মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের ভ‚মিকা মার্কিন রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা

যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা
মার্কিন সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। তবে মার্কিন
সংবিধানের ৩(১) নং ধারা অনুসারে বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট এবং কংগ্রেস কর্তৃক বিভিন্ন
সময়ে প্রতিষ্ঠিত অধস্তন আদালতগুলোর হাতে ন্যস্তকরা হয়েছে। এ সব আদালত প্রতিষ্ঠা করতে
কংগ্রেসকে বাধ্য করা যায় না। সুপ্রিম কোর্ট বা কংগ্রেস তাদের ইচ্ছ অনুযায়ী এসব আদালত প্রতিষ্ঠা করে
থাকে। মার্কিন কংগ্রেস ১৭৮৯ সালের বিচার বিভাগ সংক্রান্তআইন (ঞযব ঔঁফরপরধৎু অপঃ ড়ভ ১৭৮৯) এবং
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে যুক্তরাষ্ট্রীয় অধস্তন আদালতসমূহ স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচার
ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিম কোর্ট। তার নীচের স্তরে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আপীল আদালতসমূহ। এ
আদালতগুলোর পরবর্তী স্তরে জেলা আদালতসমূহের অবস্থান। উপরোক্ত তিন ধরণের শাসনতান্ত্রিক
আদালত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন ধরনের বিশেষ আদালত আছে। সুপ্রীম কোর্টের রয়েছে মূল এলাকা
ও আপিল এলাকা। কিন্তু আপিল আদালতের কেবলমাত্র আপিল এলাকা এবং জেলা আদালতসমূহের কেবল
মাত্র মূল এলাকা রয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি যুক্তরাষ্ট্রীয় আপিল আদালত এবং ৯১টি জেলা
আদালত রয়েছে।
সুপ্রীম কোর্ট ঃ
মার্কিন সংবিধান অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
সর্বোচ্চ আদালত বলা হয়। হাডসন কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের জন্মলগ্নে তার ভ‚মিকা এত ব্যাপক ও কর্তৃত্বপূর্ণ ছিল না। পরবর্তী সময়ে
সুপ্রীমকোর্ট তার নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি এইভাবে বৃদ্ধি করেছে যে, তাকে নিঃসন্দেহে সংবিধানের অভিভাবক বলা যায়।
সুপ্রীম কোর্টের গঠন ঃ
১৭৮৯ সালে প্রণীত বিচার ব্যবস্থা সংক্রান্তআইন (ঞযব ঔঁফরপরধৎু অপঃ ড়ভ ১৭৮৯) অনুসারে একজন প্রধান
বিচারপতি এবং পাঁচজন সহযোগী বিচারপতি নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হয়েছিল। কংগ্রেস বিভিন্ন সময়
আইন প্রণয়ন করে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। তবে বর্তমানে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট
একজন প্রধান বিচারপতি এবং আটজন সহযোগী বিচারপতি নিয়ে গঠিত। মার্কিন সংবিধান অনুসারে
বিচার কার্য চলার সময় কমপক্ষে ছয়জন বিচারপতি উপস্থিত থাকতে হয়। বিচারপতিদের সাধারণ
সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে সুপ্রীম কোর্ট কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ পাঁচজন বিচারপতির
সমর্থনে কোন বিষয়ে গৃহীত হতে পারে। প্রধান বিচারপতি সুপ্রীম কোর্টের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বিচারপতিদের নিয়োগ এবং অপসারণঃ
মার্কিন রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন।
বিচারপতিদের যোগ্যতা সম্পর্কে মার্কিন সংবিধানে কোন কথা উল্লেখ করা হয় নি। নির্দিষ্ট যোগ্যতার
কোন উল্লেখ না থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব
পরিলক্ষিত হয়। তাই মার্কিন রাষ্ট্রপতিগণ সাধারণত নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং
সর্বোপরি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে বিচারপতিদের নিয়োগ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি
জর্জ ওয়াশিংটন সর্বপ্রথম এ নজির সৃষ্টি করেন এবং এ ধারা বর্তমানেও লক্ষণীয়। আবার সব সময় কেবল
দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয় এমন নয়। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভের পর একমাত্র
ইমপিচমেন্ট ছাড়া কাউকে অপসারণ করা যায় না। অপসারণের অভিযোগটি প্রথমে প্রতিনিধি সভার দুইতৃতীয়াংশের সমর্থনে অনুমোদিত হওয়ার পর সিনেটে পাঠাতে হয়। এরপর সিনেটে উপস্থিত সদস্যের
দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে অভিযুক্ত বিচারপতি দোষী প্রমাণীত হলে তাকে অপসারণ করা হয়।
বিচারপতিদের কার্যকাল এবং বেতন ঃ
সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে একবার নিয়োগ পেলে মৃত্যু পর্যন্তকিংবা যতদিন পর্যন্তযথাযথভাবে
কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হবেন, ততদিন পর্যন্তস্বপদে বহাল থাকতে পারেন। কারণ মার্কিন সংবিধানে
বিচারপতিদের কার্যকাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তাই বিচারপতিগণ যতদিন ইচ্ছা স্বপদে বহাল থাকতে
পারেন। বর্তমানে অবশ্য বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের ব্যাপারে একটি প্রথা মেনে চলা হয়। কোন
বিচারপতির বয়স ৭০ বছর অতিবাহিত হবার পর তাঁকে অবসর গ্রহণ করতে হয় বা পদত্যাগ করতে হয়।
মার্কিন কংগ্রেস আইনের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা নির্দিষ্ট করে দেন।
সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা ও ভ‚মিকা ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট
অন্য যে কোন দেশের সুপ্রীম কোর্ট অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা ভোগ করে। আইনের ব্যাখ্যা এবং সংবিধানের
অভিভাবক হিসেবে সুপ্রীম কোর্ট তার ক্ষমতা ও ভ‚মিকার পরিধিকে সম্প্রসারিত করেছে। তাই মার্কিন
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টের ভ‚মিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নি¤েœমার্কিন সুপ্রীম কোর্টের ভ‚মিকা ও
ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল ঃ
আইনের ব্যাখ্যা ঃ
মার্কিন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা হ্যামিলটন (ঐধসরষঃড়হ) এর মতে মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের
বিচারপতিগণ আইন সভা কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেন। বিশ্বের অন্যান্য
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মত মার্কিন সুপ্রীম কোর্টও কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত আইনের ব্যাখ্যা করে থাকে।
সুপ্রীম কোর্ট কোন আইনের যে ব্যাখ্যা প্রদান করে সেই ব্যাখ্যাই চ‚ড়ান্তবলে ঘোষণা করা হয় এবং সুপ্রীম
কোর্টের ব্যাখ্যা অনুসারেই কোন মামলা মীমাংসার ক্ষেত্রে সেই আইন প্রয়োগ করা হয়। বিচারপতি মার্শাল
সরকারী বনাম ম্যাডিসন (১৮০৩) মামলার রায় দান সম্পর্কেমন্তব্য করেন যে, আইনের
অর্থ ব্যাখ্যা করার সুস্পষ্ট ক্ষমতা আদালতের আছে।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টকে নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সংরক্ষক বলে অভিহিত করা হয়।
মূল মার্কিন সংবিধানে নাগরিক অধিকার সমূহের কোন উল্লেখ না থাকলেও সংবিধানের প্রথম দশটি
সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিকদের কতকগুলো মৌলিক অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের চতুর্দশ
ও পঞ্চদশ সংশোধনে নাগরিকদের অধিকারগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধানের চতুর্দশ
সংশোধন অনুসারে কোন অঙ্গরাজ্য নাগরিকদের অধিকার সমূহ বা সুযোগ সুবিধা ক্ষুন্ন করতে পারবে না।
আবার পঞ্চদশ সংশোধন অনুসারে বর্ণ, বংশ, ধর্ম বা পূর্ব দাসত্বের অজুহাতে কোন মার্কিন নাগরিককে
তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মার্কিন নাগরিকদের এসব অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রীম
কোর্টের উপর অর্পণ করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের এসব
অধিকারসমূহ সংরক্ষণের পবিত্র দায়িত্ব পালন করে থাকে। কেন্দ্রীয় বা অঙ্গ রাজ্যের আইন সভা কর্তৃক
প্রণীত কোন আইন অথবা কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কোন নির্দেশ নাগরিক অধিকার সমূহের বিরোধী
হলে সুপ্রীম কোর্ট সেগুলো বাতিল করে দিতে পারে।
সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা ঃ
মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট মার্কিন সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে অভিহিত। সংবিধানের ব্যাখ্যা
কর্তা হিসেবে সুপ্রীমকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। মার্কিন সংবিধান একটি লিখিত দলিল এবং
দেশের শাসন কার্য পরিচালনায় এ সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই সরকারের বিভিন্ন বিভাগ
সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী নিজ নিজ কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন ব্যক্তি
প্রতিষ্ঠান সংবিধান বিরোধী কোন কাজ করতে পারে না। সংবিধানের পবিত্রতা ও প্রাধান্য রক্ষার দায়িত্ব
সুপ্রীম কোর্টের উপর অর্পণ করা হয়েছে। মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট নিজের উদ্যোগে সংবিধান ব্যাখ্যা করতে
যায় না। সংবিধান পরিপন্থি কোন মামলা বিচারের সময় সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অংশের ব্যাখ্যা
দিয়ে থাকে। সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের যে ব্যাখ্যা দেয় তা চ‚ড়ান্তবলে গৃহীত হয়। অর্থাৎ সুপ্রীম কোর্ট যে
ভাবে সংবিধানের অর্থ স্থির করে মার্কিন সংবিধানের অর্থ সে ভাবেই স্থিরীকৃত হয়। অর্থাৎ সুপ্রীম কোর্ট
প্রদত্ত সংবিধানের ব্যাখ্যাই হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম সাংবিধানিক আইন । আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যগুলোর আইন ও শাসন বিভাগ কাজ করছে কিনা তাও সুপ্রীম কোর্ট
বিচার বিবেচনা করে থাকে। আইন বা শাসন বিভাগ সংবিধান পরিপন্থী কোন কাজ করলে সুপ্রীম কোর্ট
সে কাজকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। এভাবে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট নিজেকে সংবিধানের নিয়ামক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সংবিধান স¤প্রসারণ ঃ
মার্কিন সংবিধান স¤প্রসারণে সুপ্রীম কোর্ট উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। সুপ্রীম কোর্ট নিরবচ্ছিন্নভাবে
শাসনতন্ত্রের বাখ্যা- বিশ্নেষণের সাহায্যে শাসনতন্ত্রের ধারণার পরিবর্তন করেছে এবং জীবন্তও অর্থবহ করে
তুলেছে। শাসনতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যকে বিভিন্ন সময়ে ও প্রয়োজনে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট
শাসনতন্ত্রের স¤প্রসারণে সাহায্য করেছে। সুপ্রীম কোর্টের এ ভ‚মিকা সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায়
পরিণত হয়েছে। মার্কিন সংবিধান একটি লিখিত দলিল। তাই এ সংবিধান সংশোধন অত্যন্তজটিল। তাই
সুপ্রীম কোর্ট সংবিধান ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় গতিশীলতা রক্ষা করে থাকে। ফলে সংবিধানের
স¤প্রসারণ ঘটে। এভাবে সুপ্রীম কোর্টের ব্যাখ্যার মাধ্যমে মার্কিন সংবিধান নতুন রূপ ও অর্থ লাভ করে।
নীতিনির্ধারক হিসেবে সুপ্রীম কোর্টঃ
মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট তার কার্যাবলীকে কেবলমাত্র বিচার বিভাগীয় কার্যাবলীর মধ্যেই সীমিত রাখে না।
আইনের বৈধতা বিচারের মাধ্যমে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট জাতীয় নীতি নির্ধারক হিসেবেও যথেষ্ট ভ‚মিকা
রাখে। আইন সভা কর্তৃক প্রণীত কোন আইন অথবা শাসন বিভাগের কোন নির্দেশ সুপ্রীম কোর্ট যখন
সংবিধান বিরোধী বলে মনে করে তখন আদালত কার্যতঃ আইন, নির্দেশ, আদেশ বা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
নীতিরই বিরোধীতা করে। এভাবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে।
আবার দুটি পরস্পর বিরোধী নীতির মধ্যে সিদ্ধান্তনিতে গিয়ে সুপ্রীম কোর্ট শাসন নীতির সঙ্গে জড়িয়ে
পড়ে। এক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্ট শাসন নীতির পরিবর্তন করতে পারে। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি
আলোচনা করা যেতে পারে। পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিগ্রো ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করতে হতো। ১৯৫৪ সালে বিচারপতি ওয়ারেন এর নেতৃত্বে সুপ্রীম কোর্ট
এরূপ ব্যবস্থাকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করে এবং বাতিল করে দেয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত
নীতিটির পরিবর্তন সাধন করতে সরকার বাধ্য হয়।
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বিচারালয় আর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা মার্কিন
সুপ্রীম কোর্টের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা। এই ক্ষমতায় মূল কথা হচ্ছে মার্কিন দেশের কোন আইন
সংবিধান সম্মত কিনা তা যাচাই পূর্বক তা যদি সংবিধান পরিপন্থী হয় তবে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষণা
করতে পারে। মূলতঃ মার্কিন শাসনতন্ত্রের অভিভাবক ও চরম ব্যাখ্যাকার হিসেবে সুপ্রীম কোর্টের বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা ব্যাপক ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা
হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের স্ব আরোপিত ক্ষমতা। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের
কোথাও বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার কথা বলা হয় নি। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার
ক্ষমতা আছে বলে যারা দাবী করেন তারা মার্কিন সংবিধানের ৩নং ও ৬নং ধারা দুটির সাহায্যে নিজেদের
যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। অথচ ৩নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন
ও চুক্তি সংক্রান্তযে কোন বিবাদের নিস্পত্তি করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের আছে। আবার ৬নং ধারায় বলা
হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এবং সেই সংবিধান অনুযায়ী যে সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত
হবে অথবা যে সব চুক্তি সম্পাদিত হবে সেগুলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে মার্কিন
সংবিধানের ৩নং ও ৬নং ধারার কোথাও বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা করার উল্লেখ নেই। বরং সুপ্রীম কোর্ট
নিজেই এ ক্ষমতা নিজের এক্তিয়ারে নিয়েছে। তাই বর্তমানে এ ক্ষমতাকে মার্কিন সংবিধান বিকাশের
ক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
মার্কিন সংবিধানে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা সম্পর্কে উল্লেখ না থাকলেও তা প্রধানত মার্কিন
সুপ্রীম কোর্টের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা তত্তে¡র ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান
বিচারপতি মার্শাল (গধৎংযধষষ) সরকারী বনাম ম্যাডিসন১৮০৩) মামলায় যে
ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন তা থেকেই এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। এ মামলার মূল কথা ছিল এরূপঃ ১৮০১
সালে কে কলম্বিয়ার বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু উক্ত
নিয়োগের পরোয়ানা জারীর পূর্বেই তাঁর প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে নতুন প্রেসিডেন্ট
কে প্রদান করতে অস্বীকার করলে সুপ্রীম কোর্টে রীট আবেদন পেশ
করেন। এ রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালে সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মার্শাল (গধৎংযধষষ)
যে রায় প্রদান করেন তাতে উল্লেখ করেন যে গধৎনঁৎু কমিশন পাবার যোগ্য; কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের রীট
ইস্যু করার কোন ক্ষমতা নেই। কারণ ১৭৮৯ সালের বিচার বিভাগ সংক্রান্তআইন (ঞযব ঔঁফরপরধষ অপঃ
ড়ভ ১৭৮৯) সুপ্রীম কোর্ঢকে রীট ইস্যু করার যে ক্ষমতা প্রদান করেছিল তা যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের পরিপন্থী।
ফলে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট তা বাতিল বলে ঘোষণা করে।
সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে এ ক্ষমতা আরো ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী হয়ে উঠেছে। কোন আইন বৈধ কিনা সে
বিষয়ে সুপ্রীম কোর্ট মতামত না দেওয়া পর্যন্তসন্দেহ ও অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে একথা উল্লেখ
করা যায় যে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেকে কংগ্রেসের উর্ধ্বে
চ‚ড়ান্তক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় কক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট
সুপ্রীম কোর্ট কে জাতীয় আইন সভার চ‚ড়ান্তকর্তৃত্ব সম্পন্ন তৃতীয় কক্ষ (ঞযরৎফ খবমরংষধঃঁৎব) বলে
আখ্যায়িত করেছেন।
সারকথাঃ
মার্কিন বিচার ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল দ্বৈত বিচার ব্যবস্থা। যথা- (ক) যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত
ও (খ) অঙ্গরাজ্যগুলোর আদালত। অঙ্গরাজ্যগুলোর বিচারপতিগণ নিজ নিজ রাজ্যের সংবিধান অনুসারে
বিচারকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু তাদের কোন সিদ্ধান্তবা রায় জাতীয় আইন বা মার্কিন সংবিধান বিরোধী
হতে পারে না। আবার অঙ্গরাজ্যগুলোর স্ব স্ব শাসনতন্ত্রঅনুসারে নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
এর ফলে কেন্দ্র এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর বিচার ব্যবস্থা আলাদা মনে হলেও তা একেবারে স্বতন্ত্রনয়।
অঙ্গরাজ্যগুলোর শাসনতন্ত্রযেমন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের অধীন তেমনি অঙ্গরাজ্যগুলোর বিচার ব্যবস্থাও যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থার অধীন।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ সম্মিলিত হয়েছিলেন কোথায়?
ক. ফিলাডেলফিয়া;
খ. ওয়াশিংটনেয়;
গ. ক্যালিফোর্নিয়ায়।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় আপিল আদালতের সংখ্যা কত?
ক. ১০টি;
খ. ১১টি;
গ. ১৫টি।
৩. মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও আটজন সহযোগী বিচারপতি নিয়ে গঠিত কত সালের
আইন অনুযায়ী?
ক. ১৭৮৯;
খ. ১৮০৭;
গ. ১৮৬৯।
৪. মার্কিন সংবিধানের অভিভাবক হল -
ক. কংগ্রেস;
খ. সিনেট;
গ. সুপ্রীম কোর্ট।
উত্তরমালাঃ ১, ক ২, খ ৩, গ ৪ গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. মার্কিন সুপ্রীম কোর্টকে কেন সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়?
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের কিভাবে অপসারণ করা যায়?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের ভ‚মিকা ব্যাখ্যা করুন।
২. মার্কিন রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]