অথবা, ধর্মপাল কি পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর ভূমিকা ঃ বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম নরপতি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় যে অরাজকতা দেখা দেয় তার অবসান করে গোপাল পাল বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এ পাল বংশ লায় চারশ বছর সতের পুরুষ ধরে শাসিত হয়। এ পাল বংশের উদীয়মান প্রতিপত্তিকালের রাজা ছিলেন দাদ্দাদেবীর পুত্র ধর্মপাল। তিনি আনুমানিক ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রাচীন যুগের বাংলায় যেসব রাজার নাম পাওয়া যায় ধর্মপাল ছিলেন তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁর কৃতিত্বের সুস্পষ্ট বিবরণ তথ্যের অভাবে পাওয়া যায় না। তারপরেও মুঙ্গেরের তামলিপি, ভাগলপুর তাম্রলিপি, মালদহে প্রাপ্ত তাম্রলিপি, খালিমপুর তাম্রলিপি, বার্কপাল ও গর্গের লিপি, রাষ্ট্রকূটরাজের প্রশস্তি, উদয়পরী চম্পকাব্য ও তারনাথের বিবরণ এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে রাজা ধর্মপাল সম্পর্কে যা जाना गा। ा বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হল ঃ
ধর্মপালের কৃতিত্ব : নিম্নে ধর্মপালের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল
১. বিজেতা হিসেবে ঃ
ধর্মপালের সিংহাসনে বসার সময় উত্তর ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য নি
8
আরম্ভ হয়। এ ত্রিশক্তির মধ্যে পালশক্তি ছিল অন্যতম। এ শক্তি দ্বন্দ্বের বৈশিষ্ট্য ছিল যে, তিনটি শক্তি ছিল প্রান্তিক বা প্রান্তসীমায়। তিনটি শক্তির (পাল, প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট) লক্ষ্য ছিল মধ্যদেশ বা উত্তর প্রদেশ বিশেষত কৌনজ অধিকার করা। অষ্টম ও নবম শতকে কৌনজকে প্রধান শাসনকেন্দ্র বলা হতো। ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের প্রথম পর্যায়ে ধর্মপাল প্রতিহার রাজ বৎসরাজের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এতে ধর্মপাল পরাজিত হন। কিন্তু বৎসরাজের সাফল্যে ঈর্শান্বিত হয়ে রাষ্ট্রকুটরাজ ধ্রুব বৎসরাজকে আক্রমণ করেন। বৎসরাজ পরাজিত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন। অন্যদিকে, নিজ রাজ্যে বিশৃঙ্খলার কারণে ধ্রুবকেও স্বদেশে ফিরতে হয়। সে বছরে ধর্মপাল পুনরায় উত্তর ভারতের কেন্দ্রস্থল কান্যকুজে নিজ প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। এভাবে প্রতিপক্ষ বহির্দেশীয় শত্রুদের অবর্তমানে ধর্মপাল উত্তর ভারতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বাংলায় একটি স্থায়ী রাজত্বের সূচনা করেন এবং গৌরব সূচক পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেন ।
এছাড়া ধর্মপাল কৌনজের সিংহাসন থেকে ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে চক্রায়ুধকে নিজের হাতের পুতুল হিসেবে বসান। ধর্মপাল উত্তর ভারতে নানা অঞ্চল জয় করে কৌনজে যে দরবারের অনুষ্ঠান করেন তাতে উত্তর ভারতের নানা অঞ্চলের রাজারা উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি বশ্যতা জানান বলে খালিমপুর লিপিতে বলা হয়েছে। উপস্থিত রাজাদের মধ্যে ছিলেন, ভোজ, মৎস্য, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তী, গান্ধার, কীর ইত্যাদি । কিন্তু ধর্মপালের এ সাফল্য বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রতিহার রাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট সিন্ধু, অন্ধ, বিদর্ভ ও কলিঙ্গের রাজন্যবর্গের সাথে মিত্রতা করে কৌনজ আক্রমণ করেন। তিনি প্রথমে চক্রায়ুধকে পরাজিত করেন এবং চক্রায়ুধ ধর্মপালের শরণাপন্ন হন। অবশেষে ধর্মপালের সাথে নাগভট্টের যুদ্ধ হয়। প্রতিহার রাজার প্রশস্তি অনুসারে নাগভট্ট এ যুদ্ধে জয়ী হন। গোয়ালিওর প্রশস্তিতে উল্লেখ আছে যে, ধর্মপালের বিপুল শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি পরাজিত হন। পাল সাম্রাজ্য যখন এরূপ বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখন রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুবের পুত্র তৃতীয় গোবিন্দ নাগভট্টের রাজ্য আক্রমণ করে তাকে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করেন। বাঁশগাছ যেমন ঝড়ের সময় নুয়ে পড়ে সোজা হয়ে যায় ধর্মপালও রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় গোবিন্দের কাছে সেরূপ বেতসবৃত্তি দেখান।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের দুই পর্যায়ের মধ্যেই ধর্মপাল এর সাম্রাজ্য সীমা পশ্চিমাঞ্চলে বেশ দূর পর্যন্ত বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। তাঁর সাম্রাজ্য পাঞ্জাবের জলন্ধর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি এ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করে প্রাচীন ভারতীয় শ্রেষ্ঠ রাজার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন।
২. শাসক হিসেবে :
ধর্মপাল একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন। তিনি বাহুবলে বাংলাদেশের যেরূপ ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান তাঁর দৃষ্টান্ত মিলে না। অর্ধ শতাব্দী পূর্বে যে দেশ পরপদানত, অরাজকতা ও অত্যাচারের লীলাভূমি ছিল, সে দেশ সহসা প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে সমগ্র আর্যাবর্তে নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করবে এ যেন অলৌকিক ব্যাপার বলে মনে হয়। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে, “ধর্মপালের রাজত্বকে বাঙালি জীবনের সুপ্রভাত বলা চলে। খালিমপুর লিপিতে তাঁর
মুজিধানী পাটলিপুত্র নগর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কবি ত
ছে, এখানে গঙ্গাবক্ষে অসংখ্য বিশাল রণতরীর সমাবেশ, সেতুবন্ধ রামেশ্বরের শৈল শিখর শ্রেণী বলে মনে হতো। এখানকার অসংখ্য রণতরী দিলশোভাকে করে নিবিড় মেঘের শোভা সৃষ্টি করত। যে অগণিত অর্থ উপটৌকন পাঠান তাে ভূয়োজিত ঘূর্ণিজালে এ স্থানের চতুর্দিক ধূসরিত হবে
যেসব রাজাশৰ উপস্থিত হন তাদের পদভাবে বসুন্ধরা অবনত হবে ধর্মকে বাঙালি কি চোখে দেখত তা অনায়াगেा
ধর্মপালের সেবার জন্য অধু
।" তাই জ
ব লিখেছেন, "সীমান্ত দেশে গোপগণ, ব
| গ্রামীণ জনসাধারণ, প্রত্যেক গৃহপ্রান্তে জিয়ারিত শিক্ষগণ, প্রতি দোকানে গৃহের পিস্থিত প্রাণও সর্বদা ধর্মপালের বর্ণগান করত। সুতরাং, ধর্মপা
হয়ে ।
বিকারীগণ, মনকি বিলাস
৩. ঘনীর পৃষ্ঠপোষক :
পিতার ন্যায় ধর্মপাল বৌদ্ধ ছিলেন এবং পাল রাজাদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ সার্বভৌম উপাধি পরমেশ্বর পরম প্রচারক মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করেন। ভাগলপুরে বিক্রমশীল বিহার বা বৌদ্ধ তিনি নির্মাণ করেন। পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার তিনি নির্মাণ করেন। এছাড়া শুদপুরের ধর্মপাল একটি বিহার নির্মাণ করেন। তারনাথের মতে, ধর্মপাল ধর্ম শিক্ষার জন্য ৫০টি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
• ৪. রাজত্বকাল : তারনাথের মতে, তিনি ৬৪ বছর রাজত্ব করেন। তবে এ তথ্য গ্রयণযোগ্য নয়। ধর্মপাল ৩৫/৪০ বছর রাজত্ব করেন। ড. মজুমদার এর মতে, ধর্মপাল সম্ভবত ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ৭৮১-৮২১) পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
উপসংহার । উপরিউক্ত আলোচনার শেষান্তে বলা যায়, পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ধর্মপাল ছিলেন বাংলার ইতিহাসের গৌরব। এ গৌরবের জন্য সামরিক দিক থেকে পর পর তিনটি যুদ্ধে পরাজিত হলেও কূটকৌশলে রক্ষা পান ও বাংলাকে পুনর্গঠন করার সুযোগ পান। এছাড়া উত্তর ভারতের রাজনীতিতেও তিনি হস্তক্ষেপ করেন। তাই পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে ধর্মপাল শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর এ কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র তিনিই ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত