মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা উদ্ভাবের কারণ

সাধারণভাবে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত
হিসেবে গণ্য করা হয়। আর মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা উদারনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিভ‚স্বরূপ। তাই
স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব তত্ত¡গত বিচারে
অপরিহার্য। তবে মার্কিন শাসন ব্যবস্থার গোড়ার দিকে কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ছিল না বললেই
চলে। মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করতেন। কারণ
তাদের ধারণা ছিল ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রী চরিত্রের পেছনে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর
প্রভাব বিদ্যমান ছিল। তাই তারা প্রথম থেকেই দল ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিরোধীতা করতে থাকেন এবং
ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে দলীয় ব্যবস্থা সম্পর্কিত যাবতীয় আলাপ-আলোচনা সচেতনভাবে বর্জন করেন।
এ কারণে মার্কিন সংবিধানে রাজনৈতিক দলের কোন উল্লেখ নেই। কিন্তু মার্কিন সংবিধানে রাজনৈতিক
দলের কথা উল্লেখ না থাকলেও ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন থেকেই রাজনৈতিক দল সম্পর্কে
চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যকালের
দ্বিতীয় পর্যায়ে কার্যতঃ দু’টি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের দল ‘যুক্তরাষ্ট্রীয়
দল’ এবং টমাস জেফারসনের দল ‘সাধারণতন্ত্রী দল’ হিসেবে
পরিচিতি লাভ করে। নবগিঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেযাতে দলীয় সংকীর্ণতার আবর্তে তলিয়ে যেতে না পারে
সে জন্য জর্জ ওয়াশিংটন তার মন্ত্রিসভায় হ্যামিলটন ও জেফারসন উভয়কেই স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু
পরবর্তীকালে তিনি (ওয়াশিংটন) সরকারী নীতি নির্ধারণে হ্যামিলটনের প্রভাবাধীন হয়ে পড়লে জেফারসন
মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর জেফারসনের ‘রিপাবলিকান দল’ অঙ্গরাজ্যগুলোর অধিকার
সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেন। এর ফলে রাজ্যপর্যায়ে জেফারসনের ‘রিপাবলিকান দল’ ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং ১৮০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
কিন্তু ১৮২৮ সালেজবঢ়ঁনষরপধহ ঢ়ধৎঃু বা সাধারণতন্ত্রী দল উবসড়পৎধঃরপ জবঢ়ঁনষরপধহ ঢ়ধৎঃু বা
গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রী দল নাম ধারণ করে। অবশ্য পরবর্তীতে এ দল নামে পরিচিত
হয়। অপরদিকে বা যুক্তরাষ্ট্রীয় দল প্রথমে হুইগ ( বা উদারনৈতিক দল এবং
পরে সাধারণতন্ত্রী দল নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ দুটি দলেরই প্রাধান্য বিদ্যমান।
দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থায় কতকগুলো সুষ্পষ্ট বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ বৈশিষ্ট্যগুলো মার্কিন দলীয়
ব্যবস্থাকে স্বাতন্ত্র্য প্রদান করেছে। নি¤েœমার্কিন দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলঃ
দ্বি-দল ব্যবস্থা ঃ দ্বি-দল ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এ দ্বি-দল
ব্যবস্থার অর্থ এ নয় যে এখানে দুই এর বেশি কোন রাজনৈতিক দল নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে
রিপাবলিকান পার্টি (জবঢ়ঁনষরপধহ চধৎঃু) এবং ডিমোক্রাটিক পার্টি (উবসড়পৎধঃরপ চধৎঃু) ছাড়াও
অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে। কিন্তু এ দু’টি রাজনৈতিক দলের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে মার্কিন
রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলে অভিহিত কার হয়। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রী দল,
সাম্যবাদী দল, সমাজতন্ত্রী ওয়াকার্স পার্টি ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। বর্তমানে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় বাবস্থায় প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মৌলিক নীতিগত পার্থক্য নেই বললেই
চলে। উভয় দলই পুঁজিবাদে বিশ্বাসী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণে সমমতাবলম্বী। উভয়
দলের উদ্দেশ্য হল নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করা। তাই উভয় দলই মূলতঃ নির্বাচন কেন্দ্রিক।
নির্বাচনের পর এ দু’টি দলের তেমন কোন রাজনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। নির্বাচনে বিজয়ী দল
