ফ্রান্সের পার্লামেন্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্ণনা করুন।

পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান অনুসারে ফরাসী আইনসভাকে ‘পার্লামেন্ট’ বলা হয়। ফ্রান্সের পার্লামেন্ট
ব্যবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠে নি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ঐতিহাসিক ফরাসী বিপ্লবের
পর আজ অবধি ফ্রান্সে বহু সরকার গঠিত হলেও সব সময় একই রীতিতে আইনসভা গড়ে ওঠে নি।
তবে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান অনুসারে পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। এখন
আমরা ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করব।
পার্লামেন্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং নি¤œকক্ষের নাম জাতীয়
সভা । পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধানে পার্লামেন্টের কক্ষ দু’টির মেয়াদ, সদস্য
সংখ্যা, সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, তাদের বেতন প্রভৃতি বিষয়ে কিছু বলা হয় নি। সাংগঠনিক
আইন (ঙৎমধহরপ খধ)ি -এর মাধ্যমে এ সমস্তবিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
সিনেটের সদস্যরা জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে। একটি নির্বাচিত সংস্থা (ঊষবপঃড়ৎধষ ঈড়ষষবমব) দ্বারা।
বর্তমানে সিনেটের সদস্য সংখ্যা ৩২১ জন। প্রত্যেক সদস্যের কার্যকাল ৯ (নয়) বছর। প্রতি তিন বছর
অন্তর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। সিনেটের একটি ব্যুরো আছে।
বর্তমানে জাতীয় সভার সদস্যসংখ্যা ৫৭৭ জন। এরা সরাসরি নির্বাচিত হন। ফরাসী জাতীয় সভার
কার্যকাল হল ৫ (পাঁচ) বছর। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি জাতীয়সভাকে ভেঙ্গে দিতে
পারেন। জাতীয় সভারও একটি ব্যুরো আছে।
পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বহুলাংশে সীমিত। সংবিধানের ৩ ধারায় জনগণের
সার্বভৌমত্ব তথা পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ নীতিকে কার্যকর করা হয় নি।
বরং সংবিধানকে পার্লামেন্টের কাজকর্মের পরিধি এবং পরিমাণকে হ্রাস করা হয়েছে। পূর্ববর্তী ফরাসী
সরকারগুলোর পতনের পিছনে শক্তিশালী পার্লামেন্টকেই দায়ী করা হয় এবং তার প্রতিকার হিসাবে
পার্লামেন্টের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়। সীমিত ক্ষমতার অধিকারী বলে এ পার্লামেন্টকে 'জধঃরড়হধষরংবফ'
পার্লামেন্ট বলা হয়ে থাকে। পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী নি¤œরূপ ঃ
আইনসংক্রান্তক্ষমতা ঃ সংবিধানের ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট সকল আইন প্রণয়ন করবে। এ
ধারার শেষে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত ক্ষমতার পরিধিকে সাংগঠনিক আইনের
মাধ্যমে প্রসারিত করা যাবে।
অর্থ সংক্রান্তক্ষমতা ঃ সরকারী আয়-ব্যয় বা অর্থ সংক্রান্তবিষয়ে পার্লামেন্টের ক্ষমতা আছে। তবে তা
সীমিত পরিমাণে।
সরকারকে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্তক্ষমতা ঃ সংবিধানে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ জাতীয় সভার কাছে সরকারের
দায়িত্বশীলতার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ন্ত্রণ ৩ (তিন) উপায়ে হয় ঃ (১) প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ,
(২) স্থায়ী কমিটি ও বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও (৩) নিন্দা প্রস্তাবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ।
রাষ্ট্রপতির উপর তদারকি সংক্রান্তক্ষমতা ঃ জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং জাতীয় সভাকে বাতিল করা
ইত্যাদি কাজে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সাথে পরামর্শ করতে বাধ্য।
জাতীয় সভা ও সিনেটের মধ্যে সম্পর্ক
পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধানে জাতীয় সভার ক্ষমতাকে কতকাংশে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং
সিনেটকে ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। পূর্ববর্তী ফরাসী শাসনব্যবস্থায়
অতীত দিনের উচ্চ কক্ষ যে ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করত, তার তুলনায় সিনেটের ক্ষমতা ও মর্যাদা
অধিক। প্রকৃত প্রস্তাবে অর্থ বিল এবং সরকারের দায়িত্বশীলতা বা নিন্দা-প্রস্তাবের বিষয় ছাড়া সিনেট
এবং জাতীয় সভার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আকারে প্রকারে মোটামুটি সমান। রাজস্ব বা অর্থবিল জাতীয় সভার
উত্থাপিত হয়। তবে উত্থাপিত হলেও সিনেটের অনুমোদন লাগে। এ সংবিধানে কয়েকটি ক্ষেত্রে
সিনেটকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতির পদ কোন কারণে শূন্য হলে বা দায়িত্ব পালনের
ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অক্ষম হলে সিনেটের সভাপতি এ দায়িত্ব পালনের অধিকার পান।
আইন প্রণয়ন পদ্ধতি
আইনের খসড়া প্রস্তাবকে ’বিল’ (ইরষষ) বলা হয়। বিল দু’ধরনের হয়। যথা ঃ সরকারী বিল এবং
বেসরকারী বিল। সরকারী বিলের মধ্যে এক ধরনের বিল রয়েছে তাকে ‘রাজস্ব বিল’ বলে। সাধারণ
বিলের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের যেকোন কক্ষে বিল উত্থাপিত হতে পারে। যে কক্ষে বিল উত্থাপিত হয়,
প্রথমে সংশ্লিষ্ট কক্ষের ব্যুরোর কাছে বিলটিকে পাঠানো হয়। তারপর ছাপার আকারে উপযুক্ত কমিটির
কাছে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, পার্লামেন্টের প্রতিটি কক্ষের ৬টি স্থায়ী কমিটি আছে। পাঠানোর সময়
বিলটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা থাকে। আবার সরকারের দাবী বা সংশ্লিষ্ট কক্ষের অনুরোধক্রমে
বিলটিকে কোন বিশেষ কমিটির কাছেও পাঠানো যায়। কমিটি বিলটি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কক্ষে
প্রতিবেদন পেশ করে। সাধারণত তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করতে হয়। প্রতিবেদন পাওয়ার
পর সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি সম্পর্কে প্রথমে সাধারণ আলোচনা হয়। এরপর বিলটির প্রতিটি ধারার উপর
বিতর্ক হয় এবং ভোট গ্রহণ করা হয়। তারপর সংশোধনসহ সমগ্র বিলটির উপর ভোট গ্রহণ করা হয়
এবং ভোটের ফলাফলের উপর বিলটির চ‚ড়ান্তসিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয়। আইন প্রণয়নের এ স্তরটিকে
বিলের প্রথম পাঠ বলা হয়ে থাকে। তারপর বিলটিকে পার্লামেন্টের অপর কক্ষে
পাঠানো হয়। অপর কক্ষেও একইভাবে বিলটি আলোচিত হয়। এখানেও ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা হয়। উভয় কক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিলটি গৃহীত হলে, বিলটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে
পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিলে ‘ভেটো’ দিতে পারেন না। তবে তিনি বিলটি
পাওয়ার ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে বিলটি বা বিলটির কোন ধারা সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা করার জন্য
পার্লামেন্টকে বলতে পারেন। রাষ্ট্রপতির এ অনুরোধ সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয় না। বিল পাসের
ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের দু’টি কক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হলে বিলটি প্রত্যেক কক্ষে দ্বিতীয় বার পাঠ করা
হয়। দ্বিতীয় পাঠের পরও উভয় কক্ষের মধ্যে যদি মতপার্থক্য থেকে যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী উভয়
কক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে একটি যুক্ত কমিটি (ঔড়রহঃ ঈড়সসরঃঃবব) গঠনের ব্যবস্থা করেন।
বিতর্কিত বিলের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো দূর করে যুক্ত কমিটি একটি সাধারণ খসড়া বিল হিসাবে
বিষয়টিকে উত্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। এ খসড়াটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদনের জন্য
পেশ করে। এ পর্যায়ে সরকারের সম্মতি ব্যতিরেকে কোন সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করা যায় না। যুক্ত
কমিটি ব্যর্থ হলে বিলটি পুনরায় সিনেট ও জাতীয় সভায় পাঠ হয়। এরপর সরকারের অনুমতিক্রমে
জাতীয় সভা খসড়াটি গ্রহণ করতে পারে অথবা শেষ পাঠে বিলটি সম্পর্কে সিনেটের কিছু সংশোধনসহ
নিজে আগে যে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছে তা’ গ্রহণ করতে পারে।
পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধানে রাজস্ব সংক্রান্তবিষয়ে পার্লামেন্টের ক্ষমতাকে হ্রাস করে শাসন বিভাগের
ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পূর্বে পার্লামেন্টের অনুমোদন ব্যতীত সরকার কোনভাবেই কর ধার্য করতে
বা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারত না। সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা এবং বিব্রত করার জন্য পার্লামেন্ট
নানা রকম ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিত এবং বাজেট পাসের বিষয়টিকে বিলম্বিত করত। অতীতের খুব কম
সরকারই সাফল্যের সাথে এ বাধা অতিক্রম করতে সফল হয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব
বিলের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট সীমিত ক্ষমতা ভোগ করে।
সারকথা আইনের খসড়া প্রস্তাবকে ’বিল বলা হয়।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট ফরাসী পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নাম সিনেট (ঝবহধঃব) এবং নি¤œকক্ষের নাম জাতীয়
সভা পূর্ববর্তী সংবিধানের তুলনায় পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধানে জাতীয়
সভার ক্ষমতা হ্রাস করে সিনেটের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া, যদিও সংবিধানে
পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কার্যত পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে
ব্যাপকভাবে। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিল পার্লামেন্টের যে কোন কক্ষে উত্থাপন করা হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গৃহীত বিল অপর কক্ষেও গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে বিলটি আইনে পরিণত হয়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. সিনেটের প্রত্যেক সদস্যদের কার্যকাল -
ক. ৫ বছর; খ. ৩ বছর;
গ. ৯ বছর; ঘ. ১২ বছর।
২. বর্তমানে জাতীয় সভার সদস্য সংখ্যা -
ক. ৩২১ জন; খ. ৫৭৭ জন;
গ. ৩০০ জন; ঘ. ৮৬০ জন।
৩. রাষ্ট্রপতির পদ কোন কারণে শূন্য হলে বা দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি অক্ষম হলে এ দায়িত্ব পালনের
অধিকার পানক. সিনেটের সভাপতি; খ. জাতীয় সভার সভাপতি;
গ. স্পীকার; ঘ. প্রধানমন্ত্রী।
৪. পার্লামেন্টে প্রতিটি কক্ষে কয়টি স্থায়ী কমিটি আছে ?
ক. ২টি; খ. ৪টি;
গ. ৬টি; ঘ. ৮টি;
৫. রাজস্ব বিলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ক্ষমতা ভোগ করে -
ক. আইন বিভাগ; খ. শাসন বিভাগ;
গ. বিচার বিভাগ; ঘ. রাজস্ব বিভাগ;
উত্তরমালাঃ ১। গ ২। খ ৩। ক ৪। গ ৫। খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. রাজস্ব বিলের ক্ষেত্রে ফরাসী পার্লামেন্টে কি ধরনের ক্ষমতা ভোগ করে থাকে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ফ্রান্সের পার্লামেন্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্ণনা করুন।
২. ফ্রান্সের আইনসভায় সাধারণ বিল পাসের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]