মুসলিম বিজয়ের প্রাকালে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থা বর্ণনা কর । ।

উত্তর ভূমিকা ঃ একটি রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নির্ভর করে সে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর। আর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এমনই একটি দিক যা থেকে ঐ দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতির ধারাকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায়, মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। বাংলা তখন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে একতা ছিল না। অধিকন্তু তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। ফলে বাংলায় কোন রাষ্ট্রীয় স্থায়িত্ব ছিল না। সামাজিক দিক দিয়েও তখন বাংলা সংকীর্ণতা-ও শ্রেণীগত বৈষম্যে জর্জরিত ছিল।
সামাজিক অবস্থা ঃ মুসলমানদের আক্রমণের পূর্বে বাংলার সামাজিক অবস্থা ছিল নিম্নরূপ ঃ ১. জাতিভেদ প্রথার অভাব : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলায় হিন্দুদের অবস্থান ও প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। প্রাথমিক অবস্থায় হিন্দু সমাজে উদারতা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের ভেতরে সংকীর্ণতা, দাম্ভিকতা ও জাতিভেদ প্রথা বিস্তার লাভ করে। আদি চতুবর্ণ যথা : ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র প্রভৃতি অসংখ্য শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এ চারটি বর্ণের লোকদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা ছিল না ।
২. ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের সুবিধা : ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চ জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদের সুবিধার্থে অন্যান্য সম্প্রদায়কে ব্যবহার করা হতো। মনুসংহিতাতে উদ্দিষ্ট হয়েছে, “পৃথিবীর যেখানে যা কিছু আছে তা ব্রাহ্মণদের সম্পত্তি বলে পরিগণিত হবে”। কেননা, বৈশ্য ও শূদ্র জাতি সমাজে নিম্নস্তরের বলে বিবেচিত হতো ।
৩. সতীদাহ প্রথা ও অস্পৃশ্যতা : নারীদের প্রতি আরেকটি অবমাননাকর প্রথা ছিল শাসকগোষ্ঠী ও ধর্মীয় নেতা কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া সতীদাহ প্রথা, স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকেও তার সাথে জ্বলন্ত আগুনে দাহ করা হতো। সমাজে অস্পৃশ্যতার ধরন ছিল এরকম যে, অধিকাংশ লোক নিরামিষভোজী ছিল এবং তারা পিঁয়াজ ও রসুন খেত না ।
৪. নিম্ন জাতির লোকদের দুরবস্থা : নিম্ন জাতির লোকগুলো অধঃপতিত বলে বিবেচিত হতো। এমন কি ধর্ম-কর্ম পর্যন্ত তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। ঐতিহাসিক আল-বেরুনী তাঁর 'কিতাবুল হিন্দু' গ্রন্থে হিন্দুদের এরূপ সংকীর্ণভাবকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেছেন, “কোন বৈশ্য এবং শূদ্র বেদ অধ্যয়ন করলে শাস্তি হিসেবে তার জিহ্বা কেটে দেওয়া হতো। ভিন্ন জাতির মধ্যে অন্তর্বিবাদ ও পানাহার নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি শূদ্রদের স্পর্শও অপবিত্র বলে গণ্য হতো । জাতিচ্যুতদের ভাগ্য আরও মন্দ ছিল।” বেদ শ্রবণ করলে কর্ণে উত্তপ্ত শিশা ঢেলে দেওয়া হতো।
৫. দাসপ্রথা : বাংলায় দাসপ্রথা নামে আরেকটি লজ্জাজনক ও হীন প্রথা ছিল। এ প্রথার মাধ্যমে অনেক নিরীহ লোক নির্যাতিত হতো। যারা দাস হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল তাদের সামাজিক মর্যাদাতো দূরের কথা ন্যূনতম অধিকারও তারা পেত না ।
৬. নারীর অবস্থা : সমাজে নারীর অধিকার ছিল অত্যন্ত সীমিত। নারীদেরকে সাধারণত ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সমাজে পুরুষদের বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন ছিল। কিন্তু নারীদের দ্বিতীয় বিবাহের কোন বিধান ছিল না। বিধবাদের সম্পত্তি বিক্রয় করা, বন্ধক দেওয়া বা দান করার কোন অধিকার ছিল না। নারীদেরকে সম্পত্তির একটা নির্দিষ্ট অংশ ভোগ করার অধিকার দেওয়া হতো। একে হিন্দু সমাজে 'স্ত্রীধন' বলা হতো।
৭. কুপ্রথা : অনেকগুলো কুপ্রথাকে সমাজে ধর্মের মর্যাদা দেওয়া হতো। নরবলি, কন্যা শিশু সন্তানকে গঙ্গার জলে বিসর্জন, সতীদাহ ইত্যাদিকে ধর্মের কাজ বলে গণ্য হতো।
রাজনৈতিক অবস্থা মুসলমানদের আক্রমণের পূর্বে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা ছিল নিম্নরূপ ঃ
১. উত্তর ভারতে ছোট ছোট রাজ্যের সৃষ্টি। মুসলমানদের বাংলা আক্রমণের প্রাকালে উত্তর ভারতে কোন ঐক্যবদ্ধ রাজ্য ছিল না। গোটা উত্তর ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। আর এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের নৃপতিদের মধ্যে কোন মতেরও মিল ছিল না। সমকালীন উত্তর ভারতের রাজ্যের বিভক্তি সম্পর্কে মেগাস্থিনিস বলেছেন, "খ্রস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে বাংলায় কমপক্ষে ১১৮টি রাজ্য ছিল। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য এবং একত্রীকরণ খুব কদাচিৎ সম্ভবপর হয়।"
২. ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল তিনটি রাষ্ট্রে বিভক্ত। ঐতিহাসিক হিউয়েন সাঙ কর্তৃক প্রদত্ত বিবরণ থেকে জানা যায় যে, তখন ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল তিনটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। যথাঃ ক. উত্তর অঞ্চলের কাপিসি রাজ্য, খ. দক্ষিণে সিন্ধু রাজা ও গ. এ দু'রাজ্যের মধ্যে তাজাকুটা রাজ্য। এখন রাজ্য পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত ছিল।
৩. সেনগণ ও গালগণ মুসলমানদের আক্রমণের প্রাকালে সেনগণ বাংলায় এবং পালগণ বিহারে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছিল। ৪. দাক্ষিণাত্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি : বাংলায় মুসলমানদের আক্রমণের প্রাকালে দক্ষিণ ভারতে গুপ্ত পরবর্তীকালে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি হয়। এ রাজ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দেবগিরি যাদব রাজ্য, তেলিঙ্গনার কাকতীয় রাজা, দারসমুদ্রের হোয়াসন রাজ্য এবং মথুরার পাতরাজ্য।
৫. কেন্দ্রীয় শক্তির অভাবে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা : কেন্দ্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন শাসকের অভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, কলহ বিবাদে লিপ্ত থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ঐতিহাসিক V. D. Mahajan এর মতে, "As regards political condition, there was no paramount power in the country. India was a congeries of states, each one which was independent and sovereign."
৬. শাসিতের প্রতি অবহেলা : জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য রাজন্যবর্গের কোন খেয়াল ছিল না। প্রজাদের প্রতি তাদের ছিল সীমাহীন অবহেলা ও অবজ্ঞা। ফলে প্রজাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয় নি এবং বিপদের দিনে তারা জনসাধারণের নিকট থেকে সমষ্টিগত সমর্থনও আশা করতে পারে নি ।
৭. গোত্রীয় বিরোধ : বাংলা ছিল বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। এসব গোত্রগুলোর মধ্যে সখ্যভাবও সে সময় পরিলক্ষিত হয় নি। তাই মুসলমানদের বাংলা আক্রমণের জন্য এ সময়টা অনেকটা উপযোগী ছিল।
৮. একনায়কতন্ত্র : তৎকালীন শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা। সর্বক্ষেত্রে তাঁর মতামতই ছিল গ্রহণযোগ্য ও চূড়ান্ত । আইন প্রণয়ন, ক্ষমতা বণ্টন, শাসন পরিচালনা এবং সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের চূড়ান্ত অধিকার তার হাতেই থাকত । সাধারণত বংশানুক্রমিকভাবে রাজা নিযুক্ত হতেন । ৯. জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব : সমকালীন বাংলার জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার বিরাট অভাব পরিলক্ষিত হয়। আর এ বিশৃঙ্খল অবস্থায় ভারত যে বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হবে তা অস্বাভাবিক নয় ।
১০. বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ : বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রায়ই গোলযোগ দেখা দিত এবং এতে যুদ্ধের রূপ লাভ করত।
১১. মুসলিম বিজেতাদের আমন্ত্রণ : কতকগুলো হিন্দু রাজ্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কতিপয় প্রধান রাজ্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিজেতাদের আমন্ত্রণ করেছিল। তাদের এ পারস্পরিক অনৈক্য ও প্রতিহিংসার ফলে মুসলিম বিজয়ের পথ সুগম হয়েছিল। তাই ঐতিহাসিক V.D. Mahajan বলেছেন, "On the eve of the Arab conquest of sindh there was no one powerful force in the country which could check effectively the Arab conquest of sindh." (Muslim Rule in India. P-15.)
অর্থনৈতিক অবস্থা : বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা ভালো ছিল। এছাড়া অতি প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ছিল ধনসম্পদে পরিপূর্ণ। ধনসম্পদের প্রাচুর্যের সূত্রে বাংলায় ব্যবসায় বাণিজ্যের সূত্রে মুসলমানদের আগমন ঘটেছিল। নিম্নে বখতিয়ার খলজির বা মুসলিম তুর্কিদের আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দেওয়া হল :
১. উৎপাদন ব্যবস্থা : প্রাচীনকাল থেকে বাংলার উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল কৃষিভিত্তিক। গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ লোক কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কৃষি উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান ছিল প্রধান। ধান ছাড়াও সে সময় পাট, তুলা, আখ প্রভৃতি উৎপাদিত হতো। কৃষকরা তাদের আবাদী জমির জন্য জমিদারকে খাজনা বা কর প্রদান করত।
২. শিল্প : বাংলার অর্থনৈতিক ভিত্তি কৃষি হলেও শিল্পের সে সময় যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। বাংলা বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। বস্ত্র শিল্প ছাড়াও প্রস্তর শিল্প, ধাতু শিল্প, কার্পাসজাত শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়েছিল। সমকালীন কুটির শিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প, ধাতু শিল্প, চর্ম শিল্প প্রভৃতি ছিল প্রধান।
৩. ব্যবসায় বাণিজ্য । বাংলা ছিল ধনসম্পদে সমৃদ্ধ। ধনসম্পদের প্রাচুর্যের জন্য বিদেশী বণিকরা আগে থেকে বাংলার সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য করত। তাম্রলিপ্তি ও সপ্তগ্রাম নামে দু'টি শক্তিশালী বন্দর ছিল। এ বন্দর দু'টি দিয়ে বাইরের ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালিত হতো। বণিকরা এ বন্দর থেকে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দূর দূরান্তে যাত্রা করত। শ্রীপুর, তুলুয়া, চন্দ্রদ্বীপ ইত্যাদি বন্দরের নাম পাওয়া যায়। সে সময় স্থলপথে তিব্বত, নেপাল, মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
৪. মুদ্রা ব্যবস্থা : মুসলমানদের আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালো থাকলেও মুদ্রার প্রচলন তেমন ছিল না। কারণ মুসলমানদের আক্রমণের প্রাক্কালে তেমন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া যায় নি। ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দিন সিরাজির মতে, যখন মুসলমানরা বাংলায় প্রবেশ করে তখন তারা কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা পান নি। সে সময় বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম ছিল কড়ি। ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ কড়ির প্রচলন ছিল।
৫. বাংলার প্রাচুর্য : কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের বিকাশ সাধিত হওয়ায় বাংলা সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। ব্যবসায় বাণিজ্যের ফলে বাংলার ঐশ্বর্য অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর এ ঐশ্বর্যের জন্য বিদেশী বণিকরা বাংলায় আগমন করেছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বর্ণনার বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।
সাংস্কৃতিক অবস্থা : আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলার নিজস্ব সাংস্কৃতিক ভাবধারা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কালের গর্ভে তা বিলীন হয়ে যায়। মৌর্য শাসনামলের যে কীতি ছিল তা গুপ্ত আমলে বিলীন হয়ে যায়। পাল রাজাদের শাসনামলে বাংলায় নব সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হয়। এ আমলে শিক্ষা সংস্কৃতির যথেষ্ট প্রসার ঘটে এবং একাধিক বৌদ্ধ বিহার গড়ে উঠে। এ বিহারগুলোর মধ্যে অন্যতম হল :
ক. বগুড়ার রামুবিহার,
খ. দিনাজপুরের সীতাকোট,
গ. কুমিল্লার শালবন বিহার,
ঘ. রাজশাহীর সোমপুর বিহার।
এছাড়া ওদন্তপুর ও বিক্রমশীলা নামে দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। এ বিহারগুলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। এ বিহারগুলোতে অঙ্ক, দর্শন ও জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হতো।
সেন শাসনামলে বাংলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন হয়। সেন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি শিক্ষিত শ্ৰেণী গড়ে উঠে। এ সময়ের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের মধ্যে হরিভদ্র, কবি উমাপতিধর, জয়দেব প্রমুখ ছিলেন প্রধান। এছাড়া এ শাসনামলে বাংলার অভূতপূর্ব বিকাশ হয়। ধর্মীয় অবস্থা : মুসলিম বিজয়ের পূর্বে বাংলার ধর্মীয় অবস্থা ছিল কিছুটা ভিন্নধর্মী। সমকালীন কৌমবদ্ধ সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী সাম্যবাদীরা আত্মার অস্তিত্ব, মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রকৃতি পূজা প্রচলিত ছিল। গুপ্ত শাসনামলে বাংলায় হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির কিছুটা বিকাশ ঘটে। পাল রাজারা অহিংস ধর্মনীতির প্রচলন করে। সেন শাসনামলের পতনকালে জোর করে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করা প্রবণতা ছিল অনেক বেশি। ফলে অনেকে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে ও অনেকে রাজ্য ছেড়ে চলে যায়। উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির আক্রমণের প্রাক্কালে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থা তুলনামূলক উন্নত থাকলে ও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। যেমন- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলা ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত। শুধু তাই নয়, ছিল অনৈক্যে ভরা। এহেন অবস্থায় বাইরের শক্তির দ্বারা বাংলা আক্রান্ত হওয়া অতিরঞ্জিত কিছু ছিল না।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]