সরকার গঠন করে এবং অন্য দলটি বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করে।
আঞ্চলিকতা ঃ
মার্কিন দলীয় ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল আঞ্চলিকতা। আঞ্চলিক সংগঠনই হল মার্কিন
রাজনৈতিক দলের ভিত্তি। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠার সময় থেকেই আঞ্চলিক মনোভাব বিশেষভাবে
প্রাধান্য লাভ করেছে। ১৯৩২ সালের পূর্বে এ আঞ্চলিকতা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে দক্ষিণে
রিপাবলিকান এবং উত্তরে ডেমোক্র্যাট দলের কোন অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। কিন্তু ১৯৩২ সালের
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গণতন্ত্রী দলের প্রার্থী হিসেবে রুজভেল্ট উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল থেকেও উল্লেখযোগ্য সমর্থন
পায়। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আঞ্চলিকতাবাদের প্রবণতা হ্রাস পেতে থাকে এবং
প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলও আঞ্চলিকতাবাদের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় মর্যাদা লাভ করে।
বিকেন্দ্রীক দলীয় ব্যবস্থা ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দলীয় ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীক দলীয় ব্যবস্থা বলা যায়। কারণ মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সংগঠনই বিকেন্দ্রীভ‚ত। এখানে উভয় দলের প্রকৃত
ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যের দল বা আঞ্চলিক দলের নেতাদের হাতে ন্যস্তরয়েছে। এসব দলের নেতা-কর্মীদের
সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া জাতীয় দলের নেতৃত্ব মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কোন দলের কোন জাতীয় নেতা
রাজনৈতিক দলের নীতি বা মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতা করতে পারে না। আঞ্চলিক বা রাজ্যদলগুলো
স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে।
মতাদর্শগত পার্থক্যের অভাবঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ, কর্মসূচী
ও কার্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। উভয় দলই পূঁজিবাদে বিশ্বাসী এবং সমাজতন্ত্র
বিরোধী। নির্বাচন কেন্দ্রীক এ দু’টি প্রধান দলের উদ্দেশ্য হল নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করা।
উভয় দলের চিন্তা, আদর্শ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গী, কর্মসূচী ও কার্যপদ্ধতি মূলত
এক ও অভিন্ন।
স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাব ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলোর উপর স্বার্থগোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এটি
মার্কিন দলীয় ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আইন সভার সদস্যগণ যেমন নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন
স্বার্থগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ উত্থাপন করেন, তেমনি বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীও তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য
আইনসভার সদস্য তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। দলের আর্থিক
ব্যয়ভার, প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনী প্রচার ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে স্বার্থগোষ্ঠীগুলোর মূখ্য উদ্দেশ্য হল
দলের নীতিকে নিজেদের স্বার্থের অনুক‚লে প্রভাবিত করা।
শৃংঙ্খলা ও সংহতির অভাব ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থায় শৃংঙ্খলা ও সংহতির অভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। সেখানে প্রধান
দু’টি দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পার্থক্য না থাকায় স্বাভাবিকভাবে দলীয়
শৃংঙ্খলা ও সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। আবার মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা তাদের নিজ
নিজ অঞ্চলের স্বার্থরক্ষায় বেশি মনোযোগী হয়ে থাকেন। তাই তাঁরা অনেক সময় আঞ্চলিক স্বার্থ সমর্থনের
জন্য দলীয় বা জাতীয় স্তরের নেতাদের পরামর্শ বা সিদ্ধান্তউপেক্ষা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। এর দ্বারা
দলীয় শৃংঙ্খলা ও সংহতির অভাব সূচিত হয়।
নির্দলীয় প্রার্থী ও নিরপেক্ষ ভোটদাতা ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নির্দলীয় প্রার্থী ও ভোটদাতা দেখতে পাওয়া যায়।
পৃথিবীর অন্যকোন দেশের দলীয় ব্যবস্থায় এ দৃষ্টান্তদেখা যায় না। তাছাড়া মার্কিন দলীয় ব্যবস্থায়
