জাপানের সম্রাট খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ সাল থেকেই সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করে আসছেন। বলা হয়, জাপানী
সম্রাট হচ্ছেন সূর্য দেবীর বংশদ্ভ‚ত। আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্তধারণা করা হতো সম্রাট পদটি ‘ঐশ্বরিক’।
স্বয়ং ঈশ্বরই তা নির্ধারণ করেন। এ সময় সম্রাট এবং তার পরিবারকে জনগণ অত্যন্তশ্রদ্ধা করত এবং
একই সাথে সম্রাট সব ধরনের কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রক ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সম্রাটের ক্ষমতা খুবই সীমিত।
এখন আমরা এ প্রসংগে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নতুন সংবিধানে রাজতন্ত্রটিকিয়ে রাখার কারণ
সম্রাটের ক্ষমতা কমতে শুরু করে মেইজি রাজবংশের শুরুতেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘সম্রাট‘ পদটির
অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রশক্তি ব্যাপক আলোচনা করে। একটি
অভিমত ছিল যে, রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা হোক এবং সম্রাটের মর্যাদা ক্ষুণœ না করে তাকে ক্ষমতাহীন
করে রাখা হোক। এ অভিমতের সপক্ষে অগ্ ও জিন্ক এভাবে উল্লেখ করেছেন ঃ
জাপানীদের অভ্যাস ও বিশ্বাস যেভাবে অস্তিমান তাতে সম্রাটের নামে ছাড়া কোন নতুন রাজনৈতিক
শাসন ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর হতে পারবে না;
কোন অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও বিশৃংখলার বিরুদ্ধে সিংহাসনে আসীন সম্রাটই হবেন রক্ষাকবচ;
ব্রিটেনের মত জাপানেও এক নিয়মতান্ত্রিক, উদারপন্থী শাসন ব্যবস্থার মূল অংশ হিসাবে রাজতন্ত্রকে
গড়ে তোলা হবে;
কমিউনিস্টদের মত জনসমাজের কিছু ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া আর সবাই যদি রাজতন্ত্রচায় তাহলে
আটলান্টিক সনদের ও পট্স্ডাম ঘোষণার প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী জাপানে রাজতন্ত্রবজায় রাখা উচিত;
সম্রাট হিরোহিতো জাপানী জংগীবাদীদের সাথে হাত মেলালেও সে সময় তার পক্ষে এছাড়া কোন
পথ ছিল না।
রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করার জন্য বিরোধীদের মত ছিল
গত তিন চার দশক ধরে রাজতন্ত্রজাপানের সামরিক-সাম্রাজ্যবাদী শাসন ব্যবস্থায় এক অখন্ড অবিচ্ছদ্য
অংশ ছিল এবং এ কারণে একে স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া হলে রাজতন্ত্রআগামী দিনেও অনুরূপ ভ‚মিকা
পালন করতে পারে।
জংগীবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ উৎসারিত করার এক মূল শক্তি হিসাবে কাজ করছে রাষ্ট্র শিন্টোবাদ যা
সম্রাটকে ঈশ্বর হিসাবে আরাধনা করার কথা প্রচার করত এবং যতদিন সম্রাট এ শিন্টোবাদের
কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে থাকবেন ততদিন একে উচ্ছেদ করা যাবে না;
জাপানের আধিপত্যের নীতি রচনার পিছনে সম্রাট হিরোহিতোর বিশেষ ভ‚মিকা না থাকলেও তার
মর্যাদা ও গুরুত্বের খাতিরে তিনি এতে বাধা প্রদান করতে পারতেন বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের
অংশগ্রহণ রহিত করতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেন নি।
অনেক আলোচনা সমালোচনার পর প্রথম বক্তব্য মেনে নিয়ে, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুযায়ী
নিয়মতান্ত্রিক সম্রাটের পক্ষে সিদ্ধান্তনেয়া হয়। এক্ষেত্রে আরো একটি মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা’ হলো
শাসকবৃন্দ মনে করেছিল, সম্রাটের ঐতিহ্যপূর্ণ পদটি জাপানে সম্ভাব্য সমাজতন্ত্রবাদের প্রসারের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধকারী শক্তি হিসাবে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে।
সম্রাটের ক্ষমতা ও মর্যাদা
১৯৪৭ সালের সংবিধান অনুযায়ী জাপানী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সম্রাট হলেন শুধুই এক নিয়মতান্ত্রিক প্রধান।
তার যেটুকু রাজনৈতিক ও শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা আছে তা হলো শুধু আনুষ্ঠানিক গুরুত্বের। জাপানী
শাসন ব্যবস্থায় তার ভ‚মিকা প্রতীকী । সংবিধানের ১নং ধারায় বলা হয়েছে, সম্রাট হলেন রাষ্ট্র ও জনগণের
ঐক্যের প্রতীক। আরো বলা হয়েছে, তাঁর মর্যাদার উৎস হলো জনগণের ই্চছা এবং জনগণই হলো
সার্বভৌমত্বের অধিকারী। সংবিধানের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র সম্পর্কিত সমস্তকার্যকলাপের ক্ষেত্রে
সম্রাটের পরিবর্তে ক্যাবিনেটই দায়ী থাকবে, এবং ৪নং ধারায় বলা হয়েছে যে, সংবিধানে নির্দিষ্ট কার্যাবলী
শুধু সম্রাটই সম্পাদন করবেন এবং প্রশাসন সম্পর্কে তাঁর কোন ক্ষমতা থাকবে না। যে কাজই তিনি
সম্পাদন করুন না কেন, সবক্ষেত্রেই তার পক্ষে ক্যাবিনেটের পরামর্শ ও অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
সম্রাটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী নি¤œরূপঃ
শাসন বিভাগীয় কাজকর্ম
তিনি ডায়েট মনোনীত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োজিত করেন (এক্ষেত্রে অবশ্য ক্যাবিনেটের পরামর্শ ও
অনুমোদন নেয়ার কোন সুযোগ নেই )।
তিনি রাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের নিয়োগ ও অপসারণ প্রত্যায়িত করেন।
সম্রাট হলেন সম্মান ও খেতাবের উৎস এবং এ কারণে তিনিই এগুলো অর্পণ করেন।
তিনি আইনানুযায়ী বিভিন্ন চুক্তির অনুমোদন পত্র ও অন্যান্য কূটনৈতিক দলিল প্রত্যায়িত করেন।
সম্রাট জাপানে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূত এবং মন্ত্রীদের স্বীকৃতি দেন।
আইন সম্পর্কিত ক্ষমতা
সম্রাট ডায়েটের অধিবেশন আহবান করেন।
মেয়াদ শেষ হলে বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রতিনিধি সভা ভেঙ্গে দিতে পারেন।
সমস্তজাতীয় আইন, সংবিধানের সংশোধন, ক্যাবিনেটের নির্দেশ এবং সন্ধি চুক্তিতে সম্রাটই স্বাক্ষর
করেন।
তিনি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেন।
বিচার সম্পর্কিত ক্ষমতা
ক্যাবিনেট মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সম্রাটই নিয়োগ করেন।
তিনি সাধারণ ও বিশেষ বন্দীমুক্তির আদেশ প্রত্যায়িত করেন এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা বা শাস্তিমওকুফ
বা অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার আদেশ প্রত্যায়িত করেন।
সুতরাং দেখা যায়, জাপানী সম্রাট পশ্চিমা নিয়মতান্ত্রিক রাজাদের মত বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করেন
না। কিন্তু তা হলেও তিনি জনগণের ঐক্য ও সংস্কৃতির দুই হাজার বছরের ‘জাপানী ঐতিহ্যের’ প্রতীক।
জাপান সম্রাট ও ব্রিটিশ রাজা (বা রানী)
জাপান এবং ব্রিটেন উভয় দেশেই নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রবিদ্যমান। জাপান সম্রাট ব্রিটেনের রাজার মত
“রাজত্ব করেন কিন্তু শাসন করেন না।” তাদের কেউই কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন
না। মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং তাদের নামে ক্যাবিনেটই শাসন
পরিচালনা করে। এরা দুইজনেই হলেন তাদের জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি, উত্তরাধিকার, সাফল্য, অতীত
ও বর্তমানের গৌরব, ঐক্য, স্থায়িত্ব ও চলমানতার জীবন্তপ্রতীক। এ প্রতীক হিসাবেই জাপান ও ব্রিটেনের
জনগণ তাদের রাজা/রানীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন এবং ভালবাসেন। দুই দেশের জনগণের কাছেই
রাজতন্ত্রহলো এক আবেগের বিষয়।
সম্রাট হলেন রাষ্ট্র ও
জনগণের ঐক্যের
প্রতীক।
তবে সংবিধান ও আইনের দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জাপান সম্রাটের তুলনায় ব্রিটিশ
রাজা/রানীর ক্ষমতা ও মর্যাদা বেশী। ব্রিটিশ রাজা হলেন সাংবিধানিক প্রধান, সব কর্তৃত্বের উৎস এবং
আইনের ভাষায় সব শাসন সম্পর্কিত ক্ষমতার অধিকারী। বাস্তবে অবশ্য তার ক্ষমতা ক্যাবিনেটই তার
নামে প্রয়োগ করে। পক্ষান্তরে জাপান সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান নয়, তিনি হলেন শুধুই রাষ্ট্র ও জাতির ঐক্যের
প্রতীক। তাঁর কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই এবং তিনি কর্তৃত্বের উৎসও নন। ক্যাবিনেটের পরামর্শ ও
