গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল বিচার বিভাগ। স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ
বিচার বিভাগ ব্যতীত গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব। সে কারণেই বিচার বিভাগের এক্তিয়ার ও ভ‚মিকা
আলোচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ প্রচলিত গণতান্ত্রিক
রীতি অনুযায়ী বিচার বিভাগের ভ‚মিকা স্থির করেছেন। বিচার বিভাগের ক্ষমতা এবং এক্তিয়ার নির্ধারণে
গ্রেট ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামোর মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
অন্যান্য উদারপন্থী ব্যবস্থার অনুকরণে ভারতের বিচার ব্যবস্থা প্রণীত হলেও তা কোন দেশকেই অন্ধ
অনুকরণ করেনি। ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু কিছু কাঠামো স্থির করা
হয়। ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নি¤œরূপঃ
ভারতের বিচার ব্যবস্থা একটি ঐক্যবদ্ধ ক্রমস্তর ও সংহত বিচার ব্যবস্থা। রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত
হাইকোর্ট। রাজ্যের সকল দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত এর অধীনস্থ। সুপ্রীমকোর্ট ভারতের
সর্বোচ্চ আদালত।
ভারতের সুপ্রীমকোর্টের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটা কেবল আইনের পদ্ধতিগত দিক বিচার করতে
পারে। আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট নীতি বিচার করতে পারে না। নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও তার
ক্ষমতা অত্যন্তসীমিত। সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় এবং জরুরি অবস্থায়
রাষ্ট্রপতি মৌলিক অধিকার প্রয়োগের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারেন।
ভারতে একই ধরনের দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিধি প্রচলিত।
ভারতের সংবিধানে বিচার বিভাগের হাতে আইনের দৃষ্টিতে সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা ন্যস্তকরা হয় নি।
সংবিধানের ৩৬১ নং ধারায় রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে অব্যাহতি দানের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভারতের বিচার ব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রিতার দোষে দুষ্ট। বেশির ভাগ মামলাই দীর্ঘকাল অমীমাংসিত থাকে।
১৯৮৫ সালের শেষে সুপ্রীমকোর্টে অমীমাংসিত মামলার পরিমাণ ছিল ৮৭,০০০। ১৯৮৬ সালের ১লা
জুলাই এ সংখ্যা ছিল ১,৪০,১৪২ টি। এর মধ্যে ২,৮৫২ টি দশ বছরের পুরানো।
ভারতের বিচার ব্যবস্থা অত্যন্তব্যয় বহুল। তবে ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনের
মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য আইনগত সাহায্য দানের নীতি গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এ নীতি নির্দেশমূলক
নীতির অন্তর্ভুক্ত।
ভারতের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গণ আদালতের ভ‚মিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৫ সালের
অক্টোবরে দিল্লীতে গণ-আদালত গঠন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণের বিরোধ
মীমাংশার দায়িত্ব এ আদালতের হাতে ন্যস্তরয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে সম্পত্তি এবং বিবাহ সম্পর্কিত
বিরোধ নিষ্পত্তির দায়িত্বও গণ আদালতের হাতে ন্যস্তকরা হয়েছে।
ভারতের বিচারপতিগণ আইন সভা কর্তৃক নয় বরং শাসন বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত হন। তবে সংসদ
হাইকোর্ট এবং সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে।
ভারতে ব্যাপকভাবে জুরির সাহায্যে বিচারের নীতি গৃহীত হয় নি।
ভারতের সুপ্রীমকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী
ভারতের বিচার
ব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রিতার
দোষে দুষ্ট।
ভারতের ক্রমস্তর বিন্যস্তবিচার ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থিত সুপ্রীমকোর্ট। ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো গ্রহণ
করেছে। সুতরাং সুপ্রীমকোর্টের এক্তিয়ার নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে।
সুপ্রীমকোর্ট ব্যাপক বিচার বিভাগীয় ক্ষমতার অধিকারী। তাকে ভারতের বিচার ব্যবস্থার অভিভাবকরূপে
গণ্য করা যায়।
ভারতে মূল সংবিধানের ১২৪ নং ধারায় উল্লেখিত ছিল যে, বিচারপতি এবং আরো অনধিক ৭ (সাত) জন
বিচারপতি নিয়ে সুপ্রীমকোর্ট গঠিত হবে। বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংবিধানে সুযোগ রাখা হয়েছে।
সংসদ সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে পর্যায়ক্রমে ১৯৮৬-র এপ্রিল মাসে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতির
সংখ্যা নির্ধারণ করেছে ২৬ জন। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী বিচারপতি (অফ যড়প ঔঁফমবং)
নিয়োগের ব্যবস্থা আছে।
সুপ্রীমকোর্টের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা আছে। সংবিধানের ১২৬
নং ধারানুযায়ী কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি (অপঃরহম ঈযরবভ ঔঁংঃরপব)-এর পদ কোন কারণে শূন্য হলে
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের মুখ্য এক্তিয়ার এবং দায়িত্ব হল সংবিধানের চ‚ড়ান্ত
ব্যাখ্যা কর্তার ভ‚মিকা পালন, আইনের ব্যাখ্যা এবং সাংবিধানিকতা পর্যালোচনা, কেন্দ্র-রাজ্যের অথবা
রাজ্যের সাথে রাজ্যের বিরোধ মীমাংসা, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ, আদালত অবমাননার বিরুদ্ধে
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আপীল আদালতের ভ‚মিকা
পালন।
ভারতের সুপ্রীমকোর্ট উপরোক্ত সকল ভ‚মিকা পালনের সাথে সাথে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজের
এক্তিয়ারকে স¤প্রসারিত করেছে। এদের মধ্যে আছে বিধায়ক এবং সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা সম্পর্কে
বিধানসভা ও বিধান পরিষদের স্পীকার এবং চেয়ারম্যান, লোকসভার স্পীকার এবং রাজ্যসভার
চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের পুনঃনিরীক্ষা, নিজের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা, জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন
বিষয়ে সরকারকে নির্দেশ দান প্রভৃতি। সুপ্রীমকোর্ট অভিলেখ আদালত (ঈড়ঁৎঃ ড়ভ জবপড়ৎফ) রূপেও
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। সংবিধানে সুপ্রীমকোর্টের এলাকাকে ৩ (তিন) ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা ঃ
মূল এলাকা
সংবিধানের ১৩১ নং ধারানুযায়ী সুপ্রীমকোর্ট মূল এলাকার মাধ্যমে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ মীমাংসার ক্ষমতা
অর্জন করেছে। সংবিধানের অস্পষ্টতাজনিত কারণে যে বিরোধ তার আইনগত সমাধান দেয় সুপ্রীমকোর্ট।
আপীল সংক্রান্তএলাকা
সুপ্রীমকোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। সংবিধান অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখন্ডে অবস্থিত যেকোন
দেওয়ানী, ফৌজদারী ও অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করা
যায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে ১টি সার্টিফিকেট দিতে হয় যে, মামলাটির সাথে সংবিধানের
ব্যাখ্যাজনিত আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নজড়িত।
পরামর্শদান এলাকা
১৪৩ (১) নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, কোন আইন সংক্রান্তসমস্যায় সুপ্রীমকোর্টের
মতামত গ্রহণ অত্যন্তপ্রয়োজনীয়, তবে তিনি সুপ্রীমকোর্টের বিবেচনার জন্য বিষয়টি প্রেরণ করতে পারেন।
এছাড়া আরো যেসব ক্ষেত্রে সুপ্রীমকোর্ট ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা হলো ঃ
সুপ্রীমকোর্ট ১৪২ নং ধারানুযায়ী যে কোন বিষয়ের প্রতি ন্যায় বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ ও
ডিক্রী ঘোষণা করতে পারে।
সুপ্রীমকোর্ট অভিলেখ আদালত (ঈড়ঁৎঃ ড়ভ জবপড়ৎফ) রূপে কাজ করে।
সুপ্রীমকোর্ট তার পূর্ববর্তী কোন রায় বা ঘোষিত আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষণ সংক্রান্তক্ষমতা ভোগ করে।
সুপ্রীমকোর্ট
ভারতের সর্বেচ্চ
আপীল আদালত।
সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতির সাথে সুপ্রীমকোর্ট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নয়। কিন্তু এর বহু রায়
সরকারকে সংবিধান সংশোধনে উদ্যোগী হতে বাধ্য করেছে।
বিচার-বিভাগীয় পুনঃনিরীক্ষা (ঔঁফরপরধষ জবারব)ি সুপ্রীমকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা।
সুপ্রীমকোর্ট সংবিধানের চ‚ড়ান্তব্যাখ্যাকর্তা। সংবিধানের কোন অংশের ব্যাখ্যা সুপ্রীমকোর্ট যেভাবে
নির্ধারণ করে, সেভাবেই সেই অংশের অর্থ নির্ধারিত হয়।
সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সুপ্রীমকোর্ট রায় দিতে পারে।
রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্তসমস্যায় সুপ্রীমকোর্টের আদেশই চ‚ড়ান্ত।
সারকথা
ভারতের বিচার বিভাগ দেশের শাসন ব্যবস্থার এক স্বাধীন অঙ্গ। সুপ্রীমকোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত
এবং হাইকোর্ট রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের বিচার ব্যবস্থা অনেকটা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘসূত্রিতার
দোষে দুষ্ট। বিচার ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গণ আদালত। সুপ্রীমকোর্ট ব্যাপক বিচার
বিভাগীয় ক্ষমতার অধিকারী হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সুপ্রীমকোর্ট সাধারণত ৩টি এলাকায় কাজ
করে। যথাঃ (১) মূল এলাকা, (২) আপীল সংক্রান্তএলাকা এবং (৩) পরামর্শ দান এলাকা।
সুপ্রীমকোর্ট
সংবিধানের চ‚ড়ান্ত
ব্যাখ্যাকর্তা।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো -
ক. আইন বিভাগ;
খ. বিচার বিভাগ;
গ. শাসন বিভাগ;
ঘ. কোনটিই নয়।
২. ভারতে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত -
ক. হাইকোর্ট;
খ. সুপ্রীমকোর্ট;
গ. জজকোর্ট;
ঘ. স্থানীয় পঞ্চায়েত।
৩. ভারতের বিচার ব্যবস্থার অভিভাবক -
ক. রাষ্ট্রপতি;
খ. প্রধানমন্ত্রী;
গ. মন্ত্রিপরিষদ;
ঘ. সুপ্রীমকোর্ট।
৪. সংবিধানের চ‚ড়ান্তব্যাখ্যাকর্তা -
ক. আইনসভা;
খ. যে কোন আদালত;
গ. সুপ্রীমকোর্ট;
ঘ. শাসন বিভাগ।
উত্তরমালাঃ ১। খ ২। ক ৩। ঘ ৪। গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ভারতের সুপ্রীমকোর্ট কিভাবে গঠিত হয় ?
২. সুপ্রীমকোর্টের প্রধান এলাকা কয়টি ও কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
২. ভারতের সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্ণনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত