গণমাধ্যমের কার্যকারিতা আলোচনা করুন। গণমাধ্যমের গুরুত্ব বর্ননা করুন।

গণমাধ্যমের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
গণমাধ্যম হলো এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ স্থাপন
করা যায়।
গণমাধ্যমের কয়েকটি সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন -
গণমাধ্যম যে কোন ধরনের বার্তা যুগপৎভাবে সবার কাছে পৌঁছে দেয়। গণমাধ্যমের পাঠক বা
শ্রোতৃমন্ডলীর প্রকৃতিগত বিভিন্নতা রয়েছে এবং এদের সংখ্যাও ব্যাপক। এই বিপুল পরিমাণ মানুষ
গণমাধ্যমের আওতাভুক্ত।
বার্তা নৈব্যক্তিক। অর্থাৎ সবার জন্যে অভিন্ন বার্তা একই মান ও স্টাইলে পরিবেশিত হয়।
গণমাধ্যমের সাহায্যে সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে যে বার্তা পরিবেশিত হয়, পরিধি ব্যাপক হবার
কারণে তার ‘ফিডব্যাক’ বিলম্বে আসে।
গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বার্তা প্রেরণ করা হয় কোন সংগঠনের মাধ্যমে। ফলে গণমাধ্যম হতে সঞ্চারিত
তথ্য-প্রবাহে বিভিন্ন জনের ভ‚মিকা থাকে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রেরিত হয়।
গণমাধ্যমের প্রকারভেদ
গণমাধ্যমকে প্রধানত: তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন১. সনাতন গণমাধ্যম, (২) আধুনিক গণমাধ্যম ও (৩) অত্যাধুনিক গণমাধ্যম। সনাতন গণমাধ্যমের
মধ্যে গণ্য করা হয় লোক কাহিনী, লোক সংগীত, লোক নাট্য ইত্যাদিকে। আধুনিক গণমাধ্যমের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুদ্রিত বার্তা, তার যোগাযোগ, বেতার-টেলিভিশনের সম্প্রচার, আলোকচিত্র ও
চলচিত্র। অত্যাধুনিক গণমাধ্যম হল আধুনিক গণমাধ্যমের আরো উন্নততর পর্যায়। তবে আধুনিক
গণমাধ্যমগুলো এখনও যোগাযোগের সবচেয়ে কার্যকর ও ব্যাপক প্রচলিত মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত।
এখন আমরা আধুনিক গণমাধ্যমগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
মুদ্রণ : গণমাধ্যম হিসেবে মুদ্রণ ব্যবস্থার সূচনা হয় খ্রীস্টের জন্মেরও বহু বছর পূর্বে। প্রথম পর্যায়ে কাঠ
অথবা পাথরে খোদাই করে মুদ্রণ শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে ছাপাখানা আবি¯কারের মাধ্যমে মুদ্রণ
ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত হল। বর্তমানে মুদ্রণ ব্যবস্থার অগ্রগতির ফলে গণমাধ্যম হিসেবে
এর গুরুত্ব ও ভ‚মিকাও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। মুদ্রণ ব্যবস্থার কল্যাণে সংবাদপত্র অত্যন্ত শক্তিশালী
গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
তার যোগাযোগ : উনিশ শতকে তার যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা হলেও গণমাধ্যম হিসেবে এ ব্যবস্থা
দীর্ঘদিনেও বিস্তৃতি লাভ করেনি। ১৮৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৩০ হাজার টেলিফোন গ্রাহক
ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এ গণমাধ্যমটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে টেলিফোন
গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯.০ মিলিয়ন। অর্থাৎ তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ফলে
এটিও শক্তিশালী গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
বেতার ও টেলিভিশন : বেতার ও টেলিভিশনের মতো সম্প্রচার ব্যবস্থার সবচেয়ে সুবিধা হল দূর-
দূরান্তে বার্তা পৌঁছে দেয়া স¤ভব হয়। এ ধরনের গণমাধ্যমের ব্যবহারও সহজতর। বেতার
গণমাধ্যম মূলতঃ
তিন প্রকার। যথা১. সনাতন
গণমাধ্যম, (২) আধুনিক গণমাধ্যম ও (৩) অত্যাধুনিক
গণমাধ্যম।
টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সবার কাছে বার্তা পৌঁছতে পারে। ফলে
আধুনিককালে গণমাধ্যমে হিসেবে বেতার ও টেলিভিশনের গ্রাহক সংখ্যা ও গুরুত্ব উভয়ই বেড়েছে।
আলোকচিত্র : আধুনিক গণমাধ্যম হিসেবে আলোকচ্চিত্রের গুরুত্বও কম নয়। আগে শুধু পেশাদার
আলোকচ্চিত্র শিল্পিরাই এ মাধ্যমে ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে পেশাদার-অপেশাদার নির্বিশেষে এ
মাধ্যম ব্যবহাত হচ্ছে। আলোকচ্চিত্রের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে বার্তা পৌঁছানো স¤ভব। কেননা,
দৃশ্যমান স্থির চিত্রের সাহায্যেও সাধারণ মানুষ ঘটনা অবহিত হতে পারে।
চলচ্চিত্র : চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। প্রথম দিকে নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রচলন হলেও
পরবর্তীতে চিত্র ও কন্ঠের সমন্বয়ে চলচিত্র আাধুনিক রূপ লাভ করে। বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহের ব্যাপক
বিস্তারের ফলে বিভিন্ন স্তরের মানুষ চলচ্চিত্রের দর্শকে পরিণত হয়েছে। চলচ্চিত্র বর্তমানে একটি
অত্যন্ত জনপ্রিয় গণমাধ্যম।
অত্যাধুনিক গণমাধ্যম : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী
অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমগুলো আরো উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গুণগত মান এবং প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতাও বেড়ে গেছে। অত্যাধুনিক এ সকল গণমাধ্যম গুলো হল:
ক. কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, বিশেষ করে ইন্টারনেট
খ. ফ্যাক্স
গ. ক্যাবল টিভি
ঘ. অডিও-ভিডিও ক্যাসেট
ঙ. তার বিহীন (ডধরৎষবংং), মোবাইল টেলিফোন
চ. স্যাটেলাইট ইতাদি।
গণমাধ্যমের কার্যকারিতা
গণমাধ্যম বহুবিধ লক্ষ্য সামনে রেখে কার্য সম্পাদন করে। এগুলো হল--
গণমাধ্যম প্রধানত: সকল পর্যায়ের মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত সামাজিক,
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সকল ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্প-সং¯কৃতির
জগতে যে সকল সৃষ্টি ও উদ্ভাবন ঘটছে তার তথ্যাবলী প্রেরণ করা গণমাধ্যমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
কাজ।
গণমাধ্যম শুধু তথ্যই প্রদান করে না, গণমাধ্যম মানুষকে প্রভাবিত করে। যে কোন ইস্যুর পক্ষে বা
বিপক্ষে গণমাধ্যমের প্রচারণার ফলে মানুষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এক্ষেত্রে রেডিও, টিভি এবং
সংবাদপত্রের ভ‚মিকাই সবচেয়ে বেশি।
গণমাধ্যম মানুষকে বিনোদন দেয়। বিশেষ করে রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র-এসকল গণমাধ্যম বিনোদন
মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা বিষয়সূচী নির্ধারণ (অমবহফধ ঝবঃঃরহম)
করে এবং তার ভিত্তিতে প্রচারণা কর্মসূচী গ্রহণ করে। গণমাধ্যম কর্তৃক নির্ধারিত এজেন্ডা জাতীয়
কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব লাভ করে।
গণমাধ্যম ‘গণব্যক্তিত্ব’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফল ভ‚মিকা পালন করে। গণমাধ্যমের সাহায্যে অনেক
সময় ইমেজ ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
গণমাধ্যমকে পৌন:পুনিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণে কোন গণমাধ্যমেরই উপযোগিতা নি:শেষ
হয়ে যায় না।
গণমাধ্যমের গুরুত্ব
আধুনিক কালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যে সকল ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা লক্ষ করা যায় তা হলো : গণমাধ্যম গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, সামাজিক সত্ত¡াসমূহের মধ্যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করে।
গণমাধ্যম গণসচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা,
নাগরিক দায়িত্ব, অধিকার বোধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এ সকল ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সজাগ ও সচেতন
করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যম জনসাধারণকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করতে পারে।
এর ফলে উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারিত হয়।
গণমাধ্যম শুধু উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেই নয়, অনেক সময় জনসাধারণকে অনাকাক্সিক্ষত কাজ থেকে
বিরতকরণেও ভুমিকা রাখে। বিশেষ করে মাদক সেবন, নারী নির্যাতন, শিশু শ্রম ব্যবহার ইত্যাদি কাজ
থেকে মানুষকে বিরত রাখার ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের যথেষ্ট ভ‚মিকা রয়েছে।
গণমাধ্যম জনমত গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। এর ফলে শাসকদের মধ্যে
স্বৈরাচারী প্রবণতা গড়ে উঠতে পারে না এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
গণমাধ্যম যে কোন সামাজিক সত্ত¡াসমূহের মধ্যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এর ফলে সামাজিক
স্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও জাতিগঠন প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
গণমাধ্যমের এসকল ইতিবাচক ভ‚মিকার কারণেই আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উন্নত-অনুন্নত সমাজ নির্বিশেষে গণমাধ্যমের বিকাশ গণতন্ত্রায়ন
ও উন্নয়নের আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে স্বীকৃত।
সারকথা:
গণমাধ্যম এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
গণমাধ্যম যুগপৎভাবে বার্তা পরিবেশন করে। যে প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে নৈর্ব্যক্তিকতা, পরিধির
ব্যাপকতা এবং সংগঠন। আধুনিক গণমাধ্যমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: মুদ্রণ, তার যোগাযোগ,
বেতার ও টেলিভিশন, আলোকচিত্র, বেতার ও টেলিভিশন, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র প্রভৃতি। গণমাধ্যম
শুধু তথ্যই পরিবেশন করে না, গণমাধ্যম মানুষকে সচেতন করে বিনোদন দেয় এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে উব্দুদ্ধ করে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বার্তা কিসের মাধ্যমে প্রেরিত হয়?
ক. ব্যক্তির মাধ্যমে
খ. সংগঠনের মাধ্যমে
গ. সামাজিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে
ঘ. সংবিধানের মাধ্যমে
২. গণমাধ্যম সাধারণত : কত প্রকার?
ক. তিন প্রকার
খ. দুই প্রকার
গ. চার প্রকার
ঘ. ছয় প্রকার
৩. ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে হাজার টেলিফোন গ্রাহক ছিল?
ক. ১৮ হাজার
খ. ২৪ হাজার
গ. ৩০ হাজার
ঘ. ৪০ হাজার
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন :
১. গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য কি কি?
২. গণমাধ্যম হিসেবে বেতার-টেলিভিশনের গুরুত্ব কতটুকু?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. গণমাধ্যমের কার্যকারিতা আলোচনা করুন।
২. গণমাধ্যমের গুরুত্ব বর্ননা করুন।
উত্তরমালাঃ ১. ক, ২. খ, ৩. গ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]