আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার কারণ আলোচনা কর। (Discuss the Causes of Failure of Awami League Government.)

আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার কারণ (Causes of the Awami League Government's Failure) বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সাড়ে ৩ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সাফল্যের এক সংক্ষিপ্ত খতিয়ান আমরা উপরে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। এখানে আমরা আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের ব্যর্থতা তথা-এর পতনের কারণসমূহ তুলে ধরতে চেষ্টা করব ।
১. সাধারণ কারণসমূহ (General Causes) noilensis)
দুর্ভিক্ষ (Famine) : আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ এক ব্যাপক দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য আকাশচুম্বী আকার ধারণ করে; শতকরা ৩০০ ভাগ থেকে ৪০০ ভাগ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। না খেতে পেয়ে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সরকার তার সীমিত সম্পদ দিয়ে এবং বৈদেশিক সাহায্য ও রিলিফ দিয়েও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি সাধন করতে পারে নি। ফলে জনগণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে ।
(২) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি (Degradation of Law and Order Situation) : আওয়ামী লীগের শাসনকালে সমগ্র দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দারুণ অবনতি ঘটে। প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রকাশ পেতে থাকে দেশের দুর্ভিক্ষ, রাহাজানি, হত্যা, গুপ্ত হত্যা, লুট, সীমান্ত পাচার, ছিনতাই, ধর্ষণ, প্রভৃতির এক করুণ চিত্র।
সরকারি এক হিসাবমতে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি মাস থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত দেশে ২০৩৫টি গুপ্ত হত্যা, ৩৩৭টি ছিনতাই, ১৯০টি ধর্ষণ, ৪০০৭টি ডাকাতি ও ৪৯২৫ জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। (৩) দুর্নীতি (Corruption) : ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে অসংখ্য লোক প্রাণ হারায়। বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিলিফ অপারেশন (আনরব UNROB) থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত ১৩৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট না হলেও আওয়ামী লীগের ও সরকারের কিছু সংখ্যক ব্যক্তির দ্বারা অর্থের অপচয় ঘটে। ফলে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি-সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র এবং দেশের জনসাধারণ ক্ষমতাসীন সরকারের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
(৪) সীমান্ত পাচার (Trafficking in Border) : আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সম্পাদিত বাণিজ্যচুক্তি প্রকারান্তরে চোরাচালানকে উৎসাহিত করে তোলে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সীমান্ত পাচারের ফলে দেশের সোনালী আঁশ পাট ভারতে ব্যাপক হারে পাচার হতে থাকে। সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সীমান্ত পাচার দমনে প্রেরণ করা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি।
২. প্রশাসনিক কারণসমূহ (Administrative Causes)
আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমলাদের প্রতি যথেষ্ট অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। ফলে আমলাগণ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তাই তারা সরকারের নীতিমালা সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমলাদের প্রতি অনুসৃত নীতিসমূহ নিয়ে আলোচনা করব । (১) প্রশাসনিক ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটির সুপারিশসমূহ ( Recommendations of Administrative and Job Reconstruction Committee) : এ কমিটির সুপারিশে বলা হয় যে, চাকরির ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য হ্রাস করে একটি শ্রেণিহীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে যাতে কোনো 'এলিট' ব্যবস্থা থাকবে না। আমলাগণ স্বভাবতই তা মুক্ত মনে গ্রহণ করতে পারেন নি।
(২) চাকরি ও বেতন কমিশনের সুপারিশসমূহ ( Recommendations of Job and Pay Commission) : কমিশন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে যে ২০৮টি গ্রেড প্রচলিত ছিল তা হ্রাস করে মাত্র ১০টি গ্রেড করার সুপারিশ করে। এ কমিশন চাকরির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন ১৩৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ২০০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু এ পদক্ষেপ সাধারণ কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করতে পারে নি ।
(৩) ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানের ত্রুটি (Faults of the Constitution of 1972 ) : বাংলাদেশের ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে আমলাদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে কোনো প্রকার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ছিল না। ফলে আমলাগণ স্বভাবতই অনিশ্চয়তার কবলে নিপতিত হন। তদুপরি প্রশাসনিক কাঠামোতে অনেক ক্ষেত্রে আমলাদের ডিঙ্গিয়ে প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সরকারি উচ্চ পদসমূহে নিয়োগ করা হয়। এটাও আমলাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (৪) আমলাদের ভূমিকা সম্পর্কে সরকারি ঘোষণা (Declaration about the Role of Bureaucrats ) : ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয় যে, সমাজ পরিবর্তনে আমলাদের কোনো প্রকার ভূমিকা থাকতে পারে না। এতে বলা হয় যে, রাজনৈতিক কর্মীরাই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। আমলাদের সম্পর্কে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের এ ধারণা তাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে ।
(৫) রাষ্ট্রপতির ৯নং আদেশের প্রতিক্রিয়া (Reaction of President's Order 9 ) : রাষ্ট্রপতির ৯নং আদেশে বলা হয় যে, সরকার ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবে। এ বিষয়ে কোনো রিট আবেদনও গ্রহণ করা হবে না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ৯১ জন, ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ৩০০ জন উচ্চপদস্থ আমলা বহিষ্কৃত হন। এমতাবস্থায় আমলাদের পক্ষে সরকারি কার্য সুষ্ঠুভাবে পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
৩. ত্রুটিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতি (Defective Socialist Economic Policy)
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রপরিচালনার অন্যতম মৌল নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ সমাজতন্ত্র প্রকৃত সমাজতন্ত্রে পরিণত হতে পারেনি। এক্ষেত্রে যেসব জুটি দৃষ্ট হয় সেগুলো
ছিল নিম্নরূপ:
(১) যথোপযুক্ত ক্যাডারের অভাব (Lack of Sufficient Cadres) : ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব
সমাজতান্ত্রিক নীতিমালা গ্রহণ করে। কিন্তু সে অনুপাতে তারা ক্যাডার (Cadre) সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় নি।
(২) আংশিক জাতীয়করণ নীতি (Partly Nationalization Policy) : আওয়ামী লীগ সরকার শিল্প জাতীয়করণ নীতি ঘোষণা করলেও এদেশের অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র কৃষিব্যবস্থাকে এ জাতীয়করণের অধীনে আনয়ন করে নি। কৃষিব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করার পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের যথেষ্ট অনীহাভাব পরিলক্ষিত হয়। সরকার ১০০ বিঘা পরিমাণ জমির সিলিং ধার্য করলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
(৩) মরেটোরিয়াম ব্যবস্থা ঘোষণা (Declaration of Mortorium System) : ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ঘোষণা মোতাবেক জাতীয়করণের ক্ষেত্রে যেখানে ২.৫ মিলিয়ন টাকার সিলিং নির্ধারণ করা হয় সেখানে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তা বৃদ্ধি করে ৩০ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত করা হয়। পরে 'মরেটোরিয়াম ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত করা হবে না ।
(৪) উৎপাদনের নিম্নগতি (Slow Speed of Production) : জাতীয়করণকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহে অদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও প্রশিক্ষণের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয় দারুণভাবে। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনের মাত্রা প্রায় শতকরা ৯ ভাগে নেমে আসে।
৪. রাজনৈতিক কারণসমূহ (Political Causes)
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পতনের পেছনে যেসব রাজনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল তন্মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো উল্লেখযোগ্য : (১) সাংবিধানিক অভ্যুত্থান (Constituional Upsurge) : আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত একদলীয় প্রাধান্যের শাসনব্যবস্থা চালু করে । মাত্র দু'ঘণ্টার বিতর্কে সংবিধানের এ পরিবর্তনকে অনেকে 'সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' বলে উল্লেখ করেন।
(২) জনমত ও বাকস্বাধীনতার অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ (Control of Freedom of Speech and Public Opinion) : আওয়ামী লীগ শাসনামলে জাতীয় সংবাদপত্রসমূহের সংখ্যা হ্রাস করে মাত্র ৪ টি পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি প্রদান করা হয়। এর ফলে জনমত ও বাকস্বাধীনতা দারুণভাবে ব্যাহত হয়।
(৩) জেলা প্রশাসন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের অত্যধিক প্রাধান্য (Excessive Priority of Political Party in District Administration) : আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য দেশে বিদ্যমান জেলাসমূহ পুনর্গঠন করে সর্বমোট ৬১টি জেলা গঠন করার প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রতিটি জেলায় একজন জেলা গভর্নর (District Governor) থাকেন এবং তিনিই জেলার সর্বময় কর্তারূপে গণ্য হন। এতে করে সরকারি আমলাগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ৫. সামরিক কারণসমূহ (Military Causes)
