ভুমিকা : ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ বেনিয়া শ্রেণী বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হাতে পান। ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলায় দ্বৈতশাসন কায়েম করেন। ফলে বাংলার মানুষ শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচারের বস্তুতে পরিণত হন। এক পর্যায়ে ডাইরেক্টর সভা ক্লাইভকে স্বদেশে ডেকে পাঠান। পরে ডেরেলেস্ট এবং কার্টিয়ার পাঁচ বৎসর গভর্নর হিসেবে বাংলার শাসনভার পরিচালনা করেন। ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলার সর্বত্র যে অত্যাচার ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তা পরিবর্তন করে সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভেরালেস্টও কার্টিয়ারের সে ক্ষমতা ছিল না। বাংলার শাসনব্যবস্থাকে ঐ সময় পূর্বের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন ছিল একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির। এমতাবস্থায় ইংরেজ কোম্পানি ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতবর্ষে পাঠান। ফলে হেস্টিংস ১৭৭২ সালে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন।
ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রথম জীবন : মাত্র ১৮ বৎসর বয়সে ওয়ারেন হেস্টিংস ক্লাইডের ন্যায় কোম্পানির সামান্য কর্মচারী হিসেবে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং স্বীয় দক্ষতা ও মেধা বলে কাশিম বাজারের রেসিডেন্ট ও পরে কলকাতা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বদেশে ফিরে যান। ইতোমধ্যে ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনে অরাজকতা ও গোলযোগ দেখা দেয়। ভারতে কোম্পানির শাসনে গোলযোগ দেখা দিলে তিনি ১৭৭১ সালে মাদ্রাজ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তিনি আবার ভারতবর্ষে আসেন। এর এক বৎসর পর তিনি ১৭৭২ সালে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন এবং ১৭৭৩ সালে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিয়ামক আইন পাস করে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হন।
দুঃসময়ের কাণ্ডারি : ভারতে ব্রিটিশ শাসনের এক দুর্যোগময় মুহূর্তে হেস্টিংস বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। ছিয়াত্তরের মঘস্তরে বাংলার অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের কুফল চতুর্দিকে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। ভারতে মহীশুরের হায়দার আলী ও মারাঠা শক্তির উত্থান এবং ফরাসিদের প্রভাব প্রতিপত্তি কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে উঠেছিল। উপরন্ত উপযুক্ত ও অভিজ্ঞ কর্মচারীর অভাবে কোম্পানির শাসনযন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। ঠিক এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে হেস্টিংস শাসনভার গ্রহণ করেন। শাসন ভার গ্রহণ করে তিনি ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সকল বিরুদ্ধবাদী শক্তিকে পদানত করে ভারতে কোম্পানির মর্যাদা ও ব্রিটিশ প্রভুত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন
।
ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার কার্যাদি : ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার কার্যাদি নিম্নরূপ :
১. দ্বৈত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন : হেস্টিংস যখন গভর্নর হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন তখন ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় যাবতীয় ত্রুটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ লাভ করেছিল। হেস্টিংস ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ অনুসারে ১৭৭২ সালে এপ্রিল মাসে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেওয়ানি পরিচালনার ভার কোম্পানির হাতে ন্যস্ত করেন। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের সময় থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত দেওয়ানি পরিচালনার আইনগত দায়িত্ব ছিল কোম্পানির কিন্তু প্রকৃত দায়িত্ব ছিল নবাবের হাতে। বাংলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল নায়েব মুহম্মদ রেজা খাঁর উপর ও বিহারের রাজস্ব আদায়ের ভার ছিল সিতাব রায়ের উপর। এভাবে নবাব ও দেশীয় রাজস্ব কর্মচারীরা প্রকৃত কার্যের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও আইনত তারা ছিলেন ইংরেজদের অধীন। এ দ্বৈত শাসনব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে নানা প্রকার দুর্নীতির পথ প্রস্তুত করেছিল। তাই ১৭৭২ সালে হেস্টিংস সরাসরি কোম্পানির হাতে দেওয়ানির যাবতীয় দায়িত্ব ন্যস্ত করলেন। নবাবের বাৎসরিক ভাতা ৩২ লক্ষ মুদ্রা হতে ১৬ লক্ষ মুদ্রায় হ্রাস করলেন এবং রেজা খান ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে দেওয়ান পদ দুটো বাতিল করেন। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হেস্টিংসের নীতি ছিল দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা এবং দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা। তাই তিনি দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন ।
২. রাজস্ব সংস্কার: হেস্টিংস দ্বৈতশাসনে প্রবর্তিত রাজস্ব আদায়ের জন্য বাংলায় একজন দেওয়ান ও বিহারে একজন দেওয়ান-এর যে পদ ছিল তা বাতিল করে দেন এবং রাজস্ব আদায় কার্য পরিচালনার জন্য হেস্টিংস ভ্রাম্যমাণ কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্রসভা গঠন করেন। এ কমিটিকে প্রত্যেক জেলায় উপস্থিত হয়ে জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করার অধিকার দেওয়া হয়। জমিদারগণকে এক সাথে পাঁচ বৎসরের জন্য জমিদারির বন্দোবস্ত দেওয়া হবে বলে বলা হল। পূর্বের কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীগণের উপাধি ছিল সুপারভাইজার বা পরিদর্শক। হেস্টিংস নাম পরিবর্তন করে রাখেন কালেক্টর। দেওয়ানির কোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হল। গভর্নর ও তার কাউন্সিল নিয়ে একটি রেভিনিউ বোর্ড গঠন করা হল। দেওয়ানি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদির সর্বোচ্চ দায়িত্ব অর্পিত হল বোর্ড-এর উপর।
৩. রাজস্ব নীতির সমালোচনা : ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্ব নীতি প্রবর্তনের পশ্চাতে ভালো উদ্দেশ্য ছিল বলা যায়। কিন্তু এটা সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না। হেস্টিংস ব্যক্তিগতভাবে পূর্বেকার জমিদারদের সাথে বন্দোবস্তের পক্ষপাতী থাকলেও কার্য ক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হয়েছিল তাদেরকেই বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। ফলে দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জমিদারগণ যেমন তাদের জমিদারি হতে বঞ্চিত হন তেমনি কোম্পানিও এই অভিজ্ঞ রাজস্ব আদায়কারীর সাহায্য হতে বঞ্চিত হন। হেস্টিংসের বন্দোবস্তের পূর্বে জমিদারগণ প্রতি বৎসরই নতুন করে বন্দোবস্ত গ্রহণ করতেন বটে, কিন্তু তারা নিজ জমিদারি হতে কোন দিনও বঞ্চিত হন নি। কিন্তু অভিজ্ঞ জমিদার শ্রেণীর স্থলে অধিক রাজস্বের লোভে যে কোন ব্যক্তির সাথে রাজস্ব বন্দোবস্ত এবং অনভিজ্ঞ ইংরেজ কর্মচারীবর্গের হস্তে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পিত হওয়ায় হেস্টিংসের রাজস্ব ব্যবস্থার অসাফল্যের কারণ হয়ে দেখা দেয়।
৪. রাজস্বনীতির পরিবর্তন : হেস্টিংসের প্রথম রাজস্বনীতি সমস্যার সমাধান দিতে না পারায় তিনি বাধ্য হলেন রাজস্বনীতির পরিবর্তন করতে। এ নতুন নীতি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ছয়টি অংশে বিভক্ত করে প্রত্যেক কাউন্সিলের কাজে সাহায্য করার জন্য একজন করে দেশীয় দেওয়ান নিযুক্ত করা হল। এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার সাথে সাথে পূর্ববর্তী ব্যবস্থা কালেক্টর পদ উঠিয়ে দেওয়া হল। ১৭৭২ সালে কেবলমাত্র ইংরেজদের হাতে রাজস্ব আদায়ের যে ভার দেওয়া হয়েছিল, তা ১৭৭৩ সালে ইংরেজ ও দেশীয় উভয় প্রকার কর্মচারীর উপর ন্যস্ত করা হল। ১৭৭৬ সালে তিনি রাজস্ব সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহের জন্য 'আমিনী কমিসন' নিয়োগ করেন। পরে তিনি প্রাদেশিক কাউন্সিল উঠিয়ে দিয়ে আবার কালেক্টর নিয়োগ করেন। পূর্বে জমি ইজারা দেওয়ার যে নীতি চালু করেছিলেন তা বাতিল করে দিয়ে সাবেক কালের জমিদারি প্রথা চালু করেন। কিন্তু পূর্বের জমিদারি প্রথা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তা কার্যকরী করা সহজ ছিল না। তারপরও তিনি তা প্রবর্তন করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, হেস্টিংসের আমলে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপ ছিল এবং তা ছিল পরীক্ষামূলক ।
৫. বিচার বিভাগীয় সংস্কার : ১৭৭২ সালে নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করে হেস্টিংস বিচার বিভাগের সংস্কারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। Committee of Circuit এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় তিনি একটি করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
ক. মফস্বল দেওয়ানি আদালত : জমিদারি ও তালুকদারির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলা মোকাবিলা ভিন্ন অপরাপর যাবতীয় দেওয়ানি অর্থাৎ ভূমি সংক্রান্ত মামলার বিচারের ভার এ আদালতের উপর ন্যস্ত করা হল। এ আদালতে সভাপতিত্ব করতেন কালেক্টর। জমিদারির বা তালুকদারির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলার বিচার ক্ষমতা ছিল সদর দেওয়ানি আদালতের হাতে। গভর্নর ও তার কাউন্সিলের দুই জন সদস্য নিয়ে এ আদালত গঠিত হতো। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এ আদালত স্থাপিত ছিল। এ ব্যবস্থার ফলে পূর্বে জমিদারগণের যেটুকু দেওয়ানি ক্ষমতা ছিল তা ৰাতিল হয়ে গেল।
খ. মফস্বল ফৌজদারি আদালত : এ বিচারালয় যাবতীয় ফৌজদারি মামলার বিচার করার অধিকার প্রাপ্ত ছিল। কেবলমাত্র যে সকল মামলায় আসামীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হতো, এ সকল মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য সদর নিয়ামত আদালতে প্রেরণ করতে হতো। নাজিম অর্থাৎ নবাব ছিলেন এ আদালতের সেনাপতি। প্রাণদণ্ডাদেশ নবাব কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষ ছিল। ফৌজদারি আদালতে কাজি ও মুফতি দুই জন মৌলভীর সাহায্য নিয়ে আইনের ব্যাখ্যা করতেন। মফস্বল ফৌজদারি আদালতের উ র কালেক্টরের পরিদর্শন ক্ষমতা ছিল। সদর নিয়ামত আদালতে আইনের ব্যাখ্যার ভার ছিল প্রধান কাজি, প্রধান মুফতি ও তিনজন খ্যতিসম্পন্ন মৌলভীর উপর। সদর নিয়ামত আদালত মুর্শিদাবাদে অবস্থিত ছিল ।
গ. বিচার ক্ষেত্রে বিবিধ : তিনি বিচার ক্ষেত্রে আরো অন্যান্য বিষয় দেখাশুনা করতেন। যথা :
i. প্রত্যেক বিচারালয়ে মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি রক্ষা করা ।
ii.
অন্তত ১২ বৎসরের মধ্যে মোকদ্দমা না করলে মোকদ্দমা তামাদি হয়ে যাওয়া ।
iii. দেনাদারকে পাওনাদারের নিজ গৃহে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন বন্ধ করার অধিকার নাকচ করা ।
iv. অত্যধিক পরিমাণ অর্থ জরিমানা নিষিদ্ধ করা।
V,
সুদের হার শতকরা একশত টাকা পর্যন্ত মাসিক শতকরা ৩.১২ এবং একশত টাকার বেশি অর্থের জন্য মাসিক ২.০০ টাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া।
vi. দেওয়ানি বিচারে হিন্দু প্রজার ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের এবং মুসলমান প্রজার ক্ষেত্রে কুরআনের বিধি নিয়ম
প্রয়োগের নীতি হেস্টিংস স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
vii. বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে পূর্বে কাজি মুফতি প্রভৃতি অর্থগ্রহণ করতেন। হেস্টিংস তা উঠিয়ে দেন ।
৬. অর্থনৈতিক সংস্কার। কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য রেाিन নীতি ও অর্থ নীতি গ্রহণ করেন তা অত্যন্ত গর্বিত ও নীতি বিরুদ্ধ ছিল। তিনি বাংলার নাবালক বার বার ি ১৬ লক্ষ টাকায় হ্রাস করেন। মারাঠা আশ্রয় ও মিত্রতার অনুযাতে শাহ আলমের বাৎসরিক এল এলাহাবাদ জেলা কেড়ে নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোধ্যার নবাব
এ
- - প্রদান করেন। ৪ পদ টা ও সৈন্যের ব্যয় ভারের বিনিময়ে ইংরেজ সৈন্যরা ভাড়াটিয়া সৈন্য হিসেবে আযোধ্যার নবাবের পক্ষে রোगিान করেন। বারানসীর নবাব চৈত সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে বাৎসরিক ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার ক্য অধিষ্ঠিত করেন। হেস্টিংস এ সমস্ত কার্যের জন্য गानর তিনি দুই বৎসরের মধ্যে কম্পানির
পরিশোধ করে তহবিলে কিছু উদ্বৃত্ত দেখাতে সम
।
৭. বাণিজ্য সংক্ষার । ১৭৭৩ সালে বোর্ড অব রেভিনিউ এর নির্দেশে হেস্টিংস এ যাবত প্রচলিত দরক প্রথা বন্ধ করেন। এর ফলে কোম্পানির কর্মচারী ও তাদের এজেন্টদের অবৈধ ও বিনাশুলে বাণিজ্য করার প্রথা বিলুপ্ত ক হয়। এছাড়া হেস্টিংস জমিদারদের নিজস্ব চৌকি বা ত আদায়ের গাঁটি বন্ধ করে সমগ্র প্রদেশে বাণিজ্য চলাচল করেন। লবণ, সুপারি ও তামাকের উপর কোম্পানির এচেটিয়া বাণিজ্যাধিকার বজায় রাখা হয়। কিন্তু অন্যান্য পণ্যসামীর উপর ১% টাকা হারে শুল্ক ধার্য করা হয় এবং তা স্থানীয় ও ইউরোপীয় বণিকদের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করা হ বাণিজ্যের উন্নয়ন করে হেস্টিংস বলপূর্বক তন্তবায়কে কোম্পানির কার্যে নিযুক্ত করার লान । তিব্বতে হেস্টিংস বাণিজ্য মিশন প্রেরণ করেন। বাণিজ্য বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করেন। এ সকল ব্যবস্থাদির
ফলে বাংলার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠে।
৮. শিক্ষা সংস্কার । ওয়ারেন হেস্টিংস শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা, ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি এবং কাশ্মীরে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রেন্টি নিজে বাংলা ও ফার্সি ভাষা চর্চা করতেন। সংস্কৃত সাহিত্যের ব্যাপারেও তিনি যথেষ্ট উৎসাহ দান করতেন। তার নির্দেশে হিন্দু ও মুসলিম আইন ইংরেজিতে অনুদিত হয়। ওয়ারেন হেস্টিংসের অনুপ্রেরণায় প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশ করা হয়। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে ডাক বিভাগের প্রবর্তন করা হয়।
সমালোচনা ঃ হেস্টিংসের শাসননীতি ও কার্যকলাপ সাধারণত ইংরেজি ও ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে পারেন নি। কোম্পানির শাসনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা স্থাপন, বৈদেশিক সম্পর্ক কোম্পানির স্বার্থের অনুকূলে নিয়ন্ত্রণ, কোম্পানির অর্থাভাব দূরীকরণ প্রভৃতি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে হেস্টিংস ইংরেজ জাতির ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পথকে সুগম করে দেয়। তাই ব্রিটিশ স্বার্থের দিক দিয়ে বিচার করলে হেস্টিংসের সংস্কার এদেশে সমর্থনযোগ্য। কিন্তু ভারতীয় স্বার্থ, মর্যাদা, ন্যায়, সততা ও মানবতার দৃষ্টিতে হেস্টিংসের কার্যকলাপের অনেক কিছুই নিন্দনীয় ছিল। তথাপি তার প্রকৃত কিছু গুণাবলির প্রশংসা অনেক ভারতীয় নিরপেক্ষ এতিহাসিক করে থাকেন। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার গোড়াপত্তন, কোম্পানির শাসনে শৃঙ্খলা আনয়ন, ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার এর জন্য তিনি প্রশংসনীয় ছিলেন ।
উপসংহার : অতএব শেষে বলা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানির শাসনের ভিত্তি স্থাপনের কৃতিত্ব হল ক্লাইভের কিন্তু এর প্রসারতা ও উৎকর্ষ সাধনে ওয়ারেন হেস্টিংসের অবদান অস্বীকার করার মত নয়। ওয়ারেন হেস্টিংস পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার যে নীতি তার সংস্কার করেন। শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে তিনি মৌলিকত্বের প্রমাণ দেন। প্রজাকল্যাণ উপযোগী এক শাসনব্যবস্থা তিনি ভারতে উপহার দেন। বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট নতুন আনয়ন করেন। মেকলের মতে, তিনি ক্লাইভের ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রয়াসকে সুদূরপ্রসারী করে তোলেন। ঐতিহাসিক পি. ই. রবার্টস তাকে শ্রেষ্ঠ শাসক বলে অভিহিত করেছেন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত