মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি ভাবে কার্

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিঃ
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মার্কিন সংবিধানের একটি বিশেষ দিক। মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ কোন রকম
আবেগের বশবর্তী হয়ে সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গ্রহণ করেন নি। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি
বলতে আমরা শাসন বিভাগকে শাসন করার আইন বিভাগকে আইন রচনা করার এবং বিচার বিভাগকে
বিচারের জন্য স্বাধীনতা দান করার নীতিকে বুঝায়।
১. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ এর মূলনীতিঃ স্বতন্ত্রতা এই নীতির প্রধান ভিত্তি। এই নীতিতে বলা আছে
যে, সরকারের তিনটি বিভাগ পরস্পর স্বতন্ত্রথাকবে।
২. হস্তক্ষেপ মুক্ত ঃ এটি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বিতীয় দিক। এ নীতিতে বিধান রাখা আছে, এক
বিভাগ অন্য বিভাগের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রত্যেকটি বিভাগ স্ব-স্ব কাজ করবে।
৩. একক দায়িত্ব ঃ একটি দায়িত্ব ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম মৌল ভিত্তি। এই নীতি অনুসারে
একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সাথে যুক্ত থাকতে পারবে না। এক ব্যক্তি একটি বিভাগের দায়িত্ব
পালন করবে।
৪. নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ঃ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত অবস্থা ক্ষমতা স্বতন্ত্রকরণ নীতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। এই
নীতিতে বলা আছে এক বিভাগ অপর কোন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার রাখে না।
মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রভাবঃ
ফরাসী দার্শনিক মন্টেস্কু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা। তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে বলেন যে, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে আইন ও শাসন বিষয়ক ক্ষমতা ন্যস্তথাকলে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের স্বৈরাচারী আইন তৈরী করে তা প্রয়োগ করতে পারেন। মার্কিন সংবিধান
প্রণয়নকালে হ্যামিল্টন ও ম্যাডিসন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে জোরালো ভ‚মিকা
রাখেন। ফলে এ নীতি মার্কিন শাসন- ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে গৃহীত হয়। সংবিধান প্রণেতাগণ
সরকারের তিনটি বিভাগকে স্বতন্ত্ররূপে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। মার্কিন সংবিধানের
১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সংবিধানের ২নং অনুচ্ছেদে শাসন সংক্রান্তব্যাপারে বিধান রাখা হয়েছে
যে, ৩নং
অনুচ্ছেদে বিচার সংক্রান্তবিষেয় উল্লখ আছে যে, এক বিভাগকে অন্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত রাখার
ব্যবস্থা করা হয়। শাসন ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্তআছে কংগ্রেসের হাতে। কংগ্রেস গঠিত হয়
সিনেট ও প্রতিনিধি সভাকে নিয়ে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের সদস্য নন। তিনি কংগ্রেসের কোন কক্ষকে
ভেঙ্গে দিবার ক্ষমতা রাখেন না। মার্কিন কংগ্রেস আইন বিষয়ক সকল ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও
আইন প্রণয়নে ভ‚মিকা রাখেন। রাষ্ট্রপতি কোন বিশেষ ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু আইন
প্রণয়নে কংগ্রেসকে বাধ্য করতে পারেন না। মার্কিন সুপ্রীম কোর্টও কংগ্রেসের কার্যবলীর সঙ্গে যুক্ত নয়।
প্রশাসনিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করার জন্য কতিপয় সচিব নিযুক্ত হন। এরা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত
পরামর্শদাতা ও কর্মচারী। রাষ্ট্রপতি এদেরকে পদচ্যুত করতে পারেন। এরা কংগ্রেসের সদস্য নন।
কংগ্রেসের কাছে এদের কোন জবাবদিহিতা নেই। সুপ্রীম কোর্টের উপর কংগ্রেস বা রাষ্ট্রপতির কোন কর্তৃত্ব
নেই।
তবে সমালোচকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রকরণ নীতির পূর্ণ প্রকাশ ঘটে নি। প্রথাগত
বিধান, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রভৃতি কারণে মার্কিনী ব্যবস্থায় এই নীতির বহু বিচ্যুতি দেখা যায়।
মার্কিন সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণস্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় কাজকর্ম সম্পাদন করে না। প্রতিটি বিভাগের
উপর অপর দুটি বিভাগের কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকে।
নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি
নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি মার্কিন সংবিধানের একটি অন্যতম ভিত্তি। মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণে নীতির পুরোপুরি প্রয়োগ ঘটে নি। এখানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির উদ্ভব ঘটেছে। এ
ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগ একে অপরকে নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পুনরায় একে
একে অপরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির কার্যকারিতাঃ
মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস ও রাষ্ট্রপতির
সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্রপ্রতি ও কংগ্রেস দুইটি পৃথক সংস্থা। সম্পূর্ণপৃথক উপায়ে তারা নির্বাচিত হন।
উভয়ের কার্যাবলী থেকে উপলব্ধি করা যায় যে তাঁরা সম্পূর্ণস্বাধীন ভাবে কাজ করে। একে অপরের উপর
নির্ভরশীল নয়। মার্কিন প্রেসিডেণ্ট কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারেন। কংগ্রেস আইন প্রণয়নের
প্রকৃত ক্ষমতার মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করতে পারেন। তবে কংগ্রেস
রাষ্ট্রপতির সুপারিশ প্রত্যাখান করতে পারে। আবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোন বিল আইনে পরিণত
হতে পারে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন। তবে উভয় পক্ষের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের
সমর্থন থাকলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করতে বাধ্য থাকেন। মার্কিন শাসন বিভাগের চুড়ান্তক্ষমতা রাষ্ট্রপতির
উপর ন্যাস্ত। আবার রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস ও সুপ্রীম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নন। প্রেসিডেন্ট চার বৎসরের জন্য
নির্বাচিত হন। কিন্তু এই মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতিকে পদচ‚্যত করতে পারে। এমন কি
কংগ্রেস এ ব্যাপারে “ইমপিচমেণ্ট” ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আইন প্রণয়নে যাবতীয় ক্ষমতা কংগ্রেসের
হাতে ন্যাস্ত। রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোটের বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। কিন্তু এ নিযুক্তির ক্ষেত্রে সিনেটের
অনুমোদন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু কংগ্রেস সুপ্রীমকোটের বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করে থাকে।
সাধারণতঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হল সরকারের তিনটি বিভাগে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করা এবং কেউ অন্য
বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় এ নীতির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রপতিই
হল আমেরিকান শাসন ব্যবস্থায় মূল ক্ষমতার অধিকারী। ঐঁমযবং বলেন, মার্কিন সংবিধানের অর্থ এবং
ব্যাখ্যা সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তঅনুসারে গৃহীত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার
প্রেক্ষাপট মার্কিন ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ নীতির অনুক‚লে ছিল না। তাই এ নীতির মুখ্য উদ্দেশ্য সফল হয় নি।
সঠিক উত্তরে টিক () দিন।
১। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা হলেন-
(ক) প্লেটো; (খ) এরিস্টটল;
(গ) মন্টেস্কু; (ঘ) ম্যাকিয়াভেলী।
২। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অর্থ-
(ক) ক্ষমতার ব্যবহার; (খ) ক্ষমতার পৃথকীকরণ;
(গ) ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ; (ঘ) কোনটি নয়।
৩। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি মূলত দেখা যায়?
(ক) বাংলাদেশ সংবিধানে; (খ) চীনের সংবিধানে;
(গ) মার্কিন সংবিধানে; (ঘ) ভারতের সংবিধানে।
৪। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি মার্কিন শাসন ব্যবস্থায়
(ক) পুরোপুরি সফল হয়েছে; (খ) পুরোপুরি সকল হয় নি;
(গ) কিছুটা সফল হয়েছে; (ঘ) উপরের কোনটি নয়।
উত্তর মালাঃ ১। গ, ২। খ, ৩। গ, ৪। গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি?
২. নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি কি ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর আছে?
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি ভাবে কার্ করুন।
রাষ্ট্রপতির-নির্বাচন ব্যবস্থা, কার্যকাল ও বেতন এবং পদচ্যুতি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]