ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাগুলো আলোচনা করুন।

ভারত স্বাধীনতা আইনের পটভ‚মি
১৯৪৬ সালের মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর চরম সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা এবং মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের
পরস্পর বিরোধী মনোভাব নিরসনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্তনেয়। তাছাড়া দ্বিতীয়
বিশ্ব যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার উপনিবেশ থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া শ্রেয় বলে মনে করে। ফলশ্রæতিতে
গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ৩ জুন একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এই পরিকল্পনা
“মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা” নামে খ্যাত। এই পরিকল্পনার আলোকেই ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’
পাস করা হয়। এই আইন অনুযায়ী ভারতবর্ষে প্রায় ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে।
ভারত স্বাধীনতা আইনের মূলধারা ও ফলাফল
এ আইনের মূল ধারাগুলো নিæরূপ ঃ
১. এই আইনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং উভয়ই ডোমিনিয়নের মর্যাদা
লাভ করে।
২. এ আইনে বাংলা ও পাঞ্জাব এ দুটো প্রদেশকে হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বিভক্ত করে ভারত ও
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা হয়। এ ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি কমিশনের কথা বলা
হয়।
৩. দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে দুটি পৃথক গণপরিষদ গঠিত হয় এবং শাসনতন্ত্ররচনার ক্ষমতা লাভ করে। গণপরিষদ স্ব-স্ব
ডোমিনিয়নের শাসনতন্ত্ররচনার পূর্ব পর্যন্তসার্বভৌম কেন্দ্রীয় আইন পরিষদরূপে কাজ করবে বলে ঘোষিত হয়।
৪. এ আইনে ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসাবে অবস্থান করবে কিনা সে স¤পর্কে
গণপরিষদকে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
৫. এ আইনে ভারত সচিব পদের বিলোপ ঘটে এবং রাজকীয় মর্যাদা ও পদ থেকে ‘ভারত সম্রাট’ উপাধি বর্জন করা
হয়।
৬. ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো দেশীয় রাজ্যগুলোর হাতে নিজ অবস্থান
স¤পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা প্রদান। এ সব রাজ্য উক্ত আইনে স্বাধীন থাকার কিংবা পাকিস্তান বা ভারতের
সাথে সংযুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তগ্রহণের পূর্ণ অধিকার লাভ করে।
৭. ব্রিটিশ কমনওয়েলথ সচিবকে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
৮. এ আইনে ভারত সচিব কর্তৃক নিযুক্ত কর্মচারিগণকে ডোমিনিয়নদ্বয়ের অধীনে চাকরি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয় এবং পূর্ববৎ সুযোগ সুবিধা বহাল রাখা হয়।
৯. ডোমিনিয়নদ্বয়ের গণপরিষদ কর্তৃক স্ব স্ব ডোমিনিয়নের শাসনতন্ত্ররচিত না হওয়া পর্যন্তনি¤œলিখিত সংশোধন ও
পরিবর্তন সাপেক্ষে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলো শাসিত হবে।
(ক) মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নর তাদের সকল প্রকার কার্য পরিচালনা
করবেন।
(খ) স্ব স্ব ডোমিনিয়নের মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শক্রমে ব্রিটিশ রাজ্য গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করবেন।
(গ) মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক গভর্নর নিযুক্ত করবেন।
(ঘ) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইনের সাথে ডোমিনিয়নের প্রদত্ত আইনের অসামঞ্জস্যতা হলে ডোমিনিয়নদ্বয়ের
আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন বাতিল বা কার্যকর হবে না।
সারকথা
‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ বিশ্ব মানচিত্রে দুটি নতুন রাষ্ট্রের স্থান করে দেয়। ফলে ভারতে দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের অবসান
ঘটে। অনেক সংগ্রাম, অনেক ত্যাগের ফসল এই স্বাধীনতা। যদিও মহাত্মা গান্ধী ভারত বিভক্তি রোধে শেষ চেষ্টা
করেছিলেন, কিন‘ু তাঁর অনুসারি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও সরদার প্যাটেলের অনমনীয় মনোভাবের কারণে তিনি
এক পর্যায়ে তাঁর পূর্ব অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। ত’ছাড়া জিন্নার একগুয়েমি মনোভাবও এক বা অখন্ড
ভারতের বিপক্ষে ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ভারত স্বাধীনতা আইন পাস হয়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান
এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছিল এর মূল বিষয়। কিন্তু১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি সমস্যার
স্থায়ী সমাধান দিতে পারে নি। পরবর্তীতে অতি সঙ্গত কারণে পাকিস্তানের পুনরায় বিভক্তি ঘটে এবং সৃষ্টি হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন।
১. কত তারিখে ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ পাস হয়?
ক. ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট
খ. ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই
গ. ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই
ঘ. ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট
২. ভারতবর্ষে ব্রিটিশ নিযুক্ত শেষ গভর্ণর জেনারেল কে ছিলেন?
ক. লর্ড মাউন্টব্যাটেন
খ. লর্ড ওয়াভেল
গ. লর্ড প্যাথিক লরেন্স
ঘ. লর্ড এ.ডি. আলেকজান্ডার
সঠিক উত্তর মালা: ১। গ, ২। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ভারত স্বাধীনতা আইনের পটভ‚মি সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?
২. ভারত স্বাধীনতা আইনে দেশীয় রাজ্য সম্বন্ধে কী বিধান করা হয়?
৩. ভারত স্বাধীনতা আইনের ফলাফল কী?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]