সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও আদর্শিক পরিবর্তন আলোচনা কর। (Discuss About the Murder of Bangabondhu with His Family and the Ideological Turn-around.)

১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের কারণ Causes of Military Upsurge of 15th August
স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত পরিবেশে ৩ জন বরখাস্তকৃত সামরিক অফিসারসহ ২০-৩০ জন মেজর ও ক্যাপ্টেন সাঁজোয়া বাহিনীর প্রায় ১৪০০ সৈন্যের সমর্থনে ১৫ আগস্ট-এর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের এ অভ্যুত্থানের পেছনে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রবৃত্তি ও সুযোগ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
ক. ক্ষমতা দখলের প্রবৃত্তি (Tendency of Occupying Power)
১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক লে. কর্নেল ফারুক রহমান এ অভ্যুত্থানের পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করেন সেগুলো ছিল নিম্নরূপ :
১. আওয়ামী লীগের লোকেরা একজন সামরিক অফিসারের স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করলে শেখ মুজিব তার বিচার করেন নি।

মুজিব, তার পরিবার, তার দল এবং দুর্নীতিবাজ আমলারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেন, অপরদিকে সাধারণ মানুষ ... অনাহারে মৃত্যুবরণ করে ।
৩ তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে দারুণভাবে অবহেলা ও অপমানিত করেন ইত্যাদি ।
খ. ক্ষোভের প্রধান কারণগুলো যথাক্রমে (Main Causes of Distraction Accordingly)
১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপ দমনের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়। এর ফলে যেমন সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে, তেমনিই সেনাবাহিনীর সদস্যরা দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হন। কারণ, ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে যখন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন মধ্যপথে তাদেরকে প্রত্যাহার করা হয় । এমনকি অভিযানে বাড়াবাড়ির অভিযোগে কয়েকজন সামরিক অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়। পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী এলিটগণ সামরিক আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য ও নিপীড়নের শিকার হন। ফলে বাংলাদেশের নতুন শাসকবৃন্দ সামরিক প্রভাব দূরীভূত করে রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার কৌশল অবলম্বন
করেন। সুতরাং, তারা একটি শক্তিশালী ও বৃহৎ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন না । যেখানে পাকিস্তানে রাজস্ব ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হতো সেখানে বাংলাদেশে ১৯৭২-'৭৩ খ্রিষ্টাব্দের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৮.৩% এবং এ বরাদ্দ ১৯৭৫-'৭৬ খ্রিস্টাব্দের বাজেটে ১২.৫% ভাগে হ্রাস পায়। অপরদিকে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় রক্ষীবাহিনী নামে একটি আধাসামরিক বাহিনী সৃষ্টি করা হয়, যা তুলনামূলকভাবে দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। প্রতিরক্ষা খাতে স্বল্প ব্যয় বরাদ্দের কারণে সামরিক বাহিনীর বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা ও সম্প্রসারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে, জাতীয় রক্ষীবাহিনী সামরিক বাহিনীর পেশাগত গর্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার প্রতি হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হয় ।
পাকিস্তান প্রত্যাগত সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যাদের সংখ্যা ছিল অর্ধেকের বেশি) সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ, তারা যে ১৮ মাস পাকিস্তানে আটক ছিলেন সরকার তার বেতন দেয় নি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক জুনিয়র অফিসারকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়ার ফলে পাকিস্তান প্রত্যাগত অনেক অফিসার তাদের সিনিয়রিটি হারান।
সামরিক বাহিনীর অনেকে আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে তাদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব দৃঢ়মূল ছিল । স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে একত্রে লড়াই করলেও তাদের এ মনোভাব দূরীভূত হয় নি। যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশ হতে সামরিক সাজ- সরঞ্জাম স্থানান্তর এ মনোভাবকে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করে। আওয়ামী লীগের 'ভারত-ঘেঁষা' পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারতবিরোধী মনোভাব মুজিববিরোধী মনোভাবে রূপান্তরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীকে অনেকেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী বলে মনে করে এবং তারা মুজিবকে অপসারণ করে 'ভারতের আধিপত্য' হতে দেশকে মুক্ত করতে চায়।
বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি অংশ পাকিস্তান বাহিনীর উত্তরাধিকারী হিসেবে রক্ষণশীল ইসলামি আদর্শের অনুসারী ছিল। তাদের প্রত্যাশা ছিল জাতীয় জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্তৃক ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করাকে তারা ইসলামের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে
মনে করে ।
গ. সামরিক অভ্যুত্থানের সুযোগ (Opportunity of Military Upsurge)
নিম্নোক্ত কারণে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি জনগণের আনুগত্যের অভাব ঘটে এবং সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয় :
১. বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে দেশে একটি সাধারণ ঐকমত্য ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে এ ঐকমত্য নষ্ট হয়ে যায়। একদলীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ দারুণভাবে বিঘ্নিত হয় । অনেকেই এ ব্যবস্থাকে অবৈধ বলে মনে করে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মুজিব সরকারকে উৎখাতের জন্য সহিংস পন্থা অবলম্বন করে । এমনকি আওয়ামী লীগের একটি অংশ একদলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধাচরণ করে ।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মজুদদারি, কালোবাজারি, চোরাকারবারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রশাসনিক অদক্ষতা ইত্যাদি কারণে দেশের অর্থনীতিতে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি ও শিল্প খাতে উৎপাদন হ্রাস ও বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৯-'৭০ খ্রিষ্টাব্দের ব্যয়ের সূচক ১০০ ধরে ১৯৭১-'৭২ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ব্যয় ছিল ১২১। ১৯৭৪-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০৭-এ দাঁড়ায়। সকল শ্রেণির মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায় এবং ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষার্ধে সরকারি হিসাব মতে ২৭,৫০০ লোক দুর্ভিক্ষে মারা যায়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও দারুণ অবনতি ঘটে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে অপরাধের সংখ্যা ৯২% বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক হত্যা, সশস্ত্র ডাকাতি এবং ব্যাংক, বাজার ও পুলিশ ফাঁড়ি লুট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়। এসব কারণে মুজিব সরকারের প্রতি জনসমর্থন হ্রাস পায়, যা সামরিক বাহিনীকে হস্তক্ষেপের জন্য উৎসাহিত করে।
আযমী ी আদর্শগত ও মোকাবেলা করতে বার্থ হয়। । শাসনামলে এক পর্যানো আমলাদের বেতন মাস এব যেভাবে মুজিব সরকার অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল মরা সুযোগ লাভ করো। যুক্ত
দেশি-বিদেশি গ ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন
Political Turn Around of 15th August Upsurge
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের রাজনীতির আদর্শিক এটি নিখুঁত চিত্র উঠেছে মওদুদ আহমদ-এর লেখায়। তিনি তাঁর 'বাংলাদেশ : 'শেখ মুজিবের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির সামগ্রিক প্রকাশ বদে
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা বহুলাংশে যান পায়। চিন, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং প দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি পচে ।
'এখানেই ঘটনার শেষ হয় নি। নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে একটি বিদ্রোহ এবং প্রতি-বি
তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অনুসরণে এদেশে সামরিক শাসন তার চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসে। নভের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় চার নেতাকে ফাকির অত্যাধুনিক আগ্রেয়ারের সাহায্যে হত্যা করা হয়।'
এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাঙালি জাতির রক্তক্ষয়ী দীর্ঘকালীন সংগ্রানের মধ্য দিয়ে অর্জিত মূল্য সমূহকে
করে জাতির ইতিহাসকে এক বিতর্কিত অধ্যায়ের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। বাঙালি জাতি একটি বদরী সুদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পরও আত্মত্যাগের রক্তরঞ্জিত মহিনা বিস্তৃত হয়ে কীভাবে এ শান্ত ও চক্রান্তে ক্ষণিক মোহাদে আবিষ্ট হয়ে পড়েছিল তা ভাবতেও আশ্চর্য লাগে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যত লীলাখেলাই চলুক না কেন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধানতম নেতার আসন থেকে শেখ মুজিবকে বিচ্যুত করা সম্ভব হবে না। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চিরদিন শেখ মুজিবের কীর্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অনর্পিন হয়ে থাকবে। তিনিই বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশের জাতির পিতা আর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙাপি হিসেবে বেঁচে থাকবেন বাঙালিদের স্মৃতির মানসপটে চিরদিন। তাইতো জসীম উদ্দীন, সুফিয়া কামাল, সিকান্দার আবু জাফর, শামসুর রাহমান প্রমুখ কবির মতো অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, একাত্তরের প্রেক্ষাপটে অমর কাব্য -
'যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: qualitycando@gmail.com