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন মতাদর্শগত পার্থক্য না থাকায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে স্থায়ী আনুগত্য
দেখা যায় না। তাই কোন নির্বাচক বা সমর্থক একটি নির্বাচনে গণতন্ত্রী দলের
প্রার্থীকে ভোট দিলে পরবর্তী নির্বাচনে সাধারণতন্ত্রী দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেখা যায়।
দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কারণ ঃ
মার্কিন সংবিধান বিশারদগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দল ব্যবস্থা গড়ে উঠার এবং শক্তিশালী তৃতীয় দলের
অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন মতপোষণ করেছেন। প্রফেসর ফাইনার (চৎড়ভ. ঋরহবৎ) মার্কিন
রাজনীতিতে দ্বি-দল ব্যবস্থা গড়ে উঠার পিছনে দু’টি কারণ উল্লেখ করেন । যথা- (১) সমাজতাত্তি¡ক
এবং (২) নির্বাচন ব্যবস্থা । আবার ওয়াটসন ও
ফিটজেরাল্ড মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠার কারণ
হিসেবে ঐতিহাসিক উপাদান, মতৈক্য, নির্বাচন সংক্রান্তনিয়মাবলী এবং দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ
করার স্বাভাবিক প্রবণতার কথা উল্লেখ করেছেন। এসব বিভিন্ন মতকে একত্রিত করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
দলীয় ব্যবস্থাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করা যায়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গণতন্ত্রী দলএবং সাধারণতন্ত্রী দল
প্রাধান্য বিস্তার করেছে। তবে এর অর্থ এ নয় যে, এখানে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই।
প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গণতন্ত্রী ও সাধারণতন্ত্রী দল ছাড়াও সমাজতন্ত্রী শ্রমিকদল,
সাম্যবাদীদল, কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এ দলগুলো কেবলমাত্র
আঞ্চলিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। তাই তৃতীয় দল হিসেবে এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
নির্বাচনী প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বা জাতীয় রাজনীতিতে তেমন কোন প্রভাব রাখতে পারে না। প্রতিপত্তি, পদসংখ্যা
ইত্যাদি দিক দিয়ে কেবলমাত্র ‘গণতন্ত্রী দল’ এবং ‘সাধারণতন্ত্রী দল’
এ দু’টি দলই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তাই
অনেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
দলীয় ব্যবস্থাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলার কারণ সমূহ নি¤েœআলোচনা করা হলঃ
ঐতিহাসিক কারণ ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে
ছিল। আমেরিকার উপনিবেশিকরা তাদের মাতৃভ‚মির দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার ঐতিহ্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত
হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সংবিধান গ্রহণকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের হুইগ (ডযরম) ও টোরিদের )
মধ্যকার বিরোধের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যায়। ফেডারেলিষ্ট ও ফেডারেলিষ্ট বিরোধী গোষ্ঠী দু’টি পারস্পরিক বিরোধিতার মধ্যে। পরবর্তী সময়ে ফেডারেলিষ্টরা সাধারণতন্ত্রী দল
এবং ফেডারেলিষ্ট বিরোধীরা গণতন্ত্রীদল গঠন করে।
এভাবে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় নেতৃত্বের প্রশ্নে যে বিভাজন ঘটেছিল তা আজও বর্তমান থাকায় মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়।
সাংবিধানিক কারণ ঃ
মরিস দ্যুভারজার (গধঁৎরপব উাঁবৎমবৎ) প্রমুখ সংবিধান বিশারদদের মতে অনেকটা সাংবিধানিক কারণে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি নির্বাচনী জেলা থেকে
কংগ্রেসে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন সংক্রান্তআইন, নির্বাচনী প্রচার ইত্যাদি সম্পর্কে সংবিধানে যে
নিয়ম-কানুন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কোন শক্তিশালী তৃতীয় দলের
আবির্ভাবের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
সামাজিক কারণ ঃ
সাধারণত কোন দেশের ভৌগলিক, আর্থ-সামাজিক, জাতিগত, ধর্মগত ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে
সে দেশের রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে। অর্থাৎ সমাজে ভৌগলিক অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মগত প্রভৃতি
বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় যে সমাজ ব্যবস্থা বহুদলীয় ব্যবস্থার উপযোগী। কিন্তু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের বিরোধ খুবই কম থাকায় সেখানে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আবার মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে কোন শ্রেণী বিরোধ না থাকায় প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল জনসাধারণের বিভিন্ন
প্রকার সামাজিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন করতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন তৃতীয় দলের আবির্ভাব সম্ভব হয়ে উঠেনি।
প্রাতিষ্ঠানিকী কারণ ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠার পিছনে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ের ভ‚মিকাও
গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছেন। মার্কিন
সংবিধান অনুসারে কোন প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হলে তাঁকে নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের
সমর্থন পেতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সংখ্যাধিক্য ঘটলে ভোট ভাগাভাগির ফলে যে কোন প্রার্থীর
পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটদাতার সমর্থন পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক
ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
সমাজতান্ত্রিকীকরণ ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী গণতন্ত্রী দল এবং সাধারণতন্ত্রী দল দু’টির মধ্যে
রাজনৈতিক মতাদর্শ,কর্মসূচী ও কার্যপদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না।
উভয় দলই পুঁজিবাদে বিশ্বাসী এবং সমাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন কমিউনিস্ট
পার্টির কথা উল্লেখ করা যায়। এ পার্টির নেতৃত্বে শ্রমজীবি মানুষ যাতে বিকল্প সমাজ প্রতিষ্ঠার ¯েøাগান তুলে
সাফল্য অর্জন করতে না পারে সে জন্য মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যগণ সর্বসম্মতভাবে নানা
ধরণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মনস্তাত্বিক কারণ ঃ
মার্কিন সমাজের আর্থিক প্রাচুর্য্য ও গোত্রীয় প্রকৃতি, মতাদর্শগত ঐক্য প্রভৃতি কারণে মার্কিন জনগণ প্রথম
থেকেই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের যে কোন একটিকে সমর্থন করে। এর কারণ হিসেবে মার্কিন
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের আদর্শগত ঐক্যের কথা উল্লেখ করা যায়। তাই
জনসাধারণের মত মার্কিন রাজনীতিবিদদের মধ্যেও অনুরূপ মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়।
শ্রমিক শ্রেণীর অনৈক্য ও দূর্বলতা ঃ
মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা মূলতঃ পূঁজিবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু এ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে
সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার মত শক্তি ও সামর্থ মার্কিন শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। এর প্রধান
কারণ হল প্রধান দু’টি শক্তিশালী দল ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের বিরোধীতা। তাছাড়া
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা প্রধান দু’টি দলের কৃপা লাভের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী। তাই
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে মার্কিন শ্রমজীবি জনগণের মধ্যে অনৈক্য এবং প্রয়োজনীয় শক্তি ও
সামর্থের অভাব তৃতীয় কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠনের পথে প্রধান অন্তরায়।
সারকথাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো মার্কিন জনগণকে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণে উৎসাহ
প্রদান করে। এছাড়া অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে সচেতন করে রাজনৈতিক কাজে নিয়োগ করা, রাজনৈতিক
মূল্যবোধে মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মার্কিন রাজনৈতিক দলগুলো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থাকে বলা হয় -
ক. কেন্দ্রীভ‚ত দলীয় ব্যবস্থা;
খ. বিকেন্দ্রীকৃত দলীয় ব্যবস্থা;
গ. আঞ্চলিক দলীয় ব্যবস্থা;
ঘ. যুক্তরাষ্ট্রীয় দলীয় ব্যবস্থা।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে -
ক. ১৭৭৬ সালে;
খ. ১৮৭৬ সালে;
গ. ১৭৮৭ সালে;
ঘ. ১৭৮৯ সালে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল -
ক. ক্ষমতার কেন্দ্রীভ‚তকরণ;
খ. প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি;
গ. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি;
ঘ. শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা।
উত্তরমালাঃ ১, খ ২, ক ৩, গ
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা উদ্ভাবের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]