চীনের বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন হল বিশ্বের একটি শক্তিধর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশে সমাজতান্ত্রিক বিধি বিধান
অনুসরন করা হয়। বিচার ব্যবস্থায়ও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। চীনের বিচার ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করলে
নি¤েœাক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়ঃ
আদালত ঃ আদালত গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের বিচার ব্যবস্থার প্রথম বৈশিষ্ট্য। চীনের বিচার ব্যবস্থায়
আদালতের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এ ব্যবস্থায় চারটি আদালত বর্তমান। এগুলো হল-
ক. সর্বোচ্চ গণ-আদালত খ. আঞ্চলিক গণ-আদালত গ. সামরিক আদালত ও ঘ. বিশেষ গণ
আদালত। এ আদালতের ভিত্তিতে চীনের বিচার ব্যবস্থা পরিচালিত।
স্তর বিন্যাস ঃ স্তর বিন্যাস চীনের বিচার ব্যবস্থায়ীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। ‘‘সর্বোচ্চ
গণ-আদালত’’ ঐ ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থিত। সর্বনি¤েœহল সামরিক আদালত। উচ্চতর আদালত
অপেক্ষাকৃতভাবে নি¤েœর আদালতে কাজকর্ম তদারকী করে।
স্বাধীনতা ঃ চীনের বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা বিদ্যমান। এ ব্যবস্থায় সাংবিধানিক ভাবে বিচার বিভাগের
স্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয়েছে। সংবিধান প্রবক্তাগণ মনে করেন স্বাধীনতা ছাড়া বিচার বিভাগ
অস্তিত্বহীন। তাদের ধারণা গণ-আদালত সহ প্রতিটি আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করবে। অন্যথায়
বিচার বিভাগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।
নিয়োগ ও অপসারণ ঃ গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের বিচার-ব্যবস্থার অন্যতম দিক হল বিচারক নিয়োগ ও
অপসরণ। ঐ ব্যবস্থায় বিচারকগণ আইনসভার দ্বারা নিযুক্ত হন। তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য মোট দুই
বার দশ বছরের মেয়াদে নিযুক্ত হতে পারেন। কোন বিচারক দুই বারের বেশী নির্বাচিত হতে পারেন
না। তাদের কার্যকাল গণ-কংগ্রেসের আস্থার উপর নির্ভর শীল।
দায়িত্বশীলতা ঃ চীনের বিচার ব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতা লক্ষ্য করা যায়। এ ব্যবস্থায় বিচারকগণ
বিশেষভাবে দায়িত্বশীল। সর্বোচ্চ গণ-আদলত জাতীয় সংগ্রেস ও তার স্থায়ী কমিটির কাছে দায়ী।
আদালতগুলোর বিচারকগণ তাদের কাজ-কর্মের জন্য বিশেষ করে কংগ্রেসের কাছে দায়িত্বশীল।
দায়িত্বহীনতার কারণে তাদের পদচ্যুত করা যায়।
প্রকাশ্যতাঃ চীনের বিচার ব্যবস্থার অন্যতম দিক হল প্রকাশ্যতা। এ ব্যবস্থায় গোপনীয়তার পাশাপাশি
প্রকাশ্যতা লক্ষ্য করা যায়। চীনে সকল সাধারণ মামলার রায় সর্ব-সমক্ষে দেয়া হয়। তবে রাষ্ট্রীয়
গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। সাথে সাথে ব্যক্তি অবমাননা বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।
দপ্তর ঃ দাপ্তরিক ব্যবস্থা চীনের বিচার বিভাগের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। চীনের বিচার ব্যবস্থার
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল প্রকিউরেট-এর দপ্তর। বিভিন্ন আদালত সংবিধান মেনে চলে কিনা তা তদারকীর
দায়িত্ব এ দপ্তরের উপর ন্যাস্ত।
বিচার বিভাগীয় কমিটি ঃ বিচার বিভাগীয় কমিটি গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান।
এটি বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কমিটি বিশেষ জটিল মামলা বিচারের ক্ষেত্রে পরামর্শ
স্বাধীনতা ছাড়া
বিচার বিভাগ
অস্তিত্বহীন।
ও সহযোগিতা করে। চীনের বিচার বিভাগীয় কমিটি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসরণ করে
চলে। এ কমিটি বিভিন্ন মামলার আইনানুগ ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন সম্পাদন করে।
আত্মপক্ষ সমর্থন ঃ চীনের বিচার ব্যবস্থায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ বর্তমান। প্রতিটি গণতান্ত্রিক
বিচার ব্যবস্থায় এ বিধান রয়েছে। দোষী সাব্যস্তব্যক্তি নিজে, নিকট আত্মীয় ও আইনজীবীদের
মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভ‚মিকা অগ্রগণ্য।
ভাষার প্রাধান্য ঃ সমাজতান্ত্রিক চীনের বিচার ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভাষার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। মামলা-
