ফরাসী বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো ফরাসী শাসন বিভাগীয় আদালত

ফরাসী বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের ন্যায় স্বাধীন কোন অঙ্গ নয়। বিচার বিভাগকে
ফরাসী ব্যবস্থায় একটি অধঃস্তন অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এ ধারণার ভিত্তিতেই ফরাসী বিচার
ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থায় রোমান আইন (জড়সধহ খধ)ি-এর প্রভাব অত্যন্তবেশী।
বস্তুত জড়সধহ খধ-িহলো ফরাসী আইন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। দীর্ঘকাল রোমের শাসনাধীনে থাকার
কারণে এমন হয়েছে। পূর্বে ফ্রান্সে সামন্তব্যবস্থা বর্তমান ছিল। মহান ফরাসী বিপ্লবের পর একটি নতুন
বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৭৯১ এবং ১৭৯৫ এ দেশের আইনব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধিত হয়।
তবে আধুনিক ফরাসী আইন ব্যবস্থা বলতে যা বুঝায় তার প্রবর্তক হলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
পরবর্তীতে দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিমার্জন সাধিত হয়। এখন
আমরা ফরাসী বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব।
ফরাসী বিচারব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের মাধ্যমে ফ্রান্সে যে বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা
করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। নিচে সংক্ষেপে এ বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
 বর্তমানে সমগ্র ফ্রান্সে একটি অখন্ড বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত আছে। এবং সমগ্র দেশে একই বিধি
ব্যবস্থা বলবৎ আছে। এ বিধি ব্যবস্থা সুসংবদ্ধ, সুস্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ।
 বিচার পদ্ধতির যাবতীয় আইন-কানুন লিখিতভাবে এবং বিধিবদ্ধভাবে বর্তমান। অলিখিত আইন
বলে কিছু নেই।
 ফ্রান্সের আইন ব্যবস্থায় সাধারণ আইন ও প্রশাসনিক আইনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। এ কারণে
এখানে দুই শ্রেণীর আদালত আছে। যথা- (ক) বিচার বিভাগীয় আদালত (ঔঁফরপরধষ ঈড়ঁৎঃং)
(খ) শাসন বিভাগীয় আদালত
 ফ্রান্সে উপরোক্ত আদালত ছাড়াও আরও কয়েকটি আদালতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এ
আদালতগুলো মূলত পেশা সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত।
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনে ভ্রাম্যমান আদালত আছে। ফ্রান্সে এরকম আদালতের ব্যবস্থা নেই।
 ফ্রান্সে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য পৃথক আদালত নেই। তবে উচ্চতর
আদালতগুলোতে অনেক সময় দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য দু’টি পৃথক বিভাগ
খোলা হয়।
 অনেক দেশের বিচারব্যবস্থায় ‘লেখ’ (ডৎরঃ) জারির ব্যবস্থা আছে। বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ (ঐধনবধং
ঈড়ৎঢ়ঁং) জাতীয় লেখ জারির মাধ্যমে এ সমস্তদেশে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
ফ্রান্সে ঠিক এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই।
 বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এখানে যৌথ বিচার ব্যবস্থার নীতি গৃহীত হয়েছে। যে কোন
মামলার বিচারের ক্ষেত্রে এখানে যে কোন বেঞ্চ সাধারণত ৩ (তিন) জন বিচারপতিকে নিয়ে
গঠিত হয়ে থাকে।
 ফ্রান্সে বিচারপতিরা বিধিবদ্ধ আইনের (ঝঃধঃঁঃড়ৎু ষধংি) সাহায্যে বিচারকার্য সম্পাদন করেন।
এক্ষেত্রে বিচারসৃষ্ট আইনকে অনুসরণ করা হয় না।
 ফ্রান্সে জুরী (ঔঁৎু) সাহায্যে বিচারের ব্যবস্থা খুব একটা দেখা যায় না। সীমিতভাবে কোন কোন
আদালতে জুরী বোর্ড দেখা যায়।
 বিচারপতিরা এখানে সাধারণ সরকারী কর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হন। তাদের চাকরি ও পদোন্নতি
নির্ভর করে উচ্চতর ম্যাজিষ্ট্রেটদের কাউন্সিলের সুপারিশের উপর। আইনজীবিদের ভেতর থেকে
বিচারকদের নিযুক্ত করা হয় না।
পাঠ- ফরাসী বিচারব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ
লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারক নিয়োগের জন্যএবং বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিবর্গের জন্য ঝঢ়বপরধষ ঝঃধঃঁং এর কথা বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ফরাসী বিচার বিভাগকে ব্যক্তি স্বাধীনতার
একমাত্র সংরক্ষক হিসাবে মনে করা হয় না। কারণ, ফরাসী বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট কর্তৃক
আইনকে অসাংবিধানিকতার অভিযোগে বাতিল করতে পারে না।
শাসন বিভাগীয় আদালত
ফরাসী বিচারব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শাসন বিভাগীয় আদালত। ১৭৯৯ সালের সংবিধানে এ
শাসনবিভাগীয় আদালতের সৃষ্টি করা হয়। এ আদালত সৃষ্টির পিছনে ফরাসী বিপ্লবের কর্ণধারদের
অবদান অনস্বীকার্য। ১৭৯০ সালের সংস্কার আইনও এক্ষেত্রে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছে। এ আইনে
বলা হয় বিচার বিভাগীয় কাজকর্ম সুনির্দিষ্ট বা স্বতন্ত্র। তাই শাসন বিভাগের সাথে এর পার্থক্য সব সময়
থাকবে। তাছাড়া প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দিক থেকে ক্ষমতা অপব্যবহারের ঘটনা প্রায়শই ঘটে। এ
অবস্থায় শাসন ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এ আদালতের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় শাসন
কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ, জনসাধারণের সাথে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিরোধ, সরকারী কাজ বা কর্তৃপক্ষ
কর্তৃক নাগরিকের কোন রকম ক্ষতি সাধন, সরকারী প্রতিষ্ঠান বা কর্মচারীদের অবহেলা, ক্ষমতার
অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে এ আদালত বিচার করে থাকে। ফরাসী শাসন বিভাগীয় আদালতগুলো দুটি
মূল স্তরে বিভক্ত। যথা ঃ (ক) শাসন বিভাগীয় ট্রাইবুনাল ও (খ) রাষ্ট্রীয় পরিষদ
শাসন বিভাগীয় ট্রাইবুনাল
বর্তমানে সমগ্র ফ্রান্সে ২৪টি শাসন বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল আছে। প্রতিটিতে একজন সভাপতি ও ৪জন
সদস্য থাকে। সদস্যদের নিয়োগ করেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বা
সরকারী কর্মচারীদের কাজকর্মের বিরুদ্ধে অথবা নির্দেশের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের বিচার এ
ট্রাইব্যুনালে সম্পাদিত হয়। কার্যক্ষেত্রে এ ট্রাইব্যুনালে বিচার্য বিষয়ের প্রায় নব্বই শতাংশ কর ধার্য সম্পর্কিত।
রাষ্ট্রীয় পরিষদ
শাসন বিভাগীয় আদালতের ক্ষেত্রে উচ্চতর সংস্থা হল ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদ’। এটি মূলত একটি আপীল
আদালত। তবে এর ব্যাপক মূল ক্ষমতাও আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে এ আদালত সরাসরি বিচার
কার্য সম্পাদন করে থাকে। রাষ্ট্রীয় পরিষদ গঠিত হয় ১৫০জন সদস্যকে নিয়ে। থেকে নিযুক্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিবর্গের ভিতর থেকে এ সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় পরিষদ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। এ বিভাগগুলোর মধ্যে চারটি পরামর্শ দান বিভাগ এবং একটি
বিচার বিভাগ আছে। বিচার বিভাগের আবার বিভিন্ন কক্ষ আছে। সাধারণ আদালতে নাগরিক স্বার্থ
সংরক্ষিত না হলে তার প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করা এবং নাগরিক স্বার্থে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রীয় পরিষদের কাজ।
শাসন বিভাগীয় আইন
নেপোলিয়নের সময় থেকে ফ্রান্সে ৩ (তিন) ধরনের আইন প্রচলিত। যথাঃ (১) শাসনতান্ত্রিক আইন,
(২) সাধারণ আইন ও (৩) শাসন বিভাগীয় আইন। অ. ঠ. উরপবু- এর মতানুসারে শাসন বিভাগীয়
আইন বলতে বুঝায়, শাসনকার্য পরিচালনা বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সংগে নাগরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ
সংক্রান্তনিয়মাবলী। ১৭৯৯ সাল থেকে ফ্রান্সে শাসন বিভাগীয় আদালত ও শাসন বিভাগীয় আইন চলে
আসছে। শাসন বিভাগীয় আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে সমস্তবিধি প্রচলিত সেগুলোই হচ্ছে
শাসন বিভাগীয় আইন। এ আইন দ্বারা শাসন বিভাগ সম্পর্কিত সমস্যাবলী সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এ
আইন ‘অগণতান্ত্রিক, অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট এবং এর দ্বারা ন্যায় বিচার আশা করা যায় না’ বলে অনেকে
মন্তব্য করেছেন। এ অভিযোগের কিছুটা সত্যি হলেও এর কার্যকারীতা কম নয়। আগে ধারণা ছিল এ
আইন কেবল সরকারের স্বার্থই সংরক্ষণ করে। সাধারণ নাগরিকের স্বার্থ অবহেলিত হয়। কিন্তু বাস্তবে এর
কার্যক্রম এ ধারণাকে ভ্রান্তপ্রমাণিত করেছে। এছাড়া এর একটি বড় গুণ নমনীয়তা। এসব কারণে
অনেক বিদেশী আইনজ্ঞ পন্ডিতরাও ফরাসী শাসন বিভাগীয় আইনকে সমর্থন করেছেন।
সারকথা
ফরাসী ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ শাসন ও আইন বিভাগের মত ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং অধস্তন অঙ্গ।
নেপোলিয়ন ফরাসী বিচার ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন সাধন করেন। এ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ও স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অলিখিত আইনের অনুপস্থিতি, শাসন বিভাগীয় আদালতসহ কিছু বিশেষ আদালতের
উপস্থিতি। শাসন বিভাগ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে এবং শাসন বিভাগীয় ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে
শাসন বিভাগীয় আদালত এবং তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শাসন বিভাগীয় আইন চালু করা হয়েছে।
এ ব্যবস্থা অভিনব হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ পন্ডিত এর পক্ষে রায় দিয়েছেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. ফ্রান্সের বিচার-ব্যবস্থার অন্যতম উৎস হল -
ক. রোমক আইন; খ. গ্রীক আইন;
গ. বৃটিশ আইন; ঘ. মার্কিন আইন।
২. অলিখিত আইন নেই কোন্ দেশের বিচার ব্যবস্থায়?
ক. ইংল্যান্ড; খ. ফ্রান্স;
গ. ভারত; ঘ. বাংলাদেশ।
৩. ফ্রান্সে বিচার ব্যবস্থায় কোন্ ধরনের ব্যবস্থা বহাল আছে?
ক. লেখ (ডৎরঃ) জারির ব্যবস্থা; খ. জুরী বোর্ড;
গ. বিচার সৃষ্ট আইনের অনুসরণ; ঘ. শাসনবিভাগীয় আদালত।
৪. বর্তমান সমগ্র ফ্রান্সে কয়টি শাসন বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল আছে?
ক. ২১টি; খ. ২২টি;
গ. ২৩ টি; ঘ. ২৪ টি।
৫. রাষ্ট্রীয় পরিষদ গঠিত হয় কয়জন সদস্য নিয়ে?
ক. ১০০ জন; খ. ১৫০ জন;
গ. ২০০ জন; ঘ. ২৫০ জন।
উত্তরমালাঃ ১। ক ২। খ ৩। ঘ ৪। ঘ ৫। খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ফ্রান্সের শাসন বিভাগীয় আইন কি?
২. রাষ্ট্রীয় পরিষদ কি? সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ফরাসী বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করুন।
২. ফরাসী শাসন বিভাগীয় আদালত সম্পর্কে যা জানেন, লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]