ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক অবস্থান ও ক্ষমতা ব্যাখ্যা করুন।

ফরাসী সংবিধান রচয়িতারা একটি শক্তিশালী শাসন বিভাগের উপর বিশেষ জোর দেন। ১৮৭০ থেকে
১৯৫৮ সাল পর্যন্তসরকারসমূহের অস্থায়ীত্বের কারণে শাসন বিভাগকে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশী
ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। ফ্রান্সের শাসন বিভাগ ৩টি অংশ নিয়ে গঠিত। এ অংশ ৩টি হল ঃ
রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রী। এখন আমরা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ফরাসী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, কার্যাবলী ও সাংবিধানিক স্থান
ফ্রান্সের বর্তমান সংবিধানে সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে রাষ্ট্রপতি পদটি। রাষ্ট্রপতি এখানে একজন প্রকৃত
শাসক। রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে ফাইনার ) তাঁর ."
রাষ্ট্রপতি ৪ (চার) ধরনের ক্ষমতা ভোগ করেন ঃ
শাসন সংক্রান্তক্ষমতা
ফরাসী রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্র ও সরকার উভয়ের প্রধান। সরকারের সকল কাজ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে
সম্পাদিত হয়। তিনি ক্যাবিনেটের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন এবং তাঁর
পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। এছাড়া তিনি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ সংক্রান্তক্ষমতা, কিছু
পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতা, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা এবং সংবিধানে প্রতিস্বাক্ষর করার ক্ষমতা ভোগ করেন।
আইন সংক্রান্তক্ষমতা
রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বাণী প্রেরণ করতে পারেন। তাঁর এ বাণীর উপর কোন বিতর্ক চলে
না। শাসনতান্ত্রিক পরিষদের ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জনকে নিযুক্ত করেন। তবে তার ভেটো ক্ষমতা
নেই। তিনি জাতীয় সভা ভেঙ্গে দিতে পারেন এবং যে কোন বিলকে জনগণের অনুমোদনের জন্য
গণভোটে পেশ করতে পারেন।
বিচার বিষয়ক ক্ষমতা
অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন (১৭ নং)। সালিশী বিচারক হিসাবে ফরাসী রাষ্ট্রপতি
কিছু দায়িত্ব পালন করেন। স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র উভয়ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনা
অনুসারে সালিশীর দায়িত্ব সম্পাদন করেন।
জরুরি অবস্থা সংক্রান্তক্ষমতা
জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রসারিত হয়। এ ক্ষমতা হলো তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ফরাসী রাষ্ট্রপতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা হলো রাষ্ট্রপতি শাসিত। আর পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান অনুসারে
ফ্রান্সে আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত ও আধা সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। তবে দ্য গল এর নেতৃত্বে
পরিচালিত ফরাসী শাসনব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ
সব কারণে সাংবিধানিক ক্ষমতা, ভ‚মিকা ও পদমর্যাদার দিক থেকে কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। আবার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নি¤েœএ পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো ঃ
 ফ্রান্সে বর্তমানে প্রত্যক্ষ সার্বজনীন ভোটে রাষ্ট্রপতি সাত বছরের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মার্কিন
রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচনী সংস্থার দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।
 ফরাসী রাষ্ট্রপতি ৭ বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং এরপর যতবার খুশী পুননির্বাচিত হতে পারেন।
কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ২২তম সংশোধন অনুসারে মোট দু’বার নির্বাচিত হতে পারেন
এবং তার মেয়াদ ৪(চার) বছর।
 ফরাসী রাষ্ট্রপতির কোন নির্দিষ্ট যোগ্যতার দরকার হয় না। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট যোগ্যতা
সম্পন্ন হতে হয়।
 ফরাসী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি
সরাসরি মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন এবং পদচ্যুতও করতে পারেন।
 আইনসভার নি¤œকক্ষকে ফরাসী রাষ্ট্রপতি বাতিল করতে পারেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি তা’ পারেন
না।
 ফরাসী রাষ্ট্রপতি কোন চুক্তির শর্তাদি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন এবং চুক্তি
অনুমোদন করতে পারেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতির এ ধরনের কোন ক্ষমতা নেই।
 সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষমতা ফরাসী রাষ্ট্রপতির আছে, মার্কিন রাষ্ট্রপতির নেই।
 ফরাসী সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থাকালীন বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির
সেরকম কোন সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই।
 গণভোট সম্পর্কিত ক্ষমতা ফরাসী রাষ্ট্রপতি ভোগ করেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি করেন না।
 ফরাসী রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারেও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মার্কিন সংবিধান
সংশোধনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস এ ক্ষমতা ভোগ করে, রাষ্ট্রপতি নয়।
ফরাসী সরকার
ব্যাপক অর্থে ফরাসী সরকার বলতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভাকে বোঝায়। কিন্তু সংবিধানে
রাষ্ট্রপতি এবং সরকারের (প্রধানমন্ত্রী ও নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীবর্গ) মধ্যে এক ধরনের তত্ত¡গত পার্থক্যের অস্তিত্ব
পরিলক্ষিত হয়। পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধানে শাসন বিভাগীয় রীতি-নীতি নির্ধারণ ও দেশের
শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি সরকার বা মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং
অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীসভাই ১৯৫৮ সালের সংবিধানে সরকার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এ সরকারের উপর জাতীয় নীতি নির্ধারণ ও জাতীয় নীতি পরিচালনার দায়িত্ব ন্যাস্তআছে। সরকার তার
কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকে।
সরকার দু’টি সংস্থার মাধ্যমে তার দায়িত্ব সম্পাদন করে। এ দু’টি সংস্থা হল ঃ মন্ত্রিসভা মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি।
অপরদিকে ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে রাষ্ট্রপতির সুস্পষ্ট নির্দেশক্রমে
প্রধানমন্ত্রী ক্ষেত্রবিশেষে মন্ত্রিপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। ক্যাবিনেট ও মন্ত্রিসভার সম্পর্কের
ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ফ্রান্সে একটু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তাহলো এখানে ক্যাবিনেট
অপেক্ষা মন্ত্রিসভা ক্ষুদ্রতর সংস্থা, তবে মন্ত্রিসভা অধিকতর শক্তিশালী। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সকল
ক্যাবিনেট নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য সকল মন্ত্রীদের নিয়ে ক্যাবিনেট
গঠিত। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেটের বৈঠকে যে সিদ্ধান্তনেয়া হয় সেগুলো আইনসিদ্ধ হয় মন্ত্রিসভার
বৈঠকে। উল্লেখ্য, মন্ত্রিসভার সভাপতি হিসাবে রাষ্ট্রপতি হলেন সিদ্ধান্তসমূহের অংশীদার। অথচ এর জন্য
তার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। বরং প্রধানমন্ত্রীকে এ জন্য দায়িত্বশীল থাকতে হয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে
জাতীয় সভায় নিন্দা প্রস্তাব পাস হলে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। শাসন নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে
কর্তৃত্ব করার যে ধারার সূত্রপাত দ্য গল করেন সেই ধারা পরিবর্তীতে অল্পবিস্তর অব্যাহত থাকে। তার আমলেই মন্ত্রিসভার বৈঠক বিশেষভাবে বাড়তে থাকে এবং ক্যাবিনেটের
বৈঠক কমতে থাকে। ক্যাবিনেট এখন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তগুলোকে কার্যকর করার ব্যবস্থা করে। এ ক্ষেত্রে
ক্যাবিনেট আন্তঃমন্ত্রিপরিষদীয় কমিটির মাধ্যমে উদ্যোগী হয়। সংবিধান দেশের
শাসন নীতি নির্ধারণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব ক্যাবিনেটকে দিয়েছে কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। বাস্তব
ক্ষেত্রে ক্যাবিনেট ফরাসী রাষ্ট্রপতির সংসদীয় এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। ফরাসী সরকারের একটি
সেক্রেটারিয়েট আছে এর মাধ্যমে সরকার তার যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
সারকথা
ফরাসী শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অধিক ক্ষমতার অধিকারী এবং রাষ্ট্রপতি
একই সাথে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। দ্য গল রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষমতার যেরূপ ব্যবহার করেছেন তাতে
ফ্রান্সে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান বলা যায়। তবে পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান অনুযায়ী
দেশে আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত ও আধা সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। ফরাসী রাষ্ট্রপতি, মার্কিন
রাষ্ট্রপতি অপেক্ষা কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। শাসন বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য
২টি সংস্থা রয়েছে ঃ (১) মন্ত্রিসভা, যার সভাপতি রাষ্ট্রপতি; (২) ক্যাবিনেট সভা, এর সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার মাধ্যমে ক্যাবিনেট সভায় প্রভাব বিস্তার করেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. ফরাসী সংবিধান অনুযায়ী সবচেয়ে শক্তিশালী বিভাগ হচ্ছে -
ক. আইন বিভাগ; খ. শাসন বিভাগ;
গ. বিচার বিভাগ; ঘ. সুপ্রীমকোর্ট।
২. ফ্রান্সের প্রকৃত শাসক হলেন -
ক. রাষ্ট্রপতি খ. প্রধানমন্ত্রী
গ. মন্ত্রীসভা ঘ. ক্যাবিনেট
৩. কোন্ ক্ষমতাটি ফরাসী রাষ্ট্রপতি ভোগ করেন না ?
ক. ভেটো ক্ষমতা; খ. গণভোট সম্পর্কিত ক্ষমতা;
গ. জরুরি অবস্থাকালীন বিশেষ ক্ষমতা; ঘ. কোনটাই নয়।
৪. ফরাসী সরকারের শক্তিশালী কাঠামো কোন্টি?
ক. মন্ত্রিসভা; খ. পররাষ্ট্রমন্ত্রী;
গ. যে কোন মন্ত্রী; ঘ. উপরের কোনটাই না।
৫. ফরাসী সরকার কয়টি সংস্থার মাধ্যমে তার দায়িত্ব সম্পাদন করে ?
ক. ১টি; খ. ২টি;
গ. ৩টি; ঘ. ৪টি।
উত্তরমালাঃ ১। খ ২। ক ৩। ক ৪। ক ৫। খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ফরাসী রাষ্ট্রপতি কিভাবে ক্যাবিনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক অবস্থান ও ক্ষমতা ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]