মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান শক্তিশালী রাষ্ট্র। সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বদিকে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্তমহাসাগর,
উত্তরে কানাডা এবং দক্ষিণে মেক্সিকো ও মেক্সিকো উপসাগর। দেশটির আয়তন প্রায় ৩৫,৫৭,০০০ বর্গমাইল। সমগ্র
দেশটি উপত্যকা, বৃহৎ নদ-নদী এবং বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে উর্বর সমভ‚মি নিয়ে গঠিত। খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে
সম্পদশালী এ দেশটি বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত
হয়েছে। তেরটি উপনিবেশের ৫৫ জন প্রতিনিধ ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
(উবপষধৎধঃরড়হ ঙভ ওহফবঢ়বহফবহপব) সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে। ঐ দিনে বিশ্বের বুকে আবিভর্‚ত হয় একটি শক্তিশালী
দেশ যার নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৭ সালের ১৭ নভেম্বর ১৩টি রাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে একটি ‘কনফেডারেশন’ গঠন করে
এবং পরবর্তীতে ১৭৮৩ সালে স্বাধীনতার চ‚ড়ান্তস্বীকৃতি অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে দেশটি ব্রিটেনের কলোনী
ছিল। সংবিধান রচনার পটভ‚মি
সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক বিধি বিধানের সমষ্টি। মার্কিন সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়।
মহাদেশীয় কংগ্রেসের রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদ থেকে মার্কিন সংবিধানের সূত্রপাত। রাষ্ট্র সমবায়ের যে
অনুচ্ছেদগুলো প্রস্তুত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান বলে অনেকে অভিহিত করেছেন।
উপনিবেশগুলোর ঐক্য রক্ষা এবং যুদ্ধ পরিচালনাই ছিল রাষ্ট্র সমবায় অনুসারে দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসের
অন্যতম উদ্দেশ্য। কলোনী যুগের গর্ভনরগণ পদত্যাগ করে মাতৃভ‚মি ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয়
নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোতে প্রশাসনিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। যে যার প্রয়োজন মত সরকার
পুনর্গঠনের জন্য মহাদেশীয় কংগ্রেস উপনিবেশগুলো নিজেদের উপনিবেশের পরিবর্তে রাষ্ট্র হিসেবে
আখ্যায়িত করতে থাকে এবং নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনায় ব্যপৃত হয়। “রোড আইল্যান্ড’’ এবং
“কনেকটিকাট” নিজেদের রাজকীয় সনদের সামান্য শব্দগত পরিবর্তন করে। ঐ সনদকেই তারা শাসনতন্ত্র
হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রাষ্ট্রগুলোর শাসনতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে
বৈসাদৃশ্য দেখা দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রপ্রণেতাগণ তৎকালীন অষ্টাদশ শতাব্দীর তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের
সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তারা মনে করেন রাষ্ট্রতন্ত্রের প্রধান প্রধান ধারাগুলোকে সংবিধানভুক্ত করতে পারলে
সংবিধানের উৎকৃষ্টতা বৃদ্ধি পাবে। ১৭৮১ সালে গৃহীত রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদে ১৭৮৭ সালের মার্কিন
সংবিধানের উৎসরূপে গৃহীত হয়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-সমবায়ের কাঠামোতে দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট
হতে থাকে। রাষ্ট্রগুলো নিজেদের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সক্ষম ছিল। সমবায়ী ১৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে
বিশেষত বানিজ্যিক স্বার্থের সংঘাত ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র সমবায়ের দুর্বলতা দূর
করার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। একটি সম্মেলন আহŸানের মাধ্যমে আলেকজান্ডার
হ্যামিলটনের যথার্থ প্রচেষ্টায় ১৭৮৭ সালে কংগ্রেসের নিকট আবেদন পেশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে
১৭৮৯ সালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়।
মার্কিন সংবিধানের উদ্ভব ও বিকাশ
জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ
সম্মেলনে আমেরিকার একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তগৃহীত হয়। এ উদ্দ্যেশ্যে একটি সংবিধান প্রণয়নের
সিদ্ধান্তনেয়া হয়। মার্কিন সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে আর যাঁদের উদ্যোগ এবং ভ‚মিকা অপরিসীম তাঁরা হলেন
জেমস ম্যাডিসন, আলেকজান্ডার হ্যামিলটন ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমূখ। এ ছাড়াও কিছু কিছু প্রতিনিধি
সংবিধান প্রণয়নে বিশেষ নৈপূণ্য ও দক্ষতার পরিচয় দেন।
ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদ সংশোধন। প্রতিনিধিগণ নতুন
সংবিধান রচনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। সম্মেলনের প্রতিনিধি আলেকজান্ডার হ্যামিলটন গণতন্ত্রের
প্রতি ছিলেন উদাসীন। তিনি শুরু থেকেই সাংবিধানিক রাজশক্তির প্রতি গুরুত্ব দেন। তিনি সাংবিধানিক
রাজশক্তির ন্যায় একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। তাঁর প্রস্তাবকে কেন্দ্র
করে ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি এডমন্ড রানডলফ ১৫টি প্রস্তাবের এক সংকলন সভায় উপস্থিত করেন। কিন্তু
ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো-এর বিরোধীতা করেন। নানা তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে বোঝাপাড়ার মনোভাব গড়ে
উঠে। অনেকেই মনে করেছিলেন যে হয়তো ১৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে অনেকেই সংবিধান অনুমোদন করবে
না। আলোচনার পর স্থির হয় যে, ১৩টি রাষ্ট্র অনুমোদন করলেই সংবিধান কার্যকর বলে ধরে নেয়া হবে।
ডেলওয়্যার, নিউ জার্সি, জর্জিয়া এবং কনেকটিকাট প্রমূখ রাষ্ট্র দ্রæত সংবিধান অনুমোদন করে। নর্থ
ক্যারোলিনা এবং রোড আইল্যান্ড সম্মতি জ্ঞাপন করে। ১৭৮৯ সালের মার্চ মার্সের প্রথম বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়। অবশেষে ১৭৮৭ সালের মার্কিন সংবিধান ১টি প্রস্তাবনা এবং ৭টি
অনুচ্ছেদসহ গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। এই হলো মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ধারা।
মার্কিন সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি সংবিধানের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন সংবিধানের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। ঐ
সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সংবিধানের সামগ্রিক পরিচয় নিহিত থাকে। মার্কিন সংবিধানের প্রধান
বৈশিষ্ট্যগুলোকে নি¤েœতুলে ধরা হলঃ
১. প্রস্তাবনাঃ প্রস্তাবনাকে মার্কিন সংবিধানের প্রথম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া
সম্মেলনে রচিত ও গৃহীত মার্কিন সংবিধানে সর্বপ্রথম একটি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। এর
পূর্বে সংবিধানে প্রস্তাবনা সংযোজনের কোন দৃষ্টান্তনেই। স্বাধীনতা ঘোষণার মৌলিক বিধানগুলোও
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতাগণ এ
প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন।
২. লিখিত সংবিধানঃ মার্কিন সংবিধান লিখিত প্রকৃতির। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান। এ
সংবিধানের অধিকাংশ বিধি বিধান লিখিত। এ সংবিধান সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন। সংবিধানের ৬নং
অনুচ্ছেদে বলা আছে,.”
৩. জনগণের সার্বভৌমত্বঃ জনগণের সার্বভৌমত্ব মার্কিন শাসনতন্ত্রের একটি বিশিষ্ট দিক। মার্কিন
সংবিধানের শুরুতে বলা আছে“ডব ধৎব ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ঃযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং” সংবিধানের
প্রস্তাবনার ঐ ধরনের উল্লেখ গণসার্বভৌমত্যের নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে টকভিল বলেন, “মূর্তি পূজারীর
কাছে বিগ্রহের স্থান যে রকম, মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় জনগণের স্থান ও তদ্রæপ”।
৪. সংক্ষিপ্ততাঃ সংক্ষিপ্ততা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মার্কিন সংবিধানে
কেবলমাত্র শাসন ব্যবস্থার মৌল বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। এ সংবিধানে ব্যাপক কোন ব্যাখ্যা নেই।
এর কারণ হল অঙ্গরাজ্যগুলোর স্ব-স্ব সংবিধান। সংবিধানটির প্রাথমিক মুদ্রিত আয়তন ১০-১২ পৃষ্ঠার
বেশী ছিল না। সুতরাং এটি একটি সংক্ষিপ্ত সংবিধান।
৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাঃ মার্কিন সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
যুক্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মানে, সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্য ক্ষমতার বন্টন। মার্কিন
সংবিধান ছিল পৃথিবীর সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের মধ্যমণি।
৬. সংবিধানের প্রধান্যঃ মার্কিন সংবিধানে সংবিধানের প্রাধান্যের কথা বলা আছে। সংবিধানের প্রধান্য
বলতে আমরা বুঝি সংবিধান কর্তৃক গঠিত সকল সংস্থা ও কাঠামো সংবিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াকে। বস্তুতঃ সংবিধান হল দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন। মার্কিন সংবিধান ছিল পৃথিবীর সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের মধ্যমণি
৭. পরিবর্তনীয় সংবিধানঃ এ সংবিধান লিখিত প্রকৃতির এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। এ সংবিধান সহজে
পরিবর্তনযোগ্য নয়। মার্কিন সংবিধান পরিবর্তনে বিশেষ জটিল ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। এ কারণে
মার্কিন সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির।
৮. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণঃ মার্কিন সংবিধানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ। এই
বৈশিষ্ট্যকে কেউ কেউ মার্কিন সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভবলে অভিহিত করেছেন। এ নীতি অনুসারে
সরকারের ত্রিবিধ ক্ষমতা- আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের উপর ন্যস্তকরা হয়েছে। বিধান রাখা
হয়েছে যে, সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
৯. নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য-নীতিঃ মার্কিন সংবিধানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য- নীতির ব্যবস্থা রয়েছে। এটি
মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সংবিধান প্রনেতাগণ স্বেচছাচারের আশংক্সকা দূর করার
জন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতি সংযোজন করেন। এ নীতির মূল কথা হল- প্রত্যেক
বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অপর দুই বিভাগ প্রাপ্ত।
১০. মৌলিক অধিকার ঃ মার্কিন সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের বিধান রয়েছে। নাগরিকের
মৌলিক অধিকার লিখিত ভাবে মার্কিন সংবিধানে সর্ব প্রথম উল্লেখ করা হয়। সংবিধানের প্রথম ১০টি
অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে।
১১. রাষ্ট্রপতিঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান। এ ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।
রাষ্ট্রপতি আইনগত ও বাস্তব দিক থেকে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি
ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে সংবিধানের ২নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসন
বিভাগের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কংগ্রেসের কাছে সরাসরি দায়িত্বশীল নন। মন্ত্রীগণ আইন
সভার কাছে দায়ী থাকে এবং সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ী থাকেন। তারা আইন সভার সদস্যও
নন।
১২. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি সফলতার জন্য এ ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা হল
আদালতের আইন সভার কোন আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার এখতিয়ার। এ প্রক্রিয়ায়
আদালত সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির এটি একটি প্রকৃত
উদাহরণ।
১৩. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাঃ মার্কিন শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে
স্বীকৃত। মার্কিন সংবিধানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের সহাবস্থানের বিধান রাখা হয়েছে। এ
শাসনতন্ত্রে“গণ-উদ্যোগ ও ‘‘গণ ভোট’’ এর উল্লেখ রয়েছে। মার্কিন সংবিধানে এটিই হলো প্রত্যক্ষ
ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের পরিচয়।
১৪. দ্বৈত ব্যবস্থাঃ দ্বি-ব্যবস্থা মার্কিন সংবিধানের সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য রূপে উল্লেখ করা যায়। মার্কিন
সংবিধানে দ্বি-নাগরিকত্বের পাশাপাশি দ্বি-কক্ষ আইন সভা ও দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যবস্থায় নাগরিক একাধারে যুক্তরাষ্ট্র ও অংগ রাষ্ট্রের নাগরিক বলে বিবেচিত হয়।
মার্কিন সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি
সংশোধন পদ্ধতি অনুসারে মার্কিন সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। একমাত্র কেন্দ্রীয় আইন সভা বা
কংগ্রেস ও সরকারই এই সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। এই সংবিধান সংশোধনে কেন্দ্রীয় সরকার
ও রাজ্য সরকার অপরিহার্য। দুটি পদ্ধতিতে মার্কিন সংবিধান সংশোধন করা যায়। যথাঃ-
 প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের উপস্থিত সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সম্মতিক্রমে সংবিধান সংশোধনের
প্রস্তাব রাখা যায়। এ জন্য ফোরাম গঠন আবশ্যক। অন্যথায় এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের কোন ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা নেই।
 অংগরাজ্যের আইন সভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে জাতীয় সম্মেলন
আহবান করতে পারেন। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রস সম্মেলনের আহবান করবে, তবে এ পদ্ধতির প্রয়োজন অনেকটা সীমিত।
মার্কিন সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিকে নি¤েœাক্ত ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব।
১. কংগ্রেসের উভয় কক্ষের উপস্থিত সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থনে প্রস্তাব পেশ।
অথবা
২. রাজ্যগুলোর আইনসভার দু’তৃতীয়াংশের অনুরোধক্রমে কংগ্রেস কর্তৃক আহূত সভা দ্বারা প্রস্তাব পেশ
১. অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার তিন চর্তুথাংশ দ্বারা অনুমোদন।
অথবা
২. একই উদ্দেশ্য অঙ্গরাজ্যগুলোর আহূত সম্মেলনে তিন-চতুর্থাংশ দ্বারা অনুমোদন।
উপরে বর্ণিত ব্যাখ্যার আলোকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, মার্কিন সংবিধান সংশোধনে প্রস্তাব উত্থাপন
পদ্ধতি ও অনুমোদন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ সংশোধন পদ্ধতি বিশেষ পদ্ধতি রূপে স্বীকৃত। এ
কারণেই মার্কিন সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পর্যায়ভুক্ত।
সারকথাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ ১৭৭৬ সালে
ব্রিটেনের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই মার্কিনবাসী সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি
করে। এ লক্ষ্যে তারা ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি সম্মেলন আহŸান করে। এ সম্মেলনের মধ্য
দিয়ে জন্ম নেয় আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবিধান এর মৌলিক দিকগুলো হল, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা,
লিখিত প্রকৃতির সংবিধান, রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
সঠিক উত্তরে টিক () দিন
১। আমেরিকা স্বাধীনতা ঘোষণা করে -
ক) ১৭৭৬ সালের জুন মাসে; খ) ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই মাসে;
গ) ১৭৭৬ সালের ৫ই জুলাই মাসে; ঘ) ১৭৭৬ সালের ১০ই জুলাই মাসে।
২। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় -
ক) ১৭৭৬ সালে; খ) ১৭৭৮ সালে;
গ) ১৭৮৭ সালে; ঘ) ১৭৮৫ সালে।
৩। মার্কিন সংবিধানে প্রস্তাবনার সংখ্যা ?
ক) একটি; খ) দু’টি;
গ) চারটি; ঘ) কোনটি নয়।
উত্তরমালাঃ- ১। খ, ২।গ, ৩। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের পটভ‚মি বর্ণনা করুন।
২। যুক্ত রাষ্ট্রের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি ব্যাখা করুন।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য ব্যবস্থা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]