ব্রিটেনের বিচার বাবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

যে কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি অপরিহার্য
অঙ্গ। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে কাজ করে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে সমাজে অন্যান্য
প্রতিষ্ঠানের গঠন, নীতি এবং কার্যকলাপের যেমন পরিবর্তন ঘটেছে, ব্রিটেনের বিচার বিভাগেরও তেমনি
পরিবর্তন ঘটেছে।
ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থায় কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নি¤েœসেগুলো উল্লেখ করা হল ঃ
 ব্রিটেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত। এখানে আইনের চোখে সকলে সমান। সকল ব্যক্তি একই আইন
ও আদালতের অধীন। ব্রিটেনে সাধারণতঃ প্রথাগত আইন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ব্রিটেনের এ প্রথাগত
আইনের দ্বারা সাধারণ নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। এখানে
সাধারণ নাগরিক এবং সরকারী কর্মচারীদের একই আদালতে একই আইনের মাধ্যমে বিচার করা হয়। তাই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্তসকলে একই আইন এবং
একই আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত।
 ব্রিটেনের সর্বত্র বিচার কাঠামো এক ধরণের নয়। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস এর বিচার কাঠামোর সাথে
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিচার কাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে ইংল্যান্ড
এবং ওয়েলসের আদালতগুলো একটি কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থার অধীন কাজ করে থাকে।
 ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আদালতগুলোর নিরপেক্ষতা। বিচারপতিগণ
নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন। বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা
আছে। রাজা বা রানী তাঁদের নিয়োগ দেন। বিচারপতিগণ কোন অসদাচরণ বা দুর্নীতির অভিযোগে
অভিযুক্ত হলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের প্রস্তাব অনুসারে রাজা বা রানী তাঁদের অপসারণ করতে
পারেন।
 ব্রিটেনের বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে। ব্রিটেনে
কোন লিখিত সংবিধান না থাকায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো সুস্পর্ষ্টভাবে বিধিবদ্ধ নেই।
এক্ষেত্রে বিচার বিভাগই জনসাধারণের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
বিচারপতিগণ নাগরিক অধিকার সংক্রান্তমামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব
আরোপ করেন।
 ব্রিটেনের আদালতের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা বা আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্তে¡ও বিচার বিভাগ মার্কিন কংগ্রেস প্রণীত
আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনের বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনের
বৈধতা বিচার করতে পারে না। কেননা আইন প্রণয়ণের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট সার্বভৌম ক্ষমতার
অধিকারী।
 ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থার একটি বিশেষ দিক হল জুরীর মাধ্যমে বিচার কার্য পরিচালনা করা।
সাধারণতঃ ফৌজদারী মামলার বিচার জুরীর সাহায্যে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত বিশিষ্ট
ব্যক্তিগণ জুরী হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁরা ন্যায় নীতিবোধ ও স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি দ্বারা বিচার কার্য পরিচালনা করেন।
 ব্রিটেনে কোন লিখিত সংবিধান না থাকায় ফলে বিচার ব্যবস্থায় বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারকগণ
সাধারণত: প্রথাগত আইনের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কোন কোন ক্ষেত্রে বিচারকগণ বিচারকার্য
পরিচালনায় ব্যাপক স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। এর ফলে বিচারপতিদের পক্ষে অতি
দ্রæত মামলার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়।
 ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থা সাধারণত: অভিযোক্তা সম্পর্কিত। অর্থাৎ এখানে অভিযোগকারীর অভিযোগের
ভিত্তিতে বিচারকার্য শুরু হয়। এ ব্যবস্থায় আদালত অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা করে না।
অভিযোগকারীকেই তার অভিযোগ প্রমাণ করতে হয়।
 ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের পৃথক কোন আপীল এলাকা নেই। পার্লামেন্টের উচচ কক্ষ
লর্ড সভা সর্বোচচ আপীল আদালত হিসেবে কাজ করে। এভাবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বিচার বিভাগীয়
ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
 ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থা প্রধানত: দেওয়ানী ও ফৌজদারী এ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। দেওয়ানী ও
ফৌজদারী মামলার সাংগঠনিক কাঠামো সম্পূর্ণস্বতন্ত্র। সাধারণত পৃথক আদালতে প্রকাশ্যে দেওয়ানী
ও ফৌজদারী মামলার বিচার হয়। সমস্তফৌজদারী বিচারে রাজা রানীর নামে অপরাধীকে অভিযুক্ত
করা হয়। পক্ষান্তরে দেওয়ানী আইন ব্যক্তিগত দাবী-দাওয়া বা অধিকার সংরক্ষণ এবং বাক্তিগত
অন্যায়ের প্রতিকার বিধানের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থার শ্রেণী বিভাগঃ
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থা ফৌজদারী ও দেওয়ানী এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ।
সাধারণত স্বতন্ত্রআদালতে ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার বিচার হয়। তাই ব্রিটেনের বিচার কার্যের সাথে
সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হযেেছ। যথা-
 ফৌজদারী আদালত ও
 দেওয়ানী আদালত।
ফৌজদারী আদালতঃ
ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বনি¤œআদালত হল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত
লর্ড সভার চ্যান্সেলর এই আদালতের বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ ফৌজদারী মামলার
বিচার এই আদালতগুলোতে হয়ে থাকে। আবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপরে রয়েছে রাজকীয় আদালত
এই রাজকীয় আদালত উচচ ন্যায়ালয়ের বিচারকগণ
সারকিট বিচারকগণ এবং রেকর্ডার )-দের নিয়ে গঠিত। সাধারণত অধিক
গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারী মামলার বিচারই আদালতে হয়ে থাকে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো যে সমস্তগুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারী মামলা বিচারের অপারগতা প্রকাশ করে রাজকীয়
আদালতগুলো সে সকল মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর
রায়ের বিরুদ্ধে রাজকীয় আদালতগুলোতে আপিল করা যায়। ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় রাজকীয়
আদালতের উপরিস্থ আদালত হল আপিল আদালত। এ আপিল আদালত লর্ড চীফ জাস্টিস (খড়ৎফ ঈযরবভ
ঔঁংঃরপব) এবং হাই কোর্টের (ঞযব ঐরময ঈড়ঁৎঃ) রাজা বা রানী বিভাগের দুই বা ততোধিক বিচারক নিয়ে
গঠিত হয়। রাজকীয় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে আপিল করা যায়। এরপরও আইনের
প্রশ্নে লর্ড সভায় আপিল করা যায়; তবে আদালতকে এ মর্মে সার্টিফিকেট দিতে হয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটিতে
জনস্বার্থ এবং আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে।
দেওয়ানী আদালতঃ
ব্রিটেনে দেওয়ানী বিচারের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œআদালত হল কাউন্টি আদালত (ঈড়ঁহঃু ঈড়ঁৎঃং)। অধিকাংশ
দেওয়ানী মামলার বিচার হয় এই কাউন্টি আদালতে। মাত্র একজন বিচারপতি নিয়ে কাউন্টি আদালত
গঠিত। তিনি লর্ড চ্যান্সেলার কর্তৃক মনোনীত হন। কাউন্টি আদালতের অধীন এক বা একাধিক সার্কিট
জজ থাকেন। লর্ড চ্যান্সেলার তাঁদের নিযুক্ত করেন। কাউন্টি আদালতগুলোতে অপেক্ষাকৃত স্বল্প অর্থের
দাবী-দাওয়া সংক্রান্তবিবাদগুলোর বিচার করা হয়ে থাকে। লন্ডন শহরের কাউন্টি আদালত “মেয়রের বা
লন্ডন শহরের আদালত” নামে পরিচিত। যে সকল
দেওয়ানী মামলা কাউন্টি আদালতের বিচার করার এক্তিয়ার নেই সেগুলো বিচারের জন্য উচচ ন্যায়ালয়ে
প্রেরণ করা হয়। উচচ ন্যায়ালয় হল উর্ধ্বতন বিচারালয়ের (ঞযব
একটি অংশ। এই আদালতের তিনটি বিভাগ আছে। যথা- (১) রাজা
বা রানীর বিভাগ চ্যান্সারী বিভাগ (২) এবং (৩) পারিবারিক বিভাগ (ঞযব ঋধসরষু উরারংরড়হ)।উচ্চ ন্যায়ালয়ে আণীত মামলাগুলোর বিষয়বস্তু অনুসারে এই বিভাগগুলো বিভিন্ন মামলার বিচার কার্য
পরিচালনা করে থাকে। হাইকোর্টের এই তিনটি বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে আপিল করা
যায়। লর্ড চ্যান্সেলারের সভাপতিত্তে¡ উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে আপিল আদালত
গঠিত হয়। এই আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে লর্ড সভায় আপিল করা যায়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে
ফৌজদারী বিচারের ন্যায় দেওয়ানী মামলার ব্যাপারেও সর্বশেষ আপিল আদালত হল লর্ড সভা। তাই লর্ড
সভাই হল ব্রিটেনের সর্বোচচ আপিল আদালত। সাধারণতঃ লর্ড সভায় আপিল মামলা বিচারের সময় লর্ড
চ্যান্সেলার ও দশজন আপিল লর্ড উপস্থিত থাকেন। তবে বিচার বিভাগীয় উচ্চ পদে আসীন ছিলেন এমন
পিয়ারগণ ও প্রাক্তন লর্ড চ্যান্সেলারগণ লর্ড সভায় আপিল মামলার শুনানীতে উপস্থিত থাকতে পারেন।
আপিল আদালত বা লর্ড সভার অনুমোদন ছাড়া লর্ড সভায় আপিল করা যায় না। সাধারণতঃ গুরুত্বপূর্ণ
আইনের প্রশ্ন জড়িত মামলার ক্ষেত্রেই আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে।
সারকথাঃ
যে কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি অপরিহার্য
অঙ্গ। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে কাজ করে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে সমাজে অন্যান্য
প্রতিষ্ঠানের গঠন, নীতি এবং কার্যকলাপের যেমন পরিবর্তন ঘটেছে, ব্রিটেনের বিচার বিভাগেরও তেমনি পরিবর্তন ঘটেছে। লর্ড সভাই হল ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আপিল আদালত
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. প্রথাগত আইন লক্ষ্য করা যায় কোথায় ?
ক. আমেরিকায়;
খ. ব্রিটেনে;
গ. ভারতে;
ঘ. বাংলাদেশে।
২. ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আদালতগুলো কার অধীনে কাজ করে ?
ক. সুপ্রীম কোর্টের অধীনে;
খ. রাজার অধীনে;
গ. কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থার অধীনে;
ঘ. কমন্স সভার অধীনে।
৩. ব্রিটেনে দেওয়ানী বিচারের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œআদালত হল -
ক. জজ কোর্ট;
খ ফৌজদারী কোর্ট;
গ. কাউন্টি আদালত।
৪. ব্রিটেনের সর্বোচচ আপিল আদালত হলক. সুপ্রীম কোর্ট;
খ. লর্ড সভা;
গ. হাই কোর্ট।
উত্তরমালাঃ ১, খ. ২, গ, ৩. গ, ৪. খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. ফৌজদারী আদালত কি ?
২. দেওয়ানী আদালত কিভাবে কাজ করে ?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. ব্রিটেনের বিচার বাবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]