গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্ব সংস্কারের বিবরণ দাও।

ভূমিকাঃ ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন। বাংলার দেওয়ানি লাভ করার ফলে এক পর্যায়ে ক্লাইভ দ্বৈতশাসন চালু করেন। দ্বৈতশাসনের কুফল, কোম্পানি কর্মচারীদের দুর্নীতি, এর ফলে ১৭৭০ সালে (বাংলা ১১৭৬) মন্বন্তর দেখা দেয়। এভাবে বাংলার জনসাধারণের জীবনযাত্রায় নেমে আসে চরম অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন। ইতোমধ্যে কোম্পানির রাজকোষও শূন্য হতে থাকে। এধরনের রিপোর্ট কোড অব ডাইরেক্টরের কাছে পৌঁছলে ডাইরেক্টর সভা কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতভিজ্ঞ ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্নর করে পাঠান ১৭৭২ সালে এবং তিনি ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিয়ামক আইন পাস করে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হন।
গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাথমিক পরিচয় : প্রথন জীবনে ওয়ারেন হেস্টিংস ক্লাইভের ন্যায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে কোম্পানির সামান্য কর্মচারীরূপে ভারতে আগমন করেন এবং প্রায় দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতা বলে প্রথমে কাশিম বাজারের রেসিডেন্ট ও পরে কলকাতা কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭৬৪ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে যান। ইতোমধ্যে ক্লাইভ স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর ভেরেলিস্ট ও কার্টিয়ারের সময় বাংলার জনসাধারণের অবস্থার উন্নতি না হলে ১৭৭১ সালে তিনি মাদ্রাজ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে আবার ভারতবর্ষে আসেন। ১৭৭২ সালে তিনি বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন এবং ১৭৭৩ সালে পার্লামেন্টে নিয়ামক আইন পাস করে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হন।
দুঃসময়ের কাণ্ডারি ঃ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের এক দুর্যোগময় মুহূর্তে হেস্টিংস বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি যখন বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন তখন বাংলায় দ্বৈতশাসনের কুফল ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কারণে বাংলার জনসাধারণ শোষণ ও নির্যাতনের মধ্যে পিষ্ট হচ্ছিল। ভারতে মহীশুরের হায়দার আলী ও মারাঠা শক্তির উত্থান এবং ফরাসিদের প্রভাব প্রতিপত্তি কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে উঠেছিল। উপরন্তু উপযুক্ত ও অভিজ্ঞ কর্মচারীর অভাবে কোম্পানির শাসনযন্ত্র বিকল হয়ে উঠেছিল। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন এবং ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে কূটনৈতিক চালের মাধ্যমে সকল বিরুদ্ধবাদী শক্তিকে এক এক করে পদানত করেন এবং কোম্পানির মর্যাদা ও ব্রিটিশ প্রভুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্বনীতি ঃ নিম্নে ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্বনীতির বিবরণ দেওয়া হল ঃ
১. হেস্টিংসের রাজস্ব নীতির উদ্দেশ্যঃ হেস্টিংস যখন গভর্নর হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন তখন ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থার যাবতীয় ত্রুটি প্রকাশিত হয়েছিল। হেস্টিংস ক্ষমতা গ্রহণ করে ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ অনুসারে ১৭৭২ সালে এপ্রিল মাসে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেওয়ানি পরিচালনার ভার কোম্পানির হাতে ন্যস্ত করেন। কিন্তু পূর্ববর্তী ব্যবস্থায় বাংলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল নবাবের উপর। বাংলার রাজস্ব আদায়ের জন্য নায়েব রেজা খানকে ও বিহারের রাজস্ব আদায়ের জন্য সেতাব রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নরাব কর্তৃক নিযুক্ত হলেও তারা ছিলেন মূলত ইংরেজদের অধীন। এ দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবে নানা ধরনের অসুবিধা লক্ষ করা যায়। কোম্পানির ডাইরেক্টরগণও নায়েব-দেওয়ানের সততায় বিশ্বাস করতেন না। তাই হেস্টিংস ১৭৭২ সালে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব সরাসরি কোম্পানির হস্তে অর্পণ করেন। নবাবের বাৎসরিক ভাতা ৩২ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষে হ্রাস করেন। রেজা খান ও সেতাব রায়কে পদচ্যুত করে দেওয়ান পদ উঠিয়ে দেন। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হেস্টিংসের নীতি ছিল দেওয়ানি ও রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা এবং দেওয়ানি ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা।
২. হেস্টিংসের নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা : পূর্বে বাংলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল ইংরেজদের অধীনস্ত রেজা খান ও বিহারের দায়িত্ব ছিল সেতাব রায়ের হাতে। হেস্টিংস এ দুজনকে পদচ্যুত করে এ পদ দুটো উঠিয়ে দেন। রাজস্ব আদায়ের সমস্যার সমাধানের জন্য হেস্টিংস ভ্রাম্যমাণ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটিকে প্রত্যেক জেলায় উপস্থিত হয়ে জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করতে হতো। জমিদারগণকে এক সাথে পাঁচ বৎসরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হবে বলে স্থির হল। কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ পূর্বে সুপারভাইজার বা পরিদর্শক নামে অভিহিত হতেন। হেস্টিংস নামের পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করেন কালেক্টর। দেওয়ানি কোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। গভর্নর ও তার কাউন্সিল নিয়ে একটি বোর্ড অব রেভিনিউ গঠন করেন। দেওয়ানি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদি পরিচালনার সর্বোচ্চ দায়িত্ব ছিল এ বোর্ড এর উপর ।
৩. নতুন রাজস্ব নীতির সমালোচনা : ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজস্ব বন্দোবস্ত সদিচ্ছা প্রসূত হলেও এটা সাফল্য লাভ করতে পারে নি। কারণ, হেস্টিংস ব্যক্তিগতভাবে পূর্বেকার জমিদারদের সাথে বন্দোবস্তের পক্ষপাতী থাকলেও কার্যক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে স্বীকৃত হয়েছিল তাদেরকে জমিদারি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। ফলে দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জমিদারগণ যেমন তাদের জমিদারি হতে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তেমনি কোম্পানিও একটি অভিজ্ঞ রাজস্বকারীর সাহায্য হতে বঞ্চিত হন। হেস্টিংসের পঞ্চবার্ষিক বন্দোবস্তের পূর্বে জমিদারগণ প্রতি বৎসরই নতুন করে বন্দোবস্ত গ্রহণ করতেন বটে, কিন্তু তারা নিজ জমিদারি হতে কোন কালেই বঞ্চিত হতেন না। কিন্তু অভিজ্ঞ জমিদার শ্রেণীর স্থলে অধিক রাজস্বের লোভে যে কোন ব্যক্তির সাথে রাজস্ব বন্দোবস্ত এবং অনভিজ্ঞ ইংরেজ কর্মচারীবর্গের হস্তে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ হেস্টিংসের রাজস্ব ব্যবস্থার অসাফল্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
৪. হেস্টিংসের রাজস্ব নীতির পরিবর্তন ঃ হেস্টিংসের প্রথম দফা রাজস্ব নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে ১৭৭৩ সালে নভেম্বর মাসে ডাইরেক্টরের নির্দেশে বোর্ড অব রেভিনিউ ১৭৭২ সালের বন্দোবস্তের পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। সে সময় হেস্টিংস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে হলে সবকিছু আমূল পরিবর্তন করতে হবে বলে পরিকর। অবশ্য সে সময় রাজস্ব আদায় করার কৌশলের পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা সেমেন্টিং বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ঘরটি অংশে বিভক্ত করে প্রত্যেক একটি শিক কাউজি স্থাপন করেন এবং প্রত্যেক কাটপিলের কার্য সাহায্য করার জন্য একজন করে দেশীয় সেবযান নিযুক্ত । এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার সাথে সাথে বর্তি হালায় ক্যাপটির পাদ উঠিয়ে দেও হল। ১৭১ সালে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব কেবলমাত্র ইংরেজ কর্মচারীবর্গের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তা ১৭৭৩ সালে ইংরেজ ও দেশীর উভয় প্রকার কর্মচারীর উপর অর্পণ করা হয়। এ কারণে আমাকে হেস্টিংসের শাসনামলের রাজারব্যবস্থাকে পরীক্ষামূলক
গ। ১৭৭৬ সালে র্ক বিভিন্ন তথ্য সপ্তাহের জন্য 'আমিনী কমিশন' নামে একটি কমিশন গঠন কাশিক কাউন্সিলর নিয়োগ করেন তা উঠিয়ে নিয়ে আবার কালেক্টর এর পদ পুনর্বহাল করেন তিনি পূর্বে জমি ইজারা দেওয়ার যে নিয়ম করেছিলেন তা উঠিয়ে নিয়ে পাবেক কালের জমিদারি প্রথা চালু করেন। কিন্তু পূর্বেকার এ জমিদারি প্রথার পুনঃপ্রবর্তন করা ছিল পুরূহ কাজ। কারণ- জমিদারদের প্রতিপত্তি কিষ্ট : পূর্ব জমিদারগণ নিজ নিজ এলাকায় প্রতিপত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সে প্রতিপতি প্রায় পরবর্তীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। জমিদারের অধীন প্রজাবর্গের নিরাপত্তা, তাদের বিচার প্রভৃতি কাজ বা দায়িত্ব এখন আর ছিল না। তারা কেবল রাজস্ব আদায়কারীতে পরিণত হলেন।
পুরা সর্বদা পুনরুদ্ধার পর ছিল না । কোম্পানির হাতে শাসনব্যবস্থা চলে যাওয়ার ফলে জমিদারদের পূর্বেকার মর্যাদা আর ছিল না। সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার শর্তে জান নির্দিষ্টকালের জন্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে কিছুকাল থাকার ফলে পূর্বেকার জমিদার প্রথার ভিত্তি প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই এটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভবপর ছিল না। অর্থনৈতিক অকাতি। কোম্পানি কর্তৃক রাজস্ব নির্ধারণের ফলে রাজস্বের পরিমাণ অত্যধিক বেশি ধার্য করা হয়েছিল। ফলে জমিদারদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। তবে এ ব্যবস্থায় জমিদারি স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে নি। জমিদারি অনবরত হছে ।
ঘ, পূর্বের জমিদারির ঐতিহ্য । পূর্বের জমিদারির ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার ফলে দেখা যায় পূর্বের ব্যবস্থায় জমিদারি ব্যবস্থার প্রকৃত গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। পূর্বে জমিদার বিদ্বান, শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে করা হতো। কিন্তু কোম্পানির হাতে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে জমিদারের প্রধান কাজ কেবল অর্থ আদায় করা। অন্য কোন ক্ষেত্রে কোন সম্পর্ক ছিল না।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে রাজস্ব সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথম অবস্থায় পূর্বের নায়েব নাজিমদের পদ বিলুপ্ত করে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু কোম্পানির- নিয়ন্ত্রণে যে রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় তা হতে ব্যর্থ হয়। তাই হেস্টিংস বাধ্য হন তার নীতির পরিবর্তন করতে। তাই রাজস্ব সংক্রান্ত নীতির পরিবর্তন করেন। কিন্তু এটা কার্যকরী করা ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই অতি সহজে কার্যকরী হয় নি। তবে ওয়ারেন হেস্টিংসের যে ভালো পরিকল্পনা ছিল তা বলা যায়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]