ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

গ্রেট ব্রিটেন একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রচালু রয়েছে। পার্লামেন্ট দ্বারা শাসিত। ব্রিটিশ
পার্লামেন্টকে বলা হয় “পার্লামেন্ট সমূহের জননী”। বিশ্বের প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দেশের শাসন ব্যবস্থাই কমবেশী গ্রেট
ব্রিটেনের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রকে আধুনিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
ব্রিটিশ সংবিধান কোন নির্দিষ্ট গণপরিষদ কর্তৃক বা কোন বিপ্লবী পরিষদ কর্তৃক বা কোন রাজাদেশ বলে সৃষ্টি হয়নি, বরং
তা দীর্ঘ ঐতিহ্যের শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত। ব্রিটেনের সংবিধান অতি প্রাচীন হলেও, অবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে ইহা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে যুগোপযোগী হয়ে উঠেছে। অধ্যাপক মন্রো উল্লেখ করেন ব্রিটেনের
সংবিধান রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠান সম‚হের জটিল সংমিশ্রণ। ব্রিটিশ সংবিধান মূলত সনদ, চুক্তিপত্র আইন ও বিচার বিভাগের
সিদ্ধান্তএবং ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। ব্রিটিশ সংবিধান একটিমাত্র দলিল নয় বরং তা হাজারো দলিলের মিলিত রূপ। গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান একটি অলিখিত সংবিধান। এটি ইতিহাসের ক্রমবর্ধমান বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে
উঠেছে। ব্রিটেনের সংবিধান কোন নির্দিষ্ট উৎস থেকে উৎসারিত হয় নি। এর একাধিক উৎস রয়েছে।
ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হলেও এর কিছু কিছু লিখিত অংশও রয়েছে। বাস্তবে, ব্রিটেনের সংবিধান
লিখিত এবং অলিখিত উভয় প্রকার উপাদানের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে। বস্তুতঃ একে লিখিত আইন এবং
আচার ও প্রথার এক অপূর্বসমন্বয় বলে উল্লেখ করা যায়। নি¤œলিখিত ঐতিহাসিক উপাদানগুলো গ্রেট
ব্রিটেনের সংবিধানকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। যথা ঃ
ঐতিহাসিক সনদ ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক সনদের স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সংবিধান মূলতঃ
একাধিক সনদ ও চুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। এ সকল সনদ ও চুক্তি শাসক ও শাসিতের সম্পর্কএবং নাগরিকের
মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যসমূহ নির্ধারণ করে থাকে। ফলে তা শাসনতন্ত্রের উৎস রূপে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ১২১৫ সালের মহাসনদ (ম্যাগনাকার্টা), ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইটস,
১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল ইত্যাদি। এগুলো ব্রিটেনের সংবিধানের বিকাশ ধারায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ
নিদের্শক হিসেবে বিদ্যমান। নাগরিক অধিকার এবং শাসক-শাসিতের সম্পর্কএসব দলিলে বিবৃত হয়েছে।
বিধিবদ্ধ আইন ঃ
ব্রিটেনের পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনগুলো ব্রিটেনের সংবিধানের অন্যতম উৎস। এ সকল আইন
ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বিভিন্নভাবে প্রণীত হয়েছে। ১৭০১ সালের হেবিয়াস কর্পাস এ্যাক্ট সেটেলমেন্ট,
১৬৭৯, ১৮৩২, ১৮৬৭ এবং ১৮৮৪ সালের সংস্কার আইন সমূহ, ১৯২৮ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন
প্রভৃতি সংবিধানের উৎস হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ১৯১১ এবং ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট অ্যাক্ট লর্ড
সভার ক্ষমতা সীমিত করে সংবিধানের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে।
বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তঃ
ব্রিটেনে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তবা বিচারকদের রায় ও ব্যাখ্যা ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস বলে বিবেচিত
হয়েছে। বিচার কালে বিচারকগণ বিভিন্ন সনদ, প্রথাগত আইন এবং বিধিবদ্ধ আইনের ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নতুন সাংবিধানিক আইনের সৃষ্টি করেছেন। ডাইসির মতে, “ইংল্যান্ডের সংবিধান
