আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল? আর্যদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা কর।

ভূমিকা ঃ সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, ঐশ্বর্যমণ্ডিত এই ভারতীয় উপমহাদেশে যে কত জাতির উত্থান- পতন হয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। যে সমস্ত জাতির উত্থান-পতন হয়েছে আর্য আতি সেই সমস্ত জাতির মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক দুই সহস্র বছর পূর্বে আর্যগণ ভারত বর্ষে আগমন করে ধীরে ধীরে তারা বসতি বিস্তার করে। তারা পূর্বের যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করে ভারতের নদী বিধৌত উর্বর ভূমিতে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করে এ আর্য সভ্যতা নতুন সভ্যতা গড়ে তুলল। ভারতের ইতিহাসে আর্য সভ্যতার গুরুত্ব যথেষ্ট।
আর্যদের আদি বাসস্থান : আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। আবার কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে, তারা মধ্য এশিয়ায় বসবাস করত। কাহারও মতে, দক্ষিণ এশিয়া অথবা অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরীতে তার বসবাস করত। ড. এসি দাস আর্যদের ভারতীয় উৎপত্তি সম্পর্কিত তত্ত্বের প্রবল সমর্থক। তার মতে, সপ্তসিন্ধুর অববাহিক অঞ্চলই ছিল আর্যদের আদি বাসভূমি। আর্যরা আফগানিস্থান সীমান্ত হতে পাঞ্জাবের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-খণ্ডকে সপ্তসিন্ধু আখ্যা দিয়েছিল। সপ্ত সিন্ধু বলতে পাঞ্জাবের পাঁচটি নদী (বিপাশা, ইরাবতি, চন্দ্র ভাগা, তিস্তা, শতনদ) এবং সিন্ধু ও স্বরসতী বুঝাত। সে সময় পশ্চিম এশিয়ার সাথে ভারতের স্থল পথের যোগাযোগ ছিল। এবং আর্যরা এ পথ ধরে পশ্চিম এশিয়ায় আগমন করে বসবাস শুরু করে। আবার কেহ কেহ মনে করেন যে, তারা উত্তর মেরু হতে এদেশে ত্রাসে কালক্রমে আৱকলহ, স্থানাভাব, খাদ্যাভাব প্রভৃতি কারণে তারা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। কালক্রমে তারা দাক্ষিণাত্যে বসতি স্থাপন করে। সামাজিক অবস্থা : নিম্নে আর্যদের সামাজিক অবস্থা তুলে ধরা হল :
১. পিতৃতান্ত্রিক পরিবার : রোমান সমাজের ন্যায় বৈদিক সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পিতাই ছিলেন পরিবারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পিতা-মাতা, সন্তান দাস-দাসী ছাড়া আরও অনেককে নিয়ে এ পরিবার গঠিত ছিল। পরিবার পিতৃতান্ত্রিক ছিল বিধায় পুত্র সন্তানের জন্ম বিশেষ কাম্য ছিল। ২. সামাজিক শ্রেণি বিভাগ : সমাজে লোক বৃদ্ধির সাথে সাথে সামাজিক জীবন ক্রমশ জটিল হতে থাকে। ফলে গুণ ও কর্মানুসারে সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এ চার শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পূঁজা, পার্বন, যাজ্ঞ এবং শাস্ত্রপাঠে যারা পারদর্শি ছিলেন তারা ব্রাহ্মণ। যারা যুদ্ধ বিদ্যা ও রাজ্য শাসনে পারদর্শি ছিলেন তারা ক্ষত্রিয়। এবং যারা ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি ও পশু পালনে পারদর্শি তারা বৈশ্য এবং উপরিউক্ত তিন শ্রেণির সেবায় যারা নিয়োজিত থাকতেন তারা দ্র নামে পরিচিত ছিল। সমাজ চার শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। তবে জাতি প্রথার কোন কঠোরতা ছিল না। বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের কোন বাধা ছিল না ।
৩. চতুরাশ্রম : চতুরাশ্রম আর্য সমাজের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। ইহা সমাজের প্রথম শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। জীবনের প্রথম পর্যায়কে বলা হতো ব্রাহ্মণাচার্য। এ সময় প্রত্যেক পুরুষকে গুরু গৃহে অবস্থান করতে হতো বিদ্যা চর্চার জন্য এবং গুরুর পরিবারের সুখ-দুঃখের সমান অংশীদার হতে হতো। গুরুর নিকট শাস্ত্র চর্চা সম্পন্ন করে বিদ্যার্থীকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করে গার্হস্থ্য শ্রম গ্রহণ করতে হতো। গার্হস্থ্য শ্রমের প্রধান কর্তব্যই ছিল বিবাহ করে স্ত্রী ও সন্তানাদীসহ সংসার ধর্ম পবিত্রভাবে পালন করা। তৃতীয় পর্যায়কে বলা হতো বান প্রস্থাশ্রম। প্রৌঢ় অবস্থায় বান প্রস্থাশ্রম গ্রহণ করার রীতি ছিল। এ সময় সাংসারিক জীবন হতে মুক্ত হয়ে বনে কুঠির বেধে বসবাস করতে হতো। শেষ পর্যায়কে বলা হতো সন্যাস। এ সময় সন্ন্যাসির ন্যায় জীবন-যাপন করতে হতো।
৪. সমাজে নারীর স্থান : বৈদিক যুগে নারীর স্থান ছিল অতি উচ্চে নারীরা পুরুষের সহধর্মীনী ও সহকর্মীনী হতেন। নারীদের একাধিক পত্নী গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। গৃহস্থালীর ব্যাপারে নারীরা সর্বময়ী কর্ত্রী ছিলেন। তারা উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করতেন এবং বেদ পাঠেও অংশগ্রহণ করতেন। নারীরা অস্ত্রচালনা যুদ্ধ বিদ্যাও শিক্ষতেন। বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল। মেয়েরা নিজে বা অভিভাবকের মতানুসারে বিবাহ করতেন। বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল না। মেয়েরা অধ্যাপনা করতেন এমনও প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বপরি সমাজে নারীদের নৈতিক চরিত্র উন্নত ছিল।
৫. খাদ্য : সাধারণভাবে আর্যদের প্রধান খাদ্যছিল গম, যব, বালি ইত্যাদি। উৎসব অনুষ্ঠানে মাংসের আয়োজন হতো এবং সোমরস ও সুরা পান বা মদ পান চলত। দুধ, ঘি, ফল, মুলও তারা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত।
৬. আমোদ প্রিয় ঃ আর্যরা সম্ভবত আমোদ প্রিয় জাতি ছিল। নৃত্য, গীত, মৃগয়া, রথ চালনা, পাশাখেলা প্রভৃতি আমোত প্রমোদের ব্যবস্থা ছিল।
রাজনৈতিক অবস্থা : নিম্নে আর্যদের রাজনৈতিক অবস্থা আলোচনা করা হলঃ
১. পরিবার ও গৃহপতি ঃ প্রতিটি উপজাতীয় রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল পরিবার। প্রতিটি পরিবার একজন গৃহপতির অধীনে ছিল। পরিবারের সর্বাপেক্ষা অধিক বয়স্ক ব্যক্তিই ছিলেন গৃহপতি। তার আদেশে পরিবারের অপরাপর সবাই মেনে চলত ।
২. গ্রাম ও বিশ : কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি গ্রাম গঠিত ছিল। গ্রামের প্রশাসনিক প্রধানকে গ্রামীণ বলা হতো। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি বিশ বা জন গঠিত হয়। বিশ জনের সর্বোচ্চ শাসক ছিলেন বিশ্ব পতি বা রাজন অর্থাৎ, রাজা ।
৩. রাজার ক্ষমতা ও দায়িত্ব : প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা ছিল রাজতান্ত্রিক। রাজা নিজে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধ্বংস করতেন। রাজ পদ সাধারণ বংশানুক্রমিক ছিল। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রজারা রাজা নির্বাচন করত। রাজা রাজ্যের সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও রাজাগণ রাজ্যের বয়োবৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি বর্গদের নিয়ে যে সভা ও সমিতি গঠিত হতো তার পরামর্শ নিয়েই শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। এ প্রসঙ্গে A.S. Altokar, মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রথম দিকে সমিতির ক্ষমতা ছিল সীমাহীন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজাকে শাসন কার্য পরিচালনা করতে হতো। সমিতির বিরোধীতা রাজার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলত। রাজার প্রধান দায়িত্ব ছিল জনগণের সম্পত্তি ও প্রাণ রক্ষা করা। কর আদায়, বিচার, যুদ্ধ পরিচালনা, ধর্ম রক্ষা এছাড়া প্রজাদের মঙ্গলের জন্য রাজা যাগ-যজ্ঞাদীর অনুষ্ঠানের আদেশ দিতেন। সকল পুরোহিত ও ঐ সকল অনুষ্ঠান করতেন রাজা ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করতেন।
৪. রাজ কর্মচারী : রাজা অভ্যন্তরীণ শাসন কার্য পরিচালনা করার জন্য সেনানী ও পুরোহিত নামে রাজকর্মচারীদের সাহায্য গ্রহণ করতেন। সৈন্য পরিচালনা ও সামরিক বিভাগের দায়িত্ব সেনানীর উপর অর্পিত থাকত। পুরোহিত ধর্মীয় জীবন নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে রাজাকে উপদেশ দিতেন এবং অনেক সময় যুদ্ধ কালে রাজার সঙ্গী হতেন ।
৫. সৈন্য বাহিনী : বৈদিক যুগে রাজাদের কোন স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না। যুদ্ধের সময় রাজাকে জাতি বা গোষ্ঠির প্রধানদের উপর নির্ভর করতে হতো। ম্যাকডোনেল ও কিলেনের মতে, ক্ষত্রিয় নেতৃবর্গের পরিচালনাধীনে সৈন্যদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত হতো। সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হতো। যথা- সাধা, ব্রতগণ, পদাতিক, রথ ও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত হতো। লৌহ নির্মিত তীর, ধনুক, তরবারী ও বর্ণা যুদ্ধাঅস্ত্র ছিল ।
৬. রাজার আধিপত্য স্থাপন : বৈদিক যুগের শেষ ভাগে সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রচেষ্টা দেখা যায়। কোন কোন শক্তিশালী রাজা অন্যান্য রাজার উপর আধিপত্য বিস্তার করে বিশ্ব ভুবেনস্যা রাজ রাজ চক্রবর্তী এক রাট বা সম্রাট নামে খ্যাত হতেন । রাজ সূয় বা রাজপেয় এবং অশ্ব মেধ যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা তারা একচ্ছত্র আধিপত্য ঘোষণা করতেন। অর্থনৈতিক অবস্থা : অর্থনৈতিক অবস্থাসমূহ নিম্নরূপ :
১. শিল্প : বৈদিক যুগের জনসমাজ নানা প্রকার শিল্পজাত দ্রব্য তৈরি করতে জানত। বস্ত্রশিল্প, মৃত শিল্প, চারু শিল্প এবং আরো নানাপ্রকার কারুকার্যের দ্বারা প্রাচীন বৈদিক সমাজের বহু লোক জীবিকা অর্জন করত। এই যুগে সুতোর মিস্ত্রিদের বিশেষ সম্মান ছিল। কারণ সুতোররা যুদ্ধের জন্য শুধু রথই তৈরি করত না। চাষের জন্য লাঙ্গলও তৈরি করত।
২. পশু পালন : আর্যগণ যখন ভারতে আসে তখন তারা ছিল অর্ধ যাযাবর পশু চারক। আর এ কারণে গবাদী পশুর দ্বারা উৎপন্ন সামগ্রী ছিল তাদের জীবন ধারণের প্রধান উপকরণ। আর্যদের নিকট গাভীর মূল্য ছিল সর্বাধিক। প্রাচীন ভাষা বিজ্ঞানে ‘গাভীস্তি' শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এর সাহিত্য বিষয়ক অর্থ হল গাভীর সন্ধান (To search for cow)। প্রত্যেক গ্রামে একটি করে পশুচারণ ভূমি ছিল। গাভীর মূল্য আর্যদের কাছে অধিক ছিল। তাদের মধ্যে গাভী অপহরণ এবং একে কৈন্দ্র করে আর্যদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ প্রায় লেগেই থাকত। গরু, ভেড়া, কুকুর প্রভৃতি সে যুগের প্রধান পশু ছিল।
৩. কৃষি : ভারতবর্ষে আর্যরা স্থায়ীভাবে বসবাস করলে এদের পেশার পরিবর্তন ঘটে। পশুচারণ হতে ক্রমেক্রমে তারা কৃষিজীবিতে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক কোশাম্বি বলেন, ঐ যুগে জমি বণ্টনের অথবা জমি, ব্যক্তি মালিকানার কোন ব্যবস্থা ছিল না। ড. হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী বলেন, বাস্তজমিও চাষের জমির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল। আবার অনেকে বলেন, লোহার ব্যবহারের সাথে ঐ কৃষি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছিয়ে ছিল। প্রথম দিকে গ্রামবাসিরা গ্রামের জমি সমষ্টিগতভাবে চাষ করত ও ফসল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। পরবর্তীতে জমি বিভিন্ন মালিকানায় বা বিভিন্ন পরিবারের দখলে চলে যায়। সে যুগের প্রধান উৎপন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ছিল- ধান, যব ইত্যাদি।
৪. ব্যবসা-বাণিজ্য : কৃষির প্রসারের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। কালক্রমে জমিগুলো যখন ব্যক্তিমালিকানার অধিনে আসে তখন জমির মালিকেরা কৃষির জন্য অন্য লোক নিয়োগ করে। তাদের সময়ও মূলধনকে বাণিজ্যে প্রয়োগ করেছিল। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যই ছিল প্রধান। এজন্য নদী পথ ও স্থল পথ উভয়ই ব্যবহার করা হতো। গাঙ্গের উপত্যকার পূর্বাঞ্চলে কৃষির প্রসার ঘটলে গঙ্গা নদী বাণিজ্যের সহায়ক হয়ে উঠে এবং এর উপকূলে ছোট ছোট বাজার গড়িয়ে উঠে। আসিরিয়, ব্যাবিলনীয় ও এশিয়ার কয়েকটি দেশের সাথে আর্যদের বাণিজ্য প্রচলিত ছিল।
৫. বিনিময়ের মাধ্যম : আর্যদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আধুনিক কালের মত মুদ্রার প্রচলন ছিল না। দ্রব্যের মাধ্যমে বিনিময় ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। গরুকে বিনিময়ের মাধ্যম ব্যবহার করা হতো। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিস্ক নামক এক ধরনের স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন ছিল বলে অনেকে মনে করেন। তবে ইহা কতটা নির্ভরযোগ্য তা বলা কঠিন। তবে একথা সত্য যে, বিনিময় প্রথাই ছিল সাধারণ রীতি। ৬. পানি সম্পদ : অর্থনীতিতে পানির বিশেষ গুরুত্ব ছিল। পানি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হতো। অনেক সময় এই তিক্ততার পরিণতি হতো যুদ্ধ ।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বৈদিক যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে যানবাহন বলতে বুঝাত রথ ও চার চাকার গাড়ী। প্রথমটি ঘোড়ায় এবং দ্বিতীয়টি ষাড়ে টানত । আর্যদের ধর্মীয় অবস্থা : আর্যদের ধর্মীয় অবস্থাসমূহ নিম্নরূপ ঃ
১. ধর্মের ক্ষেত্রে প্রকৃতির প্রভাব : গ্রামকে কেন্দ্র করে আর্য সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল এবং তপোবয়ে বসে আর্য ঋষিরা নানা জ্ঞানে সন্ধান লাভ করেছিল। তাই তাদের ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রকৃতির প্রভাব যথেষ্ট দেখা দিয়েছিল ।
২. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দেব-দেবী : আর্যগণ প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে দেব-দেবী রূপে কল্পনা ও উপসনা করত। তারা বিশ্বাস করত দ্যাউস ছিলেন আকাশের দেবতা, ইন্দ্র ছিলেন বজ্রের, সর্পের দেবতা দেজী, জলের দেবতা বরুণ, ঝড়ের দেবতা মরুৎ, আলোকের দেবতা সূর্য । প্রকৃতিকে তারা পূজা করত। অগ্নি, বায়ু, ঊষা প্রভৃতি ছিল তাদের উপাস্য দেবতা।
৩. যাগ যজ্ঞের প্রথা : আর্যগণ প্রথমদিকে বহু দেব-দেবীর উপাসনা করলেও মূর্তি রচনা করে পূজার পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। কোন মন্দিরের উল্লেখ আর্য সমাজে পাওয়া যায় না। দেবতাদের উপাসনা করার জন্য যজ্ঞের আয়োজন করা হতো। ঋকবেদের যুগে যজ্ঞানুষ্ঠান অতি সাধারণ ছিল ।
৪. পশু বলি ও মূর্তি পূজা : পরবর্তী বৈদিক যুগে অনার্যদের সাথে মিশ্রণের ফলে আর্যদের ধর্মে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। পশু বলি, মূর্তি পূজা অনার্যদের ধর্মাচার হতেই আর্য সমাজে প্রবেশ করে ।
৫. সামাজিক শ্রেণি বিন্যাস/ধর্ম বিচ্ছেদ নীতি : পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজ ব্যবস্থায় বর্ণাশ্রম প্রথার প্রসার ঘটায় ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের প্রতিফলন ঘটেছিল। বিভিন্ন বর্ণ নিজ নিজ স্বতন্ত্র দেব-দেবির উপাসনা করতে শুরু করে এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে শুদ্রগণ অপাংত্তেয় হয়ে পড়ে ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, বৈদিক যুগের আর্যগণ সভ্যতার এক উচ্চস্তরে উপনীত হয়েছিল। ঋক সংহিত আর্যদের কবিত্ব শক্তির চরম প্রকাশ সন্দেহ নেই। স্থাপত্য শিল্পের চিকিৎসা শাস্ত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় প্রতি ক্ষেত্রেই আর্যদের যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। আধুনিক কালের জীবন ব্যবস্থার ন্যায় উন্নত না হলেও বৈদিক যুগের জীবন ব্যবস্থা আর্যদের জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অনেকাংশে উন্নত ছিল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]