ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পটভূমি ব্যাখ্যা কর। এ দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।

ভুমিকা : বাংলার ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্যের কাহিনী যুগে যুগে বিদেশী পর্যটক ও বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তাদের কেউ পর্যটনের উদ্দেশ্যে, কেউ বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এদেশে এসেছিলেন। অন্যান্য বিদেশীদের ন্যায় একদিন ইংরেজরাও ভারতে তথা বাংলায় আগমন করেছিলেন। সেদিন এদেশের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য করে লাভবান তেয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু এদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলে তাদের উদ্দেশ্যের পরিবর্তন হয়। তাই তারা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিজ হাতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। ফলে প্রথমে ১৭৫৭ সালে গড়ষামূলক যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজরা প্রত্যক্ষ শক্তির পরিচয় দেন এবং ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার এর দেওয়ানি লাভ করেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের প্রেক্ষাপট ঃ ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন। কিন্তু এ দেওয়ানি লাভ করার পূর্বে কোম্পানিকে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ ধাপগুলোর আলোচনাই এ অংশের আলোচ্যবিষয়। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল : ১. মুঘল আমলে ইংরেজদের আগমন : মুঘল আমলে বাণিজ্যের সূত্র ধরে ইংরেজরা প্রথনে ভারতবর্ষে আসে এবং ধীরে ধীরে তারা বাণিজ্য বিস্তার করে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে হরিহরপুর একটি কুঠি স্থাপন করেন। পরে ইংরেজ বণিকরা হুগলি, পাটনা, কাশিমবাজার প্রভৃতি স্থানেও বাণিজ্য কুঠি গড়ে তোলেন। ১৬৫১ খ্রিঃ বাংলার সুবাদার শাহ মাধ্যমে বাংলায় সুজার সময়ে ইংরেজ বণিকগণ মাত্র তিন হাজার টাকা মাত্র তিন হাজার টাকা বাৎসরিক রাজস্বের অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে সুবাদার শায়েস্তা খান ইংরেজ বণিকদের বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার দেন। ১৬৮০ খ্রিঃ সম্রাট স্বয়ং একটি ফরমান দ্বারা পণ্য দ্রব্যের উপর শতকরা দু টাকা এবং জিজিয়া কর হিসেবে শতকরা দেড় টাকা প্রদানের শর্তে সাম্রাজ্যের সর্বত্র বাণিজ্য অধিকার দেন।
২. ইঙ্গ-মুঘল সংঘর্ষ : মুঘল আমলে ইংরেজদের বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার দেওয়া হলেও কোম্পানির কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে বাণিজ্যের জন্য গোলযোগ দেখা যায়। এ ধরনের অবস্থায় ১৬৮৬ সালে তারা হুগলি আক্রমণ করলে মুঘল ও ইংরেজদের মধ্যে সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। শায়েস্তা খান তাঁর আওতাভুক্ত সমস্ত ইংরেজ কুঠি দখল করে ইংরেজদের হুগলি থেকে বিতাড়িত করলেন। কিন্তু জব চানক নামক জনৈক দূরদর্শী ও বিচক্ষণ ইংরেজ কর্মচারী মুঘল সম্রাটের অনুমতিক্রমে সুতানটি নামক স্থানে ফিরে আসেন। এক বছর পর ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হিথ একটি নৌবহরসহ ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে চট্টগ্রাম আক্রমণ করলে ইঙ্গ-মুঘল সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। সংঘর্ষে উইলিয়াম হিথ পরাজিত হন। ফলে ইংরেজদের সাথে মুঘলদের সম্পর্কের অবনতি হয়। অবশেষে বোম্বাইয়ের ইংরেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আওরঙ্গজেবের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির ফলে ইংরেজরা আবার বাণিজ্য করার অধিকার পায়।
৩. ইংরেজদের জমি রি লাভ : ১৬৯৬ সালে ইংরেজরা সুতানটি নামে যে নব কুঠির নির্মাণ করেন তা সুরক্ষিত করার অধিকার লাভ করেন। দু'বছর পর ১৬৯৮ সালে ইংরেজরা বাৎসরিক বার'শ টাকা খাজনা দেওয়ার শর্তে কলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুর লাভ করে। এ জমিদারি লাভ নিঃসন্দেহে বাংলায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করেছিল। ১৭০० সালে ইংরেজরা কলকাতায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের তদানীন্তন রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে নাম রাখেন ফোর্ট উইলিয়াম ।
৪. ফররুখ শিয়ারের ফরমান লাভ : ১৭১৩ সালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বাহাদুর শাহের পৌত্র ফররুখ শিয়ার দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৭১৪ সালে কলকাতা থেকে জন সারমান নামে জনৈক ইংরেজ দূত' বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট ফররুখ শিয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইংরেজদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে মুঘল সম্রাট ১৭১৭ সালে এক ফরমান দ্বারা বাংলা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্য অধিকার প্রদান করেন। ইংরেজরা বাৎসরিক মাত্র তিন হাজার টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকারে বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসায় করার অধিকার পান। মুর্শিদাবাদ টাকশালে কোম্পানি তার নিজস্ব টাকা তৈরি করার অনুমতি পান। ঐতিহাসিক ওর্ম এ ফরমানকে কোম্পানির মহাসনদ বলে বর্ণনা করেছেন।
৫. মুদিনী খানের নীতি। ফররুখ শিয়ারের রাজত্বকালে মুর্শিদকুলী খান ानর সুবাদার ছিল। তিনি রাজ্যে বিদেশীদের প্রাধান্য পছন্দ করতেন না। তাঁর আমলে ইংরেজরা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার থেকে বরি হন। তিনি ইংরেজদেরকে অন্যান্য বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ন্যায় শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য করতে বলেন। এছাড়া শাসনকার পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইংরেজদের বদলে হিন্দুদের নিয়োগ করেন। তিনি মনে করতেন, শাসনকার্য পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ে হিন্দুরা বেশি বিশ্বস্ত ।
৬. আণীকণী খানের নীতি। নবাব আলীবর্দী খানও মুর্শিদকুলী খানের ন্যায় শাসনকার্যে হিন্দুদের নিয়োগ করার পক্ষপাতী ছিলেন। ঐতিহাসিক রবার্ট ধর্ম বলেন, নবাব আলীবর্দী খান কার্যে ব্যবসায় ফেরে হিন্দুদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং এর ফলে শাসনকার্যে হিন্দুদের প্রভাব প্রতিপত্তি স্থাপিত হয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাত এ নীতি অনুসরণ করেছিলেন। ফলে সমাজের সকল ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য স্থাপিত হয়।
৭. পলাশীর যুদ্ধ। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর সিরাজ উদ-দৌলা বাংলার নবान নিযুক্ত হন। কিন্তু সিরাজ-এর ान লাভ করাকে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের অনেকে মেনে নিতে পারেন নি। তাই নবাবের খালা ঘসেটি বেগম ও শকত জঙ্গ বা সিংহাসন চ্যুত করার পরিকল্পনা করেন। এদিকে নতুন নবাব হিসেবে সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী সকল দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিনিধি দল উপঢৌকন পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। কিন্তু ইংরেজরা করে তো করেন বটে, আরও নবাবের আদেশ অমান্য করে দুর্গ নির্মাণ করতে থাকেন। নবাব এ সময় ঘোষণা করেন যে, নবাবের অনুমতি ছাড়া কেউ কোন স্থানে দুর্গ নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু ইংরেজরা তা তোয়াক্কা করেন নি। অন্যদিকে নবাবের অমাত্যদের মধ্যে রাজ বল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস প্রচুর ধনরত্নসহ কলকাতায় পলায়ন করেন এবং ইংরেজদের আশ্রয় লাভ করেন। এসব ঘটনা থেকে নবাব উপলব্ধি করেন যে, এদেরকে কথায় সোজা করা যাবে না। তাই কাশিমবাজার বাণিজ্য কুঠি আক্রমণ করে দখল করে নেন। ফলে কোম্পানিও এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আবার কলকাতা পুনরুদ্ধার করেন। নবাব কলকাতার পরাজয়ের গ্লানি থেকে দূরে থাকার জন্য আলীনগরের সন্ধি করেন। কিন্তু সন্ধি করলেও হবে কি, ইংরেজরা নবাবকে ঘড়যন্ত্র করে পদচ্যুত করার জন্য অমাত্যদেরকে প্রেরণা যোগান। ফলে কোম্পানির চক্রান্তে ১৭৫৭ সালে তারা ঘড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধের মাধ্যমে নবাবকে পরাজিত করে বাংলায় কোম্পানি শাসনের পথে যে বাধা ছিল তা দূর করেন। তাই ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তারের পথ সহজ হয়।
b. বক্সারের যুদ্ধ : পলাশীর অন্যায়মূলক যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নবাব হন জাতীয় বেঈমান মীর জাফর। কিন্তু মীর জাফরও কোম্পানির অর্থ চাহিদার নিষ্পত্তি করতে পারেন নি। তাই এক পর্যায়ে কোম্পানি মীর জাফরকে অপসারণ করে মীর কাসিমকে নবাবী প্রদান করেন। মীর কাসিম ছিলেন স্বাধীনচেতা নবাব। তিনি কোম্পানির প্রাধান্য খর্ব করার জন্য চেষ্টা করেন। রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে স্থানান্তরিত করেন। সৈন্যবাহিনীকে সংগঠিত করার জন্য গোপনে ফরাসিদের সাহায্য নেন। মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের মতের মিল না হওয়ায় ইংরেজরা আবার চূড়ান্ত শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। ফলে মীর কাসিম সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হন। পরে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা ও দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাহায্যপ্রার্থী হন। কিন্তু ১৭৬৫ সালে তিন জনের সম্মিলিত শক্তিও কোম্পানির শক্তির কাছে পরাজিত হয়। ফলে বাংলায় ইংরেজদের অধিপত্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়। তাই বলা যায়, এসব ঘটনা পরিক্রমায় কোম্পানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। তবে এক্ষেত্রে কোম্পানির কর্মচারী ও নীতি নির্ধারকদের অবদান ছিল। নিম্নে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হল :
১. ক্লাইভের বিচক্ষণতা : পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে জয় লাভ করে কোম্পানি বাংলর সর্বময় কর্তা হয়েছিলেন। কিন্তু তারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তাদের মত ছিল, ব্রিটেন থেকে বহুদূরে অবস্থিত বাংলায় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে যে লোকবলের প্রয়োজন তা কোম্পানির নেই। এছাড়া ভারতীয় আইনকানুন, রীতিনীতি সম্পর্কে কোম্পানির কোন ধ্যানধারণা ছিল না। এদেশীয় ভাষাও ছিল একটি বড় বাধাস্বরূপ। এছাড়া ব্যবসায় বাণিজ্য করতে এসে রাজ্যস্থাপন ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ মহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। তাই ক্লাইভ দূরদর্শিতা দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনায় ধরি মাছ না ছুঁই পানি- এ নীতি অনুসরণে সচেষ্ট হন।
২. ক্ষমতার ভাগাভাগি : এ ধরনের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের সার্বভৌম ক্ষমতা মেনে নিবে এবং বাংলার নবাবের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি করে নেবে। এতে কোম্পানির স্বার্থও রক্ষা হবে মুঘল সম্রাটও সন্তুষ্ট থাকবে। মুঘল সম্রাটের সাথে আইনগত সম্পর্ক স্থাপন করলে বাংলা ও ভারতে বসবাসরত অপরাপর বিদেশী বণিকদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটার কোন কারণ থাকবে না। অর্থাৎ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এমন একটি পন্থা অবলম্বন করেছিল যাতে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক আধিপত্য বহাল থাকে এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য করেও যেন মুনাফা লাভ করা যায়।
৩. দেওয়ানি লাভ ঃ বক্সারের যুদ্ধোত্তর অবস্থায় মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ছিলেন রাজনৈতিকভাবে ব্যতিব্যস্ত এবং আর্থিক দিক দিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত। রবার্ট ক্লাইভ দিল্লিতে উপস্থিত হয়ে মুঘল সম্রাটকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপহারস্বরূপ প্রদান করেন। অর্থ কষ্টে নিপতিত সম্রাট ক্লাইভের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হন এবং তার প্রস্তাবে রাজি হন। ক্লাইভের প্রস্তাব ছিল যে, মুঘল সম্রাট বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব হিসেবে নিয়মিত লাভ করবেন বাংলা সুবা হতে। এ অর্থ প্রাপ্তির গ্যারান্টি থাকবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। পরিবর্তে কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করবেন মুঘল সম্রাট। দ্বিতীয় শাহ আলম প্রস্তাবে রাজি হয়ে কোম্পানির পক্ষে ক্লাইভের সাথে এলাহাবাদে চুক্তি স্বাক্ষর করেন (১২ আগস্ট/১৭৬৫)। এভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে দেওয়ানি লাভ করেন ।
দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব : বাংলার ইতিহাস তো বটেই এমনকি ভারতবর্ষের ইতিহাসেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । নিম্নে এ সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হল ঃ
১. কোম্পানি রাজস্ব আদায়কারী হিসেবে মর্যাদা লাভ : পূর্বে কোম্পানি ছিল একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। অন্য কোন বিষয়ে এর সম্পৃক্ততা ছিল না কিন্তু দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানি এখন হতে রাজস্ব আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করেছিল ।
২. কোম্পানির বিচার ক্ষমতা : কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করার ফলে দেওয়ানের কর্তব্য কার্যের মধ্যে রাজস্ব আদায় ছাড়াও দেওয়ানি মামলার বিচারের দায়িত্ব ছিল বলে কোম্পানি সারা বাংলার বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এতে কোন বাধা ছিল না।
৩. হস্তপুত্তলিকা মাত্র নবাব : দেওয়ানি লাভের পর বাংলার নবাব এখন কোম্পানির হস্তপুত্তলিকা মাত্র। কারণ, নবাবের নিজস্ব কোন সৈন্য নেই। কোম্পানি নবাবের শাসন পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দেবে এর অতিরিক্ত আর কোন আয় ছিল না ।
৪. কোম্পানির আর্থিক সমস্যার সমাধান দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে বাংলার রাজস্বের উপর কোম্পানি ভাগ বসাবার ফলে ইংরেজদের আর্থিক সমস্যা অনেকটা মিটেছিল। কারণ, ইংল্যান্ডে তখন যুদ্ধ বিগ্রহের দরুন যে অর্থের টানাটানি পড়েছিল তার ফলে মাতৃদেশ থেকে অর্থ আমদানি করে এদেশে কোম্পানির পক্ষে ব্যবসায়-বাণিজ্য চালানো সম্ভবপর ছিল না। দেওয়ানি লাভ করার ফলে এ সমস্যার সমাধান হয় ।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, মুঘল আমলে ইংরেজ বণিকরা বাংলায় বাণিজ্য করার জন্য আসেন এবং ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার পথ সৃষ্টি করেন এবং ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে সকল বাধাকে চিরতরে দূর করেন। কিন্তু বাধা দূর হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ না করে এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ভারতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। আর এ অভিনব কৌশল হল রাজস্ব তথা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ। এ দেওয়ানি লাভের মধ্যদিয়ে কোম্পানি ভারতের অঘোষিত সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন । কেননা, বাংলার মূল অর্থ ক্ষমতা ছিল তাদের হাতে। তাই দেশীয় শাসকরা আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ইংরেজ ভিত্তি মজবুত হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]