নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতিসমূহ , , দ্বি-নাগরিকত্ব বলতে কি বুঝায়? , নাগরিকতা বিলোপের কারণসমূহ লিখুন।

সাধারণ অর্থে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। যেমন−ইসলামাবাদের নাগরিক, দিল্লীর
নাগরিক, ঢাকার নাগরিক ইত্যাদি। কিন্তু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে নাগরিকের পরিচয় রাষ্ট্রকে কেন্দ্র
করেই নির্ধারিত হয়। যেমন− বাংলাদেশের নাগরিক, পাকিস্তানের নাগরিক, ভারতের নাগরিক
ইত্যাদি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিষ্টটলের মতে, সেই ব্যক্তি নাগরিক যে নগর রাষ্ট্রের শাসনকার্যে
সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁর সামনে ছিল নগর রাষ্ট্রের আদর্শ। কিন্তু আধুনিককালে বিপুল
জনসংখ্যা বিশিষ্ট জাতীয় রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
তাই নাগরিকতার ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে এবং নাগরিকতা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানকালে যে রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত
সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে এবং বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে
তাকে নাগরিক বলা হয়।
মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সমাজ ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও পরিবর্তনের
সাথে সাথে নাগরিকতার ধারণাও পরিবর্তিত হয়েছে। একটি সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ যে
রাজনৈতিক মর্যাদা ভোগ করে তাই নাগরিকতা। প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার যুগে নাগরিকতা ব্যাক্তির গুণ ও
মর্যাদার সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু বর্তমানকালে বা আধুনিক সভ্যতায় রাষ্ট্রের সকল সদস্যই নাগরিকতার
সঙ্গে কম-বেশি জড়িত। অধ্যাপক লাস্কির মতে ‘‘নাগরিকতা সার্বক্ষণিক কল্যাণের জন্যে ব্যক্তির
সুচিন্তিত বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ।’’
আধুনিক বিচারে নাগরিকতার বৈশিষ্ট্য
রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া,
স্থায়ীভাবে বসবাস করা,
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ও আইন মেনে চলা
রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করা
রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা
নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতিসমূহ
দু‘টি পদ্ধতিতে নাগরিকতা অর্জন করা যায়; যথা−
১. জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জন
২. অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জন
জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জন
যারা জন্মগতভাবে (নু নরৎঃয) নাগরিকতা অর্জন করে তাদেরকে জন্মসূত্রে নাগরিক বলা হয়।
জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের দু‘টি পদ্ধতি রয়েছে− একটি জন্মনীতি অপরটি জন্মস্থাননীতি। একটি সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ রাজনৈতিক মর্যাদা ভোগ করে তাই নাগরিকতা।
জন্মনীতি
জন্মনীতি অনুসারে মাতা-পিতার নাগরিকত্ব দ্বারাই সন্তানের নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হয়। এরূপ
নাগরিকতা নির্ধারণের মানদন্ড হল রক্তের সম্পর্ক। সন্তান যে স্থানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন মাতাপিতা যে দেশের নাগরিক সন্তান সে দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবে। ইতালি, জাপান, ফ্রান্স, পাকিস্তান
প্রভৃতি দেশ নাগরিকতার ক্ষেত্রে জন্মনীতি অনুসরণ করে থাকে।
জন্মস্থাননীতি
জন্মস্থান নীতি অনুসারে জন্মস্থানই সন্তানের নাগরিকত্ব নির্বাচন করে থাকে। এ নীতি অনুযায়ী সন্তান
যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে সেই রাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করে। মাতা-পিতার নাগরিকত্ব সন্তানের উপর
কোন প্রভাব বিস্তার করেনা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে এ নীতি অনুসৃত হয়।
অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জন
যারা অনুমোদনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করে তাদেরকে অনুমোদনসূত্রে নাগরিক বলা হয়।
কতকগুলো শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জন করা যায়।
ক) বিবাহ করা
খ) দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করা
গ) চাকুরি গ্রহণ করা
ঘ) সম্পত্তি ক্রয় করা
ঙ) সেনাবাহিনীতে যোগদান করা
চ) ভাষা জানা
ছ) ইচ্ছা প্রকাশ করা ইত্যাদি
দ্বি-নাগরিকত্ব
একজন লোক একই সাথে দু’টি রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়াকে দ্বি-নাগরিকত্ব বলা হয়। জন্মনীতি ও
জন্মস্থাননীতি− এই উভয়নীতি প্রচলিত থাকায় দ্বি-নাগরিকত্বের সৃষ্টি হয়। যেমন− ফ্রান্স নাগরিকত্বের
ক্ষেত্রে জন্মনীতি অনুসরণ করে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জন্মস্থান নীতি অনুসরণ করে। ফ্রান্সের
কোন সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে সে সন্তান ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দেশের নাগরিক
বলে গণ্য হবে। এভাবে দ্বি-নাগরিকত্বের সৃষ্টি হয়। দ্বি-নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে শিশুর বয়োপ্রাপ্তির পর সে
যে রাষ্ট্রের নাগরিক হতে চায় সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারে।
নাগরিকতার বিলোপ
নাগরিকতা অর্জনের যেমন বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, তেমনি কতকগুলো কারণে নাগরিকতা বিলোপ হতে
পারে। সাধারণতঃ নিæলিখিত কারণে নাগরিকতা বিলুপ্ত হয়ঃ
১। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ বা ষড়যন্ত্র করলে নাগরিকতা বিলুপ্ত
হতে পারে।
২। কোন নাগরিক স্বেচ্ছায় নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তার নাগরিকত্ব লোপ পায়।
৩। সামরিক বাহিনীর কোন লোক রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক কাজ বা গুরুতর অপরাধ করলে তার নাগরিকতা
বিলুপ্ত হতে পারে।
৪। কোন নাগরিক দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ রাষ্ট্র থেকে অনুপস্থিত থাকলে তার নাগরিকতা লোপ পায়।
৫। কোন স্ত্রীলোক যদি অন্য রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করে তবে সে নিজ দেশের নাগরিকত্ব হারায়।
অবশ্য জাপানের কোন মহিলাকে অন্য দেশের পুরুষ বিয়ে করলে তাকে জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ
করতে হয়। পুরুষ তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব হারাবে।
সারকথা :
যে ব্যক্তি রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত
সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে এবং বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে
তাকে নাগরিক বলা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন
১। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক
ক. সক্রেটিস
খ. প্লেটো
গ. এরিস্টটল
ঘ. আলেকজান্ডার।
২। জন্মস্থান নীতি অনুসরণ করে
ক. ইতালি
খ. পাকিস্তান
গ. যুক্তরাজ্য
ঘ. জাপান।
৩। জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে নাগরিকের পরিচয় ঘটে−
ক. সমাজকে কেন্দ্র করে
খ. রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে
গ. নাগরিককে কেন্দ্র করে
ঘ. সংস্থাকে কেন্দ্র করে।
৪। জন্মনীতি অনুসরণ করে−
ক. যুক্তরাজ্য
খ. যুক্তরাষ্ট্র
গ. পাকিস্তান
ঘ. ভারত।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দ্বি-নাগরিকত্ব বলতে কি বুঝায়?
২। নাগরিকতা বিলোপের কারণসমূহ লিখুন।
উত্তরমালা: ১. গ, ২. গ, ৩. খ, ৪. গ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]