বসু-সোহরাওয়ার্দী চুক্তি Agreement of Basu-Sohrawardi অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিণতি ও ব্যর্থতার কারণ Result of Forming Undivided Sovereign Bengal and Causes of Failureness

২৮ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দ অখন্ড বাংলা প্রশ্নে বিভিন্ন বৈঠকে মিলিত হন এবং ১২ মে ভারতীয় রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
গাম্বীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেয়ে শরৎচন্দ্র বসু ১২ মে একটি ছয় দফা নীতিমালা ঘোষণা করেন। পরে ১২ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী ও শরৎচন্দ্র বসুর প্রস্তাবসমূহ নিয়ে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে । ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর কলকাতার ১নং উডবার্ন পার্কের বাসভবনে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস নেতাদের এক সম্মেলন আহ্বান করা হয়। বৈঠকে অবিভক্ত ও স্বাধীন বাংলার সমর্থক উভয় সম্প্রদায়ের বাঙালি নেতৃবৃন্দের মধ্যে মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবুল হাশিম এবং এম.এ. মালিক; অন্যদিকে হিন্দু কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বখশী উপস্থিত ছিলেন, যারা সভায় আলোচনা শেষে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আর এ চুক্তিই বসু- সোহরাওয়ার্দী চুক্তি নামে অভিহিত।
২.৩.৫ বসু-সোহরাওয়ার্দী চুক্তির প্রতিক্রিয়া
Reaction of Basu-Sohrawardi Agreement
স্বাধীন, সার্বভৌম অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগটি মুসলিম লীগের বাঙালি-অবাঙালি নেতৃবৃন্দ, কংগ্রেস ও অন্যান্য হিন্দু নেতৃবৃন্দ, পত্র-পত্রিকা ও ব্রিটিশ সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিপরীতমুখী তথা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কেননা, নিজেদের মধ্যে এক সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী, কিরণ শঙ্কর রায় ও শরৎচন্দ্র বসু তাদের এ পরিকল্পনার পরীক্ষামূলক চুক্তির শর্তগুলোর ব্যাপারে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ হাইকমান্ডের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করেন। তবে কংগ্রেস ও লীগ নেতাদের মধ্যে তৎকালে বিরাজমান ভুল বোঝাবুঝি ও পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এ সমঝোতার প্রণেতারা দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা চুক্তির শর্তগুলোর সরাসরি নিন্দা করেন। কলকাতার প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদপত্র এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের খাজা গ্রুপের সংবাদপত্রগুলো চুক্তির শর্তগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান শুরু করে।
১. মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়া (Reactions of Muslim League) :

মুসলিম লীগের মধ্যে অখণ্ড বাংলা গঠন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। এ পরিকল্পনা অবাঙালি নেতৃবৃন্দ এবং বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা আকরম খাঁ, খাজা নাজিমুদ্দিন, নূরুল আমিন প্রমুখ নেতারা প্রথমদিকে স্বাধীন বাংলার পক্ষে থাকলেও পরবর্তীতে পত্র-পত্রিকায় অখণ্ড বাংলার পক্ষে লেখালেখি হওয়ার পর মুসলিম লীগ দ্বিধাবিভক্ত
হয়ে পড়ে।
৫ মে আকরম খাঁ বলেন, পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নই উঠে না। খাজা নাজিমুদ্দিন এ চুক্তিকে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ বলে অভিহিত করেন। ২৮ মে চূড়ান্তভাবে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ একটি ঘোষণায় উল্লেখ করে যে, সোহরাওয়ার্দী-শরত্বসুর প্রস্তাবের সাথে মুসলিম লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। ১৬ মে দিল্লিতে জিন্নাহর সাথে এক বৈঠকের পর আকরম খাঁ সাংবাদিকদের জানান অখণ্ড বাংলা মুসলিম লীগ সমর্থন করে না। জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীকে অখণ্ড বাংলা পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। বঙ্গীয় লীগ নেতা মওলানা রাগীব আহসান বলেন যে, জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীকে সমর্থন দিয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, “জিন্নাহর মত নিয়ে আমি এ পদক্ষেপ নিয়েছি।' তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি না দিলেও জিন্নাহ সত তাদের যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি পছন্দ করতেন না। কারণ এটি ছিল মুসলিম লীগের দ্বিজাতি তত্ত্বের পরিপন্থী ।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া (Reactions of Congress) :
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধিতা আসে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। অখণ্ড স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনাকে 'একটি ফাঁদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্যাটেল বাংলার কতিপয় প্রখ্যাত হিন্দু ও কংগ্রেস নেতাকে এ ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য সতর্ক করে দেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, 'বাংলার অমুসলিমদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে বাংলাকে অবশ্যই বিভক্ত করতে হবে।'
১৯৪৭
হচ্ছে এখানে মুসলিম লীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। -এর প্রবক্তারা তা বলছে না।'
ছিল বাংলা বিভক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কেননা, অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক যেকোনো দিক বিবেচনায় এককভাবে পূর্ববাংলা টিকে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। মাউন্টব্যাটেন এক রিপোর্টে উল্লেখ
হতমানে ভাগ করা হলেও কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ব বাংলা হিন্দুস্তানের মধ্যে চলে আসবে।'
২৭ মে এক সংবাদ প্রতিনিধির কাছে নেহেরু অভিমত ব্যক্ত করে, ইউনিয়নের (অর্থাৎ হিমুন বাংলা অবস্থিত থাকার একমাত্র এ শর্তে আমরা বাংলাকে ঐক্যবদ্য রাখতে সম্মত হয়েছি।' এশীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের একটি অংশ এ প্রভাবকে প্রাদেশিকতা' বলে বিরোধিতা করেছিল। তবে they dম সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, শরৎবসুসহ কয়েকজন নেতা মহাত্মা গান্ধীর সাথে অখণ্ড বাংলা শারিকা নিয়ে আলোচনা করলে তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। গাদী ৮ জুন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে শরত্বমুকে দেখা এক পত্রে বাংলা বিভাগের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
৩. ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়া (Reactions of British Government) :
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সার্বভৌম স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার ধারণার প্রতি সর্বাত্মকভাবে বৈরী ছিলেন এমন নয়। বাংলার তৎকালীন গভর্নর ফ্রেডারিক বারোজ প্রদেশটির আদৌ বিভক্তির পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি বরং সোহরাওয়ার্দী-বসু ফর্মুলার পক্ষপাতী ছিলেন এবং এটি যাতে বাস্তবায়িত হয় সেজন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন। অন্যদিকে, ভারত সচিব লিস্টওয়েলও বাংলাকে অবিভক্ত অবস্থায় স্বাধীনতা লাভের সুযোগদানের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি সোহরাওয়ার্দীকে এ মর্মে আশ্বাস দেন যে, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস হাইকমান্ড অনুমোদন করলে বাংলা নিয়ে যেকোনো নিষ্পত্তি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মেনে নিবে। তারা মাত্র একটি প্রদেশের স্বার্থের জন্য গোটা ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই এ পরিকল্পনা যে ব্যর্থ হবে তা ছিল প্রায় পূর্ব নির্ধারিত।
২.৩.৬. অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিণতি ও ব্যর্থতার কারণ
Result of Forming Undivided Sovereign Bengal and Causes of Failureness