মোকদ্দমা পরিচালনার সময় নাগরিকগণ নিজ নিজ ভাষা ব্যবহার করে থাকে। মামলা কারীর কোন
এক পক্ষ স্থানীয় ও লেখ্য ভাষায় অজ্ঞ হলে বিচার বিভাগ দো-ভাষীর ব্যবস্থা করে থাকে। বাস্তব
অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচারের অভিযোগ রায় বিজ্ঞপ্তি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রচলিত এক বা একাধিক ভাষায়
লেখা হয়।
চীনের বিচার বিভাগীয় সংগঠন
চীনের বিচার বিভাগের ভিত্তি হল সংগঠন। চীনের বিচার ব্যবস্থা সংগঠন ভিত্তিক। ঐ দেশের বিচার
বিভাগীয় কাঠামো বিভিন্ন স্তরের গণ-আদালত নিয়ে গঠিত। সর্বোচ্চ গণ-আদালত বিভিন্ন স্তরের স্থানীয়
গণ-আদলত ও সামরিক আদালত নিয়ে গঠিত। এ গণ-আদালত চারটি স্তরে বিন্যস্ত। চীনের বিচার
বিভাগের স্তর বিন্যাস হল নি¤œরূপ ঃ
সর্বোচ্চ গণ-আদালত;
পৌরসভার উচ্চতর গণ-আদালত;
মাধ্যমিক স্তরের গণ-আদালত;
পৌর জেলার মূল গণ-আদালত।
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর আদালত আঞ্চলিক গণ-আদালত নামে খ্যাত। সর্বোচ্চ গণ-আদালত এবং
স্থানীয় গণ-আদালত ছাড়া চীনের বিচার ব্যবস্থার আরেকটি শ্রেণীর আদালত রয়েছে। একে বিশেষ গণআদালত বলা চলে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল- রেল-পরিবহন গণ-আদালত, নৌ-পরিবহন গণ-আদালত,
সামরিক গণ-আদালত ও বনাঞ্চলের গণ-আদালত প্রভৃতি। গণ-প্রকিউরেট চীনের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ব্যবস্থার প্রধান কাজ হল আইনের ব্যাখ্যা ও বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা। ঐ দেশের
প্রতিষ্ঠিত বিচার বিভাগের সংগঠনের ক্ষেত্রে গণ-তান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসৃত।
আঞ্চলিক গণ-আদালত
আঞ্চলিকঃ গণ-আদালত চীনের বিচার বিভাগের একটি বিশেষ অঙ্গ। এ আদালত সর্বোচ্চ গণআদালতের নি¤œস্তরের আদালত। আঞ্চলিক গণ-আদালতের গঠন ও কার্যাবলীর ব্যাপারে স্বাাধীনতা ও
দায়িত্বশীলতার নীতি অনুসরণ করা হয়। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতিও অনুসরণ করা হয়। এ
ব্যাপারে সাংবিধানে কোন সুস্পষ্ট বিধান রাখা হয় নি। এ আদালত আঞ্চলিক পর্যায়ের বিচার পতিদের
নিয়ে গঠিত। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভ‚মিকাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়।
গণ-প্রকিউরেট
গণ-প্রকিউরেট চীনের বিচার ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এটি বিচার ব্যবস্থার অভিনব প্রতিষ্ঠান।
বিচার কার্যে তত্ত¡াবধায়নের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম।
গণ-প্রকিউরেট-এর গঠনঃ
গণ-প্রকিউরেট-এর গঠন সম্পর্কে সংবিধানে বিধান রাখা আছে। সংবিধানের ১৩০নং ধারা অনুসারে গণপ্রকিউরেট সংগঠন আইনের দ্বারা গঠিত। এ প্রতিষ্ঠানের কাঠামো স্তরবিন্যস্ত।
সারকথাঃ
বিচার ব্যবস্থা প্রতিটি দেশের জন্য অপরিহার্য। গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের বিচার ব্যবস্থা সংগঠন স্তরভিত্তিক।
শীর্ষে রয়েছে সর্বোচ্চ গণ-আদালত। এ গণ-আদালতের ভ‚মিকা ও কার্যাবলী গুরুত্বপূর্ণ। এর গঠন ও
কার্যাবলী রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। কিন্তুসংবিধান দ্বারা নয়। এ আদালত নি¤œস্তরের আদালতগুলোর
অবিভাবক। নি¤œস্তরের আদালতের কাজকর্ম তাদরকীর দায়িত্ব এ আদালতের উপর ন্যস্ত। গণ-প্রজাতন্ত্রী
চীনের বিচার ব্যবস্থার উপর গণ-কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা যায়।
সঠিক উত্তরে () দিন।
১। গণ-চীনে সর্বপ্রথম আইন ব্যবস্থাকে পূর্ণ গঠন করা হয়ঃক. ১৯৭৮ সনে; খ. ১৯৭৫ সনে;
গ. ১৯৫৪ সনে; ঘ. ১৯৭৭ সনে।
২। চীনের বিচার বিভাগকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে
ক. সংবিধানের মাধ্যমে; খ. প্রথার মাধ্যমে;
গ. গণকংগ্রেসের মাধ্যম; ঘ. কোনটি নয়।
৩। চীনের বিচার ব্যবস্থার সবার শীর্ষে অবস্থিতক. আঞ্চলিক সর্বোচ্চ গণ-আদালত; খ. বিশেষ আদালত;
গ. গণ-প্রকিউরেটরেট; ঘ. সর্বোচ্চ গণ-আদালত;
৪। গণ-প্রকিউরেটরেট-এর সর্বপ্রথম জন্ম হয়
ক. সোভিয়েত ইউনিয়নে; খ; জার্মানীতে;
গ. গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনে; ঘ. আমেরিকায়
উত্তর মালাঃ ১। ক, ২। গ, ৩। ঘ, ৪। ক।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-মূলক প্রশ্ন
১। চীনের বিচার বিভাগীয় সংগঠন বাখ্যা করুন।
রচামূলক উত্তর প্রশ্ন
১। চীনের বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত