বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যময়? ব্যাখ্যা কর।.

ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধ দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষেত্রে ঐতিহ্যময় যে অধ্যায় ছিল তার অবসান হয়। অন্যদিকে, বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় নবাবি শাসনের যে শেষ চিহ্নটুকু ছিল তা মুছে যায়। তাৎপর্যগত দিক দিয়ে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজরা সফল হওয়ার পর বাংলার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান এবং বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলার নিয়ন্ত্রার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
পলাশীর যুদ্ধ : ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র নবাব সিরাজ উদ-দৌলা মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাংলার মসনদে আরোহণ করেন। নবাব আলীবর্দী খান তার তিন কন্যাকেই তার তিন ভ্রাতুষ্পুত্রের নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন। আলীবর্দী খান ছিলেন পুত্রহীন। তাঁর কনিষ্ঠ কন্যার সন্তান সিরাজ উদ-দৌলা সিংহাসন লাভ করেন । সিংহাসন লাভ করেই তিনি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হন এবং চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলেন। নবাব সিরাজ উদ- দৌলা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছেন। এ ষড়যন্ত্রে বিদেশী বণিকেরা যোগ দিয়েছিল । এ ষড়যন্ত্রকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে, যে যুদ্ধ শুরু হয় তাই পলাশীর যুদ্ধ নামে খ্যাত। বক্সারের যুদ্ধ ঃ ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাটদের উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা এবং সুষ্ঠু বাণিজ্যনীতি না থাকায় ইংরেজরা এ দেশে বাণিজ্য করার অনুমতিসহ রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। তারা বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলার আত্মীয়স্বজন ও দরবারের লোকজনের সাথে ষড়যন্ত্র করে পলাশীর যুদ্ধে প্রহসনমূলকভাবে নবাবকে পরাজিত ও নিহত করে। এরপর নবাব মীর কাশিমের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব বাঁধে এবং এর চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ১৭৬৪ সালের ঐতিহাসিক বক্সারের যুদ্ধে। এ সময়ই ইংরেজদের বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে রূপান্তরিত হয় ।
বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে স্যার জেমস স্টিফেন মন্তব্য করেন, "The Battle of Buxar deserves for more credit their of Palassey as the origin of the British power in India." অর্থাৎ, ব্রিটিশ শক্তির উৎপত্তি হিসেবে ভারতে পলাশীর যুদ্ধ অপেক্ষা বক্সারের যুদ্ধ অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
পলাশী ও বক্সারের যদ্ধের তুলনা : ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার ও বাংলার ইতিহাসের গতি পরিবর্তনকারী যুদ্ধ হিসেবে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক আলোচনা করা হল : ১. প্রেক্ষাপট : এ দু'টি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ইংরেজ আদিপত্য বিস্তার ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল কারণ ।
পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে ক্লাইভ এবং প্রাসাদের অমাত্যদের মধ্যে মীরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন, ইতি টানা পর্যন্ত সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিলেন। বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীর মানিককে সাহায্য করেন অযোধ্যায় নবাব সুজা উদ-দৌলা ও দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ।
২. যুদ্ধের প্রকৃতি : পলাশীর যুদ্ধ, যুদ্ধ কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে, পলাশীর যুদ্ধ, যুদ্ধ নয়, কেবল ষড়যন্ত্রের মহড়া মাত্র। কারণ যুদ্ধ হলে সেখানে চূড়ান্ত শক্তির পরীক্ষা হতো।
অন্যদিকে, বক্সারের যুদ্ধ ছিল প্রকৃত যুদ্ধ। কারণ এ যুদ্ধে মীর কাশিম একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হন বা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। এমনকি অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা ও দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাহায্যে যে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলেন তাও ব্যর্থ হয় ৩. ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পলাশীর যুদ্ধ ছিল কেবলমাত্র সূচনালগ্ন অবস্থা। এ যুদ্ধে জয়লাভে কোম্পানি কেবল পায় সন্ধি মোতাবেক অর্থ ও কতিপয় সুবিধা। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা হয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে Decision maker। সকল ক্ষেত্রে কোম্পানির সিদ্ধান্তই হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ।
৪. সামরিক শক্তি : পলাশীর যুদ্ধে কোন পক্ষেরই সামরিক শক্তির তেমন প্রতিফলন ঘটে নি। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল ইংরেজ সামরিক শক্তির চূড়ান্ত উপস্থাপন।
. যুদ্ধ পরিকর। পলাশীর পরিধী পরিচিতি করার জন্য বক্সারের যুদ্ধ ছিল পূর্ব পরিকল্পনাসম্পন্ন চূড়ান্ত শক্তি।
৭. রার ক্ষমতা । শীान অন্যদিকে, বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা মীর
৮. ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের তথ্য বেরি শুরু হয়। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি বা ব্রিটিশ বাংলার নি বা। পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি পায় মাত্র সঙ্গি শর্তে বাংলার বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি ক্ষ সুবিধা। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি অর্থনৈতিক দেশ লাভবান ।
১০. সমগ্র ভারতবর্ষে ই শক্তির প্রধান প্রতিষ্ঠা পলাশীর ान - ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় । কাশিম, নবাব সুজা উদ-দৌলা, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সম্মিলিত বাহিনীর পর ভারতবর্ষে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তেমন বাধা থাকল না। পশ্চিম মে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
১১. রাজনৈতিক গেলে পরিবর্তন । পলাশীর যুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাসে সমাধি রচিত হয়, অতীত ঐতিহ্যের যাত্রা সূচিত হয় নতুন অধ্যায়ের। অন্যদিকে, বারের পরিে হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে। কেননা বক্সারের যুদ্ধে পরাজয়ে বাংলার নবাব পরিবর্তনের সমতুল্য।
১২. যুগের পরিবর্তন। পরিবর্তনের দিক থেকে পলাশীর যুদ্ধে মধ্যযুগের অবসান হয় এবং যারা যুগের। অপরদিকে, বক্সারের যুদ্ধের পর আধুনিক যুগের উপাদানসমূহের বিকাশ সাধিত হতে থাকে।
১৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে । পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এ বিস্তার করার তেমন সুযোগ পায় নি। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেন।
১৪. নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা ঃ পলাশী যুদ্ধের পর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির ও ইতিহাসের পরিবর্তন হ দীর্ঘকাল জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন ছিল এখন বাংলার নবাব বা নিম্নত্তাকে নবাব না অন্য কেউ। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর জনসাধারণের মধ্যে এ ধরনের প্রশ্নের কোন পরিবেশতো ছিলই না, বরং, ইংরেজদের ক্রীড়নকে পরিণত হয় গোটা বাংলার জনসাধারণ।
১৫. সিরাজ উদ-দৌলা ও বীর কার্ণিকার পতন পলাশীর যুদ্ধের পর পতন হয় স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক নবার সিরাজ উদ-সৌপার। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর পতন হয় বাংলার শেষ ঐতিহ্য ও শক্তির আধার মীর কাশিমের, যিনি চেয়েছিলেন কৌশলে কিভাবে ইংরেজদের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ হল একটি দুঃখজনক অধ্যায়। এ যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ-দৌলা তথা বাংলার অতীত ঐতিহ্য বিলিন হয়ে যায় এবং ইতিহাসের ধারা পাল্টে যায়। এ ঘটনার জন্য অনেকে নবাব সিরাজকে দায়ী করেছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারে এককভাবে নবাবকে এ জন্য দায়ী করা সমীচিন হবে না। |

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]