ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল পার্থক্যগুলো কি ? . ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার বৈসাদৃশ্যগুলো

যুক্তরাজ্যের মত বর্তমান বিশ্বের অন্য আর একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ¯œায়ুযুদ্ধের
পরিসমাপ্তির পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতা হ্রাস পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমগ্রবিশ্বে কর্তৃত্বকারী প্রধান দেশ হিসেবে
আবিভর্‚ত হয়। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার জন্য আমেরিকার অধিবাসীরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম
করে অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধানের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
সংবিধান অন্যতম। গণসার্বভৌমিকতার স্বীকৃতি এবং ‘সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ আইন‘ বলে ঘোষণা দেয়ার
মাধ্যমে মার্কিন সংবিধান তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করেছে। বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উভয় রাষ্ট্রেরই স্বতন্ত্রআইন, শাসন ও বিচার বিভাগ রয়েছে। উভয় রাষ্ট্রের
রাজনৈতিক ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হলেও এদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়। নি¤েœব্রিটেন ও মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলঃ
সরকার ব্যবস্থা ঃ
ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার প্রথম এবং প্রধান পার্থক্য হলো তাদের সরকার ব্যবস্থার ভিন্নতা।
ব্রিটেনে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা ) প্রচলিত এবং
যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। দুই শাসন
ব্যবস্থার অধিকাংশ পার্থক্য মূলতঃ সরকার ব্যবস্থা জনিত ভিন্নতা হতে উদ্ভুত।
সংবিধান ঃ
ব্রিটেনের সংবিধান মূলতঃ অলিখিত এবং সুপরিবর্তনীয়। এটি মূলতঃ প্রথা, আচার, ঐতিহ্য এবং অংশত
লিখিত দলিল হতে উদ্ভুত। কিন্ত্র‘ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত এবং তা দুষ্পরিবর্তনীয়।
রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান ঃ
ব্রিটেনে রাজা হলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান । তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং
আমৃত্যু সপদে বহাল থাকেন। তিনি ব্রিটেনের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান নন। অপরপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের
প্রধান নির্বাহী হলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত
হন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধান।
দায়িত্বশীলতা ঃ
ব্রিটেনে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। কাজেই এ সরকার দায়িত্বশীল সরকার। এখানে শাসন বিভাগ
আইন বিভাগের নিকট তার কার্যকলাপের জন্য দায়ী থাকে। আইন সভার আস্থার উপর নির্ভর করে শাসন
বিভাগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। আইন সভার আস্থা হারালে মন্ত্রীগণকে যৌথভাবে পদত্যাগ করতে হয়।
একে “মন্ত্রীগণের দায়িত্বশীলতা’’ বলা হয়। অপর পক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রাষ্ট্রপতি এখানে দেশের প্রকৃত শাসন কর্তা। তাঁর মন্ত্রী সভার
সদস্যগণ আইন সভার সদস্য নন এবং তাঁদের কাজের জন্য তাঁরা আইন সভার নিকট দায়ী নন। রাষ্ট্রপতির
মর্জির উপর তাঁরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন এবং তাঁর কাছেই তাদেরকে জবাবদিহি করতে হয়। আইন
সভার নিকট মন্ত্রীগণের দায়িত্বশীলতার অস্তিত্ব এখানে নাই।
ক্ষমতার বন্টন ঃ
ক্ষমতা বন্টন নীতির উপর ভিত্তি করে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ব্রিটেনের সরকার ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক।
অপর পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা বহুকেন্দ্রিক। ব্রিটেনে সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয়
সরকারের হাতে ন্যস্তথাকে। কিন্ত্র‘ যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের
মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় সরকার অংগ রাষ্ট্রের সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ ঃ
ব্রিটেনে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অতটা কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হয় না। কিন্ত্র‘, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণ নীতি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। এখানে সাংবিধানিক উপায়ে স্পষ্ট ভাবে প্রদত্ত
ক্ষমতা বলেই সরকারের অংগগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। শুধু তাই নয় সরকারের
বিভাগগুলোকে স্বেচ্ছাচারিতার হাত হতে মুক্ত করার জন্য এখানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রচলিত আছে।
আইন সভা ঃ
উভয় দেশের আইন সভাই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চ কক্ষ ও নি¤œকক্ষ। ব্রিটেনে আইন সভার উচ্চ কক্ষ
হচ্ছে হাউজ অব লর্ডস্ । এটি বৃহৎ তবে তুলনামূলকভাবে
ক্ষমতাহীন কক্ষ। অপর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আইন সভার (কংগ্রেসে) উচ্চ কক্ষের নাম সিনেট (ঞযব
ঝবহধঃব)। এটি আয়তনে ক্ষুদ্র, তবে অত্যন্ত্রক্ষমতাধর। বলা হয় “ঞযব টঝ ঝবহধঃব রং ঃযব সড়ংঃ
ঢ়ড়বিৎভঁষ ংবপড়হফ পযধসনবৎ রহ ঞযব ডড়ৎষফ” সিনেট সদস্যরা জনপ্রতিনিধি কিন্ত্র‘ লর্ডস্ সভার সদস্যরা
মনোনয়নের মাধ্যমে আসেন। সিনেটের মোট সদস্য ১০০ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রপতি এর সভাপতি।
তিনি ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। পক্ষান্তরে, লর্ডস্ সভার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১,০০০ এর বেশী।
লর্ডস্ সভার সভাপতিকে ‘লর্ড চ্যান্সেলর’ বলা হয়। তিনি ভোট প্রয়োগ করতে
পারেন না।
নি¤œকক্ষঃ
ব্রিটেনে আইন সভার নি¤œকক্ষের নাম ‘কমন্স সভা’ (ঐড়ঁংব ড়ভ ঈড়সসড়হং) । এর সদস্য সংখ্যা ৬৩০
এবং তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের প্রমানমন্ত্রী কমন্স সভার নেতা এবং তিনি সহ তাঁর
মন্ত্রিপরিষদ তাঁদের কার্যাবলীর জন্য কমন্স সভার নিকট দায়বদ্ধ। অপরপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নি¤œ
কক্ষের নাম ‘প্রতিনিধি সভা’ । এর সদস্য সংখ্যা ৪৩৫ এবং তাঁরা দুই
বছরের জন্য নির্বাচিত হন। কমন্স সভার স্পীকার প্রতিনিধি সভার স্পীকার অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাবান।
কমন্স সভার স্পীকার পুরোপুরি দল নিরপেক্ষ পক্ষান্তরে প্রতিনিধি সভার স্পীকার
দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত হন।
আইন প্রণয়ন ঃ
যুক্তরাষ্ট্রে বিলগুলো বেসরকারী সদস্য ‘কর্তৃক কংগ্রেসে উত্থাপিত হয় এবং বিল
পাশের ব্যাপারে তাঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। কিন্ত্র‘, ব্রিটেনে মন্ত্রীগণ কর্তৃক বিলগুলো আইন সভায়
উত্থাপিত হয় এবং তা পাশের ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত থাকেন। ব্রিটেনে বিলগুলোর খুঁটিনাটি পরীক্ষার পর
তা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের বিলের উপর কোন সাধারণ আলোচনার পূর্বেই তা কমিটিতে
প্রেরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যে কোন বিল আইনে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন অত্যাবশ্যক।
রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন। কিন্ত্র‘ ব্রিটেনে রাজা বা রানীর সম্মতির
ক্ষেত্রে এটা নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিচার বিভাগ ঃ
বিচার বিভাগীয় প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এখানে বিচার বিভাগ সংবিধানের
অভিভাবক ) হিসেবে বিবেচিত। সরকারের সকল বিভাগের উপরই এর
প্রভাব ও প্রাধান্য সুস্পষ্ট। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার (ঔঁফরপরধষ জবারব)ি কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
পক্ষান্ত্ররে, ‘সংসদীয় সার্বভৌমত্ব’ ব্রিটেনের সংবিধানের মূল ধারা।
এখানে আইন প্রণয়ন কিংবা তা বাতিলের একচ্ছত্র ক্ষমতা আইন সভার। এমন কি আইন সভা আদালতের সিদ্ধান্তকেও বাতিল করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিলের উপর কোন সাধারণ আলোচনার পূর্বেই তা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক আর বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক।
ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার (ইর-ঢ়ধৎঃু ংুংঃবস) সুদীর্ঘ ঐতিহ্য বিদ্যমান। কোন
দেশের সংবিধানেই দলীয় ব্যবস্থার উল্লেখ নেই। উভয় দেশেই রাজনৈতিক দলগুলো শাসন ব্যবস্থায়
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। তবে দলীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভ‚তকরণের দিক দিয়ে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দলীয়
ব্যবস্থার মধ্যে বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়। ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলোর তুলনায় অনেক
বেশী সংগঠিত ও সুশৃংখল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্দলীয় ভোটার সংখ্যা মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
কিন্ত্র‘ ব্রিটেনে নির্দলীয় ভোটারের সন্ধান পাওয়া দুরূহ।
সারকথাঃ
বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উভয় রাষ্ট্রেরই স্বতন্ত্রআইন, শাসন ও বিচার বিভাগ রয়েছে। উভয় রাষ্ট্রের
রাজনৈতিক ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হলেও এদের মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. ঊষবপঃড়ৎধষ ঈড়ষষবমব এর মাধ্যমে কে নির্বাচিত হন ?
ক. যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী;
খ. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট;
গ. ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট;
ঘ. বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি।
২. দায়িত্বশীল সরকার বলা হয় -
ক. সংসদীয় সরকারকে;
খ. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারকে;
গ. কংগ্রেসকে;
ঘ. সিনেটকে।
৩. সিনেটের সদস্য সংখ্যা কত ?
ক. ২০০;
খ. ১০৪;
গ. ১০৩;
ঘ. ১০০।
উত্তরমালাঃ ১, খ ২, গ ৩. ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১. ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল পার্থক্যগুলো কি ?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]