অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন। , রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যসমূহ চিহ্নিত করুন।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের কর্তব্যগুলো নিæরূপ:
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা : প্রত্যেক নাগরিকের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করা। আনুগত্য ছাড়া কেউ কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে না। রাষ্ট্রের
স্থায়িত্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা নাগরিকের দায়িত্ব।
আইন মান্য করা : রাষ্ট্রের আইনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা পোষণ করা সকল নাগরিকের কর্তব্য।
আইন না মানলে শান্তি শৃংখলা বিঘিœত হয়। কাজেই প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ
রাখার জন্যে আইন মেনে চলা অন্যতম নাগরিক কর্তব্য।
সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা : ভোটদান অন্যতম নাগরিক অধিকার। এ অধিকারকে
সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করার জন্য সুচিন্তিতভাবে ভোটদান করা নাগরিকের কর্তব্য। কারণ ভোটদানের
নিষ্ঠার উপর শাসনব্যবস্থার উৎকর্ষ নির্ভরশীল। আমরা যদি উওম ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করতে না
পারি তাহলে অযোগ্য ও অথর্ব প্রতিনিধিদের দিয়ে উত্তম সরকার গঠন করা যাবে না। তাই দেশ ও
জাতির স্বার্থে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্যে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট
দিতে হবে।
কর ও খাজনা প্রদান করা : রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত যাবতীয় কর ও খাজনা যথারীতি প্রদান করা
প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। তা না হলে অর্থাভাবে রাষ্ট্রের কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারবে না।
রাষ্ট্রের সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা : রাষ্ট্রের গঠনমূলক ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা
সকল নাগরিকের কর্তব্য। স্থানীয় সংস্থাগুলোতে প্রতিনিধিত্ব করা, জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা
এবং রাষ্ট্র যখন যে কাজ দেয় সে কাজ করা নাগরিকের কর্তব্য।
সন্তানদের সুশিক্ষিত করা : জাতিগঠন ও নাগরিক গুণাবলী বিকাশের জন্য সন্তানদের সুশিক্ষিত করা
সকল নাগরিকের কর্তব্য। নেপোলিয়ান একবার তাঁর দেশের মায়েদের বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে
শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে উন্নত জাতি দান করব।”
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করা : বর্তমান বিশ্বে কোন রাষ্ট্রই আর বিচ্ছিন্ন নয়। বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সকল রাষ্ট্রই আজ নিকট প্রতিবেশী। রাষ্ট্রের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে
সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সকলের কর্তব্য হল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৃষি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদান ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত
করে বসবাস উপযোগী একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলা।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিক যেমন তাদের অধিকার ভোগ
করবে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করবে। অধিকার ভোগ করতে
হলে দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে। কেননা, অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত রয়েছে। মোট
কথা, অধিকার ভোগ ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই নাগরিকগণ রাষ্ট্রে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে।
অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক
অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক বিদ্যমান। অধিকার ও কর্তব্যের প্রকৃতি, স্বরূপ এবং পরিধি
বিশে ষণ করলে দেখা যায় যে, এগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কর্তব্যবিহীন অধিকার বা -
আনুগত্য ছাড়া কেউ কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে না।
অধিকারবিহীন কর্তব্যের কথা কল্পনা করা যায় না। অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক আমরা নিচের
আলোচনা থেকে জানতে পারি:
উৎপত্তিগত সম্পর্ক : সমাজ থেকে আমরা যে অধিকার পাই তার বিনিময়ে সমাজের কল্যাণের জন্যে
আমরা কর্তব্য পালন করি। কর্তব্য পালনের মধ্যে নিজের ও সমাজের মঙ্গল নিহিত। অধিকার সমাজ
জীবনকে সজীব ও সচেতন করে, আর কর্তব্য সমাজ জীবনকে সুসংহত করে। যেমন- সমাজ আমাকে
শিক্ষিত করে, বিনিময়ে আমি আমার শিক্ষাকে সমাজের কল্যাণে প্রয়োগ করি। সুতরাং বলা যায়
অধিকার ও কর্তব্য সমাজ থেকে সৃষ্ট এবং সমাজের মধ্যেই বিকাশমান।
অধিকার ও কর্তব্য একই বস্তুর দু’টি দিক : অধিকার বলতে কর্তব্য এবং কর্তব্য বলতে অধিকারকে
বুঝায় কারণ অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্য পালন করতে হয়। সুতরাং প্রত্যেকটি নাগরিক
অধিকার প্রকারান্তরে এক একটি নাগরিক কর্তব্য। সে জন্যে বলা হয়ে থাকে অধিকারের মধ্যেই
কর্তব্য নিহিত। অধিকার বলতে আমরা সেসকল শর্তকে বুঝি যা’ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যে অপরিহার্য।
অধিকার বলতে যেমন কতকগুলো শর্তকে বুঝায় তেমনি সেসকল শর্ত সম্পাদনের দায়িত্বকেও বুঝায়।
সুতরাং অধিকার উপভোগ করতে যেসকল কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয় তাদের সমষ্টিকে কর্তব্য
বলে। যেমন- ভোটদানের অধিকার। ভোটদানের অধিকার বলতে ভোটাধিকার প্রয়োগের দায়িত্বকে
বুঝায়। অতএব, আমরা বলতে পারি অধিকার ও কর্তব্য একই বস্তুর দ’ুটি দিক মাত্র। একটিকে বাদ
দিয়ে অপরটি কল্পনা করা যায় না। অধ্যাপক লাস্কি (খধংশর) যথার্থই বলেছেন, “অধিকার ও কর্তব্য একই বস্তুর দু’টি দিক।”
একজনের অধিকার অন্যের কর্তব্য : কারও অধিকার বলতে যেমন তার কর্তব্যকেও বুঝায় তেমনি
একজনের অধিকার বলতে অন্যজনের কর্তব্যকে বুঝায়। যেমন- আমার চলার অধিকার আছে, এর
অর্থ অন্য কেউ আমার চলার পথে বিঘœ সৃষ্টি করতে পারবে না। যদি বলা হয় আমার বাঁচার অধিকার
আছে, এর অর্থ কেউ আমার জীবনকে বিনাশ করতে পারবে না। অনুরূপভাবে আমার অধিকার আমার
নিজের উপর কর্তব্য আরোপ করে। যেমন- আমার সম্পত্তির অধিকার আছে এর অর্থ অপরের
সম্পত্তির উপর আমার কোন অধিকার নেই। সুতরাং অধিকার ও কর্তব্য পাশাপাশি অবস্থান করে।
এদের বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করা যায় না।
অধিকারের পরিধি কর্তব্যবোধ দ্বারা সীমাবদ্ধ : অধিকার অবাধ ও সীমাহীন হলে স্বেচ্ছাচারিতার
জন্ম হবে। যার ফলে সবল ব্যক্তি অধিকার ভোগ করবে, আর দুর্বল ব্যক্তি বঞ্চিত হবে। কাজেই
একজনের অধিকার অন্য সকলের কর্তব্যবোধ দ্বারা সীমাবদ্ধ করতে হবে।
অধিকার সংরক্ষণ ও কর্তব্য পালন : নাগরিকের যা’ অধিকার রাষ্ট্রের নিকট তাই কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের
যা’ অধিকার নাগরিকের নিকট তাই কর্তব্য। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার আছে
এবং রাষ্ট্র যখন সে অধিকার দাবি করে তখন নাগরিকের চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। যেমন- রাষ্ট্র
যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন নাগরিকদের জীবনের বিনিময়ে হলেও রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে
হয়।
উপরি উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, অধিকার ও কর্তব্য ঘনিষ্ঠভাবে
সম্পর্কযুক্ত। এদের একটি বাদ দিয়ে অপরটি ভোগ করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সচেতনতার ফলে
নাগরিক কখনও অধিকার ও কর্তব্যকে পৃথক করে দেখতে পারে না। অধিকারের মধ্যে কর্তব্য নিহিত
থাকে। অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর পরিপূরক। এরা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
সারকথা:
নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি কর্তব্যও আছে। আইনের দ্বারা স্বীকৃত অধিকার ভোগ
করতে গিয়ে যেসকল দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে আমরা নাগরিক কর্তব্য বলে থাকি। কর্তব্য
বলতে আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মংগলের জন্য কোন কিছু করা এবং না করাকে বুঝি। অধিকার
ভোগ করতে হলে একজন নাগরিককে রাষ্ট্রের প্রতি কতকগুলো কর্তব্য পালন করতে হয়। একজন
নাগরিকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল তার রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সংহতি রক্ষার জন্যে সঠিক দায়িত্ব পালন করা।
১. নগরিকের প্রধান কর্তব্য কোন্টি?
ক. রাজনীতি করা
খ. কর প্রদান করা
গ. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা
ঘ. সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা।
২. রাষ্ট্রকে শত্রুর হাত হতে রক্ষা করা কর্তব্য কাদের?
ক. সকল রাজনৈতিক দলের
খ. সেনাবাহিনীর
গ. সরকারের
ঘ. সকল নাগরিকের।
৩. নিয়মিত কর প্রদান করা কাদের কর্তব্য?
ক. শিল্পপতিদের
খ. নাগরিকের
গ. ব্যবসায়ীদের
ঘ. কৃষকের।
৪. অধিকার ও কর্তব্য কি?
ক. সামাজিকতা
খ. দায়িত্ব
গ. ভিন্ন দু’টি বস্তু
ঘ. একই বস্তুর দু’টি দিক মাত্র।
৫. অধিকার ভোগ ও কর্তব্য পালনের মধ্যে কিসের মংগল নিহিত?
ক. পরিবারের
খ. রাষ্ট্রের
গ. সমাজের
ঘ. দলীয় নেতাদের।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১.নাগরিকের কর্তব্য বলতে কি বুঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন।
২. রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যসমূহ চিহ্নিত করুন।
উত্তরমালা ঃ ১। গ ২। ঘ ৩। খ ৪। ঘ ৫। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]