, হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর এবং হুমায়ুনের ব্যর্থতা ও শেরশাহের সফলতার কারণগুলো বিশ্লেষণ কর।

ভূমিকা : "The Struggle and war is the habitual fact of the worlds history." সংঘর্ষ, সংঘাত পৃথিবীর চিরন্তন ইতিহাস। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই এ সংঘাতের জন্য যা আজ পর্যন্ত বিরাজমান। ভারতে মুঘল শাসনের ইতিহাসে ক্ষমতা লাভের জন্য হুমায়ুন ও শেরশাহের সংঘর্ষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৫৩০ খ্রিঃ বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করে প্রথম থেকেই নানাবিধ জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশেষকরে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শত্রু আফগান বীর শেরশাহের সঙ্গে বিবাদ ও সংঘর্ষে তিনি জর্জরিত হন। অবশেষে ১৫৪০ খ্রিঃ কনৌজের যুদ্ধে শেরশাহের নিকট পরাজিত হন। অতি সাধারণ একজন জায়গীরদার প্রভাবশালী মুঘল সম্রাটকে পরাজিত করে দীর্ঘদিন নির্বাসনে বাধ্য করা সত্যিই এক নাটকীয় ব্যাপার।
হুমায়ুনের নানাবিধ বিপত্তি : হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেই নানাবিধ বিপত্তির সম্মুখীন হন। তাঁর এ সকল বিপত্তির কারণ-
১. সৈন্যবাহিনীর উপর কর্তৃত্বহীনতা : তাঁর সৈন্যবাহিনী তুর্কি, মুঘল, পারস্যিক, আফগান ও ভারতীয় বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত ছিল। বাবর স্বীয় সামরিক শক্তির সাহায্যেই এরূপ সৈন্যবাহিনীর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু হুমায়ুন সে শক্তির অধিকারী না হওয়ায় স্বীয় সৈন্যবাহিনীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারেন নি।
২. শক্তিশালী আফগান : পূর্ব ভারতে তখনও আফগানগণ শক্তিশালী ছিল এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে সর্বদাই প্রস্তুত ছিল।
৩. রাজপুতদের অস্তিত্ব : বাবর সামাজিকভাবে রাজপুতদের দমন করেছিলেন বটে, কিন্তু হুমায়ুনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার ক্ষমতা তখনও তাদের ছিল।
৪. বাহাদুর শাহের প্রস্তুতি : গুজরাটের শাসনকর্তা বাহাদুর শাহ সমগ্র ভারত জয় করার উদ্দেশ্যে তখনও সৈন্য বাহিনী তৈরি করছিলেন।
৫. তিন ভ্রাতার গোলাযোগ : হুমায়ুন তাঁর তিন ভ্রাতা কমরান, হিন্দা ও আসকারী যথাক্রমে কাবুল, কান্দাহার, আলওয়ার ও সম্বলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে নিজের বিপত্তি ডেকে এনেছিলেন। তাঁর তিন ভ্রাতা আপন এলাকায় স্বাধীনভাবে থেকে জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা হুমায়ুনের জীবন অতীষ্ট করে তুলেছিল । হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ ঃ হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষের প্রধান কারণগুলো হল ঃ
১. আফগান-মুঘল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব : শেরশাহ ও হুমায়ুনের মধ্যে সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কারণ হল আফগান- মুঘল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। দশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশত বছরব্যাপী ভারতবর্ষের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আফগানদের রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু মুঘল সম্রাট বাবর আফগানদের পরাজিত করে ভারতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এ আফগান-মুঘল ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলেই তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
২. ক্ষমতার প্রতি লোভ': উভয়ের ক্ষমতা ও নেতৃত্বের লোভ সংঘর্ষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। হুমায়ুন নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং শেরশাহের বিভিন্ন অভিযানকে স্তব্ধ করে দিতে ইচ্ছা করেন। অন্যদিকে শেরশাহ নিজের বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস ও বলিষ্ঠতা দিয়ে নিজের ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল দখল করার ইচ্ছা করলে যুদ্ধ বেঁধে যায়।
৩. হুমায়ুনের ঈর্ষা : শেরশাহের উত্তরোত্তর শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে হুমায়ুন প্রচণ্ড ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে বিহারে শেরশাহের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও গৌড় বিজয়ের সংবাদে হুমায়ুন শেরশাহের মোকাবিলা করার জন্য অগ্রসর হন ফলে সংঘর্ষ হয়। ৪. আফগানদের তীব্র জাতীয়তাবোধ : আফগানগণ পানিপথ ও ঘোঘরার প্রান্তরে বাবরের নিকট পরাজিত হলেও তাদের তীব্র জাতীয়তাবোধ তাদেরকে আফগান নেতা শেরশাহের নেতৃত্বে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করে।
৫. সংযমহীনতা : সংযম সকল ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে। মানুষ যখন সংযমহীন হয় তখন যে কোন কাজ বিচার-বিশ্লেষণ না করেই শুরু করে। এ সংঘর্যের মূলে উভয়ের মধ্যে সংযমহীনতা ছিল। ফলে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়।
সংঘর্ষের বিবরণ ঃ হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষগুলো হল নিম্নরূপ-
১. হুমায়ুনের চুনার দুর্গ অবরোধ : সম্রাট হুমায়ুন সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েই ১৫৩২ খ্রিঃ পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী আফগান দলপতিদের নেতা মাহমুদ লোদীকে পরাজিত করে চুনার দুর্গ দাবি করলে শেরশাহ তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৫৩২ খ্রিঃ হুমায়ুন চুনার দুর্গ অবরোধ করে প্রায় ৬ মাস অবস্থান করার পর গুজরাট অভিযান পরিচালনা করার জন্য অবরোধ প্রত্যাহার করেন ।
২. শেরশাহের বাংলা অভিযান : হুমায়ুন যখন গুজরাটে বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে অভিযানে ব্যস্ত তখন শেরশাহ মুঘল বিতাড়নের অভিযান ত্বরান্বিত করতে থাকেন। ১৫৩৬ খ্রিঃ তিনি আকাঙ্ক্ষিতভাবে বাংলাদেশ আক্রমণ করেন এবং শেষ হুসেনশাহী সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের কাছ থেকে শেরশাহ স্বর্ণ-মুদ্রা ও কয়েকটি অঞ্চল লাভ করে সন্ধি চুক্তি করেন। শেরশাহকে এরূপ শক্তিশালী হয়ে উঠতে দেখে হুমায়ুন শেরশাহকে দমন করতে আগ্রা থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রওয়ানা করেন।
৩. শেরশাহের রোটার্স দুর্গ ও বাংলাদেশ বিজয় : হুমায়ুন গুজরাট হতে আগ্রায়, ফিরেই শেরশাহের বিজয় সম্পর্কে অবহিত হন এবং গৌড় অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৫৩৭ খ্রিঃ তিনি সরাসরি বাংলা অভিযান না করে চুনার দুর্গ অবরোধ করেন। শেরশাহ এ সুযোগে ১৫৩৮ খ্রিঃ গৌড় অধিকার করেন। অতঃপর বিহারের সুরক্ষিত রোটাস দুর্গ দখল করে প্রচুর ধনরত্ন, পরিবার-পরিজনকে স্থানান্তর করেন ।
৪. বানারস, চুনার দুর্গ, জৌনপুর ও কনৌজ জয় : শেরশাহ কর্তৃক বাংলা দখলের সংবাদ শুনে ১৫৩৮ খ্রিঃ হুমায়ুন চুনার দুর্গ বিজয় সমাপ্ত করে বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা করেন এবং প্রায় বিনাবাধায় গৌড় অধিকার করে এর নাম রাখেন 'জান্নাতাবাদ' এটা ছিল শেরশাহের কৌশল। হুমায়ুন গৌড়ে অবস্থান করলে শেরশাহ সুযোগ বুঝে চুনার দুর্গ উদ্ধার করেন এবং বানারস, চুনার দুর্গ, জৌনপুরসহ কনৌজ পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চল দখল করেন।
৫. চৌসার যুদ্ধ : ১৫৩৯ খ্রিঃ বিহার ও জৈনপুরে শেরশাহের আধিপত্য দেখে হুমায়ুন বাংলার শাসনভার জাহাঙ্গীর কুলীবেগের উপর অর্পণ করে সসৈন্যে আগ্রাবিমুখে রওয়ানা হন। পথে বক্সারের নিকটবর্তী গঙ্গা নদীর তীরে 'চৌসা' নামক স্থানে শেরশাহ ও তাঁর সদলবলসহ হুমায়ুনকে বাঁধা দেন। (১৫৩৯ খ্রিঃ ২৬ শে জুন চৌসার) এ যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হন। (অধিকাংশ মুঘল সৈন্য গঙ্গা নদী অতিক্রম করতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। হুমায়ুন উপায়ন্তর না দেখে অশ্বপৃষ্ঠে শিবির ত্যাগ করে গঙ্গা তীরে উপস্থিত হলেন। কিন্তু গঙ্গা নদীর উত্তাল তরঙ্গ অতিক্রম করা অসম্ভব দেখে নিজাম নামক একজন ভিস্তিওয়ালার সাহায্যে তিনি অতিকষ্টে গঙ্গা নদী পার হয়ে প্রাণ রক্ষা করো। ঐতিহাসিক K. R. Qnungo বলেন, “১৫৩৮ খ্রিঃ শের খান একজন সাধারণ সামন্ত হিসেবেই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু চৌসার যুদ্ধে বিজয় তাঁর আকাঙ্ক্ষাকে সুদূরপ্রসারিত করে।” ঐতিহাসিক ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, "The battle of chausa was a clear advantage to Sher Khan. He now to the title of 'Sher Shah' and ordened in this coins to be struck and the khutba to be read in his own name.)
৬. কনৌজ বা বল্ব গ্রামের যুদ্ধ : চৌসার যুদ্ধে জয়লাভ করার পর শেরশাহ দিল্লীর মসনদ দখলের পরিকল্পনা করেন। এদিকে হুমায়ুন পরাজয়বরণ করে নতুন উদ্দমে সৈন্য সংগ্রহ করতে থাকেন। ১৫৪০ খ্রিঃ ১৭ ই মে হুমায়ুন ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে কনৌজ প্রান্তরে 'বিল্বগ্রাম' নামক স্থানে শেরশাহের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এ যুদ্ধেও হুমায়ুন পরাজিত
· হলেন। কনৌজের যুদ্ধ সম্বন্ধে সমসাময়িক ঐতিহাসিক জওহর বলেন- “এ যুদ্ধে অনেক সৈন্য নিহত হয়, অধিকাংশ সৈন্য নদীতে ডুবে মারা যায়।” (Tazkirat-ul-waklat.) এ যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে আর.সি. মজুমদার, রায় চৌধুরী এবং দত্ত বলেন, "Thus the work of Babur in India was undone, and the sovereignty of Hindustan once more passed to be Afghans.
