সমাজে অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার কারণগুলো কি? সমাজ থেকে অপরাধ দূরীকরণের উপায়সমূহ

অপরাধ হচ্ছে অবাঞ্ছিত আচরণ। মানুষের বাঞ্ছিত বা অবাঞ্ছিত আচরণকে আমরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ
থেকে বিচার করতে পারি। যেমন, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজে প্রচলিত বিধিবিধান বা মূল্যবোধ
বিরোধী আচরণ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আবার ধর্মীয় বিধানে যা’ করতে আদেশ বা নিষেধ করা
হয়েছে তার পরিপন্থী কাজ অপরাধরূপে গণ্য। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ কাজকে অপরাধ
বলা হয়। তবে সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে রাষ্ট্রীয়
আইনের মাপকাঠিতে অবৈধ আচরণকে সর্বজনীনভাবে অপরাধ বলে ধরা হয়। এ প্রসংগে আমরা
উল্লেখ করতে পারি যে, সামাজিক বিধি-বিধান ও মূল্যবোধ, বিভিন্ন ধর্মের অনুশাসন এবং রাষ্ট্রীয় আইন
দেশ-কাল ভেদে পরিবর্তনশীল। কাজেই সে অনুসারে অপরাধের মাপকাঠিও পরিবর্তনশীল। এক
সময়ে এক সমাজে যে কাজকে অপরাধ মনে করা হয় ভিন্ন সমাজে এবং অন্য সময়ে তা নাও হতে
পারে। যেমন আমাদের দেশে ১৯৮০ সালে যৌতুক আইন প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত যৌতুক দেয়া-নেয়া
কোন অপরাধ ছিল না; বর্তমানে এটি অপরাধরূপে গণ্য। আবার ১৮২৯ সালে সতীদাহ নিবারণ
আইনের পূর্বে হিন্দু সমাজে সতীদাহ পুণ্যের কাজ ছিল। অনুরূপভাবে ইংল্যান্ডে ১৬ বছর বয়সের পূর্বে
ধূমপান অপরাধ; কিন্তু আমাদের দেশে তা’ সামাজিকভাবে নিন্দনীয় হলেও আইনত: অপরাধ নয়।
অপরাধের সংজ্ঞা
‘অপরাধ’ প্রত্যয়টিকে সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী স্টেফেন
(ঝঃবঢ়যবহ)-এর মতে, “অপরাধ হল সে সকল কাজ যা করা বা না করার জন্যে শাস্তির বিধান
রয়েছে।” অধ্যাপক এফ আর খানের (ঋ জ কযধহ) ভাষায়, “যে সকল আচরণ সমাজ ও নৈতিকতা
বিরোধী তাকে অপরাধ বলে।” মনীষী এচলার (বলেন, “অপরাধের আইনগত সংজ্ঞা কেবল
জটিলতামুক্ত ও সহজই নয়, এটিই একমাত্র সংজ্ঞা- অপরাধ বলতে আইন ও নৈতিকতা বিরোধী
কাজকে বোঝায়।” সমাজবিজ্ঞানী বার্নস্ ও টীর্টাস্ আরেকটু বিশ্লেষণ করে
বলেছেন, “অপরাধ হচ্ছে এমন এক ধরনের সমাজবিরোধী আচরণ যা’ জনসাধারণের স্বাভাবিক
অনুভ‚তির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং যা’ দেশের আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত।”
তাহলে উপরের সংঘাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের যে সকল কাজ সমাজের
চোখে অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য তা-ই অপরাধ। অপরাধ সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা,
সংহতি, নিরাপত্তা, মূল্যবোধ ও প্রগতি নষ্ট করে।
অপরাধের কারণ
অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মত অপরাধও একক কোন কারণে সংঘটিত হয় না। বিভিন্ন মনীষী
অপরাধের কারণ হিসেবে এক একটা বিশেষ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড মনে
করেন অবদমিত মানসিক ইচ্ছা অপরাধের কারণ। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবীর মতে,
ধর্মহীনতাই অপরাধের জন্য দায়ী। সমাজতন্ত্রের জনক মার্কস্ বলেন, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা সকল
অপরাধের উৎস। বস্তুতঃ অপরাধের কারণ সম্পর্কে উপরি উক্ত কোন মতই এককভাবে চ‚ড়ান্ত নয়।
অপরাধমূলক কাজের পেছনে রয়েছে আরো বহু কারণ। একটি সমাজে অপরাধ কেন সংঘটিত হয়
নিচে সে সকল কারণগুলো আলোচনা করা হলো।
সামাজিক কারণ
পারিবারিক জীবন : মানব জীবনে পরিবার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। মানব আচরণের ওপর এর
প্রভাব অপরিসীম। মানুষ পরিবারে তার জীবনের স্বাদ-আহলাদ, সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করে।
কিন্তু পরিবারে তা’ না পেলে কিংবা পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ বিপথগামী
হতে পারে। শিল্পায়ন-শহরায়ন ও দ্রুত সামাজিক পরিবর্তনের ফলে পারিবারিক জীবনে যে অশান্তি ও
ভাংগনের সৃষ্টি হচ্ছে তা মানুষকে অপরাধমুখী করে তুলছে।
সামাজিক পরিবেশ : মানুষ সামাজিক জীব। মানব চরিত্রের ওপর তার সামাজিক পরিবেশ বিশেষ
প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ভাল পরিবেশে মানুষ যেমন- উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয় তেমনি অসুস্থ ও
কলুষিত পরিবেশে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে।
নিরক্ষরতা ও ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা : শিক্ষা মানুষের মধ্যে উন্নত মানসিকতার সৃষ্টি করে। ভাল-মন্দ,
ন্যায়-অন্যায়বোধকে প্রখর করে তোলে। অশিক্ষিত ব্যক্তিরা অনেক সময় বৈধ-অবৈধ বিচার করতে না
পেরে অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। তাই একটি সমাজে নিরক্ষরতা অপরাধ সংগঠনের অন্যতম কারণ।
নিরাক্ষরতার চেয়ে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা অপরাধের জন্য অনেকাংশে দায়ী। ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষার্থীকে সরাসরি কোন পেশার উপযোগী করে তুলতে বা শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে
পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রত্যাশিত পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে
অপরাধ প্রবণ করে তুলে।
ধর্মভীতি হ্রাস : সকল ধর্মই অন্যায় ও অনাচার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে । তাই ধর্মভীতি
মানুষের আচরণকে সংযত রাখে। বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভংগির প্রসার এবং ধর্মভীতি কমে যাওয়ার ফলে
সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়।
অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ : একটি সমাজে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঐ সমাজে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টিতে
সহায়তা করে থাকে। সিনেমা, টেলিভিশন, ভিসিআর-এ প্রদর্শিত মারদাঙ্গা ও যৌনতায় ভরপুর ছবি,
খোলামেলা পোশাক, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলা মেশা - এসকল সমাজে খুন-জখম, অপহরণ, ধর্ষণ
ইত্যাদি বাড়াতে সাহায্য করছে।
যৌতুক প্রথা : যৌতুক প্রথা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এর ফলে নারী নির্যাতন, আত্মহত্যা,
পতিতাবৃত্তি প্রভৃতি অপরাধ ও অনাচার বেড়ে যায়।
জেল ও হাজতব্যবস্থা : জেল ও হাজত ব্যবস্থাও অপরাধ বৃদ্ধির জন্য কতকাংশে দায়ী। জেলখানায়
এবং হাজতে সকল ধরনের অপরাধী ও আসামীদেরকে একসংগে রাখার ফলে কাঁচা অপরাধী এবং
নিরপরাধ ব্যক্তি দাগী অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে পরবর্তীতে পাকা অপরাধীতে পরিণত হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
দরিদ্রতা : সমাজে অধিকাংশ অপরাধীই দরিদ্র শ্রেণীর। দরিদ্র মানুষ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন বৈধ
উপায়ে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে অবৈধ ও অসামাজিক পন্থা অবলম্বন করে। দেখা গেছে দুর্ভিক্ষের
সময় চুরি - ডাকাতি, খুন, পতিতাবৃত্তি প্রভৃতি অপরাধ বেড়ে যায়।
বেকারত্ব : বেকারত্ব মৌল চাহিদা পূরণের অন্তরায়। বেকারত্ব মানুষের মনে হতাশা, ক্ষোভ ইত্যাদি
জন্ম দেয় যা’ তাদেরকে অপরাধ জগতে ঠেলে দেয়।
অতিমাত্রায় বৈষয়িক মনোভাব : সমজের এক শ্রেণীর মানুষ বিত্ত-সম্পদের নেশায় হন্যে হয়ে উঠে।
এরা জাল, জুয়া, চুরি, ঘুষ, চোরাকারবার প্রভৃতি যে কোন পন্থায় সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে
থাকে । এতে করে সামাজিক অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।
শিল্পায়নশহরায়ন: শিল্পায়ন-শহরায়নের ফলে পরিবারে ভাংগন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, একাকীত্ববোধ প্রভৃতি কারণে মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক কারণ
একটি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কিছু কিছু
রাজনৈতিক দলও নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন আইন-শৃংখলা পরিপন্থী কাজকে শুধু প্রশ্রয়ই দেয় না প্রত্যক্ষ
মদদও যোগায়।
দৈহিক কারণ (চযুংরপধষ এৎড়ঁহফ)
অনেক সময় দৈহিক কারণেও অপরাধ প্রবণতার সৃষ্টি হয়। অপরাধবিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে গবেষণা
করে দেখেছেন যে কুৎসিত, বিকলাংগ ও পংগু ব্যক্তিরা সাধারণত: সমাজের স্বাভাবিক ব্যক্তিদের
প্রতিহিংসা বশে অপরাধ করে থাকে।
মানসিক কারণ
সমাজবিজ্ঞানী গিলীন গবেষণা করে দেখেছেন যে, অপরিণত বুদ্ধিসম্পন্ন বা আবেগজনিত সমস্যায়
আক্রান্ত ব্যক্তিরাই বেশি অপরাধ করে থাকে।
অপরাধ দূরীকরণের উপায়
অপরাধীরা সমাজেরই মানুষ। বিভিন্ন প্রতিক‚ল অরস্থার প্রেক্ষিতে এরা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
সুতরাং যে সকল অবস্থা অপরাধ সৃষ্টিতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে সেগুলো দূর করার প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে অপরাধ দূর করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আমরা নিæোক্ত কার্যক্রমগুলো উল্লেখ
করতে পারি । যথা:
প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম
সমাজে যাতে অপরাধ সংঘটিত হতে না পারে সে জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রতিরোধমূলক
কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত। প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হিসেবে নিæোক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণকরা যেতে পারে।
ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী : সকলের জন্যে মৌলিক মানবিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা
হলে অনায়াসে অপরাধীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাবে। এ জন্যে প্রয়োজন দেশে ও বিদেশে
ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। দৈহিকভাবে পংগু ও মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সাহায্যের
ব্যবস্থা গ্রহণ, বেকারদের জন্য বেকার ভাতা এবং এতিম ও দু:স্থদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার প্রসার : শিক্ষাব্যবস্থা বা¯তবোপযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। যাতে লেখাপড়া শেষ করেই চাকুরি
পাওয়া যায়। তাছাড়া বাধ্যতামূলক শিক্ষা, শিক্ষার মানোন্নয়নও অপরাধের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সৃষ্টি
করতে সক্ষম।
নিবর্তনমূলক আইন : সমাজে অপরাধ প্রবণতা বন্ধের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন ও কঠোরভাবে
সেগুলো বাস্তবায়ন আবশ্যক।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশী ব্যবস্থা জোরদার : গ্রাম বা শহর সর্বত্র সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শিথিল
হওয়ার ফলে অপরাধীর সংখ্যা মারাÍকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ জন্য প্রথম প্রয়োজন অভিভাবকদের
সচেতনতা ও সন্তানদের প্রতি অধিক হারে মনোযোগী হওয়া। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃবর্গ ও শিক্ষিত
সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের উদ্যেগ গ্রহণ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর
মধ্যে পুলিশ অপরাধ দমনের সংগে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাদের সৎ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দক্ষতা
বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ : অনুন্নত সমাজে এখনো অনেক মারাত্মক অপরাধ দমনের জন্যে প্রয়োজনীয়
আইনের অভাব দেখা যায়। কিংবা আইন প্রণীত হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে সহজেই অপরাধী বের
হয়ে আসতে পারে। চোরাচালান, মজুতদারি, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি সম্পত্তির আত্মসাৎ ইত্যাদি
অপরাধের সংগে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্যে আইন প্রণয়ন করা হলে
অপরাধের মাত্রা অনেকখানি হ্রাস পাবে।
প্রতিকারমূলক কার্যক্রম
আইনের দৃষ্টিতে যারা অপরাধী এবং অপরাধী হিসেবে আইন-শৃংখলা কর্তৃপক্ষ দ্বারা ধৃত হয়েছে
তাদের জন্যে নে’য়া ব্যবস্থা প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। অপরাধ সম্পর্কে আধুনিক চিন্তাধারা
হচ্ছে, অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তার সংশোধনের ব্যবস্থা করা। সে জন্যে নি¤েœাক্ত ব্যবস্থাগুলোর সুষ্ঠু
প্রয়োগ আবশ্যক।
প্রবেশন : প্রথম বারের মত যে অপরাধ করেছে বা যে অপরাধীর বয়স ১৭ বছরের নিচে তাদের শাস্তি
প্রদান স্থগিত রেখে শর্তাধীন মুক্তিদানের ব্যবস্থাকেই প্রবেশন বলে। সাধারণত অবস্থার বিপাকে পড়ে,
অসচেতনভাবে বা বাধ্য হয়ে মানুষ প্রথমবারের মত অপরাধ করে থাকে। তাই শাস্তিস্বরূপ অপরাধীকে
জেল হাজতে প্রেরণ করলে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা ও সমাজের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তাকে আরো
অপরাধী করে তুলবে। সুতরাং, অপরাধীকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে তার সংশোধনের জন্যে সম্ভাব্য
ব্যবস্থা গ্রহণই অধিকতর যুক্তিযুক্ত।
প্যারোল : যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের জন্যে অপরাধ করবে তাদের কিছুদিন শাস্তি ভোগের পর
সংশোধনের জন্যে প্যারোল অফিসারের অধীনে শর্তাধীন মুক্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মানুষ মাত্রই
ভুল করে, আবার সুযোগ পেলে সংশোধিত হয়। স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বারের জন্যে
সংশোধনের সুযোগ দিলে তার মধ্যে অনুশোচনা আসবে এবং অপরাধ থেকে বিরত থাকবে।
বিচার ব্যবস্থার ক্রটি দূর করা : বিচার ব্যবস্থার শ্লথগতি এবং নিরপেক্ষতার অভাবে অনেক নিরপরাধ
ব্যক্তিকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। ফলে সে নিজে এবং তার পরিবার-পরিজনও জেদবশত: অপরাধ
করে। আবার বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতির ফলে যদি সহজেই অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায় তাহলেও অপরাধ
দমন সম্ভব হয় না। সুতারং বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে সরকার জনগণ এবং
বিচারকদের এগিয়ে আসতে হবে।
জেল ব্যবস্থার সংস্কার সাধন : কোন কোন অপরাধবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী জেল ব্যবস্থা তুলে দিয়ে
সংশোধনাগার স্থাপনের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের অভিমত, জেলখানার পরিবেশে প্রবেশ করে
লঘু অপরাধীও গুরু অপরাধের প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়ে আসে। সুতরাং জেল ব্যবস্থার বিকল্প এমন
ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে করে অপরাধী নিজেই কেবল সংশোধিত হবে না বরং অন্য
অপরাধীদেরকেও সংশোধনের জন্যে সহায়তা প্রদান করবে।
পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম
অপরাধ করার পেছনে মূলত তিনটি কারণকে আমরা প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।
যেমন- সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক। শাস্তি ভোগ করার পরও অপরাধী অনুরূপ সমস্যায়
আক্রান্ত হয়ে পুনরায় অপরাধ করতে পারে। সে জন্যে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদীদের সামাজিক, মানসিক ও
অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমাজের মানুষ কিংবা পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় অপরাধীদের সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না।
অপরাধীও বিভিন্ন মানসিক জটিলতায় ভোগে, তাছাড়া আর্থিকভাবেও সে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্যে প্রয়োজনীয় সামাজিক, আর্থিক ও মানসিক
পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচী জোরদার করা প্রয়োজন।
সারকথা ঃ
সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে সমাজে প্রচলিত বিধিবিধান বা মূল্যবোধ বিরোধী আচরণ ও কাজ
অপরাধরূপে গণ্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন কারণে সমাজে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। একথা সত্য যে, আইনের শাসনের অভাব এবং ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা সমাজে অপরাধের জন্য অনেকাংশে দায়ী।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১.“অপরাধ বলতে আইন ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ বোঝায়।” অপরাধের এ সংজ্ঞাটি কে দিয়েছেন?
ক. এফ আর খান
খ. মনীষী এচলার
গ. সমাজবিজ্ঞানী বার্নস্ ও টীর্টাস্
ঘ. সমাজবিজ্ঞানী স্টেফেন।
২. মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড- এর মতে নিচের কোন্টি অপরাধের কারণ?
ক. অবদমিত মানসিক ইচ্ছা
খ. ধর্মহীনতা
গ. পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা
ঘ. কোনটিই নয়।
৩. কোন্টি অপরাধ দূরীকরণের প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের আওতায় পড়ে?
ক. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ
খ. শিক্ষার প্রসার
গ. প্রবেশন
ঘ. ব্যাপক সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সমাজে অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার কারণগুলো কি?
২. সমাজ থেকে অপরাধ দূরীকরণের উপায়সমূহ আলাচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সমাজে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণগুলো বর্ণনা করুন।
২. অপরাধ দূরীকরণের বিভিন্ন কার্যক্রমের একটি বিবরণ দিন।
উত্তরমালাঃ ১। ক ২। ক ৩। গ
সহায়ক গ্রন্থ:

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]