অনুমোদন ছাড়া তার আনুষ্ঠানিক ক্ষমতাও তিনি প্রয়োগ করতে পারেন না।
ব্রিটিশ রাজা (বা রানী) শাসন প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট ভ‚মিকা পালন করেন এবং অন্তত তিনটি অধিকার
ভোগ করেন। এগুলো হলো-আলোচনা করার অধিকার, উৎসাহ দেয়ার অধিকার এবং সতর্ক করার
অধিকার। এছাড়াও রানী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও মাঝে মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভ‚মিকা গ্রহণ
করে থাকেন। কিন্তু জাপানী সম্রাট উপরোক্ত ক্ষমতাগুলো ভোগ করেন না। কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
প্রভাবিত করার ভ‚মিকাতে তাকে দেখা যায় না এবং তার পক্ষে কোন রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করা সংবিধান
বিরুদ্ধ। তবে সি. ইয়ানাগার মতে, জাপান সম্রাট কোন রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মধ্যস্থ হিসাবে ভ‚মিকা
পালন করতে না পারলেও, পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি শাসন পরিচালককে তিরস্কার, উৎসাহিত বা সতর্ক
করতে পারেন। জাপান সম্রাট ব্রিটিশ রানীর মত স্ববিবেচনাধীন কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না।
ব্রিটিশ রানী দুইটি ক্ষেত্রে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। যথাঃ (১) প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি
পছন্দমত নিয়োগ করতে পারেন, এবং (২) রানীকে কমন্স সভা ভেঙ্গে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তা অযৌক্তিক মনে করলে বা কমন্স সভাকে চালু রেখেই তার
পক্ষে এক স্থায়ী সরকার গঠন করা সম্ভব মনে করলে তিনি তা স্থায়ী রাখতে পারেন।
সারকথা
জাপানী শাসন ব্যবস্থায় ‘সম্রাট’ পদটি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদার প্রতীক। পূর্বে পুরো জাপানের একচ্ছত্র
ক্ষমতার অধিকারী হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নতুন সংবিধান প্রস্তুতের প্রাক্কালে ‘সম্রাট’ পদের
অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে উঠে। সে সময় এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আসলেও শেষ পর্যন্তসম্রাটকে
নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভ‚মিকা দেয়া হয়। বর্তমানে সম্রাট সংবিধান নির্দেশিত কিছু শাসন, আইন ও বিচার
বিভাগীয় কার্যাবলী সম্পাদন করেন। তবে ব্রিটিশ রাজা (বা রানী)-র থেকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম
ক্ষমতা ভোগ করেন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দিন।
১. জাপানে সম্রাটের ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করেক. মেইজি সম্রাটের সময় থেকে;
খ. হিরোহিতোর সময় থেকে;
গ. আকিহিতোর সময় থেকে;
ঘ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে।
২. জাপানী সম্রাটের কার্যাবলী হচ্ছেক. প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ;
খ. ডায়েটের অধিবেশন আহবান;
গ. মন্ত্রীদের স্বীকৃতি দান;
ঘ. সবগুলো।
৩. জাপানী সম্রাটের বিচার সংক্রান্তকাজ হচ্ছে -
ক. বিচারপতি নিয়োগ;
খ. প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ;
গ. সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা;
ঘ. কূটনৈতিক দলিল প্রত্যায়ন।
৪. জাপানী সম্রাট ও বৃটিশ রাজা (বা রানী)-র মধ্যে পার্থক্য নেই যেক্ষেত্রে, তা হলো -
ক. কর্তৃত্ব;
খ. প্রশাসনিক ক্ষমতা;
গ. নিয়মতান্ত্রিক প্রধান;
ঘ. স্ববিবেচনাধীন ক্ষমতা।
উত্তরমালাঃ ১। ক ২। ঘ ৩। ক ৪। গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. জাপানের নতুন সংবিধানে সম্রাটের পদটি টিকিয়ে রাখার পক্ষে কি কি কারণ ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জাপানের শান্তিসংবিধানে রাজতন্ত্রটিকিয়ে রাখার পক্ষে ও বিপক্ষে কি কি বক্তব্য এসেছিল তা বর্ণনা
করুন।
২. জাপানী সম্রাট কি কি ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করেন ? লিখুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত