বাংলায় গুপ্ত শাসনের উত্থান, বিকাশ ও পতনের ইতিহাস নির্ণয় কর। , গুপ্ত শাসনের অধীনে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নির্ণয় কর।

উত্তর : ভূমিকা ঃ ধারাবাহিক রাজনৈতিক ইতিহাস লেখার জন্য যেসব উপাদানের প্রয়োজন গুপ্তযুগের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে তা তেমনভাবে পাওয়া যায় নি। তবে গুপ্ত যুগ সম্পর্কে জানার মত বেশ কিছু উপাদান ইতিহাসবিদগণ পেয়েছেন। এ থেকে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের শেষভাগ ও চতুর্থ শতকের প্রথম ভাগের ইতিহাস রচনা বেশ সহজ হয়েছে। যে সময় ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন বেশ কিছু স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৩২০ সালে এবং ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত উত্তর বাংলায় গুপ্তশাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
গুপ্তদের আদি বাসস্থান : কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে, গুপ্ত বংশের রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল বাংলায়, কিন্তু জোরালো কোন যুক্তি না থাকায় এ ধারণা গৃহীত হয় নি। চীনা পর্যটক ইৎসিং এর বর্ণনা থেকে কোন কোন ঐতিহাসিক এরূপ সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার মালদহে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগুপ্ত বসবাস করতেন এবং শ্রীগুপ্ত মৃগশিখাবনের স্তুপের জন্য কয়েকটি গ্রাম দান করেন। মৃগশিখাবনের অবস্থান সম্পর্কে ইৎসিং বলেছেন, স্থানটি নালন্দা হতে ২৪০ মাইল দূরে ছিল; এ হিসেবে স্থানটি মালদহ বা মুর্শিদাবাদে অবস্থিত বলে পণ্ডিতদের অনুমান ।
যাই হোক গুপ্তদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে অন্যরকম মতামত আছে এবং মগধে গুপ্তদের আদি বাসস্থান ছিল বলে অনেকে মনে করেন। তবে শুরু থেকেই বাংলার সঙ্গে গুপ্ত বংশের যোগাযোগ ছিল। এছাড়া সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তিতে উল্লেখ আছে যে, পূর্ব বাংলায় সমতট নামে একটি রাজ্য গড়ে উঠেছিল। তবে গুপ্ত রাজ প্রথম চন্দ্র গুপ্তের রাজত্বকালেই উত্তর বঙ্গের কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিকারে এসেছিল। পরবর্তীতে চন্দ্রগুপ্ত সমগ্র বাংলাকে গুপ্ত শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। গুপ্ত অধিকারের বাইরে ছিল শুধুমাত্র সমতট জনপদটি। মৌর্যদের মত এদেশে গুপ্তদের রাজধানী ছিল মহাস্থান গড়ের পুণ্ড্রনগর।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান : গুপ্ত রাজ বংশের উত্থান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য হাতে না থাকলেও এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায়, প্রাচীন ভারতের উত্তর ও দক্ষিণাংশে স্থানীয় জমিদারী শাসন আকারে গুপ্ত বংশের অস্তিত্ব ছিল এবং গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিল শ্রীগুপ্ত। যখন ক্ষুদ্র স্বাধীন সামন্ত রাজারা মহারাজ উপাধি ব্যবহার করতেন তখন শ্রীগুপ্ত ও তদীয় পুত্র ঘটোৎকচ এ উপাধি গ্রহণ করেন। গুপ্ত বংশের উত্থান সম্পর্কে R. C. Majumdar বলেছেন, “চতুর্থ খ্রিস্টাব্দের প্রারম্ভে বাংলায় যে সকল ক্ষুদ্র ও স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির মাধ্যমে এসব ক্ষুদ্র ও স্বাধীন রাজ্যের অবলুপ্তি ঘটে।” তবে এসত্য নিশ্চিত যে, গুপ্ত বংশের প্রথম চন্দ্রগুপ্তই ছিলেন প্রথম স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজা।
বাংলার সাথে গুপ্ত সম্রাটদের সম্পর্ক : প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলে বাংলা গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। এলাহাবাদ প্রশস্তিতে রাজা চন্দ্রবর্মনের নাম পাওয়া যায় যিনি সমুদ্রগুপ্তের কথা স্বীকার করেন। দিল্লির মেহরৌলি লৌহস্তম্ভের লিপিতে যে বাংলা জয়ের কথা আছে তা অনেক ঐতিহাসিক প্রথম চন্দ্রগুপ্তের কাহিনী বলে মনে করেন। সুমুদ্রগুপ্তের আমলে বাংলায় তার অধিকার বিস্তার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
সমতট বাদে বাংলার বাকি অংশ সমুদ্রগুপ্তের আমলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়; সমতট সুমুদ্রগুপ্তের করদ রাজ্য ছিল। তবে সুমুদ্রগুপ্তের পর বাংলা আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলা যায়, কিন্তু দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পুনরায় বাংলার রাজাদের সম্মিলিত বাধা চূর্ণ করে বাংলা জয় করেন। কুমার গুপ্তের আমলেও বাংলা গুপ্ত অধিকারে ছিল। কেননা কুমারগুপ্তের শিলালিপিতে পুণ্ড্র বর্ধনভূমির নাম উল্লেখ আছে; সম্রাট নিজে এ ভূমিকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন করতেন এবং তিনি পুণ্ড্রবর্ধনের উপধারিকদের নিয়োগ দিতেন। প্রথম কুমারগুপ্তের মুদ্রা তমলুক, হুগলি, কালিকট ও যশোহরে পাওয়া গেছে।
তাছাড়া যশোহরে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রৌপ্য মুদ্রাও পাওয়া গেছে। এছাড়া ফরিদপুরের কোটালি পাড়ায় দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ও স্কন্দগুপ্তের স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। সুতরাং বলা যায়, তখনও সমতট বা পূর্ব বাংলা গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে ছিল। বুধগুণ্ডের আমল পর্যন্ত পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভেতরে ছিল, দামোদরপুর ও পাহাড়পুরে তার লিপি পাওয়া গেছে। তিনি ছিলেন বাংলার শেষ প্রধান গুপ্ত সম্রাট। তার পর থেকে বাংলায় গুপ্ত শাসন ধীরে ধীরে ক্ষয় পেতে থাকে । "
গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিকাশ ও রাজত্বকাল : প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে প্রাচীনকাল পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম গুপ্ত রাজবংশের ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা মোটামুটিভাবে সম্ভব হয়েছে, তথাপি যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে গুপ্ত যুগের ইতিহাসের অনেক জটিলতা বেড়ে গেছে। সমগ্র বাংলাদেশ কখনোই গুপ্তদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল না। বাংলাদেশের যে অংশগুলোতে গুপ্ত রাজাদের পরোক্ষ শাসন প্রবর্তিত ছিল সেগুলো 'মহারাজা' উপাধিকারী মহাসামন্তগণ কর্তৃক শাসিত হতো। শ্রীগুপ্ত ও সুমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষ হতে চতুর্থ শতাব্দীর প্রারম্ভকাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সমতট এবং পশ্চিমবাংলার পুষ্করণ নামক রাজ্যগুলো বিদ্যমান ছিল। শ্রীচন্দ্র ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তবে প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজারূপে প্রথম চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয়। শ্রীচন্দ্রের পর থেকেই প্রথম চন্দ্রগুপ্তই গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তারপর সুমুদ্র গুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এ রাজ বংশের পরবর্তী শক্তিশালী ও যোগ্য নৃপতিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন । এপর্যায়ে গুপ্ত রাজ বংশের বিকাশ ও রাজত্বকাল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :
১. প্রথম চন্দ্রগুপ্ত :
পিতা ঘটোৎকচের মৃত্যুত্তোরকালে 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি ধারণ পূর্বক বিশেষ যোগ্যতার সাথে ৩৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সাম্রাজ্য শাসন করে প্রথম চন্দ্রগুপ্ত সাম্রাজ্যের শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে একটি গৌরবময় স্থানে উন্নীত করেন । তিনি বৈশালীর লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমার দেবীকে বিবাহ পূর্বক উত্তর-পশ্চিম বঙ্গে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ।
২. সুমুদ্র গুপ্ত : প্রাচীন শিলালিপি থেকে জানা যায়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি দানকারী অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক পিতা চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর সুমুদ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সমগ্র ভারতের এক সুবিশাল অংশে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ভারতের সিংহভাগই তার আনুগত্য স্বীকার করত। তিনি প্রতিবেশী রাজাদের নিকট হতে প্রচুর উপঢৌকন পেতেন । তিনি ৩৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন ।
৩. দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য : সুমুদ্রগুপ্ত তার জীবদ্দশায় তার যোগ্যতম পুত্র চন্দ্রগুপ্তকে শাসক উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অনেক মুদ্রা ও লিপি থেকে তার রাজত্বকালের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। তা থেকে তার মালব সৌরাষ্ট্র ও গুজরাট বিজয়ের কথা জানা যায়। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক ফা-ইয়েনের বিবরণ মতে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শক অধিকার করে ভারতের বুকে সর্বশেষ বৈদেশিক প্রভুত্বের চিহ্ন বিলুপ্ত করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন এবং এটাই ছিল তার সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কীর্তি। সেহেতু তাকে শিকারী বলে অভিহিত করা হয়। উত্তরাধিকার সূত্রেই যে বিশাল সাম্রাজ্য দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য লাভ করেছিলেন তার সুষ্ঠু পরিচালনাই ছিল দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার বিষয়। এছাড়া তিনি একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতার সম্মান লাভ করেন। মূলতঃ তিনি কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য উপাধির যোগ্য ছিলেন ।
৪. প্রথম কুমার গুপ্ত : 'মহেন্দ্রাদিত্য' উপাধি ধারণ করে পিতা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর পুত্র কুমারগুপ্ত পটেলিপুত্রের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৪১৫-৪৫৫ এ চল্লিশ বছর কাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করে নিজে ‘মহেন্দ্রাদিত্য' উপাধি ধারণ করেন। পূর্বসূরীদের মত তিনি নতুন কোন রাজ্যজয় করেছিলেন কিনা তা জানা না গেলেও তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। যতদূর ধারণা করা হয়, নর্দমা উপত্যকার পুষ্যমিত্র নামক দুর্দান্ত উপাজিত রাজার আক্রমণে তিনি হীন বল হয়ে পড়লেও পুত্র যুবরাজ স্কন্দ্রগুপ্ত পুষ্যমিত্রকে পরাজিত করেন। ৫. স্কন্দ্রগুপ্ত : পিতা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর পুত্র স্কন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে আরোহণ পূর্বক বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করে অত্যন্ত কৃতিত্ব ও যোগ্যতার সাথে ৪৫৫-৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ এ সময়কাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি মধ্য এশিয়া থেকে আপত শক্তিশালী হুনদের আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন। স্কন্দ্রগুপ্তই ছিল গুপ্ত রাজ বংশের সর্বশেষ শক্তিশালী সম্রাট এবং তার পরেই গুপ্ত রাজ্যের ক্রমাবনতি শুরু হয়।
গুপ্ত রাজাগণ । স্কন্দ্রগুপ্তের পর তারই বৈমাত্রেয় ভ্রাতা পুরুষপ্ত রাজা হন। অতঃপর নরসিংহ ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। স্কন্দ্রগুপ্তের পর আর কোন যোগ্য ও দক্ষ শাসক গুপ্ত আমলে আসীন হয় নি। কিন্তু এর পর থেকেই গুপ্ত সাম্রাজ্য ক্রমাবনতির দিকে যেতে থাকে।
৭. গুপ্ত শাসনের পতনের সময় বাংলার অবস্থা গুপ্ত শাসন দুর্বল হতে থাকলে সমতট বা পূর্ব বাংলা গুপ্ত সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নালন্দা শীল থেকে দেখা যায়, বৈন্যগুপ্ত যদিও গুপ্ত বংশেরই শাসক ছিলেন তবুও গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে এ বৈন্যগুপ্ত নিজেকে সমতটের স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করেন। নালন্দা শীল থেকে আরও জানা যায়, সমতটের বৈন্যগুপ্ত নিজেকে 'মহারাজাধিরাজ' ও 'দ্বাদশাদিত্য' উপাধি ধারণ করেছিলেন। গুণাই ধর লিপি থেকে জানা যায় যে, বিজয়সেন ও রুদ্রদত্ত নামে দুই সামন্ত মহারাজা বৈন্যগুপ্তের অধীন ছিল। তারা বৈন্যগুপ্তের অধীনে ত্রিপুরা জয় করেন। বৈন্যগুণ্ডের রাজধানী ছিল ত্রিপুরা অঞ্চলে এবং তার কর্মচারিরা মহারাজা, মহাসামন্ত ইত্যাদি উপাধি ধারণ করত। তিনি অবলোকিতেশ্বর মন্দিরের জন্য বহু দান ধ্যান করেন। কেননা তিনি ছিলেন মহাদেব শিবের উপাসক।
৮. বাংলায় গুপ্ত শাসনের পতন: যশোধর্মনের মান্দাশোর লিপি থেকে জানা যায় যে, বাংলার কিছু অংশ তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। হয়তো তার অধীনে যে গুপ্ত রাজা বাংলায় সামন্ত ছিলেন তাঁর নাম ছিল বিষ্ণুগুপ্ত, তবে এ সম্পর্কে সঠিক করে কিছু জানা যায় নি। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষভাগে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং ষষ্ঠ শতকের শেষভাগে এ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
৯. গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগ বাংলার স্বাধীন রাজ্য : যাই হোক গুপ্ত সাম্রাজ্য ৫৫১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলায় বিলুপ্ত হলে প্রাচীন বাংলায় দুটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে উঠে। যথা : সমতট ও গৌড় । তাছাড়া গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে বঙ্গজনপদে একটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়। গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচার দেব নামে তিনজন রাজা স্বাধীন বঙ্গরাজ্য শাসন করেন। সমতট ছিল পূর্ব বাংলা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমবাংলা জুড়ে। এরা সবাই মহারাজাধিরাজ উপাধি নিয়েছিলেন। সমতটের তুলনায় উত্তর বাংলা বা গৌড়ে লুপ্ত অধিকার দৃঢ় ছিল। ড. এম. চ্যাটার্জির মতে, কামরূপের রাজার আক্রমণে উত্তর বাংলায় গুপ্ত অধিকার হ্রাস পায়ও গুপ্ত অধিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে 'পরবর্তী গুপ্ত বংশ' বলে পরিচিত গুপ্ত উপাধি নেওয়া রাজাগণ উত্তর বাংলা, পশ্চিমবাংলার উত্তরাংশ ও মগধে ক্ষমতা বিস্তার করেছিল। বাংলার এ অঞ্চল পূর্ব থেকেই গৌড় জনপদ নামে সুপরিচিত ছিল। এ সময় মৌখরী বলে এক রাজ বংশের শাসন ছিল উত্তর ভারতে। পরবর্তী গুপ্তবংশের রাজাদের সাথে মৌখরীদের ছিল দীর্ঘদিনের শত্রুতা। এছাড়া দক্ষিণ দিক থেকে চালুক্য রাজারা গুপ্ত সাম্রাজ্য আক্রমণ করেছিল। ফলে পরবর্তী গুপ্ত বংশের রাজারা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে গৌড় রাজ্য দখল করেন শশাঙ্ক নামক এক খ্যাতিমান শাসক।
উপসংহার ঃ ভারত বর্ষের প্রাচীন বাংলায় হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে গুপ্ত যুগের স্থান সর্বোচ্চ বলার মধ্যে কোন অতিরঞ্জন নেই। গুপ্তযুগের বহুমুখী কৃতিত্ব আলোচনা করে তাই বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলাসহ ভারত বর্ষের ইতিহাসে গুপ্তযুগকেই সবচেয়ে গৌরবমণ্ডিত অধ্যায় বলে পরিগণিত করা অন্যায় হবে না। গুপ্তযুগের গরিমার কথা তাই ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে রয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]