যুক্তরাজ্যে দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

ব্রিটেনে দল-ব্যবস্থার বিকাশঃ
ব্রিটিশ সংবিধানের ন্যায় সেদেশের রাজনৈতিক দলের ইতিহাসও অনেক দীর্ঘ। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ
পার্লামেন্টে গঠিত গোষ্ঠীগুলো হতেই মূলতঃ রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। কারো কারো মতে, ইংল্যান্ডে
গৃহ যুদ্ধের ফলে সেখানে প্রথম দৃশ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো বিকাশ লাভ করে। তৃতীয় উইলিয়ামের
সময় যখন পার্লামেন্টের প্রধান্য মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন পার্লামেন্টে টোরী ও হুইগ -এ দুই দলের প্রাধান্য ছিল। অবশ্য ১৬৭৯ সালে সর্বপ্রথম এই দুটি দলের নাম ব্যবহৃত হয়।
১৮৩২ সালের সংস্কার আইনের পর টোরী ও হুইগ দলের নাম পরিবর্তিত
হয়ে যথাক্রমে রক্ষণশীল ও উদারনৈতিক দল নামে পরিচিতি লাভ করে।
সমগ্র উনিশ শতকে উদারনৈতিক ও রক্ষণশীল দল ছাড়া আর কোন দলের অস্তিত্ব ব্রিটেনে ছিল না। ১৯০০
সালের পূর্বেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিক সদস্য ছিল, কিন্তু তাদের দলগত কোন রূপ ছিল না। ১৮৯৯
সালে ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের অধিবেশনে পার্লামেন্টে আরও অধিক সদস্য দাঁড় করাবার জন্য শ্রমিকসংঘ এবং বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক সংঘের এক সভা আহŸান করে। তাঁদের সমন্বয়ে একটি ফেডারেশন গঠিত
হয়। পরবর্তীতে এটিই শ্রমিক দল নামে পরিচিত হয়।
যুক্তরাজ্যে দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ব্রিটেনের রাজনীতি বিষয়ে সম্যক ধারণা পেতে হলে তার দলীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা থাকা একান্ত
প্রয়োজন। দল ব্যবস্থার উদ্ভবের ফলেই আজ রাজা বা রানী এত দূর্বল আর প্রধানমন্ত্রী এত শক্তিশালী।
দল ব্যবস্থার কার্যকারিতার কারণেই বর্তমানে কেবিনেট ও পার্লামেন্টের মধ্যকার সম্পর্ক প্রায় পুরোপুরিভাবে
পরিবর্তিত হয়ে গেছে। দল ব্যবস্থার কার্যকারিতার উপরই মূলতঃ যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভরশীল।
নি¤েœব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলঃ
 ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা। ব্রিটেনে বহু
দিন হতেই দু’টি দলের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। জনগণের মধ্যে দু’টি দলের পর্যাপ্ত সংখ্যক সংগঠন
আছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতায় আসীন হওয়াই তাদের লক্ষ্য। মূলতঃ দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার
তাৎপর্য বুঝতে পারলেই ব্রিটিশ রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা করা সহজ হবে। অধ্যাপক ফাইনার ব্রিটিশ
দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার ছয়টি গুণের কথা উল্লেখ করেন। অবশ্য দু’টি দলের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও
আইন সভার ভেতরে ও বাইরে দু’য়ের অধিক দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
 ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থার আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দলীয় সদস্যগণ দলের প্রতি সুদৃঢ়ভাবে অনুগত
থাকেন। রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হলে কোন ব্যক্তিকে উক্ত দলের সদস্য তালিকায় শুধু তার
নাম অন্তর্ভুক্ত করলেই চলে না; তাঁকে উক্ত দলের প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রæতিও দান করতে হয়।
সদস্য পদের জন্য দলীয় সদস্যকে আনুষ্ঠানিক প্রমাণ প্রদানের ব্যবস্থাও আছে।
 ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরিভাবে সুসংগঠিত। দেশের সর্বত্রই তাদের শাখা স¤প্রসারিত
রয়েছে। প্রত্যেক দলই তাদের সদস্যদের নিকট হতে মাসিক বা বার্ষিক চাঁদা আদায় করে। দলের
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং শাখাগুলোর মধ্যে সব সময়ই ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে চলা হয়। প্রত্যেক
দলেরই বেতনভুক্ত স্থানীয় এজেন্ট, এর আঞ্চলিক ও সদর দপ্তরে বেতন ভোগী কর্মচারী দল আছে।
দলীয় পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও দলীয় বিবিধ কাজ পরিচালনা করা তাঁদের দায়িত্ব।
 ব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি নির্ধারণে এবং
নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। তবে প্রার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত
সামান্য ক্ষমতা দলের স্থানীয় শাখাগুলোর আছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও দলীয় সদর দপ্তর ভেটো প্রদান
করতে পারে। এখানে কোন দলের নেতৃত্ব দান ও দলীয় অর্থ-ব্যয় সংক্রান্তবিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের
ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে ন্যস্ত।
 দৃঢ় শৃংখলা ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থার অন্যতম আর একটি বৈশিষ্ট্য। সংসদীয় নির্বাচনে দলীয়
মনোনয়ন লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবশ্যই দলের কেন্দ্রীয় সংগঠন কর্তৃক নির্দেশিত শর্তাবলী পূরণ
করতে হবে। তাঁকে অবশ্যই দলীয় সদস্য হতে হবে এবং দলীয় নীতি ও কর্মসূচীর প্রতি অনুগত
থাকার প্রতিশ্রæতি দিতে হবে। সংসদে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণের দৃষ্টান্তব্রিটেনে বিরলই বলা
যায়। দলত্যাগ কিংবা বিরোধী দলের অনুক‚লে ভোট দানের দৃষ্টান্তব্রিটেনে নেই। এ ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট
সদস্যগণ ভোটদানে বিরত থাকেন মাত্র।
 ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা পুরোপুরি কার্যসূচী ভিত্তিক।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য কোন কার্যসূচী প্রস্তুত করতে যথেষ্ট সময় ব্যয় করে
এবং নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করে। অনেকে ব্রিটেনের
রাজনৈতিক দলগুলোকে আধা-আদর্শবাদী (ঝবসর-রফবড়ষড়মরপধষ) হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
 রাজনৈতিক দলগুলো শ্রেণী স্বার্থরক্ষার প্রতিভ‚-ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে একথা কিছুটা
হলেও প্রযোজ্য যে তারা শ্রেণী স্বার্থ রক্ষা করে চলে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি শ্রেণী
ভিত্তিক দল না হলেও নির্দিষ্ট শ্রেণীর প্রতি তাদের অনুরাগ এবং শ্রেণী ভিত্তিক সমর্থন রয়েছে। উদাহরণ
স্বরূপ, ট্রেড ইউনিয়নগুলো শ্রমিক দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ স্বরূপ। শ্রমিক দল সামগ্রিকভাবে সংগঠিত
শ্রমিকগণের ও দরিদ্রেরই দল। আবার, রক্ষণশীল দল (ঈড়হংবৎাধঃরাব চধৎঃু) সকল শ্রেণীর জনগণের
সমর্থন লাভ করলেও সমাজের এলিটরা উচ্চ শ্রেণী ও সম্পদশালী শ্রেণীগুলোর মধ্যেই এ দলের মূল সমর্থন ভিত্তি নিহিত।
ব্রিটেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল
ব্রিটেনের বর্তমান শাসন-ব্যবস্থা সংগঠিত, প্রতিশ্রæতিশীল ও শৃংখলাবদ্ধ রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের উপর
বহুলাংশে নির্ভরশীল। অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ব্রিটেনে কার্যকর থাকলেও বর্তমান ব্রিটিশ রাজনীতিতে
রক্ষণশীল দল ও শ্রমিক দল- এ দু’টি দলের প্রাধান্য সুস্পষ্ট। সেখানকার অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমূহের
মধ্যে নব-গঠিত সোশ্যাল এ্যান্ড লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কোঅপারেটিভ পার্টি, গ্রেট ব্রিটেন কমিউনিষ্ট পার্টি, ন্যাশনাল ফ্রন্ট, সোশ্যালিষ্ট পার্টি প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।
রাজনৈতিক দলগুলো ব্রিটিশ সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংগ। এ দলীয় রাজনীতির সুবাদেই সামগ্রিক
রাজনৈতিক ব্যবস্থা সচল রয়েছে। সরকার ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য এবং সরকারের উপর যৌক্তিক চাপ
প্রয়োগ করে দাবী আদায়ের জন্য সরকারী ও বিরোধী উভয় দলের অস্তিত্ব একান্তজরুরি। ব্রিটেনের দলীয়
ব্যবস্থাকে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তহিসেবে দেখানো যেতে পারে।
সারকথাঃ
ব্রিটেনের সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা। দলগুলো প্রচারের মাধ্যমে জনমত
গঠন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের চেষ্টা করে। নির্বাচনে যে দল কমন্স সভায়
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলই সরকার গঠন করে। অপর দলগুলোর মধ্যে কমন্স সভার দি¡তীয় বৃহৎ দলটি বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থায় সংস্কার আইন হয়েছিল কত সালে ?
ক. ১৬৬৯;
খ. ১৮৩২;
গ. ১৮৩৫।
২. ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছিল -
ক. সপ্তদশ শতাব্দীতে;
খ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে;
গ. উনবিংশ শতাব্দীতে।
৩. কি কারণে প্রধানমন্ত্রী রাজা বা রানীর চেয়ে শক্তিশালীক. আইনের শাসনের ফলে
খ. লর্ড সভার কারণে
গ. দলীয় ব্যবস্থা উদ্ভবের ফলে।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. ক, ৩. গ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. ব্রিটেনে দল ব্যবস্থার বিকাশ কিভাবে হয়েছিল?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. যুক্তরাজ্যে দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]