে পারে।
১০. সাধারণ নাগরিক সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আক্রমণকারী শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্ব-জনমত গঠন করে এবং
গণবিক্ষোভ সংগঠিত করে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে। এর ফলে জাতীয় প্রতিরক্ষা
ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা হয়।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভ‚মিকার কারণে নাগরিকগণ জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অপরিহার্য
অংশে পরিণত হয়েছে। নাগরিকদের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষে দেশের
নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব রক্ষা করা স¤ভব নয়। কাজেই জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকদের ভ‚মিকার গুরুত্বকে
কোনভাবেই খাটো করে দেখা যায় না।
সারকথাঃ
অভ্যন্তরীণ ও বহি:আক্রমণজনিত নিরাপত্তার প্রয়োজনে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য
হয়ে ওঠে। শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যতিত রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা এবং স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শান্তিকালীন সময়ে দেশের ভেতরে অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে এবং
যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুর বিরুদ্ধে মরণপন লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করা জাতীয় প্রতিরক্ষা
বাহিনীর মৌলিক দায়িত্ব। জাতীয় প্রতিরক্ষায় সাধারণ নাগরিকগণও সহযোগী শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কি কারণে নিরাপত্তা সংকট দেখা দেয়?
ক) আকাশ সীমা লংঘন
খ) তারকা যুদ্ধ কর্মসূচী
গ) বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন
ঘ) পারমানবিক কর্মসূচী।
২। সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার নির্ধারক শক্তি কোনটি?
ক) জাতীয় মূল্যবোধ
খ) জাতীয় প্রতিরক্ষা
গ) জাতীয় গণমাধ্যম
ঘ) জাতীয় সংস্কৃতি।
৩। যুদ্ধকালীন সময়ে ‘নিবারক ব্যবস্থা’ কারা গড়ে তুলেন?
ক) পদাতিক বাহিনী
খ) প্যারা মিলিটারী ফোর্স
গ) বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ
ঘ) নাগরিকগণ।
উত্তর: ১. গ, ২. ক, ৩. ঘ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন:
১। জাতীয় প্রতিরক্ষা বলতে আপনি কি বুঝেন?
২। জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী শান্তি ও যুদ্ধের সময় কি ধরনের ভ‚মিকা রাখে?
৩। জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী যুদ্ধকালীন সময়ে কি ধরনের ভ‚মিকা রাখে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। জাতীয় প্রতিরক্ষায় নাগরিকগণের ভ‚মিকা আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]