জাপানের বিচার ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো সুপ্রীমকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী

মেইজি সংবিধানের আগে জাপানের কোন সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা ছিল না। মেইজি সংবিধানের সময় জাপানের
বিচার বিভাগ শাসন বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা হিসাবেই কাজ করত এবং এ বিভাগের প্রশাসনের দায়িত্ব
ছিল বিচারমন্ত্রকের হাতে। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বা সরকার ও নাগরিকের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার
কোন ক্ষমতা আদালতগুলোর ছিল না। ১৯৪৭ সালের সংবিধানে জাপানের বিচার কাঠামো ও পদ্ধতিতে
সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সাধন করা হয়। এখন এ বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
জাপানের বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
জাপানের বিচার ব্যবস্থার বিশ্লেষণে নি¤œরূপ বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায় ঃ
 নতুন সংবিধানে জাপানী বিচার ব্যবস্থার পূর্বেকার মহাদেশীয় ধারণা ও রীতির বদলে এ্যাংলোস্যানে
ধারণা ও রীতির প্রবর্তন করা হয়েছে।
 জাপানে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে জাপানের সমগ্র বিচার ব্যবস্থা
সর্বোচ্চ আদালত-সুপ্রীমকোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সম্পূর্ণভাবে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের
নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অসমর্থ ঘোষিত হলেই বিচারকদের
ইমপিচ্মেন্টের মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। এছাড়া বিচারকদের নিয়োগ, তাঁদের কাজের তত্ত¡াবধান,
প্রশিক্ষণ, বিচার দপ্তরের বাজেট তৈরী করা-এসব কিছুরই দায়িত্ব এখন সুপ্রীমকোর্টের।
 মেইজি সংবিধানে প্রশাসনিক আদালতের অস্তিত্ব ছিল। নতুন সংবিধানে সমগ্র বিচার সংক্রান্তক্ষমতা
আইন দ্বারা গঠিত আদালতের হাতে ন্যস্তকরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে কোন বিশেষ আদালত
গঠন করা হবে না।
 জাপানের শান্তিসংবিধানে ফৌজদারী তদন্তের ক্ষেত্রে থেকে বিচার বিভাগীয় প্রশাসনের ক্ষেত্রটির
স্বতন্ত্রীকরণ করা হয়েছে। এ তদন্তের দায়িত্বটি এখন আইন মন্ত্রকের হাতে।
 নতুন সংবিধানে জাপানে ইঙ্গ-মার্কিন রীতি অনুসরণ করে আইনের অনুশাসনের নীতি (জঁষব ড়ভ
খধ)ি প্রবর্তন করা হয়েছে। বিচারকরা বর্তমান সংবিধান এবং দেশের বিভিন্ন আইন মেনে চলতে
বাধ্য। বিচারক কর্তৃক জারি করা পরোয়ানা ছাড়া কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায় না,
কোন ব্যক্তিকে তার নিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাখিল করতে বাধ্য করা যায় না এবং কেউ তার নিজের
অপরাধ স্বীকার করেছে - শুধু এ ভিত্তিতেই কাউকে অপরাধী সাব্যস্তকরা যায় না।
 সংবিধানের ৮২ নং ধারা অনুযায়ী বিচার এবং আদালত কর্তৃক রায় প্রদান প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
তবে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। যেখানে আদালত সর্বসম্মতভাবে স্থির করবে যে প্রকাশ্যে বিচার
করা বা রায় প্রদান জন শৃংখলা এবং নৈতিকতার পক্ষে বিপদজনক হতে পারে, সেক্ষেত্রে গোপনে
বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক অপরাধ বা সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত কোন
অপরাধ কিংবা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্তমামলা প্রভৃতির বিচার সর্বদাই প্রকাশ্যে
অনুষ্ঠিত হবে।
 সংবিাধানের ৭৯নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ জনগণের পর্যালোচনার অধীন
করা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, বিচারকদের নিয়োগের পর অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভার প্রথম
সাধারণ নির্বাচনের ফলে বিচারকদের নিয়োগ জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হবে এবং ১০ বছর পর
আবার প্রতিনিধি সভার প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে সময়ে নির্বাচকরা এ সমস্তনিয়োগের
পর্যালোচনা করবে। সে সময় যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচক কোন বিচারকের পদচ্যুতি চান; তবে তাঁকে
বরখাস্তকরা হবে। এভাবে নির্বাচকমন্ডলী যদি কোন বিচারের কাজে সন্তুষ্ট না হন তবে তারা তাকে
প্রত্যাবর্তনের আদেশ দিতে পারেন।
 জাপানী বিচার ব্যবস্থায় পারিবারিক আদালতের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এ আদালত হলো গার্হস্থ্য
সম্পর্কের ও কিশোর অপরাধীদের বিচারের আদালত। এ আদালত গঠিত হয় বিচারক ও অপেশাদার
ব্যক্তিদের দ্বারা।
 নতুন সংবিধানে সুপ্রীম কোর্টকে আইন, আদেশ, বিধি নিয়ন্ত্রণ বা প্রশাসনিক কার্যকলাপের
সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হয়েছে।
সুপ্রীমকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী
জাপানের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থিত সুপ্রীমকোর্ট। প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য ১৪ জন বিচারপতি
নিয়ে এ আদালত গঠিত। ৪০ বছরের কম বয়স্ক কোন ব্যক্তি বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হতে পারেন না।
এদের মধ্যে ১০ জন হবেন ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী। বাকী ৫ জনকে হতে হবে অভিজ্ঞ
পন্ডিত ব্যক্তি, তবে তাঁদেরকে শুধু আইন শাস্ত্রেই পন্ডিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সম্রাট বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করে
ক্যাবিনেট। তবে এক্ষেত্রে সম্রাটের প্রত্যায়ন প্রয়োজন হয়। সংবিধান অনুযায়ী
সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করতে হয়। তবে কোন বিচারপতি তার কর্তব্য
সম্পাদনে শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হলে তাকে ইমপিচ্মেন্টের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
বিচারকদের কর্তব্যকালীন সময়ে তাঁদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করা যায় না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোন
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শাসন বিভাগীয় কোন সংস্থা বা অন্য কোন সংস্থা গ্রহণ করতে পারে না।
জাপানী বিচার ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সুপ্রীমকোর্ট। সংবিধানের ৭৬নং ধারায় দেশের সমগ্র
বিচার ক্ষমতা সুপ্রীমকোর্ট এবং আইন দ্বারা গঠিত বিভিন্ন অধস্তন আদালতের হাতে অর্পণ করা হয়েছে।
সংবিধান সুপ্রীম কোর্টকে কোন মূল এলাকা দেয় নি। দেয়া হয়েছে শুধু আপিল (ধঢ়ঢ়বষষধঃব) এলাকা। ৮১
নং ধারা অনুসারে, সুপ্রীম কোর্ট চ‚ড়ান্তআপিল বিভাগের আদালত এবং যে কোন আইন, আদেশ বা
সরকারী, কার্যকলাপের সাংবিধানিক বৈধতা বিচারকারী, এভাবে সুপ্রীমকোর্টকে বিচার বিভাগীয়
পর্যালোচনার (ঔঁফরপধষ জবারব)ি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
সুপ্রীমকোর্টকে সব অধস্তন আদালতের ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট শীর্ষ
আদালতকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা এবং এ ক্ষমতার মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্ট কার্যপদ্ধতি ও রীতি এবং এটর্নী সংক্রান্তবিষয়, আদালতগুলোর অভ্যন্তরীণ শৃংখলা এবং বিচার সংক্রান্তবিষয়গুলোর প্রশাসন সংক্রান্তবিষয়