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পতনের পশ্চাতে সামরিক কারণও যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকর ছিল। যেমন— (১) সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য (Tradition of Army) : বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অতীত ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পাকিস্তান আমল থেকেই এ অঞ্চলে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে জড়িত ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই তাদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের প্রবৃত্তি সঞ্চারিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি সৈন্যরা অংশ নেয় এবং দেশকে স্বাধীন করে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ব্যারাকে ফিরে যায় ও পরবর্তীকালে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে প্রবৃত্ত হয় ।
(২) সেনাবাহিনীর মনোভাব (Sentiment of Army) : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৬,০০০ এবং তন্মধ্যে পদাতিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০,০০০ হাজার, নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০০ এবং বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৫,৫০০। এ সংখ্যা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫,০০০-এ উন্নীত হয় এবং তন্মধ্যে ২৮,০০০ ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত। প্রতিরক্ষা বাহিনীর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাংলাদেশ রাইফেলস। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এক হিসাব অনুসারে-এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২০,০০০। পাকিস্তান প্রত্যাগত সৈনিকগণ সাধারণত ভারত বিদ্বেষী ছিল। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সৈনিকগণ বিজয়ের চরম মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ করাকে 'উড়ে এসে জুড়ে বসা' বলে অভিহিত করেন। এসব কারণে সেনাবাহিনীও আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্বেষী হয়ে ওঠে।
(৩) পাকিস্তান প্রত্যাগত সৈন্যদের ১৮ মাসের বেতন দাবি (Demand of 18 Months Salary of Pakistan Backed Soldiers) : পাকিস্তান প্রত্যাগত সৈনিকগণ পাকিস্তানে আটক থাকাকালীন ১৮ মাসের বেতন দারি করতে থাকে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ব্যক্তিগত সুপারিশের মাধ্যমে কোনো কোনো অফিসারের পদোন্নতি ঘটায় অন্যান্য অফিসার ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
(৪) জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতকে অবজ্ঞা (Negligence of Defence Sector in National Budget) : পাকিস্তানি শাসনামলে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল শতকরা ৭৮ ভাগ। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোরকালে এ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দারুণ অবনতি ঘটে। এক হিসেবে দেখা যায় যে, ১৯৭২-৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল শতকরা ১৮.৩ ভাগ; ১৯৭৩-'৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ পরিমাণ ছিল শতকরা ১৬ ভাগ; ১৯৭৪-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তা ছিল শতকরা ১৫ ভাগ এবং ১৯৭৫-'৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তা ছিল শতকরা ১২.৫। ফলে সেনাবাহিনী নিজেদের মানমর্যাদা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে ওঠে এবং তাদের মনে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে।
(৫) সৈন্যবাহিনীর রক্ষীবাহিনী বিরোধী মনোভাব (Anti Rokkhibahini Sentiment of Army) : আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব অতিমাত্রায় রক্ষীবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত জাতীয় বাজেটের সিংহ ভাগ রক্ষীবাহিনীর জন্য ব্যয় করা হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রক্ষীবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫,০০০; কিন্তু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তা বৃদ্ধি করে ১,৩০,০০০-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এসব কারণে সেনাবাহিনীর মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ।
৬. পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা (Failure in Foreign Policy)
আওয়ামী লীগ সরকার যদিও জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী ছিল তথাপি বাস্তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত ও সোভিয়েত সরকারের প্রভাব অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক-রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে চরম অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরস্থিতির অবনতি, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার প্রভৃতি কারণে জনগণ বাকশালের সফলতার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে কতিপয় ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক আমলা এবং নেতৃস্থানীয় সামরিক সদস্যের দ্বারা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]