মার্কিন সিনেটকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয় কেন?

দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ বা দ্বিতীয় পরিষদের নাম সিনেট। এ কক্ষকে অঙ্গরাজ্যগুলোর
প্রতিনিধিত্ব মূলক কক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি অনুসারে মার্কিন কেন্দ্রীয় আইন সভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট।
সিনেটের গঠনঃ
মার্কিন সিনেট গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দিক হল প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের সম-প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা।
অঙ্গরাজ্যগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যার তারতম্য থাকলেও প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে ২ জন করে সদস্য
নিয়ে সিনেট গঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য থাকায় সিনেটের মোট সদস্য সংখ্যা হল ১০০
জন। সকল বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সিনেটের অন্ততঃ ২/৩ অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়।
সমালোচকদের মতে এভাবে সিনেটে বৃহৎ অঙ্গরাজ্যগুলোর তুলনায় ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যোগ্যতাঃ
মার্কিন সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হতে হলে নি¤œলিখিত যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে ঃ
 প্রার্থীকে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে;
 তাঁকে অন্ততঃ ৯ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে;
 যে অঙ্গরাজ্য থেকে প্রার্থী হবেন, তাঁকে সেই রাজ্যের অধিবাসী হতে হবে।
নির্বাচন পদ্ধতিঃ
১৯১৩ সালের পূর্বে সিনেটের সদস্যগণ প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের আইন-সভা কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত
হতেন। কিন্তু ১৯১৩ সালে মার্কিন সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ব্যবস্থা বাতিল করে প্রত্যেক
অঙ্গরাজ্যের প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সিনেটের সদস্যগণের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা
হয়। বর্তমানেও এ ব্যবস্থা চালু আছে।
সিনেটের কার্যকালঃ
সিনেট একটি স্থায়ী কক্ষ। এ কক্ষ কখনই একেবারে ভেঙ্গে যায় না। সিনেটের সদস্যগণ ৬ বছরের জন্য
নির্বাচিত হন। প্রতি ২ বছর অন্তর সিনেটের ১/৩ অংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন এবং সে স্থানে নতুন
সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু একই সময় কোন অঙ্গরাজ্য থেকে ২ জন সদস্য নির্বাচিত হন না। ভিন্ন ভিন্ন
সময়ে তারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এর ফলে একই রাজ্য থেকে দুটি পৃথক রাজনৈতিক দল সিনেটে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। সিনেটের অধিবেশন ঃ
প্রতিনিধি সভার মতই প্রতি বছর ৩রা জানুয়ারী মার্কিন সিনেটের অধিবেশন শুরু হয়। এবং উভয় কক্ষের
অধিবেশন একই সাথে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে সিনেটের অধিবেশনে
সভাপতিত্ব করেন। তিনিও সভার কার্য পরিচালনার সময় প্রতিনিধি সভার স্পীকারের ন্যায় দলীয় পক্ষ
সমর্থন করেন। তবে তিনি সাধারণতঃ কোন বিষয়ের ভোটাভুটির উপর অংশ গ্রহণ করেন না। তবে এ
বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পড়লে সেক্ষেত্রে তিনি একটি ‘নির্ণায়ক ভোট’
) প্রদান করে বিষয়টির সমাধান করে থাকেন।
কমিটি ব্যবস্থা ঃ
প্রতিনিধি সভার ন্যায় সিনেটের বিভিন্ন^ কার্য সম্পাদনের জন্য কতকগুলো কমিটি রয়েছে। এ কমিটিগুলোর
মাধ্যমে সিনেটের কার্যাদি সম্পাদিত হয়ে থাকে। মার্কিন সিনেটে বর্তমানে ১৮টি স্থায়ী কমিটি রয়েছে।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি, অর্থ কমিটি, আয়-ব্যয় সম্পর্কিত কমিটি, বিচার বিষয়ক কমিটি,
আন্তরাষ্ট্র- বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কিত কমিটি প্রভৃতি কমিটির মাধ্যমে সিনেটের কার্যাবলী পরিচালিত হয়।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী তুলামূলকভাবে অনেক বেশী। সিনেট
কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী যা তাকে সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর উচ্চ কক্ষের মধ্যে
সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষে পরিণত করেছে। নি¤েœসিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
আইন সংক্রান্তক্ষমতা ঃ
সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে মার্কিন সিনেট প্রতিনিধি সভার মত সম ক্ষমতা সম্পন্ন। কেননা সাধারণ বিল সিনেট
বা প্রতিনিধি সভা যে কোন কক্ষে উত্থাপন করা যায়। আবার বিল পাশের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের
অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তবে কোন অর্থ বিল সিনেটে উত্থাপিত হতে পারে না। সংবিধান অনুসারে
সিনেট কোন অর্থ বিল উত্থাপন করতে না পারলেও তা সংশোধন করতে পারে। ফলে সিনেট কেবলমাত্র
অর্থ বিলের ‘শিরোনাম’ ছাড়া বাকী অংশেরই পরিবর্তন সাধন করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে অর্থ
বিলসহ সকল প্রকার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সিনেট প্রতিনিধি সভার মত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
নিয়োগ সংক্রান্তক্ষমতা ঃ
মার্কিন সিনেট সরকারী কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি,
পদস্থ কর্মচারী, রাষ্ট্রদূত, বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রভৃতি উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্তথাকে। কিন্তু এ সকল কর্মচারী নিয়োগ করতে হলে রাষ্ট্রপতিকে সিনেটের অনুমতি
নিতে হয়। পদস্থ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের ‘‘সৌজন্য বিধি’’ (ঝবহধঃড়ৎরধষ
ঈড়ঁৎঃবংু) নামে একটি শাসনতান্ত্রিক রীতি গড়ে উঠেছে। এ রীতি অনুসারে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত
কোন প্রস্তাব সিনেটে পাঠান হলে সিনেটের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় প্রায়
সব সময় সিনেট রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয়। তবে সিনেট ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ
সংক্রান্তপ্রস্তাবকে নাকচ করে দিতে পারে। ১৯৩৯ সালে ভার্জিনিয়া রাজ্যের জাতীয় বিচারপতি পক্ষে
রুজভেল্টের মনোনীত প্রার্থীর নিয়োগ সিনেট প্রত্যাখ্যান করে। সা¤প্রতিককালেও এমন ঘটনা ঘটে
চলেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যনীতির এ এক জ্বলন্তউদাহরণ।
তদন্তকরার ক্ষমতা ঃ
সিনেট কমিটি নিয়োগ করে শাসন সংক্রান্তবিষয়ে তদন্তবা অনুসন্ধান করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
পালন করে। উক্ত কমিটি যে কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তকরতে পারে। তাই
পদস্থ সরকারী কর্মচারীগণ সিনেটের তদন্তের ভয়ে সর্বদা ভীত সন্ত্রস্তথাকেন। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে
কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিনেট তাকে চাকুরীচ্যুত বা পদোন্নতির পথও চিরদিনের
জন্য রোধ করে দিতে পারে।
বিচার বিষয়ক ক্ষমতা ঃ
সিনেটের হাতে গুরুত্বপূর্ণ বিচার সংক্রান্তক্ষমতা ন্যস্তকরা হয়েছে। সিনেট রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি বা
উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা ইমপিচমেন্ট (ওসঢ়বধপযসবহঃ) আনতে পারে
না। কিন্তু প্রতিনিধি সভা ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব অনুমোদন করলে সিনেট প্রস্তাবিত অভিযোগ বা ইমপিচমেন্টের
বিচার করতে পারে। এ রকম বিচার কার্য চলার সময় সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সিনেটের সভায়
সভাপতিত্ব করেন। সিনেট বিচার বিবেচনা করে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাব পাস
করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পদত্যাগ করতে হয়।
নির্বাচন সংক্রান্তক্ষমতা ঃ
সিনেটের নির্বাচন সংক্রান্তক্ষমতা কেবলমাত্র উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। মার্কিন সংবিধান
অনুসারে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সিনেট অধিক
সংখ্যক ভোট পেয়েছেন এমন দু’জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করতে
পারে।
পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতা ঃ
যে কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য সিনেট রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে নীতি নির্ধারণ বা তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সিনেটের বৈদেশিক
সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির মতামতকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কারণ রাষ্ট্রপতি ভালভাবেই জানেন যে
সিনেটের অনুরোধ উপেক্ষা করার অর্থ তার বিরাগভাজন হওয়া। তাই রাষ্ট্রপতি সাধারণতঃ বৈদেশিক ও
সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে থাকে। সিনেট ইচ্ছা করলে
রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত কোন চুক্তি বা সন্ধি দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে প্রত্যাখান করতে পারে। বিংশ শতাব্দীর
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল সিনেট কর্তৃক ভার্সাই চুক্তির প্রত্যাখ্যান।
সংবিধান সংশোধন সংক্রান্তক্ষমতাঃ
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সিনেট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মার্কিন সংবিধান অনুসারে সংবিধান
সংশোধনের কোন প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থাপন করতে হলে সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের
প্রয়োজন হয়।
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দ্বিতীয় পরিষদ হিসেবে সিনেট
মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় সিনেটের ভ‚মিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর অন্য কোন দেশের
আইন সভার দ্বিতীয় পরিষদের হাতে এত বেশী ক্ষমতা ন্যস্তকরা হয়নি। এ কারণে মার্কিন সিনেটকে
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী উচ্চ কক্ষ বলে অভিহিত করা হয়। জে, পি হ্যারিস ঔ. চ. ঐধৎৎরং বিশ্বের
বিভিন্ন দেশের আইন সভার উচ্চ কক্ষের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে বলেন - “মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটই হল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ।” মার্কিন সিনেটকে কেন বিশ্বের সর্বাপেক্ষা
শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয় তা বিশ্বের কয়েকটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের দ্বিতীয় পরিষদের ক্ষমতা ও
কার্যাবলীর সাথে মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হলঃ
ব্রিটেনের লর্ড সভার সাথে তুলনা ঃ
গ্রেট ব্রিটেনের লর্ড সভার সাথে মার্কিন সিনেটের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায় যে উভয়ই আইন
সভার উচ্চ কক্ষ হলেও মার্কিন সিনেট ব্রিটেনের লর্ড সভার তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী।
প্রথমতঃ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মার্কিন সিনেট ব্রিটেনের লর্ড সভা অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা ভোগ করে।
কেননা মার্কিন কংগ্রেসের যে কোন কক্ষে সাধারণ বিল উত্থাপন করা গেলেও উভয় কক্ষের অনুমোদন ছাড়া
বিলটি আইনে পরিণত হতে পারে না। কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যে কোন কক্ষে সাধারণ বিল উত্থাপন
করা গেলেও বিল পাশের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের ভ‚মিকা সমান নয়। কোন সাধারণ বিল পাশের ক্ষেত্রে বিলটি
যদি কমন্স সভার পর পর দুটি অধিবেশনে গৃহীত হয় এবং প্রথম অধিবেশনে বিলটির দ্বিতীয় পাঠ ও দ্বিতীয়
অধিবেশনে বিলটির তৃতীয় পাঠের এক বছর সময় অতিবাহিত হয় তাহলে লর্ড সভার সম্মতি ছাড়াই
বিলটিকে রাজা বা রানীর আনুষ্ঠানিক সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণ বিল
পাশের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের লর্ড সভার চেয়ে মার্কিন সিনেট অধিক ক্ষমতা ভোগ করে। আবার অর্থ বিল
পাশের ক্ষেত্রেও মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা অনেক বেশী। ব্রিটেনের লর্ড সভায় কোন অর্থ বিল উত্থাপিত
হতে পারে না, আবার অর্থ বিল সংশোধনের কোন ক্ষমতাও লর্ড সভার নেই। বরং কমন্স সভায় কোন
অর্থ বিল গৃহীত হলে লর্ড সভা এক মাসের মধ্যে সম্মতি না দিলে তার অনুমোদন ছাড়াই বিলটিকে রাজা
বা রানীর আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরের জন্য পাঠান হয়। কিন্তু মার্কিন সিনেট কেবলমাত্র অর্থ বিলের ‘শিরোনাম’
ছাড়া বাকী সব অংশের সংশোধন ও পরিবর্তন করতে পারে। তাছাড়া মার্কিন সিনেট কোন অর্থ বিলে
সম্মতি না দিলে কেবলমাত্র প্রতিনিধি সভার সম্মতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বিলটি গৃহীত হতে পারে না।
দ্বিতীয়তঃ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে লর্ড সভা প্রকৃতপক্ষে কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে
না। ফলে ব্রিটেনের শাসন বিভাগ লর্ড সভার সম্মতি ছাড়াই আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তি সম্পাদন, উচ্চপদস্থ
সরকারী কর্মচারী নিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্তনিতে পারে। কারণ ব্রিটিশ ক্যবিনেট বা শাসন বিভাগকে
তাদের সম্পাদিত কার্যাবলীর জন্য লর্ড সভার নিকট দায়িত্বশীল থাকতে হয় না। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি বা
শাসন বিভাগ সিনেটের সম্মতি ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তি, উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে
এককভাবে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রপতি বা শাসন বিভাগকে কোন সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে
হলে সিনেটের সাথে পরামর্শ করতে হয় কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বা শাসন বিভাগকে কোন সিদ্ধান্তগ্রহণের
ক্ষেত্রে লর্ড সভার সাথে কোন পরামর্শ করতে হয় না। এ ক্ষেত্রে কমন্স সভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তৃতীয়তঃ একমাত্র বিচার বিভাগীয় কার্যাবলীর ক্ষেত্রে লর্ড সভা মার্কিন সিনেটের তুলনায় বেশী ক্ষমতা
ভোগ করে। কারণ, লর্ড সভা যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আপীল আদালত হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মার্কিন
সিনেটের এরূপ বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা নেই। তবে বিচারপতিদের নিয়োগ সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ
বলে সিনেট বিচার বিভাগকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ভারতের রাজ্য সভার সাথে তুলনা ঃ
ভারতের পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। যথা- লোকসভা এবং রাজ্য সভা। লোক সভাকে নি¤œকক্ষ এবং রাজ্য
সভাকে উচ্চ কক্ষ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ভারতের উচ্চ কক্ষ বা রাজ্য সভা মার্কিন সিনেটের মত
ক্ষমতা বা মর্যাদার অধিকারী নয়। কারণঃ
 রাজ্য সভায় কোন অর্থ বিল উত্থাপিত হতে পারে না;
 অর্থবিলের কোন অংশ সংশোধন, পরিবর্তন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাজ্য সভার নেই;
 লোক সভা রাজ্য সভার সম্মতির জন্য কোন অর্থ বিল প্রেরণ করলে রাজ্য সভা যদি সম্মতি না দেয়
তাহলে ২৪ দিনের মধ্যে বিলটিকে ফেরত পাঠাতে হয়। অন্যথায় বিলটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে
নেওয়া হয়।
 অর্থবিল সংক্রান্তবিষয়ে লোকসভা রাজ্য সভার কোন সুপারিশ গ্রহণ করতে পারে আবার গ্রহণ করতে
নাও পারে।
 ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ যৌথভাবে লোকসভার নিকট দায়ী থাকলেও রাজ্য সভার নিকট
দায়িত্বশীল নয়।
কানাডার সিনেটের সাথে তুলনা ঃ
কানাডার আইন সভাও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট । এর উচ্চ কক্ষকে সিনেট (ঝবহধঃব) এবং নি¤œকক্ষকে কমন্স সভা
বলা হয়। কানাডায় অর্থ সংক্রান্তবিল ছাড়া অন্য যে কোন ধরনের বিল সিনেটে
উত্থাপন করা যায়। কিন্তু সিনেট ইচ্ছা করলে অর্থ বিল সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কানাডার
সংবিধান অনুসারে সিনেট অর্থ বিল সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারলেও সিনেটের সদস্যরা কমন্সসভার
সদস্যদের থেকে কম মর্যাদার অধিকারী। কারণ, কানাডার সিনেটের সদস্যগণ গভর্ণর জেনারেল কর্তৃক
সারা জীবনের জন্য নিযুক্ত হন কিন্তকমন্স সভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের
জন্য নির্বাচিত হন। ফলে কানাডার সিনেট সদস্যগণ একদিকে স্বীয় দেশের কমন্স সভার সদস্যদের চেয়ে
কম মর্যাদার অধিকারী, অন্যদিকে মার্কিন সিনেট সদস্যদের চেয়েও কম ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করে থাকেন।
ফরাসী সিনেটের সাথে তুলনাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ফ্রান্সের আইন সভাও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। এর উচ্চ কক্ষ হল সিনেট (ঝবহধঃব) এবং
নি¤œ কক্ষ হল জাতীয় সভা বা (ঘধঃরড়হধষ অংংবসনষু) কেবলমাত্র অর্থ বিল পাস ও সরকারের
দায়িত্বশীলতাকে কার্যকর করার ক্ষেত্র ছাড়া সিনেট জাতীয় সভার সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। অবশ্য
মার্কিন সিনেট অর্থ বিলের ‘শিরোনাম’ ছাড়া বাকী সব অংশের সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে ফরাসী
সিনেট তা করতে পারে না। কিন্তু অন্যান্য বিল পাশের ক্ষেত্রে মার্কিন সিনেটের মত ফরাসী সিনেটের
সম্মতির প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সন্ধি বা চুক্তির অনুমোদন, ইমপিচমেন্টের বিচার, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক
নিয়োগের অনুমোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মার্কিন সিনেটের যেরূপ ক্ষমতা রয়েছে ফরাসী সিনেটের তেমন কোন
ক্ষমতা নেই। তবে কোন কারণে ফরাসী রাষ্ট্রপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে বা তাঁর পদ শূন্য হলে
সিনেটের সভাপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু মার্কিন সিনেট সভাপতির এরূপ
কোন ক্ষমতা নেই। এ ক্ষমতা জনপ্রতিনিধি সভার স্পীকারের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। ফরাসী সিনেটের
এ ক্ষমতা অভিনব হলেও সামগ্রিক ক্ষমতা ও পদ মর্যাদার বিচারে তা মার্কিন সিনেটের সমকক্ষ নয়।
অন্যান্য দেশের দ্বিতীয় কক্ষের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সাথে মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের তুলনামূলক
আলোচনা করলে মার্কিন সিনেটের প্রাধান্যেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। কেননা সিনেটের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতাই
তাকে এ বিশিষ্টতা দান করেছে।
সারকথাঃ
প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মার্কিন সিনেটই পৃথিবীর
সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ। কেননা অন্য কোন দেশের দ্বিতীয় কক্ষ দেশের শাসন কার্য পরিচালনার
ব্যাপারে এত বেশি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ভোগ করতে পারে না। তাই মার্কিন সিনেট হল একটি শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা কত?
ক. ৪৯ঢি;
খ. ৫০টি;
গ. ৫২টি।
২. প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সিনেটের সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় কত সালে?
ক. ১৯১৩;
খ. ১৯১৪;
গ. ১৯১৮।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থানের জন্য সিনেটের কত শতাংশ সদস্যের সমর্থন
প্রয়োজন?
ক. সিনেটের তিন চতুর্থাংশ সদস্য;
খ. সিনেটের এক তৃতীয়াংশ সদস্য;
গ. দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য।
৪. প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে ক’জন সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন ?
ক. ৪ জন;
খ. ৩ জন;
গ. ২ জন।
উত্তরমালাঃ ১, খ ২, ক ৩, গ ৪, গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. মার্কিন সিনেট কিভাবে গঠিত হয়?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. মার্কিন সিনেটকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয় কেন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]