১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের কারণ ও সুযোগ-সুবিধা আলোচনা কর। (Discuss the Causes and Opportunities of Military Upsurge of 15th August.)

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও আদর্শিক পটপরিবর্তন
The Murder of Bangabandhu and His Family and the Ideological Turn-Around
ভূমিকা Introduction
মুজিব হত্যাকাণ্ড তো একমাত্র তুলনীয় হতে পারে হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রায় চার দশক পর মানুষ আবার অনুভব করেছে শেখ মুজিব কী ছিলেন। কেন তিনি 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি পেয়েছিলেন। মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে, তিনি বাঙালিকে বড় করতে চেয়েছিলেন, আর মানুষকে বড় করার একটি পথ হলো নিরস্ত্র মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। আজ আমরা দেখছি, আমরা একবারই সে মর্যাদা পেয়েছিলাম, সে পথ একবারই উন্মুক্ত হয়েছিল আমাদের জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে, যখন শেখ মুজিবুর রহমান নামে একজন নিরস্ত্র বাঙালির নেতৃত্বে আমরা সব ধরনের সশস্ত্রদের হটিয়ে দিয়েছিলাম।
প্রাক ১৯৭১ এবং ১৯৭১-৭৫-এর ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সিভিল সমাজে শেখ মুজিবের অবস্থা কোথায় আর অন্যান্যদের অবস্থান কোথায়। তাঁকে বাদ দিয়ে প্রাক ও উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা অসম্ভব। শতাব্দীর গর্বিত ইতিহাসে ৩ জন বাঙালির নাম বাঙালির জনমানসে ভাস্বর হয়ে থাকবে। একজন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আর অন্যজন রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২ জন বাংলা ভাষাকে রূপ দিয়েছিলেন, আর অন্যজন বাঙালির অনেক বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন, এ জাতির জন্য স্বাধীন এক ভূখণ্ডের যার নাম বাংলাদেশ। এজন্য বাঙালি ও বাংলাদেশ নামটাই বেঁচে থাকবে।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক দিন। বাঙালি জাতির জীবনে যে স্বল্পসংখ্যক মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তাঁর অকুতোভয় সংগ্রামী নেতৃত্বে একদিন জেগে ওঠেছিল সমগ্র বাঙালি জাতি—রুখে দাঁড়িয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শোষক এবং শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বহু আত্মত্যাগ, সংগ্রাম, তথা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক প্রতিভার চূড়ান্ত ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতি পেয়েছিল স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সাফল্য ছিল অতুলনীয়। আর সে কারণেই তিনি বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশের জাতির পিতা। এক কথায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তখন তার প্রতি যে গভীর শ্রদ্ধা এবং আবেগ-উচ্ছল ভালোবাসা প্রদর্শিত হয় তা ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। অথচ মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সামরিক বাহিনীর একাংশের হাতে তিনি সপরিবারে অত্যন্ত নৃশংসভাবে নিহত হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট এ বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনামল বা বঙ্গবন্ধুর শাসনামল শুরু হয়। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ শাসনামলের অবসান ঘটে। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর 'গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—
'শেখ মুজিবের জীবন লক্ষ করলে একটা জিনিস প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে, একজন অবিসংবাদী নেতার জনপ্রিয়তা কত তাড়াতাড়ি নিচে নেমে যেতে পারে এবং ব্যক্তিটি কত বিভিন্ন বিষয়ে অকস্মাৎ বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারেন। ক্ষমতায়
চিত্র-২৫ : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতাসীন অবস্থার দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার এক ক্রান্তিলগ্নে দেশি- বিদেশি নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কয়েকজন বরখাসতকৃত সামরিক অফিসারের প্ররোচনায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী উচ্চভিলাষী জুনিয়র অফিসারদের চক্করে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে তার (নিজ বাসভবনে) ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড' প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেন- মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে, প্রতিটি মুসলমানকে আহ্বান জানাচ্ছে— সে আহ্বান উপেক্ষা করে ঘাতকের দল এগিয়ে এলো ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটাবার জন্য।"
গর্জে উঠলো হাতের অস্ত্র, ঘাতকের দল হত্যা করল স্বাধীনতার প্রাণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই নরপিশাচরা হত্যা করল আমার মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। হত্যা করল মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রনেতা শেখ কামালকে, শেখ জামালকে, তাদের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। সবশেষে হত্যা করল শেখ রাসেলকে যার বয়স মাত্র ১০ বছর
ক্রমিক নং
নাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল ১৯৭২-১৯৭৫
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে যারা শহীদ হন
পরিচয়
Oct-১৯৪১
হত্যাকাণ্ডের স্থান
রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি; বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
G
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব
শেখ কামাল
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনী
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ পুত্র
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
2)
σ
8
শেখ জামাল


বঙ্গবন্ধুর মেঝো পুত্র
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন


or
১০
শেখ রাসেল
সুলতানা কামাল কুকু
পারভীন জামাল রোজী
শেখ আবু নাসের জনৈক পুলিশ সদস্য
আব্দুল
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত
শেখ জামালের স্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই
ডিএসপি
কাজের ছেলে
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ও নিকটাত্মীয়
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
শেখ কামালের স্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
১২
বেবি সেরনিয়াবাত
১৩
আরিফ সেরনিয়াবাত
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র
১৪
সুকান্ত বাবু
১৫
শহীদ সেরনিয়াবাত
১৬
আব্দুল নঈম খান রিন্টু
১৭
পটকা
কাজের ছেলে
১৮
লক্ষ্মীর মা
কাজের মেয়ে
১৯
জনৈক ব্যক্তি
20
শেখ ফজলুল হক মনি
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
২৭ নম্বর মিন্টো রোডের বাসা
সেরনিয়াবাতের নাতি ও আবুল হাসনাত | ২৭ নম্বর মিন্টো
আব্দুল্লাহর পুত্র
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের তাতিজা
রোডের বাসা
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অতিথি | ২৭ নম্বর মিন্টো
হিসেবে আগত
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অতিথি
রোডের বাসা
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
২৭ নম্বর মিন্টো
রোডের বাসা
আওয়ামী যুব লীগের চেয়ারম্যান এবং শেখ মনির বাসা
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও ঘনিষ্ঠ সহচর
২১
বেগম আরজু মনি
শেখ মনির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী
২১
কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ
বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা অফিসার
শেখ মনির বাসা
সোবহান
বাগের
রাস্তায়
এছাড়া মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে গিয়ে কামানের গোলা পড়ায় শাহবুদ্দিন, আমিরুদ্দিন, নাসিমা,
রিজিয়া ও রাশেদা নামে পাঁচ জন মারা যায়।
ড. হারুন-অর-রশিদ উল্লেখ করেছেন যে, 'যদিও সেনাবাহিনীতে চাকরিরত এবং বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত কিছু সেনা সদস্য কর্তৃক এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তবুও এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি-বিদেশি শক্তি ও এদের প্রতিক্রিয়াশীল সহযোগী গোষ্ঠীর যে সংশ্লিষ্টতা ছিল, তা এখন বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়। এ ছিল একটি ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক একটি মাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল গঠনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সাময়িক বিভ্রান্তির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। বস্তুত, মুজিব হলেন প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ দু’পরাশক্তির মধ্যে 'ঠাণ্ডা লড়াই' (Cold War) জনিত বিশ্ব রাজনীতির নির্মম শিকার।'
মওদুদ আহমদ লিখেছেন, 'স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, অমরতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েও শেখ মুজিব তার আস্বাদ গ্রহণ করতে পারেন নি। তবে তার মৃত্যু ছিল মহিমান্বিত। অত্যন্ত দুঃখবহ এবং করুণ মৃত্যুবরণ করলেও তিনি একটি মুক্ত এবং স্বাধীন বাংলাদেশ এদেশের মানুষকে উপহার দিয়েছেন, একটি নতুন জাতিসত্তা সৃষ্টি করে গেছেন।'
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি মুজিব সরকারের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতায় আরোহণের পর তিনি যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন,-এর অধিকাংশ সদস্যই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাই প্রথমে এটিকে আওয়ামী লীগের একটি অংশ কর্তৃক ক্ষমতা দখল বলে প্রচারের চেষ্টা করা হয়। সম্ভবত একই ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে সংবিধান, জাতীয় সংসদ কিছুই বাতিল ঘোষণা করা হয় নি। ক্ষমতায় আরোহণের পরপর শুধু বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে মুজিব সৃষ্ট রাজনৈতিক দলটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। এমনকি ট্যাংকে চড়ে খন্দকার মোশতাক ক্ষমতাসীন হলেও তখনি মার্শাল ল' বা সামরিক আইন জারি করা হয়-নি। ক্ষমতা দখলের ৫ দিন পর অর্থাৎ ২০ আগস্ট তা জারি করা হয়। ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবী শক্তি ক্ষমতায় আসীন হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]