লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর। (Discuss the Main Characteristics of the Lahore Resolution.)

. লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য ও বৈশিষ্ট্য
Major Statements and Features of Lahore Resolution
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোরে মুসলিম লীগের একটি সম্মেলন হয়। লাহোরে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে এ. কে. ফজলুল হক একটি প্রস্তাব আনেন, যা পরবর্তীকালে লাহোর প্রস্তাব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রস্তাবটি ছিল এরকম—
Resolved that it is the considered view of this session of the All India Muslim League that no constitutional plan would be workable in this country or acceptable to Muslims unless it is designed on the following basic principles, viz., that geographically contiguous units are demarcated into regions which should be so constituted, with such territorial readjustments as may be necessary, that the areas in which the Muslims are numerically in a majority as in the North-Western and Eastern Zones of India should be grouped toe constitute 'Independent States' in which constituent units shall be autonomous and sovereign....This Session further authorise the working committee to frame a scheme of constitution...providing for the assumption finally by the respective regions of all power such as defense, external affairs, communications, customs and such other matters as may be necessary.'
লাহোর প্রস্তাব শুধু মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল না, একই সাথে ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও অন্যতম ভিত্তি ছিল। নিচে লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য বা মূলনীতিসমূহ উল্লেখ করা হলো-
নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দৃঢ়তার সাথে পুনঃঘোষণা করছে যে, “১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইনে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তা এদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য অনুপযোগী ও অকার্যকর বিধায় তা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য অগ্রহণযোগ্য।”
সমগ্র সাংবিধানিক পরিকল্পনা নতুনভাবে পুনর্বিবেচনা করা না হলে মুসলিম ভারত অসন্তুষ্ট হবে এবং মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি ছাড়া সংবিধান রচিত হলে কোনো সংশোধিত পরিকল্পনাও মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগা
হবে না।
লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়, “কোনো শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা কার্যকর হবে না তা মুসলমানদের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না, যদি তা নিম্নলিখিত মূলনীতির উপর ভিত্তি করে রচিত না হয়।” যেমন-
ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে সীমা নির্ধারণ করে এগুলোকে নিয়ে একাধিক অঞ্চল গঠন করতে হবে।
এসব অঞ্চলকে প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যাতে ভারতবর্ষের উত্তর- পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাষ্ট্রগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।
এসব এলাকা এবং অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে পরামর্শ করে তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে পর্যাপ্ত কার্যকরি ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভারতের অন্য যেসব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যালঘু, সেসব স্থানে তাদের ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে শাসনতন্ত্রে পর্যাপ্ত কার্যকর এবং বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে ।
এই মূলনীতি অনুযায়ী একটি শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য এ অধিবেশন কার্যনির্বাহী কমিটিকে ক্ষমতা প্রদান করেছে, অঞ্চলগুলো যাতে চূড়ান্তভাবে নিজেদের এলাকায় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয়, যোগাযোগ, শুল্ক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে সকল ক্ষমতার অধিকারী হয় (শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায়) সেরূপ ব্যবস্থা থাকবে। লাহোর প্রস্তাবটি বিশ্লেষণে এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় : যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের আইনে যে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা ভারতের উদ্ভূত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অসঙ্গত ও অকার্যকর। তাই ভারতীয় মুসলমানগণের নিকট ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য।
মুসলিম সম্মতি সংবলিত সংবিধান : ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, ... প্রণীত সমস্ত সাংবিধানিক পরিকল্পনা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে, নতুবা মুসলমানগণ অসন্তুষ্ট হবে। আর ভবিষ্যতে যে সংবিধান রচিত হবে তাতে অবশ্যই মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি থাকতে হবে। তা না হলে কোনো সংশোধিত পরিকল্পনা মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না । :
শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনার ব্যাপারে মুসলমানদের সম্মতি : লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে বলা হয় যে, ভারতে মুসলমানদের সম্মতি ছাড়া কোনো শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা কার্যকরী হবে না। এতে ... প্রয়োজনে সীমানার পুনর্বিন্যাস সাধন ও ভৌগোলিক দিক থেকে নিকটবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত
এলাকাগুলোর সমন্বয় সাধনসহ ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত : আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ প্রস্তাবে বলা হয়, নতুনভাবে গঠিত অঙ্গরাজ্যসমূহে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসনসংক্রান্ত অধিকার রক্ষা করার জন্য ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানে বিভিন্ন রকম রক্ষাকবচ উল্লেখ থাকতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিতকরণ : লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পাশাপাশি সংলগ্ন বা সন্নিহিত স্থানসমূহকে বা এলাকাসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর সীমানা পরিবর্তন : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর জন্য প্রয়োজনে পূর্বের সীমানার পরিবর্তন সাধনের কথা বলা হয়।
মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন : লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠনের কথা বলা হয়।
মায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন অঙ্গরাজ্য : লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, মুসলমানদের জন্য যেসব স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে তাদের সকল প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন । সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ : লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, নতুনভাবে গঠিত রাষ্ট্রসমূহের বাইরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু থাকবে সেখানে মুসলমানদের সাথে পরামর্শক্রমে তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার এবং স্বার্থ সংবিধানে সংরক্ষণ করতে হবে। মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ : লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, লাহোর প্রস্তাবে যে সকল বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো পরবর্তীতে দেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় মৌলিক নীতি হিসেবে গৃহীত হবে।
লাহোর প্রস্তাবের ব্যাখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও আজ এটা স্বীকৃত যে, ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ' (Independent States) দ্বারা উল্লিখিত দুটি অঞ্চলে বাস্তব দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ.কে. ফজলুল হক। তিনি কখনো জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। লাহোর প্রস্তাবের কোথাও 'দ্বিজাতি তত্ত্বের' উল্লেখ নেই। এ প্রস্তাবের কোথাও 'পাকিস্তান' শব্দটিরও উল্লেখ নেই, যদিও তা দ্রুত ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম কিংবা ফজলুল হক এদের কেউই দ্বিজাতি তত্ত্ব মানতে পারেননি বিধায় অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন। কারণ, তাদের মনে হয়েছিল তারা লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করছেন। মুসলিম লীগ হাইকমান্ড তাদের এ চিন্তা গ্রহণ করেনি। হাইকমান্ড মনে করেছে লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ীই পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ পেশকৃত ক্রিপস মিশন প্রস্তাবের ব্যর্থতা এবং ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের গৃহীত মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার ব্যর্থতা ভারত বিভক্তিকে অপরিহার্য করে তোলে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের ভাইসরয় হয়ে আসেন। তাঁর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তিনি যখন ভাইসরয় হয়ে ভারতে আসেন তখন এখানকার রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অবস্থা ছিল ভীষণ জটিল। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে মতানৈক্যের ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত তখন অকেজো; দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছিল মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট দূর করে ভারতীয় জনগণের নিজস্ব ইচ্ছা অনুসারে ভারত বিভাগ করার উদ্দেশ্যে লর্ড মাউন্টব্যাট একটি পরিকল্পনা পেশ করেন যা ‘৩রা জুন পরিকল্পনা' বা 'মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা' নামে অভিহিত। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক আনীত লাহোর প্রস্তাবটি সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। তবে লাহোর প্রস্তাবের প্রস্তাবনাগুলো তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মেনে চলেনি বলেই পরবর্তীতে দেখা দেয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা। তাই যেকোনো প্রস্তাব যদি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত বা কোনো দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার আকারে স্বাক্ষরিত হয় তাহলে তা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মেনে চলা উচিত।
লাহোর প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া
Reactions of Lahore Resolution
লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর ভারতের কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ এবং ভারত ও বাংলার মুসলমানদের মধ্যে যেসব নিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ :
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া (Reactions of Congress) : কংগ্রেস ও হিন্দু নেতাদের মধ্যে পাহোর প্রস্তাবের বিরুদে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে মহাত্মা গান্ধী বলেন, 'যদি আমরা শ্রী জিন্নাহর অভি গ্রহণ করি, তা হলে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের মুসলমানরা দুটি স্বতন্ত্র ও পৃথক জাতি হয়ে পড়ে।' অন্যদিকে সভাপতি জওহরলাল নেহেরু মুসলমানদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন আবাসভূমি গঠনকে 'অবান্তর' বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করে মুসলিম লীগ ভারতে ইউরোপের বলকান অঞ্চলের মতো বহু রা স্থাপনের দাবি করেছে। কংগ্রেস মনে করে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি এক অদ্ভুত ও কৃত্রিম দাবি। কাে নেতারা মনে করেন, ক্ষমতার মোহ ও কংগ্রেসের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য জিন্নাহ পাকিস্তান দাবি উত্থাপন করেছেন। হিন্দু ও মুসলমান উভয়ে এক জাতিভুক্তির নিদর্শনস্বরূপ কংগ্রেস মওলানা আবুল কালাম আজাদকে ১৯৪০-'৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করে। কলকাতার হিন্দু পত্রিকাগুলো লাহোর প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে এবং একে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে আখ্যায়িত করে।
ভারতের মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া (Reactions of Indian Muslims ) : ভারতের মুসলমানদের মধ্যে পাহোর প্রস্তাবের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কংগ্রেস সভাপতি মওলানা আজাদ-এর ঘোরতর বিরোধিতা করে বলেন, 'আমি একজন ভারতীয় হওয়ায় গর্বিত। আমি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অবিভাজ্য অংশ। আমরা পছন্দ করি কি-না করি, আমরা এখন একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমাদের পৃথক ও বিভক্ত করার জন্য কোনো দেয়াল অথবা কৃত্রিম পরিকল্পনা এ ঐক্যকে ভাঙতে পারবে না।' এর বিরোধীরা দিল্লিতে সর্বভারতীয় স্বাধীন মুসলিম কনফারেন্স গঠন করে। সিন্ধুতে কংগ্রেসের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন খান বাহাদুর আল্লাহ বকসকে-এর সভাপতি করা হয়। সম্মেলনের নাম দেয়া হয় আজাদ মুসলিম সম্মেলন'। মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর নেতৃত্বে জমিয়াতুল উলামা ই-হিন্দু লাহোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা ঘোষণা করে লাহোর প্রস্তাবের উদ্যোক্তারা কেউ শরিয়ত মানে না। তাহলে এদের দ্বারা কীভাবে ইসলাম কায়েম হবে। তবে বিরোধিতাকারীরা ছিলেন মুসলমান নেতাদের ক্ষুদ্র অংশ। তখন ভারতের অধিকাংশ মুসলমানদের মধ্যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিই ● জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাংলার মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া (Reactions of Bengali Muslims ) : লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও বাংলাদেশের পৃথক রাষ্ট্র সত্তার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় এ.কে. ফজলুল হক মনে করেন, বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা বাঙালি মুসলমানদের হাতে আসবে এবং এ ক্ষমতা তারা নিজেরা ভোগ করবে, কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের হাতে তুলে দিবে না। সোহওরাওয়ার্দী মনে করেন, এর ফলে প্রত্যেক প্রদেশ-এর উপযোগী ই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হবে। বাংলাদেশের মুসলিম লীগ নেতাদের এমন আশা- আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও লাহোর প্রস্তাবের সাথে দ্বিজাতি তত্ত্ব যুক্ত করায় এবং একে পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা . রায়-এর প্রস্তাবক ফজলুল হক-এর সমর্থন করেন নি। কারণ লাহোর প্রস্তাবে 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' বা ‘পাকিস্তান’ শব্দের উল্লেখ ছিল না। যদিও শেষ পর্যন্ত অবাঙালি নেতৃবৃন্দের তৎপরতায় দ্রুত লাহোর প্রস্তাব 'পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
৪. ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়া (Reactions of British Government) : ব্রিটিশ সরকার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় ভারতের হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভে আগ্রহী ছিল। লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর ভারত সচিব মন্তব্য করেন, “ইংল্যান্ডের কোনো পার্লামেন্ট বা সরকার ভারতের মুসলমানদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দেবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায় তথা মুসলিম লীগের সম্মতি ছাড়া ভারতবর্ষে শাসনতান্ত্রিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। লাহোর প্রস্তাবের
বিরোধিতাকারী কংগ্রেস ধীরে ধীরে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং পাকিস্তান দাবি মেনে নেয়। পরিশেষে ব্রিটিশ সরকারও উপলব্ধি করতে পারে যে, মুসলিম লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত বিভাগ করা না হলে ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের বিকল্প পথ নেই। তাই ব্রিটিশ সরকার অখণ্ড ভারতবর্ষের স্থলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভক্তির পথ বেছে নেয়। এর ফলে ভারত উপমহাদেশ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]