লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করুন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচচ কক্ষের নাম ‘লর্ড সভা’ নর্মান আমলের বৃহত্তর পরিষদ
হতে বিবর্তিত লর্ড সভা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন দ্বিতীয় পরিষদ অতীতে লর্ড সভার ক্ষমতা ছিল অনেক বেশী, কিন্তু বর্তমানে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এর
ক্ষমতা অনেক হ্রাস পেয়েছে।
গঠন প্রণালী ঃ
লর্ড সভার অধিকাংশ সদস্যই জন্ম সূত্রে আসন অধিকার করেন। তাঁরা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন না।
তাঁদের কোন সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। ১৯৮৮ সাল পর্যন্তলর্ড সভার সদস্য সংখ্যা ছিল ১১৯০। তার মধ্যে
উত্তরাধিকার সূত্রে লর্ডদের সংখ্যা ছিল ৭৫৯। উত্তরাধিকার সূত্রে লর্ডগণ ছাড়াও
লর্ড সভায় স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের লর্ডগণের জন্যও নির্ধারিত আসন আছে। ১৯৫৮ সালের এক আইন
দ্বারা রাজা বা রানী কর্তৃক কিছু সংখ্যক পুরুষ বা মহিলাকে জীবন
কালের জন্য লর্ড উপাধিতে ভ‚ষিত করার বিধান রাখা হয়। ১৯৮৮ সালে তাঁদের সংখ্যা ছিল ৩৭৯।
তাঁদের মধ্যে মহিলা ছিল ৬০ জনের মত।
লর্ড সভায় ক্যান্টারবেরী ও ইয়র্কের আর্চ বিশপ এবং লন্ডন ডারহাম ও উইনচেষ্টারের বিশপসহ মোট ২৬
জন যাজক আছেন। এ ছাড়া ৯ জন সাধারণ আপিল লর্ড আছেন। তাঁরা লর্ড সভার বিচার বিভাগীয় কাজকর্মের জন্য দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীদের মধ্য হতে আজীবনের জন্য বেতনভোগী হিসেবে মনোনীত
হন।
সভাপতিঃ লর্ড চ্যান্সেলর লর্ড সভার সভাপতিত্ব করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর
সুপারিশক্রমে রাজা বা রানী কর্তৃক নিযুক্ত হন। তিনি সাধারণত ক্যাবিনেটের সদস্য হয়ে থাকেন। আর
তাই কমন্স সভায় স্পীকারের ন্যায় তাঁর ভ‚মিকা নিরপেক্ষ নয়। তিনি লর্ড সভার বিতর্কে অংশগ্রহণ ও
ভোটদান করতে পারেন। তবে তাঁর কোন নির্ণায়ক ভোট নাই। লর্ড চ্যান্সেলরের
অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্ব করার জন্য রাজা বা রানী কয়েকজন সহ-সভাপতি নিয়োগ করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে কমিটিগুলোর লর্ড চেয়ারম্যান ( প্রথম সহ-সভাপতি হিসেবে লর্ড চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
যদি সভাপতি এবং সহ-সভাপতিদের সকলেই অনুপস্থিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে লর্ডগণ কর্তৃক বাছাইকৃত
একজন স্পীকার সভায় সভাপতিত্ব করে থাকেন।
লর্ড সভার সদস্যগণের বিশেষ অধিকারঃ লর্ড সভার সদস্যগণ কতকগুলো বিশেষ অধিকার ভোগ করে
থাকেন। সেগুলো হলঃ
অধিবেশন চলাকালে কোন লর্ডকে দেওয়ানী অপরাধের জন্য আটক করা যায় না;
সদস্যগণ বক্তৃতা প্রদানের স্বাধীনতা ভোগ করেন;
প্রত্যেক লর্ড পৃথকভাবে রাজা/রানীর সাথে সাক্ষাত করতে পারেন; উল্লেখ্য যে, কমন্স সভার সদস্যগণের
এই অধিকার নাই।
অযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে সভার কার্যে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার ক্ষমতা লর্ড সভার আছে।
লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ
লর্ড সভা একাধারে ব্রিটেনের আইন সভার উচচ কক্ষ ও ক্ষমতার অ-স্বতন্ত্রকৃত যুক্তরাজ্যের সুপ্রীম কোর্ট
বিশেষ। গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান হিসাবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ হতে কমন্স সভার শক্তি বৃদ্ধির
সঙ্গে সঙ্গে লর্ড সভার শক্তি কমে যেতে থাকে। ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের সংসদীয় আইন (চধৎষরধসবহঃ
অপঃ, ১৯১১ ্ ১৯৪৯) দ্বারা লর্ড সভার ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে হ্রাস করা হয়। এছাড়াও ১৯৬৩ সালের (ঞযব
চববৎধমব অপঃ) দ্বারা লর্ড সভার গুরুত্বকে আরও বেশী খর্ব করা হয়। বর্তমানে লর্ড সভা তার সীমিত
পরিসরে নি¤œরূপ ক্ষমতা ও কার্যাবলী পালন করে থাকেঃ
আইন প্রণয়নেঃ
ব্রিটেনে প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিলই কমন্স সভায় উত্থাপিত হয়। অবশ্য কমন্স সভার উপর চাপ
কমানোর জন্য কিছু কিছু বিল লর্ড সভাতেও উত্থাপিত হয়। যেমনঃ দলীয় বাদ-বিতর্ক সংক্রান্তবিল, অর্থ
বিল নয় এমন সব বিল, টেকনিক্যাল বিল ও কম গুরুত্ব সম্পন্ন বিল। ১৯৪৭-৫৭ সালের মধ্যে মোট
পাবলিক বিলের এক-চতুর্থাংশই লর্ড সভায় উত্থাপিত হয়।
আইন প্রণয়ন সংক্রান্তবিলের সংশোধনেঃ
আইন প্রণয়ণ নয়, বরং আইনের বিলগুলোর সংশোধন সাধনই লর্ড সভার প্রধান কাজ। লর্ড সভা আইনের
বিলগুলোর চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করতে এবং তাদের ভাষাগত সহ অন্যান্য উন্নতি সাধনে কমন্স সভার
তুলনায় অনেক বেশী সময় পায় এবং তা করে থাকে। এতে করে সংশ্লিষ্ট বিলগুলোর সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা
করা, নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গী উদ্ভাবন করা সহ কমন্স সভায় উদ্ঘাটিত হয়নি এমন সব ভুলভ্রান্তিখুঁজে বের
করার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়।
আইন প্রণয়ন বিলম্বিতকরণেঃ
কমন্স সভার বিলের বিধিবদ্ধকরণ বিলম্বিত করার ক্ষমতাই মূলতঃ লর্ড সভার একমাত্র অবশিষ্ট ক্ষমতা।
১৯১১ সালের পাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ততাদের হাতে এতদ্সংক্রান্তযথেষ্ট ক্ষমতা ছিল।
এ আইন পাশ হওয়ার পরেও লর্ড সভা ২ বছর পর্যন্তকোন সরকারী বিলকে পাশ না করে বিলম্বিত করতে
পারত। এর ফলে জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনীয় আইন পাশ করতে ভয়ানক অসুবিধার সৃষ্টি হত। অবশ্য
১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের দ্বারা লর্ড সভার এ ক্ষমতাকে ১ বছরে নামিয়ে আনা হয়। তবে
সাধারণ নির্বাচনের সামান্য আগে (এক বছরে কম সময় বাকী থাকতে) এ ক্ষমতা সর্বাপেক্ষা কার্যকরী
ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব। মূলতঃ ১৯৪৯ সালের আইন প্রবর্তিত হওয়ার পরে আইন প্রণয়ন বিলম্বিতকরণ
বিষয়ে লর্ড সভার হাতে সামান্য ক্ষমতাই রয়েছে।
সমসাময়িক বিষয়াবলী আলোচনা করাঃ
কমন্স সভার কাজের পরিধি ব্যাপক, তাই সমসাময়িক অনেক বিষয়েই কমন্স সভা সময় দিতে পারে না।
কিন্তু লর্ড সভার উপর কাজের চাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় তা দেশ রক্ষা, বিদেশ নীতি,
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। সরকারী