বিচারকের দ্বারা তৈরি সংবিধান”। ফলে অনেকে ব্রিটেনের সংবিধানকে “বিচারক প্রণীত সংবিধান” বলে থাকেন।
সাধারণ আইন ঃ
ব্রিটেনের সাধারণ আইনগুলো রাজার আদেশ অথবা পার্লামেন্টের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই, বরং শতাব্দীর
পর শতাব্দী ধরে প্রথার ভিত্তিতেই বিকাশ লাভ করেছে, বিচারকার্য পরিচালনার সময় বিচারকেরা
প্রথাগুলোকে স্বীকার করেন, ব্যক্তির মামলায় প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তী মামলার নিস্পত্তির জন্য এগুলো
নজির হিসাবে গণ্য করেন। অধ্যাপক অগ্-এর মতে, “এসব রীতি-নীতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রচলিত
থেকে অলংঘনীয়, সুচারু এবং স্থায়ী হয়ে উঠেছে।” এরূপ আইন বিভিন্ন নাগরিক স্বাধীনতারও নিশ্চয়তা ব্রিটেনের পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনগুলো ব্রিটেনের সংবিধানের অন্যতম উৎস। ব্রিটেনের সংবিধান লিখিত এবং অলিখিত উভয় প্রকার উপাদানের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে।
দিয়ে থাকে। যেমন জনসাধারণের পৌর-স্বাধীনতা, সভা সমিতির স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের ভিতরে ও বাইরে ব্যক্তি
মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদি।
প্রথা সমূহ ঃ
গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণউৎস হচ্ছ প্রচলিত প্রথা বা প্রথাগত বিধান। প্রথাগত বিধানকে
ব্রিটেনের সংবিধানের কেন্দ্র ও আত্মা বলা হয়। প্রথাগুলো আইন নয়, কিন্তু আইনের মত মান্য করা হয়।
কিন্তু যারা শাসন পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিচালনা করেন অথবা যারা
সরকারের বিরোধিতা করেন তাঁরা সকলেই প্রথাগুলো মেনে চলেন। গ্রেট ব্রিটেনের রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা
সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। অগ-এর মতে, “প্রথাগুলো এমন কতকগুলো বুঝাপড়া ও অভ্যাস যা
সরকারী কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক সম্পর্কও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।” গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টের
কার্যপদ্ধতি, পার্লামেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদের সম্পর্ক, ক্যাবিনেটের কাজ ও রাজার ক্ষমতা প্রভৃতি বিষয়গুলো
প্রথাগত বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
বিখ্যাত আইনবিদদের লেখনি ঃ
বিখ্যাত আইনবিদদের লেখা প্রস্তাবগুলো বিভিন্নভাবে গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানকে প্রভাবিত করেছে। এ
সমস্তলেখকদের রচনায় সংবিধানের আইন সম্পর্কেমূল্যবান ভাষ্য দেখতে পাওয়া যায়। লেখকগণ তাঁদের
লেখনীতে প্রথাগত বিধানগুলোকে বিধিবদ্ধ করেছেন। একটির সাথে অন্যটির সম্পর্কস্থাপন করেছেন ও
একটি কেন্দ্রীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্যমূলকভাবে এগুলোকে ব্যাখ্যা করছেন। কোন বিষয়ে ইংল্যান্ডের
সাংবিধানিক বিধান বুঝার জন্য এসব ভাষ্য পাঠ করা যেতে পারে। ওয়ালটার বেজহট, এ. ভি. ডাইসী,
হ্যারল্ড লাস্কি, ডবিøউ. আর. অ্যানসন প্রমুখের গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
সারকথা ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান কোন সচেতন প্রচেষ্টার ফল
নয়। বরং তা দেশাচার, প্রচলিত বিধিবিধান, বিচারালয়ের সিদ্ধান্তও অতীতের ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে
উঠেছে। এই সংবিধান বিশেষ একটি উৎস হতে উৎসারিত হয় নি, বরং তা বহু উৎসের ফলস্বরূপ।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এ সংবিধান পরিবর্তিত অবস্থার মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। যুগের
পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্রিটেনের সংবিধান বারবার পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
প্রথাগত বিধানকে
ব্রিটেনের
সংবিধানের কেন্দ্র
ও আত্মা বলা
হয়।
এসএসএইচএল
রাষ্ট্রবিজ্ঞান: বৈদেশিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পৃষ্ঠা- ৪
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টা কোন দেশের সংবিধানের উৎস ?
ক. যুক্তরাষ্ট্রের;
খ. ব্রিটেনের;
গ. হল্যান্ডের;
ঘ. সুইজারল্যান্ডের।
২. পিটিশন অব রাইটস কতসালে সংঘটিত হয়েছিল ?
ক. ১৬২৮;
খ. ১৭২৮;
গ. ১৯২৮;
ঘ. ১৮১৫।
৩. ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট এ্যাক্ট ক্ষমতা সীমিত করে
ক. কংগ্রেসের;
খ. সিনেটের;
গ. লর্ড সভার;
ঘ. কমন্স সভার।
৪. “ইংল্যান্ডের সংবিধান বিচারকের তৈরী সংবিধান।” - এ উক্তিটি কার ?
ক. টি এইচ গ্রীন;
খ. এ ভি ডাইসি;
গ. গার্নার;
ঘ. লাস্কি।
উত্তরমালা ঃ ১. খ, ২.ক, ৩.গ, ৪.খ।
প্রশ্নঃ টীকা লিখুন

ক. ঐতিহাসিক সনদ।
খ. বিধিবদ্ধ আইন।
গ. প্রথা।
ঘ. সাধারণ আইন।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-১ পৃষ্ঠা- ৫
ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
উদ্দেশ্য ঃ
এই পাঠ শেষে আপনি
 ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবেন;
 ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
ব্রিটেনের সংবিধানের কার্যকারিতা ও শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ বিচার করে সংবিধানের নি¤œলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো
লক্ষ্য করা যায়। যথাঃঅলিখিত সংবিধান ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি অলিখিত শাসনতন্ত্র। এ সংবিধানের এমন কোন দলিল
নেই, যেখানে ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কিত মূল বিধানগুলো উল্লিখিত আছে। এই সংবিধান সাধারণ
আইন, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত, লোকাচার, প্রথা প্রভৃতির মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। অবশ্য এই সংবিধানের
অধিকাংশ অংশ অলিখিত আকারে থাকলেও এর কিছু কিছু লিখিত উপকরণও রয়েছে। যেমন ঃ ১২১৫
খ্রীষ্টাব্দের ম্যাগনাকার্টা (গধমহধ পযধৎঃধ), ১৬২৮ খ্রীষ্টাব্দের পিটিশন অব রাইটাস্ (চবঃরঃরড়হ ড়ভ
জরমযঃং), ১৭০১ খ্রীষ্টাব্দের অ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট (অপঃ ড়ভ ঝবঃঃষবসবহঃ), ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের
পার্লামেন্ট অ্যাক্টগুলো (চধৎষরধসবহঃ ড়ভ অপঃং) প্রভৃতি ব্রিটিশ সংবিধানের স্তম্ভ স্বরূপ।
বিবর্তনশীলতা বা গতিশীলতা ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর প্রবাহমানতা বা গতিশীলতা। ব্রিটিশ সংবিধান যেহেতু কোন
সংস্থা কর্তৃক তৈরি হয় নি, সেহেতু এটা জনগণের প্রয়োজন মেটাতে চলমান পরিস্থিতির সাথে ক্রমশঃ খাপ
খাইয়ে নিয়ে যুগ যুগ ধরে স্বাভাবিক নিয়মে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
হাজার বৎসরের প্রবাহমানতায় কোন ছেদ পড়েনি। অধ্যাপক জেনিংস (ঔবহহরহমং) এর মতে, “ব্রিটিশ
সংবিধান তৈরি করা হয় নাই, ধীরে ধীরে এটা জন্ম লাভ করেছে।”
নমনীয়তা ঃ
এ সংবিধানের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল এটি সুপরিবর্তনীয় ও নমনীয় প্রকৃতির । এ সংবিধান পরিবর্তন
করতে কোন বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় না। সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংবিধান পরিবর্তন
করা যায়। এতে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয় না। এ সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক আইন ও সাধারণ আইনের মধ্যে
কোন পার্থক্য নেই। এই নমনীয়তার কারণে ব্রিটিশ সংবিধান সব সময়ই যুগের প্রয়োজনের সাথে খাপ
খাইয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে। তবে, ব্রিটিশ সংবিধানকে নমনীয় বললেও কার্যতঃ ইংরেজদের
রক্ষণশীলতার জন্য এটা তেমন সুপরিবর্তনীয় নয়। ব্রিটিশ আইনে কোন গুরুত্বপূর্ণপরিবর্তন সাধন করতে
হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।
তত্ত¡ ও বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান ঃ
এ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর অবাস্তবতা। এতে তত্ত¡ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ
তত্ত¡গত ভাবে ব্রিটেনের শাসন বিভাগের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ন্যস্তহয়েছে রাজার উপর, কিন্তু কার্যত তা
ক্যাবিনেট প্রয়োগ করে। আবার আইনের চোখে ক্যাবিনেটের কোন অস্তিত্ব নেই। সংবিধান মোতাবেক
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু অনেক লেখক মনে করেন ব্রিটিশ কেবিনেট সেই
ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
পাঠ-২
সংবিধান
মোতাবেক ব্রিটিশ
পার্লামেন্ট
সার্বভৌম ক্ষমতার
অধিকারী।
“ব্রিটিশ সংবিধান
তৈরি করা হয়
নাই; ধীরে ধীরে
এটা জন্ম লাভ
করেছে।”
এসএসএইচএল
রাষ্ট্রবিজ্ঞান: বৈদেশিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পৃষ্ঠা- ৬
এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা ঃ
এ সংবিধান অনুযায়ী, গ্রেট ব্রিটেন এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই সব ক্ষমতা ন্যস্ত।
গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃতি পায়নি। স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে এখানে
সহযোগিতার মন্ত্রই উচ্চারিত রয়েছে।
পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণবৈশিষ্ট্য হচ্ছ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব। পার্লামেন্ট যে কোন বিষয়ে
আইন তৈরী, বাতিল বা সংশোধন করতে পারে। আদালত পার্লামেন্টের সকল আইনকেই বৈধ বলে
প্রয়োগ করে। আদালত এই আইনকে বাতিল করতে পারেনা। এ প্রসঙ্গে, ডাইসির অভিমত, “পার্লামেন্ট
সব প্রকারের আইন প্রণয়ন করতে পারে, সর্ব প্রকারের আইন বাতিল করতে পারে এবং ব্রিটেনে এমন
কোন কর্তৃপক্ষ নেই যা পার্লামেন্ট প্রণীত আইনকে বলবৎ করতে অস্বীকার করতে পারে।” তাই ডি লোমী
বলেন “ ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ক্ষমতা এত ব্যাপক যে, তা নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারীতে রূপান্তরিত
করা ব্যতীত সকল কার্যই সম্পন্ন করতে পারে।”
সরকারের দায়িত্বশীলতা ঃ
ব্রিটেনের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণবৈশিষ্ট্য হল-এর দায়িত্বশীলতা। এই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেগঠিত
মন্ত্রিপরিষদ তথা শাসন বিভাগ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে আইনপরিষদের নিকট দায়ী থেকে শাসনকার্য
নির্বাহ করে। অনাস্থা প্রস্তাব, মূলতবী প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব, প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার মাধ্যমে আইন পরিষদ
মন্ত্রিপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি করতে বাধ্য করে।
নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রঃ
ব্রিটেনের সংবিধান বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। ব্রিটেনে
পার্লামেন্ট, মন্ত্রিপরিষদ, ক্যাবিনেট প্রভৃতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বংশানুক্রমিক প্রতিষ্ঠান
রাজতন্ত্রটিকে আছে। তবে ব্রিটেনে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রটিকে থাকলেও রাজা বা রানী এখানে নামেমাত্র
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। বাস্তবে তাঁর ক্ষমতা অত্যন্তসীমিত। এ প্রসঙ্গে অগ্ বলেন, “গ্রেট ব্রিটেনের
শাসন ব্যবস্থা আইনত অবাধ রাজতন্ত্র, তবে তা কার্যতঃ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রছাড়া কিছুই নয়।”
প্রথার প্রাধান্য ঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল প্রথার প্রভাব। প্রথা ব্রিটিশ সংবিধানের প্রাথমিক উপাদানস্বরূপ
এবং এগুলো সরকারের বাস্তব কার্যকারিতাকে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রথার প্রভাবের ফলে এ
সংবিধান মূলত অলিখিত সংবিধানে রূপান্তরিত হয়েছে।
আইনের শাসন ঃ
আইনের শাসন ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং তা এ সংবিধানকে মহীয়ান করে তুলেছে।
আইনের অনুশাসনের অর্থ (ক) স্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন না করলে কাউকেই দৈহিক অথবা আর্থিক ভাবে
শাস্তিপ্রদান করা যাবে না (খ) আইনের চোখে সকলেই সমান ও (গ) মৌলিক অধিকারগুলো বিচার
বিভাগের সিদ্ধান্তের ফলশ্রæতি। আইনের অনুশাসনের বলেই ব্রিটিশবাসী পূর্ণনাগরিক স্বাধীনতার গ্যারান্টি
লাভ করেন।
জেনিংসের মতে, ব্রিটিশ সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত: তা গণতান্ত্রিক
(ফবসড়পৎধঃরপ), দ্বিতীয়ত: তা সংসদীয় তৃতীয়ত: রাজতন্ত্রের লক্ষণ রয়েছে, চতুর্থত: এতে ক্যাবিনেটের
প্রাধান্য রয়েছে ইত্যদি। সি, এফ, স্ট্রং যথার্থই বলেছেন, “ব্রিটেনের সংবিধান যে কোন সংকট ছাড়াই
পরিবর্তিত হয়েছে এবং হঠকারিতা ও আন্দোলন ছাড়াই উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।”
“গ্রেট ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থা আইনত অবাধ রাজতন্ত্র, তবে তা কার্যতঃ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রছাড়া কিছুই নয়।” আইনের অনুশাসনের বলেই ব্রিটিশবাসী পূর্ণ নাগরিক স্বাধীনতার গ্যারান্টি লাভ করেন। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা ঃ
ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রেসংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের
নিকট দায়ী থাকে। আইনসভা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে শাসন বিভাগ অর্থাৎ মন্ত্রিসভাকে ভেঙে দিতে পারে।
নাগরিক অধিকার ঃ
ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রেনাগরিকের কি কি অধিকার থাকবে তা স্পষ্টভাবে কোথাও বলা হয়নি। বরং নাগরিকের
কি কি অধিকার নেই তা বলা হয়েছে। যেমন ঃ রাজদ্রোহ, কুৎসা প্রচার, অন্য ধর্মের প্রতি অমর্যাদাকর
আচরণ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতি ঃ
ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয় নি। এ প্রসঙ্গে রবসন
বলেন, “ ইংল্যান্ডের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের বিশেষ কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।
তবে পার্লামেন্ট শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের দৈনন্দিন কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করে না।”
সারকথাঃ
ব্রিটিশ সংবিধান অসংখ্য প্রথা, লোকাচার ও রীতিনীতির সমষ্টি। এ সংবিধান রাজতন্ত্রও গণতান্ত্রিক
প্রতিষ্ঠানের এক অদ্ভ‚ত সংমিশ্রণ। ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রএকটি দলিলে লিপিবদ্ধ নয়। অতীতের ঐতিহ্যে লালিত ক্রমবিবর্তনের ধারায় ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রবিকাশ লাভ করেছে। শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকে।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরী করা হয়নি, তা ধীরে ধীরে জন্মলাভ করেছে।” এ উক্তিটি কে করেছেন?
ক. জেনিংস;
খ. উড্রো উইলসন;
গ. গ্যাটেল;
ঘ. ডাইসী।
২. এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছেÑ
ক. যুক্তরাষ্ট্রে;
খ. ভারতে;
গ. রাশিয়ায়;
ঘ. ব্রিটেনে।
৩. “নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারীতে রূপান্তরিত করা ব্যতীত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সকল কাজই
করতে পারে।” এই উক্তিটি কে করেছেন ?
ক. ডিলোমী;
খ. ডাইসী;
গ. জেনিংস;
ঘ. মনরো।
৪. কোন শক্তির বলে ব্রিটিশরা নাগরিক স্বাধীনতার গ্যারান্টি লাভ করেছেন?
ক. আইনের শাসনের বলে;
খ. পার্লামেন্টের কারণে;
গ. মন্ত্রিপরিষদের কারণে;
ঘ. প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাবলে।
৫. কোন দেশের সংবিধানে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুপস্থিত?
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের;
খ. ভারতের;
গ. ব্রিটেনের;
ঘ. বাংলাদেশের।
উত্তর মালা ঃ ১.ক; ২.ঘ; ৩.ক; ৪.ক; ৫.গ;
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্নঃ
১. পার্লামেন্টের স্বার্বভৌমত্ব কি? ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্নঃ
১. ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]