বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ অধিকারের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রদার্শনিক টি এইচ গ্রীনের (ঞ ঐ
এৎববহ) মতে, “অধিকার হচ্ছে সেসকল বাহ্যিক অবস্থা যা’ মানসিক পরিপুষ্টি সাধন করে।” অধ্যাপক
এইচ জে লাস্কির মতে, “অধিকার হল সামাজিক জীবনের সেসকল শর্ত, যা’ ছাড়া
কোন ব্যক্তির পক্ষে নিজের সর্বোচ্চ বিকাশ সম্ভব নয়।” অধ্যাপক বার্কার (চৎড়ভ. ইধৎশবৎ) বলেছেন,
“অধিকার হল মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সেসকল সুযোগ -সুবিধা যেগুলো রাষ্ট্র কর্তৃক
স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।”
উপরের সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, জনগণের ব্যক্তিত্ব ও জীবনকে পূর্ণভাবে
বিকশিত করার জন্য সমাজ তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দান করে এবং এ সকল সুযোগ-সুবিধার
সমষ্টিই হল অধিকার। এ সকল সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয় এবং এগুলোর
লক্ষ্য সার্বজনীন কল্যাণ সাধন। তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক রাষ্ট্রই পরিচিতি লাভ করে এর প্রদত্ত
অধিকার দ্বারা”
অধিকারের শ্রেণীবিভাগ
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিক তিন ধরনের অধিকার ভোগ করে থাকে। যথা- সামাজিক অধিকার,
রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার। নিচে আমরা এ তিন ধরনের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে
আলোচনা করব।
সামাজিক অধিকার
সমাজে সুখী ও সুন্দরভাবে বসবাস করার জন্য নাগরিকগণ যেসকল অধিকার ভোগ করে, সেগুলোকে
আমরা সামাজিক অধিকার বলি। সামাজিক অধিকারগুলো নি¤œরূপ :
জীবন ধারণের অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার অধিকার
থাকবে। এটি তার জন্মগত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সব
রকম প্রচেষ্টা চালায়।
ব্যক্তি স্বাধীতার অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্রের
এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিক অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। বিনা বিচারে
কোন নাগরিককে আটক রাখা যাবে না।
মতামত প্রকাশের অধিকার : মতামত প্রকাশের অধিকার গণতন্ত্রের জন্যে খুবই প্রয়োজনীয়। তাই
প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নাগরিকদের এ অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে দেশের জন্যে
ক্ষতিকর মত প্রকাশের অধিকার নাগরিকদের দেয়া হয় না।
সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার অধিকার : স্বাধীন ও নির্ভিকভাবে নিরপেক্ষ ও বস্তুুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ
করার অধিকারকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলে। সরকারি নীতি ও কাজের প্রকৃত ত্রুটিগুলো নাগরিকগণ
স্বাধীনভাবে সমালোচনা করে রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন করতে পারে। গণতন্ত্রের মূল অর্থ আলাপ
আলোচনার মাধ্যমে শাসন পরিচালনা করা।
সভা-সমিতির অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের সভা-সমিতির মাধ্যমে নিজের
মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে। কিন্তু এর মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোন তৎপরতা চালাতে
দেয়া হয় না।
সম্পত্তি ভোগের অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিক স্বাধীনভাবে স্বীয় সম্পত্তি ভোগ
করতে পারবে। নাগরিক তার নিজের সম্পত্তি বিক্রয় এবং অন্যের সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে।
ধর্মীয় অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার থাকবে।
শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কার্যকলাপ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কোন বাধা-বিঘœ থাকবে না।
আইনের অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক আইনের চোখে সমান অধিকার ভোগ
করবে। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ব থাকবে না।