নীতির সাধারণ প্রশ্নাদী বিষয়েই প্রধানতঃ লর্ডগণ বিতর্কে লিপ্ত হন। লর্ড সভার অনেক সদস্যই ব্যাপকভাবে
অভিজ্ঞ, তাঁদের অনেকেই আইন ও বিচার সংক্রান্তবিষয়ে বিশেষজ্ঞ। অধিকন্তু, তাঁদের অনেকেই ‘নির্দল
সংসদ সদস্যের’ ভ‚মিকা পালন করতে পারেন। ‘ক্লোজার’ (ঈষড়ংঁৎব) আরোপ করে লর্ড সভার সদস্যদের
আলোচনার সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয় না। ফলে লর্ড সভা উচচ মান সম্পন্ন, তথ্য বহুল ও বিশ্লেষণধর্মী
অবাধ বিতর্কের মাধ্যমে সরকারকে নীতি নির্ধারণে মূল্যবান পরামর্শ দান করতে পারে। লর্ডসভা জনমত
গঠনে ও জনগণকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
বিচার সংক্রান্তক্ষমতাঃ
ব্রিটেনের সর্বোচচ আপিল আদালত হচ্ছে লর্ড সভা ।প্রথানুযায়ী এ আপিল বিচার
কাজে সাধারণ লর্ডগণ অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। কেবলমাত্র ল’ লর্ডগণই উক্ত আদালতের সদস্য
হিসাবে কাজ করেন। ল’ লর্ডগণের মধ্যে আছেন লর্ড চ্যান্সেলর, ৯ জন সাধারণ কমন্স সভার শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লর্ড সভার শক্তি কমে যেতে থাকে
আপিল লর্ড, প্রাক্তন লর্ড চ্যান্সেলরগণ এবং উচচ বিচারক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বা আছেন এমন সমস্ত
লর্ড। কমপক্ষে ৩ জন ল’ লর্ড আদালতে উপস্থিত না থাকলে কোন আপিলই শুনানীর জন্য গৃহীত হয় না।
অন্যান্য ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ
স্থানীয় বা বিশেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিল, অর্পিত ক্ষমতা বলে প্রণীত আইন ( বিচার
বিবেচনা করার কাজে অংশগ্রহণ করে লর্ড সভা কমন্স সভার কাজের চাপ বহুলাংশে কমাতে পারে।
বিধিবদ্ধ আইন (ংঃধঃঁঃবং) বলে যে সকল বিধান প্রণয়ন করা হয়, তাকে অনুমোদন বা প্রত্যাখান করার
ক্ষমতা লর্ড সভার আছে। যে কোন প্রশাসনিক বিষয়ে মন্ত্রীগণকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা লর্ডগণের আছে। শুধু
তাই নয়, কমন্স সভার সদস্যগণের ন্যায় বিচারকগণের প্রক্রিয়ায় লর্ড সভার সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন।
সারকথাঃ
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচচ কক্ষের নাম ‘লর্ড সভা’ নর্মান আমলের বৃহত্তর পরিষদ
হতে বিবর্তিত লর্ড সভা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন দ্বিতীয় পরিষদ (ঝবপড়হফ
ঈযধসনবৎ)। অতীতে লর্ড সভার ক্ষমতা ছিল অনেক বেশী, কিন্তু বর্তমানে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এর ক্ষমতা অনেক হ্রাস পেয়েছে।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ননক. কমন্স সভার সদস্য;
খ. লর্ড সভার সদস্য;
গ. সিনেটের সদস্য।
২. লর্ড সভার সভাপতিত্ব করেন কে ?
ক. লর্ড চ্যান্সেলর;
খ. প্রধানমন্ত্রী;
গ. রাজা বা রানী;
ঘ. স্পীকার।
৩. লর্ড সভার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমানো হয় কিভাবে -
ক. রাজার আদেশ বলে;
খ. মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা;
গ. পার্লামেন্ট এ্যাক্ট ১৯১১, ১৯৪৯ দ্বারা।
উত্তরমালাঃ ১, খ ২, ক ৩, গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. লর্ড সভা কিভাবে গঠিত হয় ?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]