যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর। (Discuss About the Initiatives Taken by Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman to Reconstruct the War Destroyed Country.)


যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন
Rehabilitation and Reconstruction of War Ravaged Bangladesh
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনভার দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাতে থাকলেও এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সুদক্ষ দুরদর্শী রাজনীতিক-এর নেতৃত্বে থাকলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ।
শিল্পায়নে সরকারি সহায়তার স্বার্থে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিল্প ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠার পরামর্শ প্রদান, বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিসিক অফিস পরিচালিত হয়ে আসছে।
ক. পুনর্বাসন কার্যক্রম (Rehabilitation Activities)
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর যে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই বিধ্বস্ত রাষ্ট্রের পুনর্বাসন ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। পুনর্বাসনের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শাসনকার্য শুরু করেছিলেন। ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ১
কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা, দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ লক্ষ বিধ্বস্ত বাসগৃহ পুনর্নির্মাণ করা এবং এদেরকে খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা ছিল সরকারের বিরাট দায়িত্ব।
এমনি নাজুক ও বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে জাতীয় পর্যায় থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত পুনর্গঠিত করেন। পাশাপাশি গ্রাম থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয় (০৯.০১.১৯৭২)। গ্রামের আয়তন ও লোকসংখ্যার ভিত্তিতে ৫ থেকে ১০ সদস্যের 'ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি' গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে গ্রাম পর্যায়ে 'ত্রাণ কমিটি' গঠিত হয়। এভাবে ইউনিয়ন থানা ও জেলা ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য ও চেয়ারম্যান নিয়োগে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের সব স্থানীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয় । আর-এর ফলে ত্রাণ কমিটিগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই স্বভাবতই অনেক স্থানে ত্রাণ কমিটির সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন যার ফলে আওয়ামী লীগের দুর্নাম হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের ক্রোড়পত্রে দাবি করা হয় সরকার ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায় ৯ লক্ষ ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করেছেন। সামগ্রিক পুনর্বাসন কর্মকাণ্ডে মোট ব্যয় ৭২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ।
১. জাতীয়করণ কর্মসূচি (Nationalization Programme)
ত্রিশ লাখ বাঙালির জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাধীনতার প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে (২৬.০৩.১৯৭২) পাট, বস্ত্র, চিনিকল, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণের আইন পাস করে। বাংলাদেশ ব্যাংক (জাতীয়করণ) আদেশের আওতায় সকল শাখাসহ ১২টি ব্যাংকের দখলিস্বত্ব সরকার গ্রহণের পর সেগুলো সমন্বয় করে ৬টি নতুন ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি তারিখে জারিকৃত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির ১নং আদেশ (APO 1) এবং পরবর্তী ২৮.০২.১৯৭২ তারিখে ঘোষিত রাষ্ট্রপতির ১৬নং আদেশ (PO 16)-এর আওতায় অবাঙালি তথা পাকিস্তানি মালিকানার প্রায় ৮৫% শিল্প-কলকারখানা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং রাষ্ট্র সেগুলোর মালিকানা গ্রহণ করে। এ ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো' জাতীয়করণ আইনের মাধ্যমে 'রাষ্ট্রায়ত্ত খাত' হিসেবে অভিহিত হয় । জাতীয়করণ আইনের আওতায় ৬৭টি পাটকল, ৬৪টি বস্ত্রকল এবং ১৫টি চিনিকল জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয় বিমান সংস্থা ও জাতীয় শিপিং সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের অধীনে আনা হয় । স্বাধীন বাংলাদেশে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বৈদেশিক বাণিজ্য জাতীয়করণ করা হয়। এ জাতীয়করণ কর্মসূচি সত্তরের নির্বাচনের সময় ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। তাছাড়া ছাত্রদের ১১-দফা দাবিতেও দেশের পাট, বস্ত্র, চিনিকল ও ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণের (৫নং দাবি) দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এমনকি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের দেয়া ঐতিহাসিক ২১ দফা কর্মসূচিতেও পাটশিল্প জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
তাছাড়া রাজনৈতিক দল ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাপ (মোজাফফর) এবং জাসদের মতো সমাজতান্ত্রিক দলগুলোতেও এ আর্থ- সামাজিক অবস্থা এবং সমসাময়িক প্রশাসনিক কাঠামোতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দিলে তারা কতটুকু সফলকাম হতো, তা নিয়েও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
২. কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার (Reformation of Agricultural System)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসনভার গ্রহণের সময় দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল কৃষিখাত নির্ভর। আর সেই সিংহভাগ কৃষকের কল্যাণেই তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে' এটা শুধু স্লোগানই ছিল না, ছিল বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি। মুক্তিযুদ্ধের পর ২২ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধুর সরকার। কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃষিবিষয়ক মৌলিক কাঠামো নির্মাণে প্রায় বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ, বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করেছিল।'
কৃষি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সংস্কারসমূহ যথাক্রমে নিম্নরূপ ছিল :
(১) জমির সকল বকেয়া খাজনা মওকুফসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন (২৬.০৩.১৯৭২); (২) পরিবার পিছু সর্বাধিক ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন;
(৩) দখলদার পাকিস্তানি শাসনামলে রুজু করা ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে ঋণী কৃষককে মুক্তি দেয়া হয় এবং তাঁদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মাফ করে দেয়া হয়;
(৪) ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের শেষ নাগাদ সারাদেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ৪০,০০০ শক্তিচালিত লো-লিফট পাম্প, ২৯০০ গভীর নলকূপ ও ৩০০০ অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হয়। আর এ ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ১৯৬৮-৬৯ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় ১৯৭৪-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ লক্ষ একরে উন্নীত হয়। সেচ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দেই কেবলমাত্র অধিক ফলনশীল ১৬,১২৫ টন ধানবীজ, ৪৫৪ টন পাট বীজ এবং ১,০৩৭ টন গম বীজ বিতরণ করা হয়। কৃষকের প্রয়োজনীয় সারের দাম বিশ্ব বাজারের চেয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ইউরিয়া, পটাশ ও টিএসপি সারের মূল্য মণ প্রতি ছিল যথাক্রমে ২০ টাকা, ১৫ টাকা ও ১০ টাকা। ফলে ১৯৬৯-৭০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় ১৯৭৩-৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রাসায়নিক সারের ব্যবহার গড়ে ৭০ শতাংশ, কীটনাশক ৪০ শতাংশ ও উন্নত বীজ-এর ব্যবহার ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ।
(৫) ধান, পাট, তামাক ও আখসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসব পণ্যের ন্যূনতম ন্যায্য বিক্রয়মূল্য ধার্য করে দেয়া হয়;
(৬) কৃষি গবেষণাকেও বঙ্গবন্ধু সরকার গুরুত্ব প্রদান করে। কৃষি বিষয়ক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গৃহীত হয়;
(৭) বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মাসের মধ্যে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পূর্ণোদ্যমে চালুর ব্যবস্থা করেন;
(৮) ফারাক্কা বিষয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট পানি বিজ্ঞানী বি এম আব্বাসকে ২১.১.৭২ তারিখে দিল্লি পাঠান এবং শুকনো মওসুমে পদ্মা নদীতে ৫৪,০০০ কিউসেক পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা লাভ করেন। পরবর্তী কোনো সরকারই সে লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও যেতে পারে নি;
(৯) সরকারিভাবে খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই ১০০টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়; (১০) কৃষকদের মধ্যে ১ লক্ষ বলদ ও ৫০,০০০ গাভী এবং ৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়; কৃষি উন্নয়নে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার জাতীয় পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার' নামে কৃষকদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ঘোষণা করে ।
৩. শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার (Reformation of Education System)
যেকোনো দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে দক্ষ মানবগোষ্ঠীর অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের ওপর জাতীয় অগ্রগতি নির্ভরশীল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানেও সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার সন্নিবেশিত হয়েছিল;
(১) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;
(২) সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, এবং
(৩) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।' আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার শাসনভার গ্রহণের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কুদরত-ই-খুদা কমিশন দেড় বছর কঠোর পরিশ্রম করে ব্যাপক জরিপ ও পর্যালোচনাভিত্তিক বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কারের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে একটি রিপোর্ট ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে সরকারের নিকট দাখিল করে।
কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের অপেক্ষা না করে তিনি কতিপয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
যেমন : (১) মার্চ ৭১ থেকে ডিসেম্বর ৭১ পর্যন্ত সময়কালের ছাত্রদের সকল বকেয়া টিউশন ফি মওকুফ করেন; (২) শিক্ষকদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন;
(৩) আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করেন এবং
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন;
বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে তিনি দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেন। এর ফলে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়;
(৫) বঙ্গবন্ধুর সরকার ৯০০টি কলেজ ভবন ও ৪০০টি হাইস্কুল পুনর্নির্মাণ করেন;
(৬) বঙ্গবন্ধুর আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করার
মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসন প্রদান ।
একই সাথে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার অফিস-আদালতে বাংলা প্রচলনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বাংলা একাডেমিতে সাটলিপি, মুদ্রাক্ষর ও নথি লেখার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেন। জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সারবার্তা (Summary of Kudrat-E-Khuda Education Commission) (১) দেশের জনগণকে জাতীয় কর্মে ও উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার যোগ্য করে তোলার জন্য একটি সর্বজনীন শিক্ষা
পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে।
প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষারূপে গণ্য করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যে অবৈতনিক শিক্ষা চালু আছে তাকে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাধ্যতামূলক করতে হবে ।
(২) ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক অভিন্ন ধরনের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে ।
প্রয়োজনে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় চালু করতে হবে।
(৩) শিক্ষার্থীদের পরিবেশ ও জীবন পদ্ধতি বিবেচনা করে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সংশ্লিষ্ট
বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ।
(৪) জীবিকা অর্জনের সহায়ক শিক্ষার অভাবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মধ্যে (১৪-১৭ বছর বয়সের) প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী প্রতিবছর পড়াশোনা ত্যাগ করে। কাজেই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন ।
(৫) প্রারম্ভিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এবং সাধারণ শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এ উদ্দেশ্যে
নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষাক্রম মূলত দুভাগে বিভক্ত হবে; বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা।
দুর্ভাগ্য এই যে, ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু নিহত হন।
৪. অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার (Reformation of Economic System)
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার শাসনভার গ্রহণের পর পরই নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ব্যাংক বিমা প্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক বাণিজ্যেরও প্রায় ৮০% রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। ভূমি মালিকানার সর্বোচ্চ সিলিং ১০০ বিঘা এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) কার্যকর হয় ।
খ. বাংলাদেশ পুনর্গঠন (Rehabilitation of Bangladesh)
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বিষয়টি অধিকতর কার্যকরভাবে গুরুত্ব লাভ করেছিল। যেমন-
পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হবে দারিদ্র্য হ্রাস। আর লক্ষ্য অর্জনের কৌশল হিসেবে বলা হয়েছিল; কর্মের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সমতাভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর আর্থিক ও দ্রব্যমূল্য সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ।
অর্থনীতির প্রতিটি খাতে বিশেষত কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠন ও উৎপাদন বৃদ্ধি।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৩% থেকে ৫.৫%-এ উন্নীত করা। আর আনুষ্ঠানিক খাতসমূহে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নে স্বেচ্ছাশ্রমের বিকাশ। মানবশক্তি ও অর্থনৈতিক সম্পদের সর্বোচ্চ বিকাশের লক্ষ্যে উন্নয়নমুখী স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য (বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, ভোজ্যতেল, কেরোসিন, চিনি) উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এসবের বাজার মূল্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে রাখা এবং স্থিতিশীল করা (কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে)।
বণ্টন নীতিমালা (পুনর্বণ্টনমূলক আর্থিক নীতিকৌশল) এমন রাখা যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির হার গড় আয় বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হয় (উচ্চ আয়ের মানুষদের এক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে)।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের ভূমিকা তার ব্যবস্থাপনা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা দক্ষতার ভিত্তিতে নিরূপণ করা; গ্রাম- শহরে স্বকর্মসংস্থান সুযোগ বৃদ্ধি করা; অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর জনকল্যাণকামী পরিবর্তন সাধন করা। বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ সমাবেশ নিশ্চিত করা। বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ ও বহুমুখী করা এবং আমদানি কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা। বিশেষ করে সার, সিমেন্ট এবং স্টিলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশ নির্ভরতাভিত্তিক অনিশ্চয়তা হ্রাস করা ।
৮. কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা; খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কমিটমেন্ট এবং সামাজিক চেতনা বিকাশ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
১০. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ গৃহায়ণ, পানি সরবরাহ ইত্যাদি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের সাধারণ সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা ।
গ. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকরণ (Economic Prosperity)
প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। যেমন—
S. প্রথম পাঁচসালা (১৯৭৩-৭৮) পরিকল্পনায় বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা ৬২% থেকে ১৯৭৭-৭৮-এর মধ্যে
২৭% এ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন;
২ তিনি নতুন ৪ টি কর্পোরেশন গঠন করেন, যথা :
- বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন
– বাংলাদেশ সুগার কর্পোরেশন
-
- বাংলাদেশ টেক্সটাইল কর্পোরেশন এবং
- বাংলাদেশ গ্যাস অ্যান্ড অয়েল কর্পোরেশন
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ শিল্পঋণ সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০৫০টি নতুন শাখা স্থাপন করেন।
5. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে-এর ৩৩৫টি শাখা স্থাপন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নতুন মুদ্রা চালু করেন।
তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের জন্য সাহায্যদাতা গোষ্ঠী গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
গ্রামবাংলার উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কমসূচির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বগুড়ায় পরি উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
বঙ্গবন্ধু ঘোড়াশাল সারকারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন শিল্পস্থাপন, বন্ধ শিল্পকলকারখানা চালুকরণসহ অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জোর প্রয়াস গ্রহণ করেন।
ঘ. সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিকদের কল্যাণ (Welfare of Government Employee and Labour)
বঙ্গবন্ধুর শাসনভার গ্রহণের সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে অর্থ ছিল তা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্পন্ন ছিল না। বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কমিশন গঠন করে ১০ স্তরবিশিষ্ট নতুন বেতন সেল বাস্তবায়ন করেন। তিনি শ্রমিকদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে তিনি মে দিবসে শ্রমিকদের মজুরির হার বৃদ্ধির ঘোষণা দেন ।
৫. যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন (Communication and Infrastructural Development) সড়ক ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপ (Measures Taken for Road and Rail Communication): বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল ব্রিজ সেতু পুনর্নির্মাণ করেন এবং অতিরিক্ত ৯৭টি নতুন সড়ক সেতু নির্মাণ করেন। যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা ছিল বঙ্গবন্ধুর এক বৈপ্লবিক প্রয়াস। তার উদ্যোগে গঠিত কমিশন ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর যমুনা সেতুর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রণয়ন করে (দ্রষ্টব্য, ইত্তেফাক: ২২.০১.১৯৭৫)।
বিমান যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in Airways Sector) : বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-কুমিল্লা রুটে বিমান চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক রুটেও একটি বোয়িং সংযোজিত হয় এবং ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুন ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের প্রথম ফ্লাইট চালু হয় । কুর্মিটোলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ।
সমুদ্র ও নৌপরিবহন ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in Sea and Water Transport Sector) : বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন গঠিত হয়। এ শিপিং কর্পোরেশন ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের মধ্যেই কোস্টারসহ ১৪টি সমুদ্রগামী জাহাজ সংগ্রহ করে ।
৪. বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন (Development of Electricity) : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সারা দেশে বিদ্যুৎ সাব স্টেশনগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এমনি পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেন। তিনি ৫০০০ বিদ্যুৎ পোল আমদানি করেন এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৫০০ কিমি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন এবং বিদ্যুতের উৎপাদন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে ডিসেম্বরে ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে দেশব্যাপী পল্লি বিদ্যুৎ কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়, এমনকি সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে পল্লি বিদ্যুতায়নের প্রতিশ্রুতি সন্নিবেশিত হয়।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন (Development of Tele Communication System) : মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ৫৫,০০০ টেলিফোন চালুর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রামে উপগ্রহ-ভূউপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]