সম্পর্কে বিধি নিয়ম রচনা করে। এছাড়া ধারা ৭৭ অনুসারে, সুপ্রীমকোর্ট অধস্তন আদালতগুলোকে তাদের
নিজেদের বিধি নিয়ম রচনা করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে এবং সরকারী প্রকিউটেররাও সুপ্রীমকোর্টের
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতার অধীন।
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার অধিকারী হয়ে মূলত সুপ্রীমকোর্ট দেশের সংবিধানের অভিভাবক হয়ে
পড়েছে। তবে সুপ্রীমকোর্ট তার এ ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ রেখেছে আইন, বিধি বা সরকারী কার্যকলাপের
সাংবিধানিক সমস্যার ক্ষেত্রে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার ক্ষেত্রে (যেমন, নাগরিকদের মতামত
প্রকাশের বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার জনস্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা) সুপ্রীমকোর্ট রক্ষণশীল মনোভাবের পরিচয়
দিয়ে ব্যক্তিগত অধিকারের পরিবর্তে জনস্বার্থকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত রিজার্ভ
পুলিশ বাহিনীর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ১৯৫২ সালে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল সুপ্রীমকোর্ট তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
তবে সুপ্রীমকোর্ট কোন সময়েই আইন বিভাগীয় ও শাসন বিভাগীয় কার্যকলাপকে সংবিধান বিরোধী বলতে
চায় নি। এ প্রসংগে জে. এস. মাকি মন্তব্য করেছেন - আদালত সাংবিধানিক বৈধতা সংক্রান্তবিভিন্ন
বিষয়েই বহু সিদ্ধান্তদিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আদেশ কার্যকর করার জন্য প্রণীত আইন ছাড়া আর কোন
ক্ষেত্রেই সুপ্রীমকোর্ট কোন আইন, বিধি বা সরকারী কার্যকলাপকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করেনি।
সুপ্রীমকোর্টের বক্তব্য ছিল এই যে, আইনসভার কার্যকলাপকে অসাংবিধানিক বলার অর্থ হবে ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে এবং একই সংগে আইনসভার প্রাধান্যের তত্ত¡কে লংঘন করা।
সারকথা
মেইজি সংবিধানে বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেলেও মূলত ১৯৪৭ -এর সংবিধানে জাপানী বিচার
ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একে আইন ও শাসন
বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার
ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সংবিধানের অভিভাবকে রূপান্তিত করা হয়েছে। তবে সুপ্রীমকোর্ট তার এই ক্ষমতাকে কিছুটা সীমাবদ্ধ রেখেছে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( ) চিহ্ন দিন।
১. জাপানের বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন করা হয় -
ক. মেইজি সংবিধানে; খ. ১৯৪৭ সালের সংবিধানে;
গ. হেইসেই সংবিধানে; ঘ. কোনটাই না।
২. জাপানের নতুন সংবিধানে অস্তিত্ব নেই -
ক. সর্বোচ্চ আদালতের; খ. পারিবারিক আদালতের;
গ. বিশেষ আদালতের; ঘ. সবগুলোর।
৩. জাপানে সুপ্রীমকোর্ট গঠিত হয় কয়জন বিচারপতি দ্বারা ?
ক. ১০ জন; খ. ১৪ জন;
গ. ১৫ জন; ঘ. ২০ জন।
৪. জাপানে প্রধান বিচরাপতিকে নিয়োগ করেন -
ক. সম্রাট; খ. প্রধানমন্ত্রী;
গ. মন্ত্রীসভা; ঘ. বিচারকরা মিলে।
উত্তরমালাঃ ১। খ ২। গ ৩। গ ৪। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. জাপানের বর্তমান সংবিধানে বিচারকদের নির্বাচন পদ্ধতি কিরূপ?
২. জাপানে সুপ্রীমকোর্ট কোন্ কোন্ ক্ষমতা ভোগ করে ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জাপানের বিচার ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।
২. সুপ্রীমকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আপনি যা জানেন লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]