ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ ঘটনাপঞ্জি '৭১'

ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ : ঘটনাপঞ্জি '৭১
মুক্তিযুশের ইতিহাসে ঢাকা শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে আও সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকারের সমতা হস্তান্তরের গড়িমসির কার েরাঙা পত মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তা ১৯৭১
মুক্তিযুম্বের প্রভৃতি পর্ব। ২ মার্চ থেকে হরতাল, পাকিস্তান সরকারের প্রতি সর্বাত্মক অসহযোগিতার মাধ্যমে অপদার আন্দোলন, মুখের প্রস্তুতি, পরিশেষে পাকিস্তান সামরিক আস্থার আক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ১-২৫ মার্চ ঢাকা হয়ে ওঠে। তাছাড়া ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান হয় তার সূচনা এবং প নিরীহ মানুষদের উপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড বাঙালিকে ঢাকা ত্যাগ, দেশত্যাগ ও কর্মস্থল ত্যাগে বাধ্য করে। ঢাকা মাসে হয়ে যায় শত্রু দ্বারা অবরুদ। সংবাদপত্রে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ ও বিদেশি সাংবাদিকদের বহিষ্কারের ঢাকা কার্যত গণমাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপরও গোপনে ঢাকার সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। শত্রু পরিবেষ্টিত ঢাকায় যখন ान প म প্রায় অসম্পূ গেরিলারা নানারকম অভিযান চাপিয়ে পাকিস্তান সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়। 'ঢাকা সম্পূর্ণ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে' বহির্বিশ্বে সরকারের দেয়া এ ধারণা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সর্বোপরি সেপ্টেম্বরে লে. জেনারেল টি খানকে সরিয়ে বাঙালি দালাল ডা. মালিকের নেতৃত্বে বেসামরিক শাসনও পাকিস্তানকে শেষরক্ষা করতে পারেনি। গেরিলাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত এবং মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত পাকিস্তান বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' শ্লোগানে যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তা বাস্তব রূপ লাভ করে। এভাবে ঢাকা থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু ও শেষ হয়।
'ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ ঘটনাপঞ্জি '৭১'
'ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ ঘটনাপঞ্জি '৭১' শীর্ষক লেখায় মূলত ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সারসংক্ষেপ দৈনিক পত্রিকা ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যানুসারে তারিখের ক্রমানুসারে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও অবরুদ্ধ ঢাকার পত্রপত্রিকাগুলো মুক্তিযুদ্ধের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করায়, মুক্তিযোদ্ধাদের 'দুষ্কৃতকারী', 'বিচ্ছিন্নতাবাদী', 'ভারতীয় দালাল', 'অনুপ্রবেশকারী' ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশনের সাফল্য নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। আলোচ্য লেখায় সেক্ষেত্রে অন্যান্য উৎসের ভিত্তিতে এবং তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে দিনপঞ্জি রচনা করা হয়েছে।
১ মার্চ, ১৯৭১ সোমবার
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে বেতার মাধ্যমে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাজধানীতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ ক্ষোভ জানায়। আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্টের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ২ মার্চ ঢাকা শহরে ও ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতালের ডাক দেন। তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে জানান। অধিবেশন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ এবং বিমান বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। একই দিন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস.এম. আহসানকে বরখাস্ত করে তার স্থলে লে.জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে গভর্নর নিযুক্ত করে।
১। দৈনিক বাংলা, দৈনিক আজাদ (২.৩.১893)
২। দৈনিক ইত্তেফাক (২.৩.১৯৭১) ২ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার

পরিশিষ্ট

আওয়ামী লীগের আহ্বানে ঢাকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ঢাকা শহর মিছিলের নগরীতে রূপান্তরিত হয়। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট, ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্রলীগ ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা ডাকসুর নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
সামরিক শাসক কর্তৃপক্ষ বেতার মারফত সন্ধ্যা ৭টা হতে সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি করে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় জনগণ সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে এবং মিছিল করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করা হলে শতাধিক ব্যক্তি হতাহত হয়। রাতে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে নিরস্ত্র জনতার উপর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা এবং অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
→ ৩ মার্চ, ১৯৭১ বুধবার
এ রাতে ঢাকায় সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ২৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৮ জন শিক্ষক ভয়াবহ বিপর্যয় হতে দেশকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনকল্পে জাতীয় পরিষদের সবগুলো পার্লামেন্টারি দলের ১১ জন নির্বাচিত নেতার প্রতি আগামী ১০ মার্চ ঢাকায় এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।
. বিকেলে পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিকলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে গণপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত জনগণকে এক পয়সাও খাজনা-ট্যাক্স না দেওয়ার আহ্বান জানান এবং সকল ব্যাপারে সর্বাত্মক অসহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। প্রকৃত অর্থে এ দিন থেকে অসহযোগ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।
O
৪ মার্চ, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়। মিছিল ও জনসভা অব্যাহত থাকে এবং প্রদেশের শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। ঢাকার সাথে বাইরের জল, স্থল ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকে । টেলিফোন বিভাগের কর্মীরা পশ্চিম পাকিস্তানে ট্রাঙ্ককল বুক ও টেলিগ্রাম প্রেরণ থেকে বিরত থাকে। ঢাকার শিল্পী সমাজ বেতার ও টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে অসহযোগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
ঢাকায় কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। এ দিন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ জন শিক্ষক বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে বিবৃতি দেন ।
০৫ মার্চ, ১৯৭১ শুক্রবার
বাংলাদেশের সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলনের সমর্থনে কবি-সাহিত্যিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজপথে মিছিল করেন। ঢাকা শহরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয় ।
সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় যে, ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।”
৩। দৈনিক পাকিস্তান (৩.৩.৭১)
৪। দৈনিক পাকিস্তান (৩.৩.১৯৭১)
৫। দৈনিক আজাদ (৩.৩,৭১)
৬। দৈনিক আজাদ (৪.৩.৭২)
৭। দৈনিক আজাদ (৪.৩.৭১)
৮। দৈনিক পাকিস্তান (৫.৩, ১৯৭১)
৯। দৈনিক আজাদ (৬.৩.৭১)
→ ৬ মার্চ, ১৯৭১ শনিবার
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
দুপুরে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য ছাত্রছাত্রী ও ডাকসুর আহ্বানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
পাকিস্তান সরকার লে. জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের স্থানে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১
৭ মার্চ, ১৯৭১ রবিবার
ঢাকাসহ সারা দেশে হরতাল, মিছিল, সভা-সমাবেশ অব্যাহত থাকে। সকল ১১টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙে ৩২৫ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। ১১
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিকেলে ৩.২০ মিনিটে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিসহ দিক- নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করেন। তিনি সামরিক আইন প্রত্যাহার, সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেন। সংগ্রাম কমিটি গঠন করে মুক্তি সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'-এই ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। ১২
ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে না করার প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে বিকেল ৩টা থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ থাকে।
রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কর্তৃক ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি প্রদান করেন এবং এতে প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতা প্রমাণে কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। ১৩
৮ মার্চ, ১৯৭১ সোমবার
সামরিক কর্তৃপক্ষ রেসকোর্সে প্রদত্ত শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা বেতারে প্রচারে সম্মত হওয়ায় বাঙালি কর্মচারীরা কাজে যোগদান করে । এ দিন সকাল ৮.৩০ মিনিটে বেতারে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা প্রচার করা হয়।
এই দিন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মহল্লায় মহল্লায়, বাসভবন, ছাত্রাবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় । সরকারি-বেসরকারি যানবাহন এবং প্রাইভেট মোটরগাড়িও কালো পতাকা লাগিয়ে চলাচল করে। ১৫ ছাত্রলীগ ও ডাকসু রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।১৬ পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি বা পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন ও মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর পৃথক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নিকট অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান ।
ব্রিটিশ ও পশ্চিম জার্মানির ১৭৮ জন নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করেন।১৭
→ ৯ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার
অসহযোগ হরতাল অব্যাহত থাকে। বাসগৃহসমূহে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশে * জাতীয় সরকার গঠনের অনুরোধ জ্ঞাপন করা হয়। ১৮
১০। দৈনিক আজাদ (৭.৩.৭১)
১১। দৈনিক আজাদ (৭.৩.৭১)
১২। দৈনিক আজাদ (৭.৩,৭১)
১৩। দৈনিক আজাদ (৮.৩,৭১)
১৪ । দৈনিক আজাদ (৮.৩.৭১)
১৫। দৈনিক আজাদ (৯,৩, ৭১)
১৬। দৈনিক আজাদ (৯.৩.৭১) ১৭ । দৈনিক আজাদ (৯.৩.৭১)
১৮ । দৈনিক আজাদ (১০.৩.৭১)
পরিশিষ্ট
9
ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিকী জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করাতে অস্বীকার করায় তাকে শুধু 'খ' অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৯
জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারবর্গকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এবং পশ্চিম জার্মানি কর্তৃক
• তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সামরিক বিমান প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং আতাউর রহমান খান পল্টন ময়দানের এক জনসভায় শেখ মুজিবের প্রতি বাংলার জাতীয় সরকার ঘোষণার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির এক প্রচারপত্রে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
১০ মার্চ, ১৯৭১ বুধবার
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন, ব্যবসায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর গাড়ি ও জীপে কালো পতাকা দেখা যায় ।
অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে লেখক শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল ও শহিদ মিনারে সভা সমাবেশ করে। " - ১১ মার্চ, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
হাইকোর্টের বিচারপতি ও সচিবালয়ের সচিবদের বাড়ি ও গাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন ও অফিস বর্জন। রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪ নম্বর সামরিক আদেশ জারির মাধ্যমে সরকারি ও সেনাবাহিনীর কাজে বাধাদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে।
- ১২ মার্চ, ১৯৭১ শুক্রবার
২৪টি কর্মচারী সংস্থার সমন্বয়ে কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশের মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে।
22
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন ও দেশের সংগ্রামী মানুষের সাথে একাত্মতা ঘোষণা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ৪-দফা প্রস্তাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে প্রস্তাব গ্রহণ করে।
অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার ঘোষণা ।
১৩ মার্চ, ১৯৭১ শনিবার
সিএসপি ও ইপিসিএস সমিতির পদস্থ বাঙালি সরকারি কর্মচারীগণ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থনজ্ঞাপন এবং আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন প্রদান করে ।
. 28
সামরিক আইনের ১১৫ নম্বর আদেশ জারি করে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের সকলকে কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হয় । ২৫
ন্যাপ নেতা গাউস বক্স ওয়ালী খানের ঢাকা আগমন এবং বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর আহ্বান
১৪ মার্চ, ১৯৭১ রবিবার
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দেশের সম্পদ বাইরে পাচার বন্ধে চেকপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।
১৯ । ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বি.বি.সি. ১০.৩.৭১)
২০। (দৈনিক বাংলা (১০.৩.১৯৭১)
২১। দৈনিক আজাদ (১১.৩.৭১)
২২। দৈনিক আজাদ (১৩.৩.৭১)
২৩। দৈনিক আজাদ
২৪ । দৈনিক আজাদ (১২.৩.৭১) ২৫। দৈনিক আজাদ (১৪,৩,৭১) ২৬। দৈনিক আজাদ
গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলনের ৩৫-দফা নয়া নির্দেশনা জারি। বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা ১১৫ নং সামরিক আদেশের প্রতিবাদে মিছিল এবং কাজে যোগ না দেয়ার
ব্যক্ত করে।
ঢাকার দৈনিক পত্রিকাগুলো 'আর সময় নেই', 'Time is Running out' শিরোনামে এক যৌথ সম্পাদকীয়তে জানা "আমরা ঢাকার সংবাদপত্রসমূহ এক বাক্যে বলতে চাই, জাতি আজ চরম সংকটে নিপতিত। আমরা প্রেসিডেন ইয়াহিয়া খানের কাছে সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছার জন্য নিবেদন জানাচ্ছি
১৫ মার্চ, ১৯৭১ সোমবার
কড়া সামরিক প্রহরায় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের ঢাকায়
আগমন ।
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র জনতা কর্তৃক প্রেসিডেন্ট হাউজের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং বায়তুল মোকাররমে সভা করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছাড়া অন্য কারো নির্দেশ না মানার ঘোষণা - বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা আগমন।
১৬ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার
সকাল ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে (সুগন্ধা) ২.৩০ মিনিট মুজিব-ইয়াহিয়া রুদ্ধদার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।” বৈঠককালে ঢাকাসহ দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশক্রমে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক ক কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত রাজস্ব গ্রহণ শুরু। হাইকোর্টের আইনজীবী, চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক শিল্পী ও সাহিত্যিকদের এক সভায় আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ ।
১৭ মার্চ, ১৯৭১ বুধবার
দ্বিতীয় দিনের মতো মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক অনুষ্ঠিত এবং ৬২ মিনিট স্থায়ী বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সমাপ্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ছাত্রীদের রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু।
বঙ্গবন্ধুর ৪-দফা পূর্বশর্তের প্রতি ঢাকা সফররত ন্যাপের ওয়ালী খানের সমর্থন দান।
১৮ মার্চ, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এ দিনও মিছিলের পর মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সম্মুখে যেতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা প্রেরণ করে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিবৃত্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান । বিমান বাহিনীর সাবেক বাঙালি কর্মচারীদের সভায় বাংলার মুক্তি আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন
১৯ মার্চ, ১৯৭১ শুক্রবার
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ২৩ মার্চের পাকিস্তান দিবসকে 'প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
মুজিব-ইয়াহিয়া তৃতীয় দফা বৈঠক এবং সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত। সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালন।
২৭। দৈনিক আজাদ (১৫.৩.৭১)
২৮ । দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ (১৫.৩.৭১)
২৯। দৈনিক আজাদ (১৬.৩,৭১)
৩০ । দৈনিক আজাদ
৩১। দৈনিক আজাদ
৩২। দৈনিক আজাদ (১৭,৩.৭১)
৩৩। দৈনিক আজাদ (১৮.৩.৭১)
৩৪ । দৈনিক সংবাদ
৩৫। দৈনিক ইত্তেফাক
৩৬। দৈনিক আজাদ (১৯,৩,৭১)
৩৭। দৈনিক আজাদ
৩৮ । দৈনিক আজাদ (২০,৩.१১)
৩৯। দৈনিক আজাদ
০ ২০ মার্চ, ১৯৭১ শনিবার
পরিশিষ্ট
৬ জন সহকর্মীসহ ৪ দফা মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক অনুষ্ঠিত এবং আলোচনায় কিছু অতি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ ৪০
বানপুর
ছাত্র ইউনিয়নের গণবাহিনীর ৫০০ সদস্যের রাইফেলবাহী মার্চ পার্স ও তার প্রতি জনগণের অভিনন্দন আপন " বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ-মিনারে নৌবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সমাবেশ অনুষ্ঠান। সমাবেশ শেষে করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গমন। রাতে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, 'মুন্নি
চলবে।'
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের কাউন্সিলর মুসলিম লীগের প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ দৌলা জমিয়াতে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মওলানা মুফতি মাহমুদের সাক্ষাৎ।
→ ২১ মার্চ, ১৯৭১ রবিবার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মধ্যে ৫ম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।" কঠোর সামরিক প্রহরায় ১২ জন দলীয় সদস্যসহ জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকায় আগমন করেন ।" হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সম্মুখে ভূট্টোর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন ।"
→ ২২ মার্চ, ১৯৭১ সোমবার
... প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় পরিষদের ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ""
প্রেসিডেন্ট ভবনে মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দৃঢ়তর করার জন্য সংবাদপত্রের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ। "
বায়তুল মোকাররমে প্রাক্তন সৈনিকদের সভা অনুষ্ঠিত এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা
২৩ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবন ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে ভোর ৫টায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ দিবসের সূচনা করেন। সকাল থেকে সারাদিনে হাতে বাঁশের লাঠি নিয়ে অসংখ্য মিছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে যায় এবং সারা ঢাকা শহরে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে থাকে। মনে হয়েছিল, ঢাকা নিচ্ছিল ও পতাকার নগরী ৪৮
ইউ কে, আই এস এস মিশনেও এদিন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। "
শেখ মুজিব ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের মধ্যে দু'দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। "
ঢাকায় আগত পশ্চিম পাকিস্তানের কাউন্সিলর মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ দৌলতানা, ওয়ালী খান, জমিয়তে ওলামা প্রধান শাহ আহম্মদ নূরানী, মহাসচিব মুফতি মাহমুদ এবং ভুট্টোর সাথে প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত। সকাল ১১টায় সেনানিবাসে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত "
৪০। দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ (২১,৩,৭১)
৪১। দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদ (২১.৩.৭১)
৪২। দৈনিক আজাদ (২২.৩,৭১)
৪৩। দৈনিক আজাদী (চট্টগ্রাম), দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ (২২.৩.१১)
৪৪ । দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ (২२..१১)
৪৫। দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদ (২৩,৩,৭১)
৪৬। দৈনিক আজাদ (২৩.৩,৭১)
৪৭। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ (২৩,৩,৭১)
৪৮ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান (২৪.৩.১)
৪৯। The Morning News (24.3.71) ৫০। দৈনিক আজাদ (২৪, ৩.৭১)
৫১। দৈনিক আজাদ , ১৯৭১
সে পর্যন্ত বন্ধুর বাসভবনে বিভিন্ন শ্রেপির মিছিল আসতে থাকে এবং নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে "
প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন ইয়াহিয়া ও
যায়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা নেতৃবৃন্দ করাচি ফিরে যান ।
অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বুড়িগঙ্গায় দেয়া নৌকার মাঝিদের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।"
মিরপুরে অন্যভাপিরা (বিহারি) সাদা পোশাকধারী পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় জোরপূর্বক বাঙালিদের বাড়ি থেকে স্বাধীন বাংলার কালো পতাকা নামিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। রাতে বিহারিরা বাঙালিদের বাড়িতে আক্রমণ করে ব্যাপক সহিংসতার সৃষ্টি করে।
টিভি কেন্দ্রে প্রহরারত পাকিস্তানি সেনারা টিভি কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার কারণে সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় টিভির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়ায়িा এবং পিপলস পার্টির উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠক হয়। বিকেলে প্রেসিডেন্ট ইয়াদিয়া সেনানিবাসে যান এবং রাত ৮টায় গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর পূর্বে বাঙালি নিধনের জন্য 'অপারেশন সার্চলাইট' কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে যান।
পাকিস্তান বাহিনী মধ্য রাতে পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরনো ঢাকায় বস্তির বাসিন্দাদের উপর এবং ঢাকার অন্যান্য স্থানসহ সারা দেশে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। যদিও পাকিস্তানি বাহিনী রাজারবাগ, পিলখানাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতারের প্রাক্কালে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন
২৬ মার্চ, ১৯৭১ শুক্রবার
এদিন ঢাকায় কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় নি। বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আটক রাখা হয়। দিন-রাত ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। মসজিদে জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় নি। জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সমারিক প্রায় ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনীর অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পুরনো ঢাকায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। পিপলস, ইত্তেফাক পত্রিকা অফিস ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
২৭ মার্চ, ১৯৭১ শনিবার
ঢাকা লাশের নগরীতে রূপান্তরিত হয়। সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নিলে ঢাকাবাসী শহর ত্যাগ করে গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে থাকে।
কড়া সেনা প্রহরায় বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সরাসরি বিমানে তুলে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা ছেড়ে জিঞ্জিরায় সমবেত হতে থাকেন।
আকাশবাণী, ভয়েস অব আমেরিকা ঢাকাসহ বাংলাদেশের গণহত্যার খবর প্রচার করে।
সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়।
২৮ মার্চ, ১৯৭১ রবিবার
এদিন ঢাকার আশেপাশে পাকিস্তান বাহিনী অপারেশন চালায় এবং ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনে। ঢাকায় টিক্কা খানের ১৫-দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, প্রেস সেন্সরশিপ, সকল কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা, ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৫২। দৈনিক আজাদ (৫.०.१১)
৫৩। দৈনিক আজাদ
৫৪। দৈনিক আজাদ
৫৫। স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ২য় খ
পরিশিষ্ট
১১
২৯ মার্চ, ১৯৭১ সোমবার
কোতোয়ালী থানার কাছাকাছি বুড়িগঙ্গা লঞ্চঘাটে অসংখ্য বিকৃত ক্ষতবিক্ষত লাশ ভাসতে দেখা যায়। পাকিস্তানি সেনারা রাস্তার পাশে অনেক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে সামরিক বিমানে করে ঢাকা থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।
৩০ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার
এদিনও বিভিন্ন স্থান থেকে লাশ সরাতে দেখা যায়। বুড়িগঙ্গা নদী থেকে লাশ তুলে ট্রাকে করে স্বামীবাগ ময়লা ডিপোতে আনা হয়।
- ৩১ মার্চ, ১৯৭১ বুধবার
ঢাকায় ৪টি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় এবং সবগুলো সংবাদপত্র সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার পথে বলে মন্তব্য
করে।
৫.০০%
→ ১ এপ্রিল, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
ঢাকা শহরের জনগণ ঘাতকের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন স্থানে, বাড়ির সামনে, গলির মোড়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। যদিও তা তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। 'খ' অঞ্চলের সামরিক কর্তৃপক্ষ শহরের অধিবাসীদের নিজ নিজ বাড়ির সামনের রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। ঢাকায় কারফিউ অব্যাহত থাকে।
০২ এপ্রিল, ১৯৭১ শুক্রবার
0
অবরুদ্ধ ঢাকায় কারফিউর মেয়াদ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়।
ঢাকা শহরের সমস্ত বাড়ি ও গাড়ির নম্বর এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড উর্দুতে লেখার নির্দেশ দেয়া হয় । সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রতি ঢাকা হাইকোর্টের ৩৮ জন আইনজীবীর সমর্থন প্রদান ।
টিক্কা খানের সাথে ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেলের সাক্ষাৎ ।
৩ এপ্রিল, ১৯৭১ শনিবার
নৌ কর্মচারীদের চাকরিতে যোগদানের জন্য সামরিক নির্দেশ জারি ।
৪ এপ্রিল, ১৯৭১ রবিবার
'খ' অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে.জে. টিক্কা খানের সাথে পিডিপির প্রধান নূরুল আমিনের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ, খাজা খয়েরউদ্দিন, গোলাম আজম, শফিকুল ইসলাম ও মওলানা নূরুজ্জামানের সাক্ষাৎ। দুষ্কৃতকারী স্বাধীনতাকামীদের আয়ত্তে আনার ব্যাপারে তাদেরকে সর্বপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন ।
পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করার জন্য নাগরিক কমিটি গঠনের ব্যাপারেও আলোচনা হয় । ৫৮
→ ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সোমবার
ঢাকার জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে সামরিক হ্যান্ড আউটের দাবি। সান্ধ্য আইন শিথিল করে সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত বলবৎ । ৫৯
বিশ্বখ্যাত আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষকে নিজ বাসভবনে পাকিস্তান বাহিনী হত্যা করে।
পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন, মুসলিম লীগ প্রধান খান-এ-সবুর, কাউন্সিল মুসলিম লীগের ১১ জন বিশিষ্ট নেতার পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় পাক সামরিক সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস ।
৬ এপ্রিল, ১৯৭১ মঙ্গলবার
'খ' (পূর্ব পাকিস্তান) অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে.জে. টিক্কা খানের সাথে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী, প্রাদেশিক জামায়াতের সভাপতি গোলাম আজম, পীর মহসীন উদ্দিন, এডভোকেট এ. কে. সাদীর সাক্ষাৎ এবং প্রদেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস।
৫৬। দৈনিক পাকিস্তান The Pakistan Observer, The Morning News (১.৩.৭১)
৫৭। রেডিও পাকিস্তান (১.৪.৭১)
৫৮ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক সংবাদ (৬.৪.৭১)
৫৯ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ (৬.৪.১)
৬০ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ (৭.৪.৭১)
৬০
O
- ৭ এপ্রিল, ১৯৭১ বুধবার
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ এবং দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানিরা অনুপ্রেবেশকারীদের খতম করবে-এই মর্মে বিবৃতি দেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামির আমির অধ্যাপক গোলাম আজম, প্রচার সম্পাদক নূরুজ্জামান এবং ঢাকা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার প্রমুখ। ৬১ টিক্কা খানের সাথে খান এ সবুরের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের একটি দলের সাক্ষাৎ ।
টিক্কা খানের সাথে ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার কনসাল জেনারেলদ্বয়ের সাক্ষাৎ।
৮ এপ্রিল, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
কৃষক শ্রমিক পার্টি এবং জামায়াতের কয়েকজন নেতার বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতি সহযোগিতার আশ্বাস < প্রদান করা হয়।
→ ৯ এপ্রিল, ১৯৭১ শুক্রবার
খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক শান্তি কমিটি গঠন। ৬২ লে. জে. টিক্কা খানকে প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিকী শপথ গ্রহণ করান। ৬৩
ঢাকা জেলা বারের ৫১ জন সদস্য কর্তৃক পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান ।
৬৪
ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশন থেকে বেতার ট্রান্সমিটার অপসারণের ব্যাপারে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। ৬৫ গোলাম আজম কর্তৃক রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের ভাষণে জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার আশ্বাস । ০ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ শনিবার
সামরিক আদেশ ১৪৮ জারি। যেকোনো বিচ্ছিন্নতাকারী বা সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারীকে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা । মৌলভী ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে পাকিস্তান শান্তি ও জনকল্যাণ পরিষদ নামে আরেকটি কমিটি গঠন। ৬৬
→ ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ সোমবার
সামরিক প্রেস নোটে জানানো হয়, ঢাকা শহরে পুরোদমে শান্তি কমিটির তৎপরতা শুরু হয়েছে। ৬৭
সামরিক বাহিনীর একপত্রে ২১ এপ্রিলের মধ্যে অনুপস্থিত সকল কর্মচারীকে চাকরিতে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। মুসলিম লীগ একাংশের সভাপতি শামসুল হকের নেতৃত্বে একটি দলের টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে ।
→ ১৩ এপ্রিল, ১৯৭১ মঙ্গলবার
ঢাকা শহর শান্তি কমিটির আহ্বানে ‘ভারতীয় সশস্ত্র অনুপ্রবেশের' বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররম হতে এক বিরাট প্রতিবাদ মিছিল বের হয় । ৬৯
১৪ এপ্রিল, ১৯৭১ বুধবার
মৌলভী ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে ঢাকায় প্রাদেশিক শান্তি ও জনকল্যাণ স্টিয়ারিং কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনদের (মুক্তিকামী বাঙালি) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
१०
→ ১৫ এপ্রিল, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
ঢাকায় নাগরিক শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংবাদ সংস্থা এএফপি আজকের ঢাকা সম্পর্কে মন্তব্য করে, ‘ঢাকা এখন মৃত্যুপুরী'।
৬১। দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান (৮.৪.৭১)
৬২। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ (১১.৪.৭1 )
৬৩ । দৈনিক আজাদ (১০.৪.৭১)
৬৪ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান (১০.৪.৭১)
৬৫। দৈনিক পাকিস্তান (১০.৪.৭১)
৬৬। দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ
৬৭। দৈনিক পাকিস্তান
৬৮ । দৈনিক আজাদ (১৩.৪,৭১)
৬৯ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক পূর্বদেশ (১৪. 8. 91 )
৭০ । দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান (১৫.৪.৭১)
৭১। দৈনিক পাকিস্তান

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]