চুক্তির অধিকার : আইনানুযায়ী একজন অন্যজনের সাথে যে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে।
চুক্তি ভঙ্গকারীকে সমাজ ও রাষ্ট্র শাস্তি প্রদান করে থাকে।
পরিবার গঠনের অধিকার : পরিবার হচ্ছে সমাজের মূল ভিত্তি। তাই পরিবার গঠনের অধিকার
প্রত্যেক নাগরিককে দেয়া হয়।
স¦াস্থ্য ও শিক্ষা লাভের অধিকার : মানুষকে প্রকৃত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে স্বাস্থ্য ও
শিক্ষা অপরিহার্য। তাই গণশিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি রাষ্ট্রের তীক্ষè দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।
রাজনৈতিক অধিকার
রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকগণ যেসব অধিকার ভোগ করে, সেগুলোকে রাজনৈতিক
অধিকার বলা হয়। রাজনৈতিক অধিকারগুলো নিæরূপ:
ভোটাধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটাধিকার রয়েছে। আর এ
ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য।
প্রার্থী হবার অধিকার : গণতান্ত্রিক রার্ষ্টের একজন নাগরিকের যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোন পদে
প্রার্থী হবার ও প্রতিদ্বন্বিতা করার অধিকার রয়েছে।
অভিযোগ পেশ করার অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের যে কোন অভাবঅভিযোগের কথা সরকারের নিকট পেশ করতে পারবে।
বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভের অধিকার : কোন নাগরিক বিদেশে অবস্থানকালে স্বীয়
রাষ্ট্রের নিকট থেকে নিরাপত্তার জন্যে সাহায্য দাবি করতে পারে।
চাকুরি লাভের অধিকার : প্রত্যেক নাগরিকের নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অধীনে সরকারি
চাকুরি লাভের অধিকার রয়েছে।
স্থায়ীভাবে বসবাস করার অধিকার : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক দেশের যেকোন স্থানে
নিজ ইচ্ছানুযায়ী বসবাস করতে পারে।
অর্থনৈতিক অধিকার
আর্থিক অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাবার জন্যে নাগরিকগণ যে সকল অধিকার ভোগ করে, সেগুলোকে
অর্থনৈতিক অধিকার বলে। অর্থনৈতিক অধিকারগুলো হচ্ছে নি¤œরূপ ঃ
কর্মের অধিকার : কাজ করে খাওয়া সকল নাগরিকের অধিকার। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া
ও কাজ করার ক্ষমতাকে কর্মের অধিকার বলে। এ অধিকার বলবৎ থাকার কারণে সরকারের উপর
বেকার ভাতা দেবার কর্তব্য বর্তায়।
ন্যায্য মজুরী লাভের অধিকার : কর্মের অধিকার তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন ন্যায্য মজুরী দেয়া
হয়। মজুরী এমনভাবে দিতে হবে যেনো তা কাজের মান, দায়িত্ব ও পরিমাণের সংগে তা’
সংগতিপূর্ণ হয়।
অবকাশ লাভের অধিকার : একটানা কাজ করার অর্থ কর্মের অধিকার ক্ষুণœ করা। কাজের
সময়সীমা নির্ধারণ এবং কাজের শেষে অবকাশ-বিনোদনের ব্যবস্থা করাকে অবকাশ লাভের অধিকার
বলে।
১. “অধিকার হলো মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সেসকল সুযোগ-সুবিধা যেগুলো রাষ্ট্র
কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।” অধিকারের এ সংজ্ঞাটি দিয়েছেন -
ক. লাস্কি
খ. বার্কার
গ. টি এইচ গ্রীন
ঘ. উপরের কেউই নন।
২. নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার কোন্টি?
ক. কর্মের অধিকার
খ. জীবনধারণের অধিকার
গ. চলাফেরা করার অধিকার
ঘ. নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার।
৩. কাউকে বিনা বিচারে আটক রাখা কোন্ অধিকারের পরিপšী’?
ক. জীবনধারণের অধিকার
খ. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার
গ. আইনগত অধিকার
ঘ. রাজনৈতিক অধিকার।
৪. কোন্টি সামাজিক অধিকার ?
ক. নিজের সম্পত্তি স্বাধীনভাবে ভোগ-দখলের অধিকার
খ. সরকারী চাকুরি লাভের অধিকার
গ. দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার অধিকার
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. অধিকারের সংজ্ঞা দিন
২. নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকারগুলো কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. নাগরিক অধিকারসমূহ আলোচনা করুন।
উত্তরমালাঃ ১। খ ২। ঘ ৩। খ ৪। ক
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত