ফরাসী দলীয় ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

যেকোন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ হল রাজনৈতিক দলব্যবস্থা।
ফরাসী শাসনব্যবস্থারও অন্যতম ভিত্তি হল সে দেশের দলগুলোর নীতি ও আদর্শ। তবে ফরাসী,
রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার ইতিহাস দীর্ঘ দিনের নয়। ফরাসী বিপ্লবের পর ফ্রান্সে সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়
এবং মূলত সে সময় থেকেই ফ্রান্সের দলব্যবস্থার সূত্রপাত। এখন আমরা ফ্রান্সের দলব্যবস্থা সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করব।
ফরাসী দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ফ্রান্সে রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার কিছু স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা পর্যালোচনা
করে নি¤œলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায় -
 এখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ বহুদলীয় ব্যবস্থা
ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে জটিল করে তুলেছে। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বহুদলীয়
ব্যবস্থাই দায়ী।
 ফরাসী রাজনৈতিক দলগুলো দেশে একটি স্থায়ী সরকার এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি সুসংবদ্ধ বিরোধী
দল গড়ে তুলতে পারেনি। প্রকৃত প্রস্তাবে সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাবই এর মূল কারণ।
 দলীয় শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব ফরাসী দলীয় ব্যবস্থার আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য বলে
বিবেচিত হয়। দলীয় কর্তৃত্বের প্রতি স্থায়ী আনুগত্য ফরাসীদের স্বভাব বিরুদ্ধ।
 ফ্রান্সে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান এবং অতি অল্পকালের মধ্যে অবলুপ্তির ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
প্রতিনিয়ত এ পরিবর্তনশীলতা ও অস্থায়িত্ব ফরাসী রাজনৈতিক দলব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
 রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ও আদর্শগত বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। দলগুলোকে সাধারণভাবে
বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী এ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। এখানে সাম্যবাদী বামপন্থীর সাথে
চরম প্রতিক্রিয়াশীল দলও আছে। আবার ফ্যাসীবাদী আদর্শের অনুগামী দলও দেখা যায়। ফ্রান্সে
এমন অনেক রাজনৈতিক দল আছে যাদের কোন সুসংহত এবং সুনির্দিষ্ট নীতি নেই।
 ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিপ্লব বা হিংসাত্মক কার্যকলাপের এক সাধারণ প্রবণতা
পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহাসিক ফরাসী বিপ্লবের পর থেকে যে সমস্তশাসনব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছে তার
অধিকাংশেরই পতন ঘটেছে হিংসাত্মক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
 ফ্রান্সের দলীয় ব্যবস্থার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো দলগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সহমতের
অভাব। সাধারণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সরকারের স্থায়ী রূপ হিসাবে স্বীকার করে নিলেও বাম ও ডানপন্থী
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।
উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ফ্রান্সের দলব্যবস্থাকে স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য দান করেছে।
রাজনৈতিক দলব্যবস্থার পরিবর্তন
বহুদলীয় ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তবে বর্তমানে এ অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এ রূপান্তরের সূত্রপাত ঘটেছে সাধারণতন্ত্রের সূচনা
থেকেই। কিছু কিছু দল অন্তর্হিত হয়েছে আবার কতক ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হয়ে একটি শক্তিশালী
দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সামগ্রিক ফল হিসাবে দেখা যায় যে ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে
মাত্র চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সামিল হয়েছে। এর পিছনে উল্লেখযোগ্য
কারণগুলো হল ঃ
পাঠ-১. জেনারেল দ্য গল (উব এধঁষষব) -এর সময়ে দ্য গলপন্থী দল (এধঁষষরংঃ ঢ়ধৎঃু) রক্ষণশীল ও
মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেয়। এ পরিন্থিতিতে অন্যান্য দলগুলো
নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে।
২. ১৯৫৮ সালের নির্বাচন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পুনর্গঠিত হওয়ার
প্রয়োজন দেখা দেয়। জেনারেল দ্য গলের জনপ্রিয়তা ছিল বিতর্কের উর্ধ্বে। তার বিপরীতে প্রতিযোগিতা
করার জন্য অপেক্ষাকৃত সুশৃংখল দল ও নতুন প্রার্থীর প্রয়োজনীয়তা অনুভ‚ত হয়।
৩. ঘধঃরড়হধষ অংংবসনষু- এর একটি নতুন নিয়ম অনুসারে একটি সংসদীয় গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি
লাভের জন্য একটি দলের জাতীয় সভায় অন্তত ৩০ জন ডেপুটি থাকা দরকার এবং সিনেটে অন্তত ১৫
জন ডেপুটি থাকা দরকার। এক্ষেত্রে ছোট ছোট দলগুলোর আর ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
৪. এক্ষেত্রে নতুন আরো একটি নিয়ম উল্লেখযোগ্য। এ নিয়মানুসারে, কোন নির্বাচন প্রার্থী তার নির্বাচন
কেন্দ্রে অন্ততঃ ১২.৫ শতাংশ ভোট না পেলে তাকে দ্বিতীয় ব্যালট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়
বা ৫ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত হারাতে হয়। এছাড়া প্রতিদ্ব›দ্বী কোন প্রার্থীকে জাতীয় সভায়
নির্বাচিত হতে গেলে প্রদত্ত মোট ভোটের অর্ধেকের বেশি (৫০%+১%) ভোট পেতে হয়। প্রাপ্ত ভোটের
এ সংখ্যা নথিভুক্ত মোট ভোট দাতার ২৫ শতাংশের কম হওয়া চলবে না।
৫. রাষ্ট্রপতি যখন তখন জাতীয় সভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। দ্য গল বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য
বহুবার এ ভয় দেখিয়েছেন। সুতরাং এ অবস্থা এড়ানোর জন্য দলগুলো সংঘবদ্ধ হয়।
৬. সংকীর্ণ স্বার্থের পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিও এর একটি কারণ।
৭. দলীয় মতাদর্শগত পার্থক্য কমে আসার কারণেও রাজনৈতিক দলগুলো জোটভুক্ত হয়।
এ সমস্তকারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং রাজনীতিতে স্থিতি
এসেছে।
রাজনৈতিক দল
উদ্দেশ্য ও কার্যাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (১)
দক্ষিণপন্থী (, (২) বামপন্থী এবং (৩) মধ্যপন্থী । এ ৩ (তিন)
শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর মধ্যে নি¤œলিখিত রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দক্ষিণ পন্থী রাজনৈতিক
ক. দ্য গল পন্থী দল
খ. স্বতন্ত্রসাধারণপন্থী
গ. সাধারণতন্ত্রের জন্য সমাবেশ ()
ঘ. ফরাসী গণতন্ত্রের জন্য সংঘ ঋ)
বামপন্থী রাজনৈতিক দল
ক. সমাজতান্ত্রিক দল
খ. কমিউনিস্ট দল )
গ. র‌্যাডিক্যাল দল
ঘ. ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক দল )
মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো
ক. গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থী
দ্য গলপন্থী দল
ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দ্য গলপন্থী দলের ভ‚মিকাই সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এ
কারণে এ দলটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে। জেনারেল চার্লস দ্য গল ১৯৪৪ সালে
ফ্রান্সে এক ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করেন। এ আন্দোলনের নাম হয় ঞযব জধষষু ড়ভ ঃযব
ঋৎবহপয চবড়ঢ়ষব (জচঋ)। ১৯৪৭ সালে জচঋ এর সদস্য সংখ্যা দাড়ায় ৮ লক্ষ এবং এরা সংসদে এক
তৃতীয়াংশের অধিক আসন লাভ করে। ১৯৫৬ তে এসে এ দলটি হীনবল হয়ে পড়ে এবং দ্য গল
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৫৮ সালে পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান তৈরী করার সুবাদে তিনি
আবার রাজনীতিতে সংক্রিয় হন এবং প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পরে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। এ সময়
গলপন্থীরা সংগঠিত হয়ে তৈরী করে টহরড়হ ড়ভ ঃযব ঘবি জবঢ়ঁনষরপ - টঘজ। ১৯৬৭ সালে দলটির
নতুন নামকরণ হয় ঞযব টহরড়হ ড়ভ উবসড়পৎধঃং ভড়ৎ ঃযব জবঢ়ঁনষরপ- টউজ। জেনারেল দ্য গলের
মৃত্যুর পরও সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসাবে এটি স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে গলপন্থীরা দুর্বল
হয়ে পড়েছে। এ দলটি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে তেমন সাড়া জাগাতে পারে নি। তবে দক্ষিণপন্থী,
মধ্যপন্থী, ক্যাথলিক এবং নারীরা এ দলকে সমর্থন দিয়েছে।
সারকথা
ফরাসী সাধারণতন্ত্রের সাথে সাথে ফ্রান্সের দলব্যবস্থার উদ্ভব হয়। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীলতা, অস্থায়িত্ব,
দলীয় শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব, রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পর্কে সহমতের অভাব ফরাসী দলব্যবস্থার কিছু
স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য। বহুদলীয় ব্যবস্থা হলেও দলগুলোর ক্রমাগত ভাঙ্গন ও সংযুক্তির মধ্যদিয়ে বর্তমানে দেশে
৪টি প্রধান রাজনৈতিক দল তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। তবে ফ্রান্সের রাজনেতিক ব্যবস্থায়
দ্য গল পন্থী দলই (ঞযব এধঁষষরংঃ চধৎঃু) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে -
ক. পরিবর্তনশীলতা; খ. শৃংখলার অভাব;
গ. আদর্শগত বৈচিত্র্য; ঘ. উপরের সবগুলো।
২. নতুন নিয়মানুসারে একটি সংসদীয় গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য একটি দলের জাতীয় সভায়
সদস্য থাকা দরকার -
ক. ৩০ জন; খ. ৪০ জন;
গ. ১৫ জন; ঘ. ২৫ জন।
৩. ফ্রান্সের নির্বাচনে প্রার্থীকে জামানত হারাতে হয় কত শতাংশ ভোট না পেলে?
ক. ৫ শতাংশ; খ. ১০ শতাংশ;
গ. ১৫ শতাংশ; ঘ. ২০ শতাংশ।
উত্তরমালাঃ ১। ঘ ২। ক ৩। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তমূলক প্রশ্ন
১. ফ্রান্সের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কি?
২.দ্য গল পন্থী দল সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ফরাসী দলীয় ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
২. ফরাসী রাজনৈতিক দলব্যবস্থা কেন পরিবর্তিত হয়েছে ? আপনার মতামত তুলে ধরুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]