ক. অখণ্ড বাংলা গঠনের পরিণতি (Results of Creating Undivided Bengal) ভারতীয় উপমহাদেশের প্রভাবশালী দুটি দল অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াশীল মতামত ও বিরোধিতা করায় মাউন্টব্যাটেন তাঁর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুনের পরিকল্পনায় ঘোষণা করেন যে, কেবল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ঐকমত্য স্থাপিত হলেই তিনি বঙ্গভঙ্গ রোধ করবেন, অন্যথায় নয়। মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনানুযায়ী বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের সংসদ সদস্যগণ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন পৃথক পৃথক বৈঠকে বসেন। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ ১০৬:৩৫ ভোটে অখণ্ড বাংলার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। অপরপক্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের বর্ধমানের মহারাজার সভাপতিত্বে মিলিত হয়ে ৫৮:২১ ভোটে বাংলার বিভক্তির পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। ফলে বাংলা পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলা এ দুই অংশে বিভক্ত হয়। পূর্ববাংলার প্রতিনিধিবর্গ ১০৭:৩৪ ভোটে পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে এবং পশ্চিম বাংলা প্রতিনিধিবর্গ ৫৮:২১ ভোটে ভারতবর্ষে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পূর্ববাংলার যে ৩৪ জন বাংলা বিভক্তির পক্ষে এবং পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে কিন্তু ভারতে যোগদানের পক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য। এদের মধ্যে কিরণ শঙ্কর রায় অন্যতম। অপরপক্ষে পশ্চিম বাংলার যে ২১ জন বাংলা বিভক্তির বিপক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন মুসলিম লীগ দলীয় সদস্য। হোসেন সোহরাওয়ার্দী এ দলভুক্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এ.কে. ফজলুল হক ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। ২৭ জুন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের
ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি সভায় মাত্র ৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ঢাকায় পূর্ববঙ্গের রাজধানী স্থাপিত হবে। এভাবে বাংলা বিভক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই ভারত স্বাধীনতা আইনে অখণ্ড বাংলা তথা বৃহত্তর বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত এবং পূর্ববাংলাকে পাকিস্তানের অংশ বলে ঘোষণা করেন। আর এভাবেই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন 'স্বপ্নই থেকে যায়।
খ. অখণ্ড বাংলা গঠনের ব্যর্থতার কারণ (Causes of Failure in Undivided Sovereign Bengal ) যেকোনো রাষ্ট্র গঠন আর পরিচালনায় উৎপাদন-অর্থনৈতিক কিংবা ভাষা-সংস্কৃতির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে থাকে, ধর্মীয় অনুশাসনে সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য পাওয়া গেলেও উৎপাদন-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে না। আর অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে ব্যর্থতার প্রধান ২টি কারণের একটি ব্রিটিশ শাসককুলের কূটকৌশল অন্যটি হলো উৎপাদন-অর্থনৈতিক ও ভাষা-সংস্কৃতির কার্যকর বিষয়টাকে ঠেলে ধর্মীয় দ্বিজাতি তত্ত্বকে সামনে রাখা। অখণ্ড বাংলা গঠনের ব্যর্থতার কারণগুলো যথাক্রমে- ১. কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ডের অসম্মতি : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড অখণ্ড বাংলাকে কখনই সমর্থন করতে পারে নি। সংগঠন দুটির বাংলা শাখায় যারা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের অনুসারী ছিলেন তারা প্রথমদিকে অখণ্ড বাংলার দাবি সমর্থন করলেও শেষাবধি হাইকমান্ডের ভয়ে-এর চরম বিরোধিতা করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলা মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা মওলানা আকরম খাঁ একপর্যায়ে এটি সমর্থন করলেও পরবর্তীতে-এর চরম বিরোধিতা করেন।
হিন্দু ও মুসলমানদের আত্মবিশ্বাসের অভাব : দীর্ঘ ১০ বছর ধরে (১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) বাংলার ক্ষমতায় মুসলমান সরকার অধিষ্ঠিত থাকায় বাঙালি হিন্দু রাজনীতিবিদের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয় যে, অখণ্ড বাংলা হলে হিন্দুরা কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না; সুতরাং তারা অখণ্ড বাংলা সমর্থন করেন নি। কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে সংঘটিত 'ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গা'র পর থেকে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বাংলা বিভক্তির পক্ষে প্রচারণা চালাতে স্বার্থান্বেষী হিন্দু মালিকানাধীন পত্রিকাগুলোর জন্য ‘অপূর্ব সুযোগ' এনে দেয়, যা দু'সম্প্রদায়ের মধ্যে এক 'ভয়াবহ সন্দেহের প্রাচীর' গড়ে তুলতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কলকাতা দাঙ্গার পর স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রায় দুরূহ হয়ে পড়ে ।
সময়ের স্বল্পতা : ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে ভারত ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে তারা ভারত ছেড়ে চলে যায়। তাই দ্রুতগতিতে ব্রিটিশদের প্রস্থান অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা গঠন উদ্যোগের অন্তরায় ছিল । কেননা এ উদ্যোগ সফল করার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন ছিল।
৪ . হিন্দুদের তীব্র বিরোধিতা : শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের একটি অংশ অখণ্ড ও সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্র গঠনের তীব্র বিরোধিতা এবং বাংলাকে বিভক্ত করে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের বাংলা অঞ্চলের কার্যকরী পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বাংলা বিভাগের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে। তাদের প্রধান যুক্তি ছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হলে একই ভিত্তিতে বাংলা ও পাঞ্জাবকেও ভাগ করতে হবে । ফলে বাংলা ভাগ হয়ে যায়।
৫. উপযুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব : অবিভক্ত বাংলা রাষ্ট্র গঠন আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো উপযুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব। কেবল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশংকর রায় ও আবুল হাশিম ছাড়া অন্যকোনো নেতা এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেননি। আবার খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরম খাঁর মতো মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ এ আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে, বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক অবিভক্ত আন্দোলনের ব্যাপারে অনেকটা নীরবতা পালন করেন। তাছাড়া ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে সে সময় কোনো নেতার পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
যে দাবিনামা পেশ করা হয় তাতে বাংলার মোট ৭৭,৪৪২ বর্গমাইল এলাকার মধ্যে ৪০,১৩৭ বর্গমাইল দাবি করা হয়। দাবিকৃত এলাকার জনসংখ্যা ছিল অবিভক্ত বাংলার মোট জনসংখ্যার ৪৫%, তন্মধ্যে মুসলমান জনসংখ্যা ৩২% এবং বাকিরা অমুসলমান। কংগ্রেস যেসব এলাকার দাবি করে সেগুলো হচ্ছে গোটা বর্ধমান বিভাগ, নদীয়া, যশোর ও খুলনা জেলাসমূহের সামান্য অংশ বাদে গোটা প্রেসিডেন্সি বিভাগ, রাজশাহী বিভাগের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা, রংপুর জেলা থেকে ডিমলা ও হাতিবান্ধা থানা, দিনাজপুর জেলার পশ্চিমাংশ এবং নবাবগঞ্জ মহকুমা বাদে মালদাহ জেলা, ঢাকা বিভাগের বরিশাল জেলা থেকে গৌরনদী, নজিরপুর, স্বরূপকাঠি এবং ঝালকাঠি থানাসমূহ, ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা ও রাজৈর থানা। এসব দাবির যৌক্তিকতা উত্থাপন করা হয়েছিল কিনা তার প্রমাণিত তথ্যাদি আপাত আমাদের হাতে পর্যাপ্ত নয় ।
ভারত ভূখণ্ডের সঙ্গে আসামের রেল যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস রংপুর জেলার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ থানা ভূরুঙ্গামারিও দাবি করে বসে। কংগ্রেস কলকাতা শহর পশ্চিম বাংলার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি পেশ করে। তাদের দাবির সপক্ষে তারা যুক্তি দেখায় যে-
(.
১৯৪১-এর আদমশুমারি অনুযায়ী কলকাতা শহরে মুসলমান জনসংখ্যা মাত্র ২৩.৫৯% (মোট ২,১০৮, ৮৯১-এর মধ্যে ৪,৯৭,৫৩৫)।
কর প্রদানকারী মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ১৪.৮% (৬৮,৫৬৭-এর মধ্যে ১০,১৪৯)।
কলকাতা শহরের ৮১,১৫৯ টি বাড়ির মধ্যে মুসলমান বাড়ির সংখ্যা মাত্র ৬,৮৬৩ (৮. ৪৫%)।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত বেসরকারি সাহায্যের মধ্যে মুসলমানদের দান মাত্র ১% (প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের মধ্যে মাত্র ১ লাখ)।
কলকাতার আশপাশে যে ১১৪টি পাটকল আছে সেগুলোর মালিক অমুসলমান ব্যক্তিবর্গ ।
সুতরাং, সম্প্রদায়গত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা বিভক্ত করলে কলকাতা পশ্চিম বাংলারই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর কলকাতা শহরও-এর অধিবাসীদের প্রয়োজনে (রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে, সড়ক ও রেল যোগাযোগ নির্বিঘ্নে রাখতে, প্রভৃতি) মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদীয়া, যশোর জেলাসমূহ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও জেলাগুলোকে পশ্চিম বাংলার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
অপরপক্ষে, মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ, প্রেসিডেন্সি বিভাগের বেশিরভাগ অংশ এবং বর্ধমান জেলাভুক্ত হুগলি ও ভাগীরথীর পূর্বাংশ পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করা হয়। মুসলিম লীগের দাবিতে ধরা হয় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হওয়া সত্ত্বেও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে এবং পূর্ববাংলার অর্থনীতির প্রয়োজনে এ জেলাগুলো পূর্ববাংলাভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
উত্তর বাংলার অর্থনীতিতে তিস্তা নদী ও-এর শাখানদীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলে এ নদীগুলো জলপাইগুড়ি জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত।
২. পূর্ববাংলার রেলপথ সংরক্ষণের একমাত্র উৎস হচ্ছে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং-এ অবস্থিত পাহাড়ের পাথর।
৩. পূর্ববাংলার কাঠের চাহিদা মেটানো হতো জলপাইগুড়ি জেলার বনজঙ্গল থেকে সংগৃহীত কাঠ থেকে ।
8. পূর্ববাংলায় ভবিষ্যতে হাইড্রো-ইলেকট্রিক শক্তি উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীর অধিকার আবশ্যক। এজন্য পার্বত্য
চট্টগ্রামকে পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্তির দাবি করা হয় ।
মুসলিম লীগ কলকাতা শহর পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর দাবি পেশ করে। মুসলিম লীগ যুক্তি পেশ করে যে-
কলকাতা শহরটি গড়ে উঠেছে মূলত পূর্ববাংলার সম্পদ দিয়ে। পৃথিবীর ৮০% পাট পূর্ববাংলায় উৎপাদিত হয় এবং ঐ পাট দিয়েই কলকাতার আশপাশের পাটকল চলে।

কলকাতা ছিল বাংলার একমাত্র সমুদ্র বন্দর। উক্ত বন্দরে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী নাবিকরা মূলত পূর্ববাংলার লোক। অতএব, কলকাতা পূর্ব বাংলারই প্রাপ্য।
ক. কমিশনের মৌলিক প্রশ্নাবলি (Basic Questions of the Commission)
এভাবে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দানি পাওয়ার মীমাংসা করা সীমানা কমিশনের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বুঝতে পারেন যে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিত করা অসম্পূন। তাই তিনি কতকগুলো মৌলিক প্রশ্নের উদ্ভাবন
করেন; যেমন :
বাংলার কোন অংশকে কলকাতা শহর প্রদান করা উচিত? এ শহরকে দ্বিখণ্ডিত করে উভয় অংশকে খুশি করা কি
সমগ্র কলকাতা কোনো একটি অংশকে প্রদান করার পেছনে নদীয়া কিংবা কুলাট নদী ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত কিনা।
৩. টার্মস অব রেফারেন্সে উল্লিখিত 'সম্প্রদায়গত সংলগ্ন এলাকার' নীতিকে উপেক্ষা করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা
যশোর ও নদীয়া পশ্চিম বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা যথার্থ হবে কি-না ।
মালদহ ও দিনাজপুর জেলার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও কিছু অংশ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা কি পুর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবে?
দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। তবে জেলাদ্বয়ের মুসলমান জনসংখ্যা অত্যন্ত কম (১৯৪১-এর আদমশুমারি অনুযায়ী দার্জিলিং-এ মাত্র ২.৪২% ও জলপাইগুড়িতে ২৩.০৮%।) সুতরাং, এ জেলাদ্বয় কোন অংশে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?
পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলমান জনসংখ্যা মাত্র ৩% হলেও জেলাটি চট্টগ্রাম জেলার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং, এ জেলাটি কোন ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে?
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসককুল নানাবিধ ফন্দিফিকির করে প্রায় ২০০ বছর টিকিয়ে রেখেছে তাদের শাসন ক্ষমতাকে। আর সবশেষে যখন তাদের বিদায়ের ঘণ্টাই বেজে ওঠে তখন কি এত সহজেই আমাদের ছেড়ে দেবে?
মাউন্টব্যাটেনের ৩ জুন পরিকল্পনায় যদিও 'সম্প্রদায়গত সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং এলাকার সংলগ্নতা' (Majority and Contiguity Principles)-এর ভিত্তিতে সীমান চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছিল র‍্যাডক্লিফ উক্ত নীতি এবং মুসলিম লীগ- কংগ্রেস-এর সমঝোতা নীতিকে উপেক্ষা করে নিজের বিচারবুদ্ধিমতো সীমানা চিহ্নিত করেন। জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সীমানা নির্ধারণ করলে অন্তত কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন ছিল। র‍্যাডক্লিফ তার দিল্লির অফিসে বসে টেবিলের ওপর ভারতবর্ষের মানচিত্র রেখে মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার মাইলের সীমানা চূড়ান্ত করেন। এ কাজ করতে তিনি মাউন্টব্যাটেন কর্তৃক প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৫ জানুয়ারি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার এক জনসভায় উল্লেখ করেন যে, 'আমরা ভারত বিভাগে রাজি হওয়ার পূর্বশর্তস্বরূপ কলকাতা শহর যেন ভারতভুক্ত থাকে তার নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। আমাদেরকে সে নিশ্চয়তা দেয়া হলে আমরা ভারত বিভক্তিতে সম্মত হই। মাউন্টব্যাটেন যেভাবেই হোক কলকাতা ভারতকে দেবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সম্ভবত সেজন্যই তিনি সীমানা কমিশনে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য কিংবা জাতিসংঘের মনোনীত প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা সমর্থন করেন-নি।
যাহোক, র‍্যাডক্লিফের ঘোষণায় কলকাতা পশ্চিম বাংলাভুক্ত করা হয়। তিনি নদীয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ (৬১% মুসলমান) জেলা হওয়া সত্ত্বেও-এর ২/৩ অংশ এলাকা পশ্চিম বাংলাকে দেন। সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ (৫৬.৬% মুসলমান) পশ্চিম বাংলাভুক্ত করা হয়। মালদহ (৫৭% মুসলমান) থেকে কেবল নবাবগঞ্জ মহকুমা পূর্ববাংলাকে দেয়া হয়, বাকি অংশ (মালদহের প্রায় ২/৩ অংশ) পশ্চিম বাংলাভুক্ত করা হয়। দিনাজপুরকে দুই অংশে বিভক্ত করে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সৃষ্টি করে তা পশ্চিম বাংলাভুক্ত হয়। আর খুলনা (৪৯.৩৬% মুসলমান) পূর্ববাংলাকে দেয়া হয়। জলপাইগুড়ি জেলার ৩টি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ থানা ও দুটি অমুসলমান গরিষ্ঠ থানা পূর্ববাংলাভুক্ত করা হয়। মুসলমান অধ্যুষিত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া প্রভৃতি এলাকা ভারতকে প্রদানের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ববাংলাকে দেয়া হয়। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্রহণের ব্যাপারে কংগ্রেসের ততটা আগ্রহ ছিল না।
ব্রিটিশ শাসককুল ধীরে ধীরে এমন এক কৌশল নিয়ে সামনে এগুতে থাকে যাতে করে তারা তাঁবেদার গোষ্ঠীর সুবিধাটা বহাল রাখতে পারে। সুতরাং, আসামের সীমানা চিহ্নিতকরণ সম্পর্কিত টার্মস অব রেফারেন্সের বিষয়ে সীমানা কমিশনের হিন্দু ও মুসলমান সদস্যবর্গ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। মুসলমান সদস্যরা দাবি করেন যে, পূর্ব বাংলার সংলগ্ন আসামের সকল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পূর্ববাংলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে হিন্দু-সদস্যগণ মত প্রকাশ করেন যে, কমিশনের ক্ষমতা কেবল সিলেট জেলা সংলগ্ন আসামের সীমানা নির্ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কমিশনের চেয়ারম্যান হিন্দু-সদস্যদের মত সমর্থন করেন ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]