কনৌজের যুদ্ধের মর্মান্তিক পরাজয়ের ফলে হুমায়ুন হিন্দুস্থানের সিংহাসন ত্যাগ করে ১৫৪০ খ্রিঃ হতে ১৫৫৫ খ্রিঃ পর্যন্ত ১৫ বছর অসহায় পলাতকের ন্যায় আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হলেন। কনৌজ বা বিল্বগ্রামের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধে শেরশাহের জয়লাভে বাবরের প্রতিষ্ঠিত নবমুঘল সাম্রাজ্যের আকস্মিক অবসান ঘটল। ১৫৪০ খ্রিঃ শেরশাহের নেতৃত্বে ভারতে পুনরায় আফগান প্রভৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল এবং শেরশাহ হিন্দুস্থানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেন।
সংঘর্ষের ফলাফল ঃ হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষের ফলাফলসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল ঃ
১. শেরশাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি : এভাবে শেরশাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তিনি বিহারের শাসনকর্তা থেকে অবশেষে দিল্লীর সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন। শেরশাহ মাত্র চৌসার যুদ্ধে জয়লাভ করে পশ্চিমে কনৌজ হতে পূর্বে আসাম ও চট্টগ্রাম এবং উত্তরে রোটার্স হতে দক্ষিণে বীরভূম পর্যন্ত বিশাল এলাকার মালিক হন।
২. সিংহাসন লাভ : শেরশাহ হুমায়ুনের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ও সংঘর্ষের মোকাবিলা করে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে দিল্লীর মসনদ লাভ করেন। তিনি এখানে ৫ বছর কালব্যাপী শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
৩. হুমায়ুনের ভাগ্য বিড়ম্বনা : এ সংঘর্ষের ফলে সম্রাট বাবর কর্তৃক সুপ্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য তার পুত্র হুমায়ুনের বিচক্ষণতার অভাবে হাত ছাড়া হয়। আর এর মাধ্যমেই হুমায়ুনের ভাগ্য বিড়ম্বনার সূচনা হয়।
৪. শেরশাহের সমর্থন বৃদ্ধি পায় : শেরশাহ ছিলেন একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, সমরনেতা ও সুশাসক। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে জনসমর্থনমূলক ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেন। ফলে জনগণ শেরশাহকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। ঐতিহাসিক ব্রুক বলেন- "Sher Shah was the first who attempted to from Indian empire based upon the people."
৫. হুমায়ুনের রাজস্ব সংকট : এ যুদ্ধের ফলে হুমায়ুন রাজ্য হারান, এমন কি কপর্দকহীন হয়ে পড়েন। তার অর্থ সংকটই শেষ পর্যন্ত তাকে অন্যদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করে। ৬. মুঘল শক্তির আপাত পতন : বহু ত্যাগতীতিক্ষার পর মুঘল শক্তি দিল্লীতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছিল। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তহীনতা, অযোগ্যতা, দুর্বল সামরিক শক্তি, অমনোযোগিতা ইত্যাদি কারণে এ শক্তির আপাত পতন ঘটে।
হুমায়ুনের পরাজয়ের কারণ : হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষে হুমায়ুনের পরাজয়ের পশ্চাতে নিম্নোক্ত কারণসমূহ বিদ্যমান :
১. ভ্রাতাদের অসহযোগিতা : পিতার অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী হুমায়ুন তাঁর ভ্রাতাদের মধ্যে সমগ্র সাম্রাজ্য বণ্টন করে দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিলেও তাঁর ভ্রাতাগণ তাঁর বিপদের দিনে তাকে কোনুরূপ সাহায্য করে নি। তাই ঐতিহাসিক ভি.ডি. মহাজন বলেন-By doing so, he weaked his own hand.
২. দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও মনোবলের অভাব : হুমায়ুনের চরিত্রে দৃঢ়তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। শত্রুকে যখন শাস্তি দিবার প্রয়োজন দেখা দিত তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতেন। এ ছাড়া তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও মনোবলের অভাবই শেরশাহের বিরুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ।
৩. প্রজাদের অহযোগিতা : যে কোন সরকারব্যবস্থা টিকে রাখার জন্য জনসমর্থন একান্ত প্রয়োজনীয়। জনসমর্থন ছাড়া কোন সরকারব্যবস্থা বা শাসনব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। হুমায়ুনের খেয়ালীপনা ও অমিতব্যয়িতার জন্য সমর্থন হারাতে থাকে। ফলে এ শাসনব্যবস্থার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
৪. হুমায়ুনের উদাসীনতা : শেরশাহের ক্ষমতা বৃদ্ধির সংবাদে হুমায়ুনের উদাসীনতা, তার মৌখিক আনুগত্যে বিশ্বাস স্থাপন, চুনার দুর্গ ও গৌড় দখলের পর অযথা সময় ও অর্থের অপচয় প্রভৃতি তার চারিত্রিক দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। তাই ভি.ডি.মহাজন বলেন, "He delay in taking action against sher Kha resulted in his failure." অর্থাৎ শের খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্বের কারণেই হুমায়ুনের পতন ঘটে ।
৫. মানসিক অস্থিরতা : মানসিক অস্থিরতার কারণে তিনি এক শত্রুকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত ও নির্মূল না করেই অপর শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচলনা করেন এবং সাফল্যজনক কোন বিজয় অভিযানকে মাঝখানে অসমাপ্ত রেখেই তিনি অপরদিকে অভিযান পরিচালনা করতেন। এটা তার অস্তিত্বে মারাত্মক আঘাত হানে।
৬. আফগান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : গোগরার যুদ্ধে বাবর লোদী বংশকে পরাজিত করলেও তাদের জাতীয়তাবাদী স্পৃহা দমন করতে পারেন নি। তখনও আফগান ষড়যন্ত্র অব্যহত ছিল।
৭. সামরিক প্রতিভার অভাব : হুমায়ুন অপেক্ষা শেরশাহ অসামান্য সামরিক কৌশল ও শক্তিমত্তার অধিকারী ছিলেন । কাজেই শেরশাহের কাছে হুমায়ুনের পতন স্বাভাবিক ঘটনা বটে ।
৮. আত্মরক্ষামূলক নীতি : চৌসার যুদ্ধের পর হারানো অঞ্চলগুলো স্বীয় অধিকারভুক্ত করার জন্য হুমায়ুন শেরখানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতির পরিবর্তে আত্মরক্ষামূলক নীতি অনুসরণ করে স্বীয় পতনকে ত্বরান্বিত করেন।
শেরশাহের সাফল্যের কারণ : হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে সংঘর্ষে শেরশাহের সাফল্যের মূলে ছিল- ১. আফগান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতিভূ : শেরশাহ আফগান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পুনর্জীবিত করেন। তিনি আফগান জাতিকে মুঘলদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে চৌসা ও কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করেন।
২. সামরিক দক্ষতা ও রণকুশলতা : শেরশাহের জয়লাভের মূলে ছিল তার রণকৌশল ও সামরিক দক্ষতা। তার আফগান সৈন্যবাহিনী সহমিশ্রিত মুঘল সৈন্যবাহিনী অপেক্ষা শক্তিশালী ছিল। ফলে তারা সহজেই পরাজিত করে।
৩. মুঘল বাহিনী সম্পর্কে শেরশাহের অতীত অভিজ্ঞতা : শেরশাহ প্রথম জীবনে কিছুকাল বাবরের অধীনে চাকরি করে মুঘল সৈন্যবাহিনীর গঠন পদ্ধতি, রণকৌশল এবং ছলচাতুরী সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তার পক্ষে সহজেই হুমায়ুনকে পরাজিত করা সম্ভব হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শেরশাহ নিজেই তার যোগ্যতাবলে যে বিজয় লাভ করেছেন তা সত্যিই উল্লেখ করার মত ঘটনা। হুমায়ুন বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েও তা ধরে রাখতে পারেন নি। পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই শেরশাহের সাথে বার বার মুখোমুখি হন জয়ের আশায়। কিন্তু তার সে জয় শেরশাহের জীবদ্দশায় সম্ভব হয়ে উঠেনি । ঐতিহাসিক লেনপুল তাই যথার্থই বলেন, If there was a possibility of failing, Humayun was not to miss it. He tumbled through life and tumbled out of it.

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]