খিলাফত আন্দোলনের কারণ বা পটভ‚মি বর্ণনা অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

খিলাফত আন্দোলন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পর তুরস্কের অখন্ডত্ব রক্ষা এবং তুর্কী সুলতান বা খলিফার মর্যাদা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব
অক্ষুণœরাখার লক্ষ্যে ১৯১৯ সালে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন
নামে খ্যাত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ব্রিটেনের তথা মিত্রশক্তির বিপরীতে জার্মানির পক্ষে যোগ দেয়। যুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় ঘটে এবং
তুর্কী সম্রাজ্যের অখন্ডত্বহুমকির সম্মুখীন হয়। ভারতের মুসলমানরা তুরস্কের সুলতানকে বিশ্বের সুন্নী মুসলমানদের খলিফা
বা নেতা বলে মনে করতো। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকার তাদের এই মর্মে আশ্বাস দেয় যে, যুদ্ধ শেষে তুর্কী
খলিফার খিলাফত বা সাম্রাজ্যের অখন্ডত্বের উপর হস্তক্ষেপ করা হবে না। ফলে ভারতীয় মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের
যুদ্ধ-প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ সরকার পূর্বের প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করে তুরস্ক সাম্রাজ্যকে
খন্ডবিখন্ড করতে উদ্যত হলে ভারতের মুসলমানরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। মাওলানা মোহাম্মদ আলী,
মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
খিলাফত আন্দোলনে মুসলমানদের দাবিগুলো ছিল নি¤œরূপঃ
১. তুর্কী সাম্রাজ্যের অখন্ডত্ববজায় রাখতে হবে। খিলাফত ভেঙে দেওয়া যাবে না।
২. ইসলাম ধর্মের স্বার্থ রক্ষার্থে খলিফার হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকতে হবে।
৩. কোন প্রকার অছি বা প্রটেকশন ছাড়াই আরব দ্বীপের উপর মুসলমানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
৪. খলিফার হাতে পবিত্র স্থানগুলোর তদারকির ভার ন্যস্তথাকতে হবে।
তুর্কী সাম্রাজ্যের অখন্ডত্বএবং সুলতানের খিলাফত বা রাজত্ব বহাল রাখার প্রশ্নটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র ধর্মীয় অনুভ‚তি ও
আবেগের বিষয়ে পরিণত হয়। যে কারণে ভারতবর্ষের মুসলমানরাও এক্ষেত্রে মনে-প্রাণে একাগ্রতা অনুভব করে। ১৯১৯
সালের প্রথম দিকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা স্বতস্ফ‚র্তভাবে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠান শুরু করে। দেশের সর্বত্র স্বল্প
সময়ের ব্যবধানে অসংখ্য খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। ১৯১৯ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি কলকাতায় খিলাফতের সমর্থনে প্রথম
জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন এ.কে.ফজলুল হক, বর্ধমানের আবুল কাশেম, ‘মুসলমান’ পত্রিকার
মালিক ও সম্পাদক মজিবুর রহমান, এডভোকেট নাজিমুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের
মধ্যে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী অন্তর্ভুক্ত
ছিলেন। আলী ভ্রাতৃদ্বয় (মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী), মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯১৯
সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে প্রথম সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং মিত্রশক্তির
বিজয়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সমগ্র ভারতব্যাপী ‘শান্তিউৎসব’ আয়োজনের বিরোধিতা করে এ সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত
হয়। সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত
হয়। মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলনের প্রতি মহাত্মা গান্ধীর পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন এবং খিলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ
কর্তৃক গান্ধীর ব্রিটিশ বিরোধী ’বয়কট কর্মসূচি’ (বিস্তারিত পরবর্তী অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য) গ্রহণ আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে।
খিলাফত আন্দোলন ছিল মূলত ভারতীয় মুসলমানদের একটি স্বতস্ফ‚র্ত আন্দোলন। আন্দোলনের ইস্যু ছিল বহির্দেশীয়
(তুর্কী খলিফার খিলাফত অক্ষুন্ন রাখা)। আন্দোলনকে একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসার চেষ্টা সত্তে¡ও এর সাংগঠনিক
দুর্বলতা রয়ে যায়। এ ধরনের একটি গণভিত্তিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নেতৃবৃন্দের তেমন ছিল
না। উপরন্তু গান্ধীর ‘বয়কট’ কর্মসূচি গ্রহণ করা নিয়ে মুসলমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে চরম মতভেদ দেখা দেয়। ইসলামি
শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমানদের নেতৃত্বের অংশটি এ কর্মসূচি গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নেয়। অপরদিকে, জিন্নাহ, ফজলুল
হক, সৈয়দ ওয়াজির হাসান, আবুল কাশেম প্রমুখ এ কর্মসূচিকে ‘ধ্বংসাত্মক’ আখ্যায়িত করে তা মুসলমানদের স্বার্থের
অনুক‚লে হবে না বিধায় গ্রহণে অসম্মতি জানায় এবং আন্দোলন থেকে তাঁরা সরে দাঁড়ান। এ সব ছিল আন্দোলনের দুর্বল
দিক। কিন্তু মজার বিষয় হলো ১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল পাশা (কামাল আতাতুর্ক) তুরস্কের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে
খিলাফতের অবসান ঘোষণা করেন। তুরস্ক পরিণত হয় একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে। এরপর খিলাফত আন্দোলনের
যৌক্তিকতা নিঃশেষ হয়ে পড়ে।
অসহযোগ আন্দোলন
১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের দমন, নিপীড়ন মূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধীর আহবানে সমগ্র ভারতব্যাপী যে
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা-ই অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। এটি ছিল ভারতে প্রথম গণভিত্তি
সম্পন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। খিলাফত ইস্যু যুক্ত হওয়ায় ভারতের মুসলমান স¤প্রদায় এতে যোগ দেয়। ফলে তা
ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের সম্মিলিত আন্দোলনের রূপ নেয়। ১৯২২ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্তএ আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
যুদ্ধ শেষে দেশ শাসনে অধিকতর ক্ষমতা ও সুযোগ নিজেদের হাতে লাভের যে প্রত্যাশা ভারতীয়দের মধ্যে জন্মেছিল,
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন তা পূরণে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে, একই সময় সংঘটিত দুটি ঘটনা তাদের মধ্যে তীব্র
ক্ষোভের সৃষ্টি করে। একটি রাউলাট আইন, এবং অপরটি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড। ১৯১৯ সালের শুরুর দিকে
ব্রিটিশ সরকার প্রথমোক্ত আইনটি পাস করে। এ আইনে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে
কাউকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক করে রাখার বিধান করা হয়। এ আইনের বিরুদ্ধে যখন জনমনে অসন্তোষ
সৃষ্টি হচ্ছিল তখন দ্বিতীয় ঘটনাটি সংঘটিত হয়। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক স্থানে
চতুর্দিকে প্রাচীর ঘেরা একটি মাঠে কয়েক হাজার মানুষ একটি প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে
সেনা সদস্যরা নিরস্ত্রজনতার ওপর গুলি ছুড়লে চার শ’র মতো লোক নিহত এবং অসংখ্য আহত হয়। ইতিহাসে এ ঘটনা
‘জালিয়ানওয়ালাবাগ ট্ট্যাজেডী’ বা ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক হত্যাকান্ড’ নামে অভিহিত। এ অবস্থায় মহাত্মা গান্ধী
ব্রিটিশ দমননীতির বিরুদ্ধে তাঁর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় ভারতের মুসলমান স¤প্রদায়
তুরস্কের অখন্ডত্ববজায় এবং খলিফার শাসন অক্ষুণœরাখার লক্ষ্যে খিলাফত আন্দোলন গড়ে তোলে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গান্ধী তাঁর ‘বয়কট কর্মসূচি’ পেশ করেন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত
কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও খিলাফত কমিটির সম্মেলনে এ কর্মসূচি অনুমোদিত হয়। একই বছর নভেম্বর মাসে নাগপুরে
অনুষ্ঠিত যৌথ সম্মেলনে তা গৃহীত হয়। কর্মসূচির প্রধান দিকগুলো ছিল নি¤œরূপ:
১. বিদেশি পণ্য বর্জন;
২. ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব ও পদবী বর্জন;
৩. অবৈতনিক পদগুলো ত্যাগ;
৪. সরকার পরিচালিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বর্জন;
৫. আইনজীবীদের আদালত বর্জন;
৬. সরকারি কার্যক্রম বয়কট;
৭. কাউন্সিল (আইনসভা) নির্বাচনে অংশগুহণ না করা;
৮. সরকার মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের আইনসভা থেকে পদত্যাগ;
৯. চরকায় সুতা কাটায় উৎসাহ দান;
১০. পঞ্চায়েত গড়ে তোলা এবং এ ব্যবস্থাকে সুসংহত করা;
১১. সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখা;
১২. সকল প্রকার অস্পৃশ্যতা দূর করা।
গান্ধীর ‘বয়কট কর্মসূচি’ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব ও পদবী বর্জনের ঘোষণা প্রতিদিন
পত্র-পত্রিকায় আসতে থাকে। সরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের স্থলে ভারতীয়দের উদ্যোগে সারা দেশে রাতারাতি ‘জাতীয়
শিক্ষালয়’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী তাতে যোগ দেয়। আইনজীবীদের আদালত বর্জন সর্বাত্মকভাবে
সফল হয়। বিদেশে পণ্য বর্জন ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিলেতী বস্ত্রও জিনিসপত্র পোড়ানো যেন ব্রিটিশ শাসন
ধ্বংসের প্রতীকে পরিণত হয়। চরকায় সুতা কাটার ব্যাপারেও জনসাধারণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ দেখা দেয়। সারা দেশে প্রায় ৪০ লক্ষ চরকা চালু হয়।
পারস্পরিক গ্রহণ-সমর্থনের কারণে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে হিন্দু ও মুসলমান উভয় স¤প্রদায় শামিল হয় এবং
তারা ব্রিটিশ বিরোধী এক দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে। উভয় স¤প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ একই স্থানে, একই প্যান্ডেলে
সভা-সমাবেশ-সম্মেলনে মিলিত হন। আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গ সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমনে ব্রিটিশ
সরকার গ্রেপ্তারসহ নানা নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯২১ সালের মে মাসে আসামে চা শ্রমিকদের উপর
অমানুষিক অত্যাচার চালানো হয়। আন্দোলনের জের হিসেবে মোপলা চাষীদের বিপ্লবী অভ্যুত্থানে উদ্বুদ্ধ করে।
গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ক্রমশ সহিংস রূপ লাভ করে। বিশেষকরে ‘বয়কট কর্মসূচি’ গ্রহণের পর থেকে দ্রæত
আন্দোলনের রূপ ও চরিত্রে পরিবর্তন ঘটে। ১৯২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে উত্তর প্রদেশের চৌরি-চৌরা স্থানে বিক্ষুব্ধ
জনতা একটি পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ২২জন পুলিশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায়
মর্মাহত হয়ে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।
অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
নানা কারণে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছিল অপরিসীম।
১. এটি ছিল ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম গণভিত্তিক আন্দোলন।
২. এই প্রথম ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দু ও মুসলমান উভয় স¤প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা স¤ভব হয়।
৩. দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর মহাত্মা গান্ধী তাঁর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন নীতির সর্বপ্রথম
প্রয়োগের সুযোগ লাভ করেন।
৪. ভারতের রাজনীতিতে গান্ধীর শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব স্বীকৃত হয়।
৫. জনগণের মধ্যে কংগ্রেসের ব্যাপক সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটে।
৬. এ আন্দোলন ভারতবাসীর মনে স্বদেশপ্রেম ও স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা জাগিয়ে তোলে, যা পরবর্তী আন্দোলনকে
প্রভাবান্নিত করে।
৭. মুসলমান নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে সক্ষম হন। মুসলমানদের মধ্যে
রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে।
সারকথা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) তুরস্ক ব্রিটেন তথা মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে জার্মানির পক্ষ নেয়। যুদ্ধে তুরস্ক ও তার মিত্রদের
পরাজয় ঘটে। যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় মুসলমানদের দেওয়া প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করে যুদ্ধ শেষে ব্রিটেন তুর্কী খলিফার
খিলাফত বা সাম্রাজ্যকে খন্ডবিখন্ড করতে উদ্যত হয়। ফলে মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা
আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে তুর্কী সুলতান বা খলিফার মর্যাদাও কর্তৃত্ব রক্ষা এবং তুর্কী সম্রাজ্যের অখন্ডত্ব
বজায় রাখার সমর্থনে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইতিহাসে তা খিলাফত আন্দোলন
নামে খ্যাত। অপরদিকে যুদ্ধশেষে ভারতীয়দের হাতে অধিকতর ক্ষমতা অর্পণ করে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করা হবে এ
মর্মে তাদের মধ্যে বিপুল প্রত্যাশা জন্মেছিল। কিন্তু তা পূরণে ব্রিটিশ সরকার ব্যর্থ হয়। ফলে প্রায় একই সময় মহাত্মা
গান্ধীর নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। বিদেশি পণ্য, ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব, সরকার
পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আইন-আদালত বর্জনসহ একটি বিস্তারিত ‘বয়কট কর্মসূচি’ গ্রহণ করা হয়। হিন্দু ও মুসলমান
উভয় স¤প্রদায় কাঁধে কাঁধ রেখে আন্দোলনে শরিক হয়। ব্রিটিশ সরকার দমন-পীড়ন, গ্রেফতারের আশ্রয় নেয়। ১৯১৯
সালের ১৩ এপ্রিল ব্রিটিশ সেনা সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয় জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক হত্যাকাÐ, যা
‘জালিয়ানওয়ালাবাগ ট্রাজেডী’ নামে অভিহিত। আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গ সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২২ সালের
ফেব্রæয়ারি মাসে চৌরি-চৌরা স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ২২ জন পুলিশ
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এরপর গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এর সঙ্গে খিলাফত আন্দোলনও দ্রæত
স্তিমিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া তুরস্কে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে খেলাফতের অবসান ঘটে এবং তুরস্ক একটি রাজতন্ত্র বিমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. খিলাফত আন্দোলন কতো সালে গড়ে ওঠে?
ক. ১৯০৫ সালে
খ. ১৯১৪ সালে
গ. ১৯২৪ সালে
ঘ. ১৯১৯ সালে
২. কোন সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়?
ক. ১৯১৮
খ. ১৯১৯
গ. ১৯২০
ঘ. ১৯২১
৩. ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল কোন মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়?
ক. চৌরি-চৌরায় ২২জন পুলিশের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ
খ. জালিয়ানওয়ালাবাগ ট্ট্যাজেডী
গ. কলকাতা দাঙ্গা
ঘ. মোপলা বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ বাহিনীর আক্রমণ
৪. কোন সালে গান্ধীর ‘বয়কট কর্মসূচি’ গৃহীত হয়?
ক. ১৯১৯ সালে
খ. ১৯২০ সালে
গ. ১৯২১ সালে
ঘ. ১৯২২ সালে
৫. কখন গান্ধী তাঁর অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন?
ক. ১৯২০ সালে
খ. ১৯২১ সালে
গ. ১৯২২ সালে
ঘ. ১৯২৪ সালে
উত্তরমালাঃ ১. ঘ, ২. খ, ৩. খ, ৪. খ, ৫. গ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. খিলাফত আন্দোলন কী?
২. অসহযোগ আন্দোলন কী?
৩. অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি কী ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. খিলাফত আন্দোলনের কারণ বা পটভ‚মি বর্ণনা করুন।
২. খিলাফত আন্দোলনের পরিণতি বা ফলাফল সম্বন্ধে আলোচনা করুন।
৩. অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]